ইউজার লগইন

আমাদের ঘরে ঘরে রাজনৈতিক নেতা প্রয়োজন একজন করে......

আমাদের ঘরে ঘরে রাজনৈতিক নেতা প্রয়োজন একজন করে......

কথাটি ক্ষোভের নয়, বাস্তবতা বিবেচনায়। এই দেশে সবকিছুতে রাজনৈতিক মেরুকরণ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে হয় চুপ চাপ সকল অত্যাচার সহ্য করে যেতে হবে নতুবা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে আজ একথা বলতে বাধ্য হলাম।

আমরা সারাক্ষণ চীৎকার করে গলা ফাটাই আর আওয়ামীলীগ এর দালাল হিসেবে পরিচিত হই অনলাইনে, কিন্তু বাস্তবে তার চিত্র পুরাই ভিন্ন। নিজ এলাকায় মাঠের রাজনীতিটাই আসল। সেখানে হিসেবটা কে নেতার কতটুকু স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে তার উপর। সেখানে আদর্শের রাজনীতি নিতান্তই ভাঁড়ামী। দিন শেষে অনলাইনে যত বড় বড় হিন্দি চুল ফেলিই না কেন, এলাকার সন্ত্রাসী ছেলেটাই খাঁটি আওয়ামীলীগার। তাদের স্বার্থই সবার আগে বিবেচনা করেন আমাদের নেতারা আপন স্বার্থেই। কোন কিছুতেই ন্যায়বিচার আমরা পাবো না। এই অধিকার আমাদের নেই। কারণ আমরা এলাকায় নেতার হয়ে চাঁদাবাজি করতে পারি না। কিছুদিন পর পর পত্রিকায় দেখি অমুক মুক্তিযোদ্ধার এমন করুন অবস্থা, অমুক মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন। কেন এমন হচ্ছে? কেন এমন অবস্থা হবার আগেই তা আমাদের নজরে আসে না? কিংবা আমরা সাবধান হই না? কেনই বা সব হারিয়ে সর্বশান্ত হবার পরে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে?

একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে যতটা গর্ব করি ততটা আক্ষেপ করি, বাবাকে ভর্তসনা করি কেন সে নীতি বিসর্জন দিয়ে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান পাকা করেননি? মাঝে মাঝে রীতিমত বিরক্ত হই অতিভদ্র এবং সৎ মানুষটির উপর। সততার সবটুকু দিয়ে মানুষ করেছেন তিন সন্তানকে। তাই সৎভাবে বেঁচে থাকতে শিখেছি বাবার কাছ থেকেই। কখনো কারো ক্ষতি করাতো দূরে থাকুক চিন্তায়ও আসে না। আর সেই বাবার সন্তান হয়ে এলাকার সন্ত্রাসীর কাছে অপমানিত হতে হয় আমাকে, বাবাকে।

সারাজীবনের সৎ উপার্জন এবং মায়ের জমানো টাকায় সামান্য একখানা জমি ক্রয় করেন বাবা। তখন আমরা ভাইবোন বেশ ছোট, আমি নিজেই স্কুলে পড়ি। সমস্যা হয়নি ততদিন যতদিন যেই জমিতে কিছু করার কথা ভাবেননি। এক সময় আমরা বড় হই, উপার্জনক্ষম হই। পারিবারিক খরচের পরে মা অল্প অল্প করে জমিয়ে মাত্র দুই কক্ষের একখানা ছোট টীনশেড ঘর করে ভাড়া দেন। আর তাতেই পাশের জমিতে বসবাসরত এলাকার সন্ত্রাসীর নজর পড়ে এই ছোট জমিতে। ভাড়াটিয়াকে বের করে দিয়ে সে গেইট লাগিয়ে দেয় সেই জমিতে। আমার বৃদ্ধ বাবা গেলে তাকে হুমকি দেয় প্রাণে মেরে ফেলার। দীর্ঘদিন যাবত এমনিতেই পড়ে থাকে সেই ঘর। এলাকার লোকজনের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে চাঁদা দাবী করে। কিন্তু পরিবারের হাল ধরা একমাত্র আমার পক্ষে তাদের দাবী মেটানো সম্ভব নয়, সামর্থ্য এবং নৈতিকতা কোন দিক থেকেই।

গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন মা পড়ে আছেন বিছানায়। একমাত্র পুত্র সন্তান হবার কারণে আমার অনুপস্থিতিতে মা- এর চিকিৎসার সব ঝামেলা সামলাচ্ছে ছোট দুই বোন। হাজারো টেনশন নিয়ে প্রবাসে পড়ে থাকা আমি এবং আমার স্ত্রী দূর থেকেই খোঁজ খবর নিতে হয়। পরিবারের খরচ ছাড়াও মা- এর এই চিকিৎসার খরচের জন্য অন্তত কারো কাছে যেন হাত পাততে না হয় সেটাই উদ্দেশ্য। দেশে যাই মা-কে দেখতে, অল্প কিছুদিন একটু মা-কে কাছে পাওয়া। মা যেন তার পুত্রকে কাছে পেয়ে অর্ধেক সুস্থ হয়ে উঠেন। কিন্তু না, পৃথিবীর সব ঝামেলা এসে পড়ে তখনই। একটু শান্তিতে মায়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আসবো তাও হয়ে উঠে না। থানা থেকে ঘরে ফিরেই ব্যাগ নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাই।

