চুরিতে আর যদি যাই
আমি তখন খুব সম্ভবত ক্লাশ ওয়ানে পরি অথবা কেজি ক্লাশে। জাস্টিস এন আই চৌধুরীর বাড়িটা আমাদের খুদে বাহিনীর কাছে একটি রহস্যময় বাড়ি সব সময় মনে হত। বাড়ির ভেতরে কে কে আছে তারা কে কি করে কিছুই জানি না। বাড়িটির চারপাশে অনেকগুলি প্লটে কোন বাড়ি ছিল না। মাঠ ছিল আমরা সেখানে খেলতাম আর বাড়িটার দিকে তাকিয়ে অনেক গল্প করতাম যা সেই বয়েসে জন্য ছিল বেশ রমোহর্ষক।
চৌধুরী সাহেবকে যারা দেখেছে তারা বলতো উনি খুব লম্বা চোখগুলি লাল লাল। আমরা পিচ্চিরা চৌধুরী সাহেবকে যমের মত ভয় পেতাম। শুনতাম তিনি নাকি খুব রাগী আর বাচ্চাদের একদম দেখতে পারে না বাচ্চাদের ধরে ধরে মারে আর তাদের রক্ত চুষে খায়, তাই তার চোখ সবসময় লাল। সেই জন্য এই বাড়িতে কোন বাচ্চা বা মা নেই। চৌধুরী সাহেব সম্পর্কে এই ধারনা আমাদের মনে কি ভাবে এল তা আমার মনে নেই। তবে এই ব্যাপার নিয়ে বড়দের সাথে কখনই আলোচনা করিনি।
তার বাড়িটাকে বাইরে থেকে দেখতে জঙ্গল জঙ্গল মনে হত। কারন বাড়ির বাউন্ডারীর উপড় দিয়ে আমরা দেখতাম শুধু গাছ আর গাছ। সেই সব গাছ ভর্তি বিভিন্ন ফল।
ঐ বাড়ির সবচেয়ে লোভনীয় ফল হচ্ছে অড়বড়ই আর লটকন। এই ফলের গাছ আমাদের কারও বাসায় নেই। একদিন আমাদের স্কুল কি কারনে যেন এক পিড়িয়োড পরেই ছুটি হয়ে গেল। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরছি কিন্তু এত তাড়াতারি বাসায় গেলে সারাটা দিনই মাটি।
চঞ্চল বললো --দেখ চৌধুরীর বাড়িতে এই সময় কেউ নেই। চল অড়বড়ই পাড়ি।
যেমন কথা তেমন কাজ। সবাই রাজি। আমরা আর বাড়ির দিকে না গিয়ে আমাদের বাসার পিছন দিকে চলে গেলাম এবং দেয়াল টপকে চৌধুরী ভিলায় ঢুকে পরলাম। আমরা পাঁচটি ছেলেমেয়েই তখন চৌধুরীর অড়বড়ই গাছে। ইচ্ছা মত গাছ তছনছ করে পেয়ারা অড়বড়ই লটকোন ছিঁড়ে মহা সমারহে হৈচৈ করছি। ভুলেই গিয়েছি আমরা চৌধুরী ভীলায়। একজন গেল লবনের সন্ধানে। সে খোলা রান্না ঘর থেকে লবন নিয়ে এল।
আমরা যা পেরেছি তা নিয়ে উঠানে পা ছড়িয়ে বসে খাচ্ছি মজা করে লবন দিয়ে। এমন মজার খাবার আমরা জীবনেও খাইনি। এমন সময় শুনি হা হা হা হা রে রে রে রে এএ এ এ এ এ এ এ ??????????????? আমরা চমকে উঠলাম। দুই দিক থেকে ধেয়ে এল তিন জন কালো ভীমের মত লোক। লোক গুলি মুখে কালি রঙ মাখানো। আমরা হাউমাউ করে চিৎকার করে দে ছুট, --- ছূটে গেলাম চৌধুরীসাহেবের ঘরের ভিতরে। বাইরে থেকে লোকগুলির চিৎকার----এই বেড়িয়ে আয় তোরা কারা।
আমরা ভিতরে ঢুকে দিলাম ঘরের দরজা বন্ধ করে।
বাইরে থেকে ওরা ভয় দেখাচ্ছে আর বলছে-- বেড় হ, তা না হলে কিন্তু ভুত হয়ে তোদের ঘাড় মটকাবো।
