আমি চাই না সে বেহেশত
আমার আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন আজ ৩৩ বছর আগে।কেন জানি না এতদিন পরও বাবার প্রতি ভালবাসা বেড়েছে বই কমেনি।আমার ছেলে জোনয়েদ যত বড় হচ্ছে, ওকে আমি যত দেখি ততই বাবার স্মৃতি আমার কাছে স্মৃতির অবয়ব ছেড়ে বাস্তবতার রূপ পরিগ্রহ করে।ছেলে মেয়ের প্রতি আমার আবেগ অনুভূতি বাবার উপর প্রতিস্থাপন করে যখন দেখি, আজ অনেক অনেক নিজেকে অপরাধী মনে হয়। ভাবি আমার মত বাবারও নিশ্চয়ই এমনি অনুভূতি ছিল। মা বাবার সাথে সন্তানের একি এক অমোঘ বন্ধন, একি অমোঘ মায়ার অভেদ্য জাল।এ জাল তো কোন গার্মেন্টসে তৈরী সুতার জাল নয়।এ জাল যে শরীর নামক অবয়ব খানির শিরা উপশিরা, রিদয় থেকে রিদয় নামক অদেখা অনুভুতির ভান্ডারের অনু পরমানুর সমন্বয়ে বা মানুষের জ্ঞানের পরিধির বাইরে আরও অনেক অনেক কিছুর সমন্বয়ে গঠিত।যা পলকে আক্রান্ত করে। অথচ তখন কেন বুঝিনি?
গত রাতে (জানুয়ারী,১৫,২০১৪ খ্রীঃ)বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম।তা অনেক দিন পর। বাবার স্বাস্থ্য আগের চেয়ে আরও ভাল হয়েছে।কিন্তু দাড়িগুলো কেন জানি একটু ছোট লাগল।স্বপ্নে বাবা যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তা আমার মনে হয়নি, মনে হচ্ছিল বাবা কোথায় যেন বেড়াতে গিয়েছিলেন। আমি বাবাকে বললাম।বাবা তুমি তোমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত বিস্তারিত আমাকে বল আমি ব্লগে, পত্রিকায় ও বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ করব।বাবা অনেক মিষ্টি করে হাসলেন।তখনই আমার ঘুম ভেংগে গেল। আমি বার বার “রাব্বির হাম্হুমা কা মা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা” পড়তে লাগলাম। আর ভীষন কান্না পাচ্ছিল।কাঁদলামও।
নিজের অজান্তেই বার বার অভিযোগ করছিলাম এতদিন পর এলে?
বাবার উপস্থিতিতে আর ও অনেককে সেখানে দেখলাম। তবে বাবা ছাড়া আর কারও অবয়ব পরিস্কার ছিল না।
আমার কষ্ট ছেলেমেয়ে সহ্য করতে পারে না।বেশী কাঁদার সুযোগও নেই।ওরাও কান্না আরম্ভ করলে এত রাতে বিপদ।তাই সহসাই ক্ষান্ত দিতে হল।শান্ত ও ফ্রেশ হবার পর আমার আফসোস হতে লাগ্ল, কেন আমার ঘুম ভাংল আর ঘুমের মাঝে বাবা যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন কেন তা মনে হয় নি। তা না হলে হয়ত বাবার কাছ থেকে জানতে পারতাম, বাবা কোথায় থাকেন, কি করেন, কিইবা খান, নাকি ওখানে কোন খাবারের প্রয়োজন হ্য় না। সেখানে কি আমাদের পৃথিবীর মত ভোটাভুটি এবং ভোট নিয়ে এমন মারামারি হানাহানি হয়।ভোট দিলেও দোষ না দিলেও দোষ।যারা ভোট দিতে যায়নি তারাও যেম্ন আক্রান্ত হচ্ছেন।যারা গাটের পয়সা খরচ করে ভোট নামক শাকের করাতে হাত লাগিয়েছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। সেখানে কি হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান এমনকি পৃথিবীতে যে এক লক্ষ তেত্রিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ তেত্রিশ হাজার (এক লক্ষ পার্থক্য)পীর পয়গম্বর এসেছেন, তাদের অনুসারিরা কি ভিন্ন ভিন্ন গৌত্রে বিভক্ত, নাকি সৃষ্টিকর্তা এক হবার সুবাদে সবাই একই ধর্মে দিক্ষিত,তা হলে সে টা কোন ধর্ম ।সেখানে কি ধর্মে ধর্মে মারামারি হানাহানি হয়, নাকি একই ধর্মের লোক একই উপাসনালয়ে সুইসাইড বোমা মেরে নিজের মতের বিরোধীতা করার পরিণাম বুঝিয়ে দেন।পৃথিবীতে সবাই ভাবে আমার ধর্মই বড় তাই অন্য ধর্মের লোককে হেয় করে দেখেন (যার যেখানে সুযোগ আছে),নাকি আমার ধর্মই ঠিক তাই বাকি সব ধর্মের মানব মানবীরা কি জ্বলন্ত আগুনে পুড়ছে?