বাবার কেনা সেই জমিতে যাই কি সমস্যা তা দেখতে। পাশের জমির সেই ছেলেকে ভদ্র ভাষায় বলি গেইটটা খুলে দিতে। গেইটতো খুলবেই না, উলটো হুমকি দেয় সেই জমিতে যেন আর না যাই। থানায় যাই, ওসিকে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলি। ওসি সাহেব বলে থানায় কোন সমাধান হবে না, আদালতে যেতে। সেদিন থানায় একটি জিডি করে, পরদিন আবারো যাই সেই জমিতে। এবার সাথে ছিল আমার ছোট বোন আর এক বাল্যবন্ধু। বলা নেই, কওয়া নেই দৌড়ে এসে সেই ছেলে গায়ে হাত তোলে আমার, আমার বোনের এবং আমার বন্ধুর। থানায় ফোন করি, তারা ফোর্স পাঠায়। যথারীতি সবকিছুর শেষে পুলিশ আসে। এসে দুই পক্ষকে থানায় যেতে বলে। বার বার আমার করা জিডির কথা বলার পরেও পুলিশ নির্বিকার। তাদের অনুরোধে থানায় যাই জমির সকল কাগজপত্র নিয়ে। আমরা থানায় যেয়ে বসে থাকি, আসে না সেই ছেলে। প্রায় তিনঘন্টা পরে সে তার মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে থানায় হাজির হয়। পুলিশের কাছে নালিশ করে আমি এবং আমার বোন নাকি তার বৃদ্ধ মায়ের গায়ে হাত তুলেছি। পুলিশ আবারো সময় দেয় পরদিন থানায় যাবার। সেই রাতে আমার ফ্লাইট। আমাকে চলে আসতে হয়। পরদিন বিকেলে বাসায় পুলিশ আসে, আমাকে খুঁজতে। অভিযোগ আমরা নাকি ঐ ছেলের ঘরে যেয়ে তাদেরকে মারধর করেছি। আমার বোন মোটামুটি উচ্চকন্ঠেই ঝারি দেয় পুলিশকে।

পরদিন আমার বোন আদালতে যেয়ে মামলা করে। গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হয় সেই ছেলের আদালত থেকে। কিন্তু হায়, রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থাকলে দেশের আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো যায়। এবারের পরিবারের উপর হুমকি আসতে শুরু করে দ্বিগুন এবং তা প্রকাশ্যেই। থানায় যোগাযোগ করা হলে জানায় তারা নাকি খুঁজে পাচ্ছে না আসামীকে। অথচ আসামী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোনে জানানো হলে সে তাচ্ছিল্যের জবাব দেয় তাকে নাকি ঘর থেকে ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারবে না।

হুম, এই আমাদের সোনার বাংলা। এর জন্যই তরুন বয়সে বঙ্গবন্ধুর এক ডাকে জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করতে ছুটে গিয়েছিলেন বাবা। এর জন্য দিনের পর দিন এক সময় আওয়ামীলীগের জেলা অফিসে না খেয়ে শুইয়ে থাকতেন দলের জন্য। এর জন্য এখনো মুখ বুজে সহ্য করেন সবকিছু। এরজন্য আমাদের ভাইবোনদের প্রাণ দিয়ে দেশকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন ছোট বেলা থেকেই। এরজন্যই আমরা এখনো আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় রাখতে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাই। এরজন্য সবকিছু ফেলে নির্বাচনের সময় দেশে ছুটে যাই যেন নৌকা না ডুবে যায় বঙ্গবন্ধুর। এরজন্যই মনে মনে ভাবি, কেন হলাম সফটওয়ার প্রকৌশলী, হওয়া উচিত ছিল অন্য কিছু...।।

পোস্টটি ১৫ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


একমত!

এ টি এম কাদের's picture


দুঃখিত এবং মর্মাহত ! মন্তব্য করতে ও লজ্জা হচ্ছে ! জাতি হিসাবে কত নীচে নেমে গেছি আমরা ! একটি আওয়ামী সরকারের আমলে একজন সন্মানিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁর পরিবার প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীর হাতে নিগৃহীত হবেন, এটা খুবই লজ্জাজনক ! জাতির একজন হিসাবে নিজেকেই ঘৃণা হচ্ছে আমার ! তবে আশ্চর্য হচ্ছিনে আমি ! '৭১ এর পরবর্তী রাজনীতি আমি দেখেছি ! সেদিন যারা পাকি-সন্ত্রাসীদের [রাজাকার, আল বদর, দালাল ] পক্ষপুটে আশ্রয় দিয়ে পরবর্তী সন্ত্রাসের ফল ভোগের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিল তারা কিন্তু সবাই আ লীগ । [ ’৭১ এ ৯৮% মানুষ ছিল বঙ্গবন্ধুর দলের সমমর্থক ] পরবর্তীতে প্রথম সুযোগে এরাই হরফ করা শুরু করে সংখ্যালগুর জায়গা, জমি, সম্পদ । আপনার মাননীয় পিতার কাছে সেই সময়ের কথা জেনে নিতে পারেন । বঙ্গবন্ধু এসব জানতেন কিন্তু কোন অ্যাকশন নেননি । আ লীগের হৃদপিন্ডে পচন ধরেছিল সে সময় থেকে । আর এখনকার যে আ লীগ তাকে নিকৃষ্টতম রাজনৈতিক দল বললেও কম বলা হয় । এরা সৈরাচার আর নীতিচ্যূত বামদের [ যারা বঙ্গবন্ধু হত্যায় উল্লাস প্রকাশ করেছিল ] নিয়ে সরকার গড়েছে , ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হেন অনৈতিক কর্ম নাই যা করছেনা । এ রকম নীতিচ্যূৎ নেতা আর সরকার থেকে কিইবা আশা করা যায় !

বাঙ্গালীর দূঃখ মনে হয় কোনকালে যাবেনা । মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সাধারণ মানুষের পরম কাঙ্খিত সেকুলার বাংলাদেশ বুঝি কোনকালে আর হলোনা !

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.