প্রসংগ হিন্দী ভাষা কিংবা ভিন্ন সংস্কৃতি
আজকাল বেশ একটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে দেশের আধুনিক ছেলেমেয়েদের মধ্যে “হিন্দী ভাষা”কে ঘৃনা করি টাইপ কথা বলার। যদিও “ঘৃনা” শব্দটা খুবই শক্ত, কোন কিছুকে নিয়ে মন্তব্য করার জন্যে, “অপছন্দ করি” কথাটা হয়তো তাও চলে যায়। যারা এধরনের ঘৃনা শব্দগুলো উচ্চারন করেন তারা কিন্তু অবলীলায় ইংরেজি, আরবী, চায়নীজ কিংবা ফ্রেঞ্চ গান, সিনেমা, বই পড়ছেন - উপভোগ করছেন। একশ কোটির বেশি মানুষ যে ভাষায় কাঁদেন, হাসেন, প্রেমিকাকে প্রেম নিবেদন করেন, রাত জেগে বই লিখেন, আবেগে কেঁপে কবিতা লিখেন সেই ভাষাকে আমরা কেনো ঘৃনা করি? তার কি কারণ? এতোগুলো মানুষের আবেগ প্রকাশের মাধ্যম কি করে অন্যদের ঘৃনার উদ্রেক করতে পারে? অনেকেই বলতে আসেন, তারা আমাদের সাংস্কৃতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে, তাই ঘৃনা করি। তাই কি? নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে অন্যকে ঘৃনা করাই সার? তারা এসে চড়ে বসেছে আমাদের ওপর? বাধ্য করেছে আমাদেরকে তাদের সিরিয়াল দেখতে, শাড়ি পড়তে, তাদের গরু, পেয়াজ খেতে?
তাই যদি হয় তাহলে আমাদের ছোটবেলার “খোদা হাফেজ” যে এখন “আল্লাহ হাফেজ” কেড়ে নিচ্ছে, মাথায় মাথায় নানা ঢংয়ের হিজাব বসছে, দাঁড়িতে মেহেন্দী আঁকা হচ্ছে, তার বেলায়? এগুলো আমাদের সাংস্কৃতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে না? কথায় কথায় ওহ মাই গড, কুল, অসাম এগুলোওতো হরদম সবাই ব্যবহার করছে। নাকি ইংরেজী দ্বারা, আরবী দ্বারা গ্রাসিত হলে সমস্যা নেই সমস্যা হলো শুধু হিন্দীর বেলায়? আমাদের দেশটা এতো ছোট আর এর মধ্যে ধর্ম, ভাষা, বর্ণ, পোশাক, খাবার দাবারের বৈচিত্র্য এতো কম যে, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি যে সহনশীলতা বা শ্রদ্ধা তা লোকজন শিখেইনি। সেদিন কোন একটি সংবাদপত্র বিদেশের কোন একটি জরিপের উদাহরন টেনে সংবাদ ছেপেছিলেন, “অসহনশীল” দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম বিশ্বের মধ্যে দু’নম্বরে আছে। এরচেয়ে সত্যি খবর বোধ হয় আর হতে পারে না। সর্ব ব্যাপারে উগ্রতা আর মৌলবাদ। ভাগ্যিস বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ একই ধারায় চিন্তা করে না। তাইতো বিদেশের বুকে আমরা তাদের সামাজিক অনুদানের সাহায্য নিয়ে, নিজেদের নববর্ষ, ঈদের নামাজ, মসজিদে প্রতি শুক্রবারে জুম্মা পড়া, রোববারে বাচ্চাদের কোরান পড়া, দুর্গাপূজা, দিওয়ালী এগুলো উদযাপন করতে পারছি। নিজেদের সংস্কৃতি নিজেদের ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি। শুধু টাকাই দেন না তারা, মেয়র আসেন, বক্তৃতা দেন, অনুষ্ঠান ভাল লাগুক আর মন্দ লাগুক দেখেন, খাবার টেষ্ট করেন। শুধুমাত্র গরীব বিদেশী যারা আছে বিদেশে তাদেরকে সাহস দিতে যে আমরা আছি তোমাদের পাশে। বাংলাদেশে বোধহয় এধরনের ঘটনা কল্পনাও করা যায় না।