একখানি কাভার্ড ভ্যান। ভিতরে অসহায় কয়েকজন মানুষ।ধর্মের খাতিরে হউক বা রাজনীতির খাতিরে হউক বা ভাড়া করা হউক কিছু মানুষ নামক নরপশু ঘিরে ধরেছে।আনন্দ উল্লাসের যেন, কমতি নেই। হাত ছাফাই করার এত বড় সুবর্ণ সুযোগ কি আর পাওয়া যাবে।তাই মার পেট্রোল বোমাটা ফাটা বোমা।
আর আক্রান্ত অসহায় মানুষটি অনাগত নিজের ও অন্যান্যদের পরিনতির কথা বুঝতে পেরে, হাত জোর করে কয়েক মুহুর্ত সময় ভিক্ষা করলেন।ডিজিটাল এ যুগে, যান্ত্রিক এ যুগে আমরা অনেক কিছু দিতে পারলেও সময় কাউকে দিতে পারি না। সবাই আমরা যন্ত্রের মতই চলছি।এখানেও তাই হল, না স্ময় দেয়া যাবে না।তবে এখানে দিতে না পারলেও আমরা সবার জন্য সময়ের ব্যবস্থা করতে পারি। যেখানে গেলে শুধু সময় আর সময়। আর তোমাদের কে অসময়ে এম্ন অফুরন্ত সময়ের ব্যবস্থা করে দেবার জন্য আমরা এ দুনিয়াতে পাব অর্থ বিত্ত, হব রাজনীতির রাজা, আর তোমরা সেখানে কেমন থাকবে জানি না,কিন্তু আমরা নিশ্চিত স্বর্গালয়ে অফুরন্ত ভোগ বিলাসে অনন্ত অসীম কাল কাটাব।তোমরা জীবন্ত আগুনে জ্বলবে আর তোমাদের কেম্ন কষ্ট হয় তা দেখব,তোমাদের শরীর হাড় মাংস পুড়বে আমরা তা অবলোকন করে যে আনন্দটা উপভোগ করব তার কি কোন তুলনা কোন কিছুতে হয়?
কোন মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে মেরে যদি একটি রাজ্য ও আমার হয় তবু ধিক সে রাজ্যের, আর যদি এমন কষ্ট দিয়ে মানুষ মেরে আমার বেহেশত লাভও হয় তবে আমি চাই না সে বেহেশত।
জানুয়ারী,১৮,২০১৪ খ্রীঃ
অপরাধীরা রাষ্ট্র বা বেহেশত, কিছুই পায় না।
অপরাধীরা রাষ্ট্র বা বেহেশত, কিছুই পায় না@ যত তাড়াতাড়ি এ চরম সত্যটা অপ্রাধীরা বুঝতে পারবে তত তাড়াতাড়ি পৃথিবীটা শান্তিময় হয়ে উঠবে। কেমন আছেন মীর ভাই।
বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? ওরা তো জানোয়ারদের চেয়ে কম বোধ সম্পন্ন।
আমরা বন্ধু, আমাদেরকেই ঘণ্টা বাঁধতে হবে। নয়তো আমরা আমাদের উত্তসরীদের কি জবাব দিব।
আমাদের আমজনতার চাওয়া না চাওয়ায় ক্ষমতালোভীদের কিছুই যায় আসে না
মন্তব্য করুন