স্বপ্নহীন জীবনে যখন
আমি ঢাকার যে এলাকায় বড় হয়েছি সেখানে আমরা চার পুরুষ ধরে আছি হয়তো এখন পাঁচ পুরুষে পৌঁছে গেছি, কে জানে। আমাদের এলাকাতে আরো অনেকেই আছেন যারা কয়েক জেনারেশান ধরে এখানে আছেন। বাবাদের কাছে গল্প শুনেছি ছোট বেলায় বাতিওয়ালা এসে রাস্তায় বাতি জ্বেলে দিয়ে যেতো। গ্রাম থেকে লঞ্চে সদরঘাট এসে অনেকেই মাথায় বোঝা নিয়ে ধানমন্ডি, গ্রীনরোড পর্যন্ত হেঁটে আসতো। অনেক এলাকাতেই দিনের বেলায় শেয়াল ডাকতো, ঘন জঙ্গল ছিলো। আমি নিজেও ছোট বেলায় অনেক ফাঁকা ঢাকা দেখেছি। এখন ঢাকা অনেক ব্যস্ত, আমরা যে এলাকার বাসিন্দা সেতো মহাব্যস্ত।
জীবন নিয়ে আমরা নিজেরাও ব্যস্ত। পাড়ার, স্কুলের বান্ধবীরা, বন্ধুরা সবাই ছড়িয়ে পড়েছি পৃথিবীর নানা কোণে জীবিকা কিংবা ভাগ্যের টানে। প্রযুক্তির কারণে পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকলেও যোগাযোগটা রয়ে গেছে, হারিয়ে যায়নি। এক জায়গায় বাড়ি বলে ঘুরে ফিরে ছুটি ছাঁটায় দেখা হয়ে যায়, আড্ডা চলে প্রাণবন্ত, ছোটবেলার ভালবাসার অনেকটাই এখনো রয়ে গেছে বরং দিন যাওয়ার সাথে সাথে সেটা আরো গাঢ়ো হয়েছে। জীবনের বিরাট একটা পর্ব শেষ করে ফেলেছি প্রায় সবাই। এখন সাহিত্যিক ভাষায় মধ্যবয়স পার করছি। সময় দ্রুত যাচ্ছে। ছেলে মেয়েরা চোখের পলকে বড় হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই কথা হয়, ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে যার যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে গেলে, আমরা কী করবো? পুরোই কী একা হয়ে যাবো না এই বিদেশে?
বান্ধবী বললো, সে আনন্দজনক একটি পন্থা বের করে ফেলেছে। গুরুজনরা যে ভুল করেছে, আমরা সে ভুল করবো না। বাপের বাড়ি থেকে যা উত্তরাধিকার পাবো তা কেউ ছেড়ে দিবো না। সবাই রিটায়ার করে আবার দেশে ফিরে যাবো। ছোট বেলার মতো পাড়া দাপিয়ে বেড়াবো। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়ে আমাদের দেখতে বাংলাদেশ বেড়াতে আসবে তাতে তাদেরও দেশের সাথে যোগাযোগ থাকবে আবার আমরাও মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের দেখতে বিদেশে বেড়াতে আসবো। বুড়ো হয়ে সবাই একসাথে ছেলে বেলার মত আনন্দ করে দিন পার করবো।
বিদেশে সব পেয়েও দেশকে মিস করে গেছি প্রতি নিয়ত। আবার আসিব ফিরে এই ধানসিঁড়িটির তীরে, এই বাংলায় এই ভেবে ভেবে এতোটি বছর প্রবাসে কাটিয়ে দিয়েছি। রোজ ভেবেছি এইতো আর একটি দিন পার হলো, এইতো বুড়ো হচ্ছি, দেশের দিকে আর এক পা বাড়লো। দুই হাজার পনর সাল প্রথম এই দরজায় এনে দাঁড় করালো, না কিছুতেই নয়। এই দেশ আমার নয় এই মানুষেরা আমার নয়। এতো বছর খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে মন, ভাবনা, বিবেক সব নির্মলতায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যদি প্রাণে বেঁচেও থাকি দেশে রোজ রোজ এতো শত অনাচারের মাঝে নিজেকে আর খাপ খাওয়াতে পারবো না।
পণ করলাম নিজের সাথে নিজে, আজ থেকে আর বুড়ো হওয়ার কথা ভাববো না আজ থেকে শুধু বেঁচে থাকার গান। আর পেছনে তাকানো নয় সমুখে বাজুক আমার প্রাণ।
১৪/০৫/২০১৫
পন করা ভালো কাজ
পন সফল হোক
বাঁচতে চাইলে আর উপায় আছে?
ঘটনাটা কি? আমি শুধু এই একটা সিঙ্গেল কাজ করবো না বলে পণ করেছিলাম কিন্তু পারছি না।
উইল পাওয়ার বাড়াও। সিগ্রেট দিয়ে শুরু করো
হুম। এই দেশ নিরাপদ বাসভূমি না
বাহ্ দারুন উপলব্ধি!
তাই
তোমাকে তো আমি সবসময় চির নতুন জানি। তুমি বুড়ি হবে কোন দুঃখে।
দুঃখেই মানুষ বুড়া হয় রে
এই যে ফিরে আসার ইচ্ছেটা দেশের বাইরে থাকা সব্বার মাঝে দেখেছি, কিন্তু এই তো যাবো/যাচ্ছি/ আর ক'টা বছর পেরিয়েই যাবো , এই করে করে আসা হয়না। কিন্তু হাহাকার নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছেন তারা!
লেখাটা পড়তে ভালো লাগছিল, কিন্তু শেষের দিকে এসে পুরোপুরি ভাললাগা চলে গেল! পরিস্থিতি আসলে যা আপনার কথার যে দ্বিমত করব তাও পারছি না, কিন্তু বিষয়টাও ভালো লাগছে না!
স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনাও মারাত্বক
এটা হয়ত সব প্রবাসীদেরই মনের কথা
মন্তব্য করুন