সহনশীলতা অবশ্য জাতিগত ভাবেই নাই, কোনদিন ছিলোও না। যারা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সহনশীলতা ও সম্মান দেখিয়ে জাতিকে শিখাবেন সবাইকে পথ দেখাবেন তারা সারাদিন ব্যস্ত থাকেন কামড়াকামড়ি করতে। বরং তাদেরতো আরোই নাই। সংসদ অধিবেশনের অর্ধেকের বেশি যায় দুই পক্ষের ডার্টি লন্ড্রী টানাটানি করতে করতে। জনগন বরং এটা শিখে যে যতো উগ্র সে ততো বড় বীর, ততো তাড়াতাড়ি সবার আলোচনায় আসবেন আর বিখ্যাত হবেন, চলে উগ্রতার চর্চা যার যার সামর্থ্যনুযায়ী। কারো জামা কাপড়ে মৌলবাদ প্রকাশ পায় তো কারো সিনেমা গানে। রাহাত ফাতেহ আলী খান, জাগজিত সিং, মেহেদী হাসান, আদনান সামী, গুলাম আলী এদের গান ভালো লাগলে কি করবো? বরং মাইকেল জ্যাকসান কিংবা জর্জ মাইকেল থেকে এরা বেশি মনপ্রাণ ছুঁয়ে যান। ধর্মের দোহাই দিয়ে? বর্ডারের দোহাই দিয়ে কান বন্ধ করে দিবো? কোন যুক্তিতে? ভারতীয়রা আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার করেন আর আমেরিকানরা আরবরা আমাদেরকে ভালো পান? আসলেই তাই কি? ভালো পান নাকি তারা আমদেরকে? কোন দিক দিয়ে? বর্ডারে বিনা বিচারে যেমন ফেলানী মারা যায় তেমন গরীবের বেতনের পয়সা মেরে দিয়ে, মেয়েদেরকে অত্যাচারকে আরবী ভাইয়েরাও কম কষ্ট দেন না আমাদেরকে। গরীব যেদিকে চায় ...... আরব আমেরিকা ভারত সব শুকাইয়া যায়।
তাই যদি বর্জন করতে হয় একযোগে সব বর্জন। আর ভারত বর্জন করলে শুধু সিনেমা টিভি না, গরুর মাংস, পেয়াজ, ঔষধ, ডাক্তার, কাপড়, মাছ সব বর্জন করতে হবে। আর নইলে সহনশীলতার মাত্রা বাড়ানো, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা থাকা, ভালোবাসা থাকা একান্ত কাম্য। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মূলটা উপভোগ করে কিভাবে তার থেকে নিজেদের সংস্কৃতিকে আরো মজবুত বানানো যায় সেটা শিখে নিতে হবে। তাই একজন রবি শংকর সারা বছর আমেরিকার ট্যুর করে গেছেন। আমেরিকানরা রবি শংকরকে ভারতীয় বলে অবহেলা করেননি বরং তার গুনের জন্যে বুকে করে রেখেছেন। যেমন করেন ভারতীয়রা জেমসকে বাংলাদেশ থেকে ডেকে নিয়ে যান, রাহাত ফাতেহ আলী খানকে পাকিস্তান থেকে ডেকে নিয়ে আসেন। ভালোটা গ্রহন করতে শিখা জানতে হবে। নিজেদের অজ্ঞানতা ও অক্ষমতার দোষ কি অন্যকে ঘৃনা করে ঢাকা যাবে, মনে হয় না, কোনদিনই না।
তানবীরা
১৫/০৬/২০১৩
একমত তবে আমার মনে হয় আমরা হিন্দী সহনশীলতা কম না। নয়তো এতো হিন্দী সিরিয়াল, এতো হিন্দী কার্টুন সব হজম করতেছি কত দেদারসে! আসলে আমাদের টিভিওয়ালারা যা বানায় এখন তার ভেতরে বিনোদনের কিছুই থাকে না!
এটাও ঠিক, বাঙ্গালী দেখে আবার গালিও দেয়
আপনার সকল কথায় একমত। আমি আর একটু বলব মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করতে হলে হিন্দি জানা অতি আবশ্যক। তারপরও আমি বিরুধিতা করব। কারন বিরুধিতার কারনে বিরুধিতা একটা কথা আছে যে।
ধন্যবাদ
ভারতিয়দের সাপের মতো ভালোবাসি
বিশ্বাস করি না কিন্তু শরীরের রঙে মুগ্ধ হই।
আমি ভারতিয় জিনিস বর্জন করি, এখন কি মুখ ভরে গালি দেয়া যাবে? আমি ভারতিদের ভালো পাই না।
কোন দেশীয়দের ভালা পান?
