ইউজার লগইন

জহির রায়হান - এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে যেভাবে হত্যা করেছে পাকি দোসররা

সন ১৯৫২, ২০শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ১৪৪ ধারা জারী করা হয়, উদ্যেশ্য ২১শে ফেব্রুয়ারীর হরতালকে পন্ড করা। ছাত্ররা সেদিন রাষ্ট্র ভাষা উর্দু করার ষড়যন্ত্রকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। ২০শে ফেব্রুয়ারীর রাতেই ফজলুল হক হল, ঢাকা হল ও সলিমুল্লাহ হলের ছাত্ররা মিটিং করে জানিয়ে দিলো যে সরকার রক্ত চক্ষু দেখিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে তারা একতিলও ছাড় দিতে রাজী নয়, তারাও গর্জে উঠতে জানে, চেলেঞ্জ ছুড়ে দিলো "তবে হয়ে যাক ফয়সালা"। মুসলীম লীগের পান্ডারা ও একালার সর্দারেরা মহল্লায় মহল্লার স্কুলে স্কুলে গিয়ে ভয় দেখিয়ে এলেও একুশে ফেব্রুয়ারী সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশ অমান্য করে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাস্তায় মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বপ্রথম যেই দশ জন ছাত্র মিছিল বের করেছিলেন তাদের একজনের নাম "জহির রায়হান"।
zohir raihan
পরবর্তী ঘটনার কিছুটা জহির রায়হানের সহপাঠী ও তৎকালীন ঢাকা কলেজের ছাত্র "বোরহানুদ্দিন খান জাহাঙ্গীর" এর মুখেই শোনা যাকঃ
burhanuddin

বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত জহির রায়হান ছিলেন একজন নিঁপুন কথা সাহিত্যিক। ভাষা আন্দোলনের পটভুমিতে জহির রায়হানের লেখা "একুশে ফেব্রুয়ারী" ও "আরেক ফাল্গুন" নামক উপন্যাস দুটি তার অনবদ্য রচনা। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছেঃ সূর্যগ্রহণ, শেষ বিলেকের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আর কতদিন, কয়েকটি মৃত্যু, বরফ গলা নদী, তৃষ্ণা প্রভৃতি।

অসম্ভব প্রানশক্তির অনধিকারী এই মানুষটি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর মুলত পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে চলচিত্র শিল্পের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। নিঁপুন দক্ষতার সহিত চলচিত্র নির্মাণ শিল্পেও তিনি খুব অল্পসময়ে নিজেকে বিকশিত করেন। তার নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামান্য চিত্রগুলো যুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্বমানবতার টনক নাড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী'র বর্বর অত্যাচার নিয়ে তার নির্মিত প্রামান্য চিত্রগুলোর তালিকা হচ্ছেঃ
* "Stop Genocide", (১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধি কালীন সময়ে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতার প্রামান্য চিত্র)
* "Birth of A Nation"
* "Liberation Fighters"(Production)
* "Innocent Milions"(Production)
এছাড়াও জহির রায়হান নির্মিত সফল বানিজ্যিক ছবিগুলোতে তার জীবন স্বমন্ধে গভীর ধারনার স্পষ্ট প্রমান হয়ে মেলে। অধিকাংশ চলচিত্রেই তিনি বাঙালীকে মুক্তির আশা দেখিয়েছেন।
জহির রায়হানের নির্মিত চলচিত্রগুলো হলোঃ কখনো আসেনি (১৯৬১), সোনার কাজল (১৯৬২), কাঁচের দেয়াল(১৯৬৩), সংগ্রাম (১৯৬৪ ততকালীন পাকিস্তানের সর্বপ্রথম রঙিন চলচিত্র), বাহানা (১৯৬৫), বেহুলা (১৯৬৬), আনোয়ারা (১৯৬৬), দুইভাই (১৯৬৮), জীবন থেকে নেয়া (১৯৬৯) ও ইংরেজী ভাষায় Let There Be Light।