লোক গুলি জানালা দিয়ে দেখছে আমাদের আমরা লোকগুলির কথা কি শুনবো ওদের চেহারা দেখেই ভয়ে আধমরা হয়ে গেছি। ভয়ে চৌধুরীর খাটের তলে যেয়ে ঢুকলাম। লোকগুলি যতই বলে-- বেড়িয়ে আয় আমরা ভয়ে আরও শক্ত হয়ে থেকি । কান্না শুরু করে দিল রুমা তাই না দেখে বিউটি কিছুক্ষন পরে দেখি ফ্যাঁসফ্যাঁস করে বিদুৎ ও ওদের সাথে যোগ দিয়েছে।
একবার লোকগুলি বললো --যদি বের হয়ে না আসো তবে কিন্তু চৌধুরী সাহেব বন্দুক দিয়ে গুলি করবে। এই কথা শুনবা মাত্র আমরা সবাই তার স্বরে কান্না শুরু করে দিলাম। এরপর লোকগুলি শুরু করলো অনুরোধ । পারলে আমাদের পা ধরে। কিন্তু আমরা ওদের আর বিশ্বাস করছি না। ওরা আসলেই ভুত। বার বার চেহারা পালটাচ্ছে। গলার স্বর পাল্টাচ্ছে। আমাদের কান্না থামে না সেই সাথে দরজা খুলবার প্রশ্নও ওঠে না। কাঁদতে কাদঁতে ক্লান্ত হয়ে আমাদের চোখে ঘুম নেমে এল। এবং বোধ হয় ঘুমিয়েও পড়েছিলাম আমরা।
একবার শুনলাম খুব কোমল স্বরে কে যেন ডাকছে । ঘুম থেকে চমকে উঠলাম। দেখি জানালায় আসল দৈত্য (চৌধুরী সাহেব) দাঁড়িয়ে। বললেন---তোমরা বাড়ি যাবে না। সন্ধ্যা হয়ে এল প্রায়। দরজা খোল, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না।
আমি বললাম --না বেড় হব না আপনি যদি গুলি করে দেন। উনি হেসে ফেললেন। বললেন --তোমাদের দেখাবার জন্যই ওদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি দেখ। আমি তোমাদের কিছু বলবো না। তোমাদের বাসায় পৌঁছিয়ে দেব। তোমাদের বাবা মা নিশ্চই চিন্তা করছে।
আমরা সমস্বরে বললাম ---দৈত্যভাই আমরা আর কোনদিন তোমার বাসায় ঢুকবো না। মার কাছে যাব।
---নিশ্চই যাবে দরজা খোলো।
--- না দরজা খুলবো না।
আমাদের মনে ঢুকে গেছে দরজা না খুললেই আমরা নিরাপদ। তিনি বললেন --দেখ তোমাদের জন্য আমি গাছের কত ফল পেরেছি, ছানা এনেছি, নিমকি এনেছি তোমাদের তো খুধা লেগেছে এসো বাইরে এসো।
আমরা আরও ভাল করে বুঝে গেলাম এই আসল ছেলেধরা।
আমরা কিছুতেই রাজি না দেখে উনি চাকরগুলিকে খুব বকলেন আমাদের এই ভাবে ভয় দেখাবার জন্য।
এবারে তিনি বললেন --তোমরাতো আমাকে এবার ফাঁসিতে ঝোলাবে বাবারা। বলোতো বাবা মারা তোমাদের বাবাদের নামগুলি বল আর বাসা কোথায়? তারা কেউ আসলে তো তোমরা দরজা খুলবে। বললাম --হ্যাঁ বাবাকে ডাকুন।
কিছুক্ষনের মধ্যেই বাবা মা দুই জনকেই পেলাম জানালার গ্রীলের ওপারে। দরজা খুলে ঝাপিয়ে পড়লার বাবার বুকে। কোথায় বকা, কোথায় কি, আমাদের ফিরে পেয়ে বাবা-মা-থানা- পুলিশের সে যে কি আনন্দ। চাকরগুলি প্রথমে স্বীকার করেনি যে ওরা ভুত সেজেছিল। শুনবার পর চৌধুরী সাহেব থানাওয়ালাদের বললেন চাকরগুলির কান মলে দিতে। সেই দিন অবশ্য পুলিশেরা ওদের আর কিছু বলেনি।
পরবর্তীতে চৌধুরী দাদুর সাথে আমাদের খুব ভাব হয়েছিল। আর চাকর তিনজনের সাথেও ছিল আমাদের দারুন সখ্যতা। কারন সারাটা দিনতো আমাদের চৌধুরী ভীলাতেই কাটতো।
ওরে চুরররররররররররর....
