সব ফুল বিকি হয়ে গেছে।
মধ্যরাত থেকেই নগরে সারা পড়ে গেছে। ভীড় জমেছে মিনারের চার পাশে। ওরা আজ মিনারকে সাজিয়েছে নতুন রঙে। ফুলের দোকানগুলোতে ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই। সব ফুল বিকি হয়ে গেছে। বাগানে ফুল নেই, সব ফুল বিকি হয়ে গেছে।
ফ্লাড লাইটের তীব্র আলোয় ঝলসে গেছে মিনারের চার পাশ। একে একে নেতারা সব আসছে, ফুল দিয়ে সন্মানিত করছেন আমার ভাষা শহীদদের। ক্ষণে ক্ষণে ক্যামেরার তীব্র আলো ফ্লাস মারছে, ঝিলিক ঝিলিক। নেতাদের লাইন লেগেছে, লাইনে আসছে তোড়ার পর তোড়া। চামুদের লাইন লেগে গেছে, চামুরা চমকাচ্ছে, ঝিলিক ঝিলিক। করুনার মতো কিছু ফুল রাখা হবে বেদীতে।
দেখলাম এক চামুর জুতা নিয়ে বেদীতে উঠা নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়ে গেছে। পত্রিকাওয়ালারা পেয়েছে, নতুন খবরের উপাদান। সুশীল সমাজে চায়ের পর চা ঢালা হচ্ছে। মুখরোচক আলোচনা হবে আজ।
আমি নিশ্চিত সেই চামু আজ ঘর থেকে ফুল দেবার উদ্যেশ্য নিয়ে বেরোয়নি। জিয়া পত্নী বেদীতে ফুল দিবেন। কোন এক ফাঁক গলিয়ে ভীড়ে ঢুকে গেছে কাছাকাছি। ছবি উঠবে ঝিলিক ঝিলিক। ছবি শোভা পাবে ড্রয়িং রুমের দেয়ালে। ছবি শোভা পাবে ক্লাবের চেয়ারের ঠিক উপরে। কেমন ছিলো সেই চামুর অনুভুতি। ঠিক এলিভেন্থ আওয়ারের উত্তেজনার মতই সে উত্তেজিত ছিলো। ছবি উঠবে পরাক্রমশালী জিয়া পত্নীর সাথে। এলিভেন্থ আওয়ারের উত্তেজনায় কন্ডমের পরোয়া করে কে? তাই জুতোর পরোয়া নেই। আজ ঠিক ঠিক একটা ছবি তোলা হয়ে যাবে। টিভির কেমেরাগুলোতে সরাসরি প্রচার হবে। জ্বলে উঠছে সাংবাদিকের ক্যামেরা। ঝিলিক ঝিলিক।
সেই ভোর থেকে হয়তো কোন ছোট্ট মেয়ে খালী পায়ে বাবার আঙ্গুল ধরে অপেক্ষা করছে শহীদদের কানে ফুল গুঁজে দেবে বলে। এতো কোলাহলে অবাক হয় ছোট্টমেয়ে। ভয়ে বারবার বাবার কোমর জড়িয়ে ধরছে। বাবা কোলে তুলে নেন মেয়েকে। গালে গাল চেপে অভয় উষ্ণতা দেন ছোট্ট মেয়েকে। শহীদেরা ছোট্ট মেয়ের অপেক্ষা করে আছে সেই কখন থেকে। কিন্তু নেতাদের লাইন শেষ হচ্ছেনা। শেষ হচ্ছেনা ক্যারার ফ্লাসের আলো, ঝিলিক ঝিলিক। শহীদদের মন খারাপ হয়। কোলাহলে ভয় পায় ছোট্ট মেয়ে। ভয় পায় ছোট্ট মেয়ের হাতে ধরা কয়েকগুচ্ছ হাসনুহেনা।
সারা বছর কেমন থাকে আমাদের আমাদের শহীদ মিনার? কতোটুকো শ্রদ্ধা করি আমরা মিনারকে?
নিচে তারই কিছু নমুনা দেয়া হলো।
সব ফুল বিকি হয়ে গেছে।
ছবি এক
ছবি দুই
ছবি তিন
ছবি চার
ছবি পাঁচ
ছবি ছয়
ছবি সাত
ছবি আট
ছবি সূত্রঃ সচলায়তন ব্লগ ও সামহ্যোয়ারইন ব্লগ
অন্তরের শ্রদ্ধাই শেষ হইয়া গেছে......আর এইটাতো ইট পাথরের মিনার...
নাহীদ বলেছেনঃ
অন্তরের শ্রদ্ধাই শেষ হইয়া গেছে......আর এইটাতো ইট পাথরের মিনার...
ছাগুই তো বেশী দেখা যায়
)
======================
বাঙলাদেশে মনে হয় আয়নার অভাব। সেকারণে আমরা নিজেদের চেহারা দেখতে পাই না- চেহারায় অপরাধের ছাপ পড়েছে সে কবেই।
হুমম
...ছবিগুলাতে কিরকম জীর্ণতা...
সারা বছর বরং ভালো থাকে। আমরা এনএক্সে পড়ার সময় বেদীতে বসে আড্ডা দিতাম। আবৃত্তি প্র্যাকটিশ করতাম। ভড়ং ছাড়া থাকে।
মন্তব্য করুন