পেশাগত জীবনে তিনি সাংবাদিকতা ও চলচিত্র সাংবাদিকতার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ১৯৫০ সালে "যুগের আলো" পত্রিকা দিয়ে তিনি সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হন ও পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। উল্যেখ্য ১৯৫৬ সালে প্রবাহ পত্রিকায় জহির রায়হান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলার এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারী নির্মম ভাবে হত্যা করে পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া দোসর বিহারীরা। তার অন্তর্ধানের দীর্ঘ আঠাশ বছর পর্যন্ত তাকে অপহরন করে গুম করে ফেলার খবর প্রচার করা হয়। কিন্তু পহেলা সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ দৈনিক ভোরের কাগজের এক রিপোর্টে বেরিয়ে আসে জহির রায়হান খুনের আসল রহস্য। জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারী রোজকার মত তার নিখোঁজ অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক ও সাহিত্যিক) এর খোঁজে বেরুলে, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের পানির টেঙ্কি এলাকায় পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া দোসর সশস্র বিহারীদের গুলিতে ঝাজড়া হয়ে যায় জহির রায়হানের বুক। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বাংলার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্বাধীন বাংলার মাটি আরেকবার রক্তাক্ত হয় পাকিদোসরদের বুলেটের আঘাতে। সেখান থেকে বিহারীরা জহির রায়হানের লাশ টেনে নিয়ে গিয়ে অন্যকোথাও গুম করে ফেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দিতে করা রিপোর্টটি এম্বেড করে দেয়া হলো।
News about zahir raihan

পৌনপুনিক প্রশ্নঃ ১৯৭১ ও পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য বিহারী যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে কি? কিংবা বিহারীদের কি আদৌ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের আওয়ায় আনা হবে? আদৌ এর কোন সদুত্তর পাইনি। রাজাকার, আলবদর, আল শামস, সহ দোষী বিহারীদের যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়া কি খুব অনৈতিক চাওয়া?

সম্ভবত বছর দুয়েক আগে হবে, জহির রায়হানের লেখা কিছু বই স্কেন করে নেটে শ্যায়ার করেছিলাম। বেশ কয়েকটার লিঙ্ক হারিয়ে গেছে তবু বাকি গুলো উদ্ধার করে পাঠকদের জন্য আবার শ্যায়ার করছি। এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

পোস্টটি ২৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

শুভ্র's picture


অনেক ধন্যবাদ, এত সুন্দর লেখা দেয়ার জন্য... আপনার পোষ্টেই এই ব্লগে প্রথম কমেন্ট করলাম

সোহেল কাজী's picture


হাঃহাঃহাঃ ব্যাপার্স না Wink
ভুখে আয় ভাবুল

শুভ্র's picture


সাঈদ's picture


এই রিপোর্ট টা আমিও পড়েছিলাম আগে।

দূর্ভাগ্যজনক হল , সেই বিহারী রা এখন দেশের ভোটার, এই লজ্জায় আমি ভেবেছিলাম ভোট দিতেই যাব না।

সোহেল কাজী's picture


কবি এইখানে নীরব। আসলে আমরা মুনয় রাজনীতি সর্বস্ব জাতিতে পরিণত হইতেছি Stare

টুটুল's picture


চমৎকার একটা পোস্ট... স্যালুট এই ক্ষনজন্মা মানুষটাকে
ধন্যবাদ কাজীকে
এরম পোস্ট দেয়ার জন্য

সোহেল কাজী's picture


জহির রায়হানকে নিয়ে আসলে বলার কিছুই নাই। তিনি নিজেই নিজের উদাহরণ।
***********************************
পুষ্ট লেখার লেইগা আপ্নেইতো খুচাইলেন Tongue

শওকত মাসুম's picture


চমৎকার একটা পোস্ট...

সোহেল কাজী's picture


অনেক ধন্যবাদ

১০

মামুন ম. আজিজ's picture


শ্র্রদ্ধাভাজন ব্যাক্তিটিকে নিয়ে চমৎকার একটা আলোচনা এই লেখা।

ধন্যবাদ। 

১১

সোহেল কাজী's picture


আপনাকেও ধন্যবাদ

১২

কাঁকন's picture


শ্রদ্ধা জানাই

১৩

সোহেল কাজী's picture


শ্রদ্ধা জানাই Smile

১৪

নুশেরা's picture


অসামান্য প্রতিভা, আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্বমানে পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা ছিলো এই ক্ষণজন্মা মানুষটির। আফসোস, আমরা এই বিহারীদের বিদায় করতে পারিনি, তাদের জন্য মানবাধিকারের কতো বুলি!