অত্যান্ত মজাদার কাহিনি।
এইরকম কয়টা কাহিনি নিয়া ছোটোদের জণয় একটা বই করলে দারুন হয়, ছোটোরা অনে কমজা পাওয়ার কথা----
এইদিকে আমিও ব্যাপক মজা পাইছি----
কান মলি ভাই
চুরিতে আর যদি যাই তবে মোর নামই মিছে
কুকুরের চামরা খিচে------
ধন্যবাদ। হায়রে কোথায় আমাদের সেই ছেলেবেলা????
হুম... চুরি করা ভালো না
চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা যদি না পরো ধরা--
মজা লাগলো
ধন্যবাদ।
শৈশব খুব মজার ছিল, না?
আমাদের শৈশব খুব মজার ছিল। এখনকার মত শৃংখলিত কখনই ছিল না।
প্রায় দুঃসাহসিক অভিযানের সফল পরিসমাপ্তি....
সেই ছোট্টবেলার কথা। ভাল থাকুন তায়েফ। ধন্যবাদ।
আরে আকিদা যে! অনেকদিন পর চেনা-চেনা ভঙ্গির লেখা।
ভালো থেকো।
এবি ব্লগে তোমাকে পেয়ে খুব ভাল লাগলো। ভাল আছি তোমরা সবাই ভালো থেকো ।
দারুন লিখেছেন। থ্যাংকু। বিলাইয়ের (শাওন) প্রস্তাবটা খারাপ না। একটা সিরিজ করে বই বের করতে পারেন। সামনের বই মেলায়। হায়রে ছোট বেলা... উদাস হৈলাম
ধন্যবাদ য়াযাদ। দেখি পারা যায় কিনা।
বাহ। মনে হলো ছোটদের একটা গল্প পড়লাম। লেখাটা সেরকম।
বাচ্চাদের গল্প শোনাতে যেয়েই মনে হয়েছে আমি আমার এই ছেলেবেলার কাহিনীটা ব্লগে দিতে পারি।
এখন অবিশ্বাস্য মনে হয় আমাদের ঢাকা আগে এমনই ছিল। এখনকার ঢাকায় মাঠ দূরের কথা আকাশই দেখা যায় না। ধন্যবাদ।
মজা পেলাম।ছোটবেলায় আমি খুব লক্ষ্মী টাইপ ছিলাম।একদমি দুষ্টামি করতাম না।বই পরতাম,পুতুল খেলতাম।র এখন হইছি বান্দর।
আমি কখনও বান্দর আছি। কবে যে শান্ত হব।
চুরির পর এরকম রাজকীয় সম্মান আমিতো জানতাম শুধু বুশের জন্য। সাধারণ লোকরাও যে এতো আদর পায় ঝানতাম না
মন্তব্য করুন