আকাশ বাবুর রাগের কারনে (প্রথম পর্ব)
আকাশ বাবুর রাগের কারনে (প্রথম পর্ব)
বিকেলে আকাশ বাবু হঠাত ভীষন রেগে গেল। এমনই রেগে গেলেন, যে চিল্লাচিল্লি হাত পা ছুড়াছুড়ি করতে আরম্ভ করলেন। সামনে যাকে পাচ্ছেন তাকেই তুলোধুনো করছেন । তারই জেড়ে গাছপালা পত্রপল্লবের দোলাদুলি, শুকনা পাতা, ছেড়া কাগজের টুকড়া, পাকপাখালি, ঘড়ের বাইরের মানুষের আরম্ভ হল ছুটাছূটি। কোথায় গেলে আকাশ বাবুর এই সংহার মূর্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
সুন্দরী মেয়ে সুবর্ণ এক্সপ্রেস তিনটার সময় ঢাকা থেকে চিটাগাং যাবার জন্য বের হয়েছিল। কিসের চিটাগাং যাওয়া, আকাশ বাবুর মেজাজ দেখে সেই যে পণ্ডিত মশাইয়ের দেশ ব্রাহ্মণ বাড়িয়ার ছোট পণ্ডিতের ঢেড়ায় আশ্রয় নিয়েছে, কখন বাবুর রাগ পড়বে আর কখন বের হবে, ভবিতব্যই জানেন।
এদিকে এক ছেলে একতা এক্সপ্রেস ঢাকার পথে যমুনা ব্রীজ পার হয়ে সেই যে যমুনার তীরে নিধূয়া পাথারে গা ঢাকা দিয়েছে, কে জানে তাঁর সাথে আরও বাস ট্রাক, টেম্পু তারা কখন সাহস করে বের হবেন। তবে আকাশ বাবুর মেজাজ পুরাপুড়ি ঠান্ডা না হওয়া তক তারা কেন, সারা দেশের কেউ যে কোথাও নড়া চড়া করবে না, তা বলাই বাহুল্য।
এদিকে সুন্দরবনের হড়িণ চিত্রা, রাজশাহীর পদ্মা, ধুমকেতু আর সব কোথায় কোথায় গা ঢাকা দিয়েছে, কেউ কিছু বলতে পারছে না।
বসে আছি দোকানে, দেখি এক তরুণ ছেলের তরণী গাল ফ্রেন্ডের বায়না তাড়াতাড়ি এক’শ টাকা ফ্লেক্সি কর, বাবার সাথে জরুরী কথা বলতে হবে, অবণী বাবুর গোস্বার জন্য সেই যে এক দোকানে আটকা পড়েছে, যেতেও পারছে না ফ্লেক্সিও করেতে পারছে না। এদিকে বান্ধবীটীর বার বার ফোন, তুমি এই কাজটা করতে পার না, না জানি তুমি ভবিষ্যতে আমার কি কেয়ার করবা? এমন কতজন যে কত রকম সমষ্যায় পড়েছে, তা কে বলতে পারবে?
খুলনা চিটাগাং সিলেট সহ বিদেশ যাবার যে সব উড়োজাহাজ যাব যাব করছিল তাদের কার কি অবস্থা হয়েছে একটু খোঁজ খবর করা দরকার।
এদিকে আকাশ বাবুর তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা আবহাওয়া অধি দপ্তরে বারবার ক্রিং ক্রিং ফোনের ঘন্টি বেজেই চলছে,আকাশ বাবুর মেজাজ মর্জির খোঁজ খবর নিতে। তা শুধু সিভিল এভিয়েশন থেকেই না, বি,আই, ডব্লিউ, টি, এ সহ আরো যে সকল নৌ বা জাহাজ চলাচল সংস্থা আছে, তাছাড়া বিভিন্ন রেডিও টেলিভিশণ চ্যানেল খবরাখবরের জন্য ঘণ্টির পর ঘন্টি বাজিয়ে চলছে।
আকাশ বাবুর রাগ কমা তো দুরের কথা তাঁর গোস্বা মনে হয় আরও বেড়েছে। তাই দাপাদাপি ছুড়া ছুড়ির সাথে যোগ হয়েছে কান্না কাটি। কিছুক্ষন থেকে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছেন। কাদার সময় নাট সিটকানো গুলো শিলাবৃষ্টির মত করে পাকা বাড়ি বা টিনের ছাদে পড়তে লাগল। এই শিলাবৃষ্টি এতই প্রখর যে কিছু কিছু ঘরের সি আই শিট বেকা ত্যারা হয়ে দাত ভেংচি করার মত পরে আছে।
কিছুক্ষন আগে খবর পাওয়া গেল, বাবুর গোস্বার সময় হাতের কাছে পাওয়া কয়েক জনকে এমনই প্যাদানি দিয়েছেন যে আটজন ইতি মধ্যে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরপারের দিকে যাত্রা করেছেন। হয়তবা তারা এখনও পৌছুতে পারেন নাই, রাস্তা পথেই আছেন। আর যারা একটু কম প্যাঁদানী খেয়েছেন তাড়াও ঢাকা চিটাগাং বা নিকটস্ত হাসপাতালে শয্যা নিয়েছেন।
বাবুর এই গোস্বাকে পুজি করে কিছু বদমাশ পোলাপাইন, শুধু পোলাপাইন বলি কেন, হরি পদর ভায়রা ভাই বাবুল মিয়া বাবুর কান্না অর্থাত শিলাবৃষ্টির ভিডিও করেছে, আর এই ভিডিও নানান জনকে দেখিয়েছে। এই কথাটুকুন বাবুর কাছে একটু খাতির যত্ন পাবার মানষে কে জানি আবার তিনার কানে তুলেছেন। বাবু তো শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছেন। বচ্চা পোলাপাইন কি করছে না করছে তাতে উনার তেমন মাথা ব্যাথা নাই, যত রাগ ওই বাবুল মিয়ার উপর। একথাটা বাবুল মিয়ার কানেও গেছে, বাবুল মিয়া তো ভয়ে বেশ কবার পায়খানায় যাওয়া আসা করেছে ।ভাগ্যিস প্রথম বার শুনার সময় সে বাড়িতেই ছিল নয় তো কাপড় চোপড় নষ্ট করা বিচিত্র কিছু ছিল না। বাবুল মিয়া সুপারিশের জন্য ইতি মধ্যেই কৃষ্ণা কার্তিক গণেশ আরও কারও কারও জানি শরণাপন্ন হয়েছেন।
মোঃ আবুল হোসেন
এপ্রিল,০৪,২০১৫ খ্রীঃ
উত্তরা- ঢাকা,
মন্তব্য করুন