बांग्लादेशी
এক হাতে কি তালি বাজে আপু?
সহনশীলতা কি কেবলই আমাদের দেখানোর জিনিস? যা না নিলেই নয় তা নয় নিলাম, তাই বলে সবকিছুই হজম করে যেতে বছরের পর বছর?
হজম করতে বলছে কে? দেখায়া দাও ওদেরকে
আই উইশ..
ব্যাপক খেপচুরিয়াস দেখতাছি
ব্লগের স্যাঁতস্যাঁতে ভাবটা কমানোর চেষ্টা করছি আর কি

ব্যাবচ্ছেদ এর কথা মনে পইড়া গেলো!
কি কইলা মাঝি!!!
ইটস কমপ্লিকেটেড
ইয়াপ
কোন ভাষার প্রতি ঘৃনা থাকা উচিৎ না, কারণ লাখো মানুষের কাছে সেই ভাষাটাই তাদের প্রাণের ভাষা। তবে মাতৃভাষা সবার উপরে।

জগজিৎ, মান্নাদে, হেমন্ত, কিশোর, মেহেদী হাসান, গুলাম আলীর গান ভালু পাই
একমত
কাউকে ঘৃনা করা খুব বাজে ব্যাপার। সেটি দেশ হোক-মানুষ হোক।
হিন্দি কথা বুঝিনা বলে হিন্দি সিনেমা দেখি না। নাচ, গান ভালোই লাগে।
যাক, তুমি আমার বক্তব্যটা ধরতে পেরছো
আসেন মারামারি করি
বক্তিমা ভালো হইছে ।
তাহলে কিছু টাকা ছাড়েন
ভাষার প্রতি কোন ই ঘৃনা নাই, দেশের প্রতিও না, তবে আপত্তি আছে ওদের আগ্রাসি মনোভাবের, যেটা পৃথিবীর সব শক্তিশালী দেশ দুর্বল দেশের সাথে করে থাকে, নতুন কিছু না
একদম ঠিক কথা
मैं हिन्दी से प्यार
কথাগুলো যুক্তিযুক্ত। আসলে মানুষের মনে ঘৃনার জন্ম নিয়েছে অনেক তীক্ততা এবং অবহেলার ফলে। ভারত বা পাকিস্তান যেটাই বলুন, তীক্ত অভিজ্ঞতা উভয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান।
তবে পিয়াজ মরিচ চাল ডালের উদাহরন খুব একটা মানানসই মনে হলো না, কারন ভারত আমাদের বিনে পয়সায় চাল দেয় না। আমাদের পকেটের টাকা থেকেই পিয়াজ দেয় এবং অনেকের চেয়ে বেশী দামে এবং বেশী খরচে (ভারত এমন একটা প্রতিবেশী যারা আমাদের পন্যের বাজার রোধে এন্টি ড্যাম্পিং করে এবং আমাদের টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্যান জারী রেখেছে খোদ ওদের তথ্য মন্ত্রনালয়) সেখানে আমরা ওদের ভাষায় কথা বলি নিজেদের দৈন্যতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আমরা যখন বলি ভারতের মতো আমরা কেনো ওরকম সিনেমা বা গান বানাই না, তখন যে প্রশ্ন করে তার দিকেও সেরকম ভাবের উদয় হতে পারে।
আর ভাষার ফিউশন এবং আগ্রাসন মনে হয় দুটো ভিন্ন জিনিস।
শুভবুদ্ধির উদয় হোক কামনায়!
Language is a communication skill for human being which makes us superiority to other species. Though it's almost impossible, what will happen if we become bilingual or tri-lingual like the people of Hongkong, Switzerland,: Belgium? Our main target should be HDI (Human Development index).
ভাষা আসলে একটি ক্ষমতা, আমরা যত বেশি ভাষা জানব আমাদের যোগাযোগের ক্ষমতা, মানুষকে জানার ক্ষমতা, পৃথিবীকে জানাবোঝা ও উপভোগের ক্ষমতা ততই বাড়তে থাকবে। বৈচিত্রের মাঝেই তো আনন্দ।
মন্তব্য করুন