সময়োপযোগী পোস্টের জন্য লেখককে, আর স্টিকি করার জন্য মডুদের ধন্যবাদ জানাই।

১৫

সোহেল কাজী's picture


কিছুই বলার নাই আপু।
অনুধাবনের জন্য শুকরিয়া 

১৬

নীড় সন্ধানী's picture


জহির রায়হানের ঘটনাটা অদ্ভুত লাগে। মনে হয় একটি জেতা যুদ্ধে যেন পেছন থেকে গুলি খেলাম। মেনে নিতে কষ্ট হয়।

১৭

সোহেল কাজী's picture


আমরা বারবারই পিঠে গুলি খাই, তারপরো কষ্ট কলেও মেনে নেই রোজকার মতো। অনুধাবনে ধনিয়া Smile

১৮

রোবোট's picture


"জহির রায়হান ৭১এ আওয়ামী লীগের নেতাদের কলকাতায় বিলাসী  জীবন নিয়ে েকটা সিনেমা বানিয়েছিলেন "স্টপ জেনোসাইড নামে। সেজন্য আওয়ামী লীগ তাকে কহুন করে ৭২এ।" 

বছর দুয়েক আগে সামুতে এক ব্লগার এমন ইতিহাস জানাইসিলেন। দেকহেন কৈ আসি।

এরকম ছাগুপিডিয়া মারকা ইতিহাস আমাদের।

অ:ট: বিহারীরা কি নাগরিকত্ব চাইসিলো, নাকি  ভ্যালেরী টেলর, ওয়াডারল্্যান্ড, আলী, গ্রিনিজের মত ৈটাও সম্মানসূচক।

১৯

সোহেল কাজী's picture


হাঃহাঃহাঃ স্টপ জেনোসাইড সম্বন্ধে কিছুই না জেনেই বলছে মনে হয়।
যদ্দুর জানি সরকার নিজেই উদ্দোগি বেশী ছিলো, হিউমেন্রাইটস ও আরো জানি কি কি কেচাল আছে Stare

২০

মুকুল's picture


ধন্যবাদ।

২১

সোহেল কাজী's picture


Innocent

২২

নজরুল ইসলাম's picture


ধন্যবাদ চমৎকার পোস্টের জন্য। এই লোকটার মতো জিনিয়াস আমি এই দেশে খুব কমই দেখছি।

২৩

সোহেল কাজী's picture


আমি এমন কাউরে আর দেখি নাই। একাধারে লেখক, চলচিত্রের কাহিনীকার, সাংবাদিক, পরিচালক প্রযোজক।
শেষের দিকে যখন লেখার সময় পেতেননা তখন তিনি কাহিনীর মতো করে বলতেন আর অন্যকেউ সেটা লিখতো এমন অবস্থা।
সেল্যুট জানাই তার বিদেহী আত্মাকে
ধন্যবাদ Smile

২৪

নড়বড়ে's picture


দারুণ পোস্ট। খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানতাম না। ধন্যবাদ।

ভোরের কাগজের রিপোর্টের কথা আগে শুনি নাই। তথ্যসূত্র কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

২৫

সোহেল কাজী's picture


ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
তথ্যসুত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নাই।
আমাদের দেশের সংবাদ পত্রের কথা কি আর বলব?

২৬

তানবীরা's picture


শ্রদ্ধা জানাই

২৭

সোহেল কাজী's picture


শ্রদ্ধা জানাই

২৮

স্বপ্নের ফেরীওয়ালা's picture


দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আসে... শ্রদ্ধা জানাই

~

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সোহেল কাজী's picture

নিজের সম্পর্কে

আমার অন্তরের অলিতে গলিতে জট লেগে আছে থোকায় থোকায় অন্ধকার। দৈনন্দিন হাজারো চাহিদায় পুড়ছে শরীরের প্রতিটি কোষ। অপারগতার আক্রোশে টগবগ করে ফুটে রক্তের প্রতিটি কণিকা। হৃদয়ে বাস করা জন্তু-টা প্রতিনিয়ত-ই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে ব্যাস্ত।

প্রতিদিনের যুদ্ধটা তাই নিজের সাথেই। সেকারণে-ই হয়তো প্রেমে পড়ে যাই দ্বিতীয় সত্ত্বার, নিজের এবং অন্যের।