ইউজার লগইন

মেহরাব শাহরিয়ার'এর ব্লগ

পদ্মা :: গল্পে , স্মৃতিতে , মননে , কল্পনায়

(উৎসর্গ: আহমাদ মোস্তফা কামাল ভাই , যার লেখা না পড়লে এই ভোরবেলায় এই পাগলাটে অনুভূতিগুলো টাইপের অক্ষরে তোলার সাহস পেতাম না)

২২ টি বছর আগে এক সরিষা ক্ষেতের আইল ধরে এক ভীষণ হলুদ বিকেলে আমরা অনেকগুলো ভাইবোন মিলে গিয়ে দাঁড়ালাম এক প্রকান্ড নদীর তীরে । আমার বয়স তখন পাঁচ , জগত পাঠশালার ভীষণ মনযোগী ছাত্র । সে বিকেল কি মায়ায় জড়ালো জানিনা , ২২ বছর পরেও প্রতিটা বিকেলের অন্তত একটি মুহুর্তে এ চোখ জোড়া , আকুল হয়ে সে নদীতে প্রতিফলিত হয়ে আসা স্বর্ণ রশ্মি খোঁজে।

সে নদীর নাম "পদ্মা "। আমার একান্ত আপন নদী , যেখানে মিশে আছে আমার পূর্বপুরুষের শেকড়। সেই বিকালের স্বাক্ষী কয়জন ছিলাম আমরা? অ্যালবামে রেখে দেয়া রঙিন ছবিতে মুখ গুনে ১৮ জনকে খুঁজে পাই ।

পত্রিকার স্মৃতি :: সাপ্তাহিক বিচিত্রা

আমার বর্ণশিক্ষার বয়স আর পত্রিকা পড়ার বয়স মোটামুটি কাছাকাছি।

সময়টা তাহলে ৮৮ কি ৮৯ ই হবে। বাংলা পত্রিকা নামক জিনিসটা দুর্লভই ছিল বৈকি।ইরানে বাংলাদেশের পত্রিকা যেত না, আর না যাওয়াটাই স্বাভাবিক।ইরাক সীমান্তবর্তী ইরানের ঐ অংশে সব মিলিয়ে বাংলাদেশী ১০/১২ জন ডাক্তার ছিলেন। বছরে গড়ে তিন/চারজন দেশ ঘুরে যেতেন, যাবার সময় লাগেজে ভরে কিছু পত্রিকা নিতেন। সেই পত্রিকা এরপর হাতে হাতে বদল হত হাজার হাজার বর্গ কিলোমিটার। কতবার করে পড়া হত তার ইয়ত্তা নেই। ছয় মাস কি এক বছরের পুরনোর পত্রিকারও আবেদন কমত না এতটুকু।

৯০ দশকের বিটিভি পর্দার বিজ্ঞাপনো-পিডিয়া

যেখানে আছে ফুল , সুগন্ধ সেখানেই
স্কুল থাকলে , হোমওয়ার্ক থাকবেই
ড্রামের তালে আছে ছন্দের খেলা
যেখানে আনন্দ , সেখানে কোকা-কোলা
কোকা-কোলা


আকাশে তারা জ্বলবে পাখিরা গাইবেই
সবার জীবনে তৃষ্ঞা থাকবেই
তৃষ্ঞা মেটাতে এইতো আসল
আনন্দ সবসময়
কোকা কোলা

ঠিকই ধরেছেন । ৯৫ কি ৯৬ সালে বিটিভিতে প্রচারিত কোকাকোলার বহুল জনপ্রিয় জিংগেল।

আরেকটু পেছনে, আমার প্রাইমারী স্কুল তথা শৈশবে জীবনে ফেরা যাক। ৯৪ এর জানুয়ারী ভীষণ শীত , অথচ আমি অস্থির হয়ে আছি কোকা-কোলার তৃষ্ঞায় । কেবল আমার মত শিশুরাই না , সেবার শীতে কোকা-কোলা তৃষ্ঞায় কাতর হয়ে রইল সারা দেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোকা-কোলার সেই মার্কেটিং প্রমোশনকে সম্ভবত আর কেউ কখনও ছাড়িয়ে যেতে পারেনি।

চরম ফাও প্যাঁচাল-২

বাঙালী যতই অস্বীকার করুক "চন্দ্রবিন্দু"র প্রতি তাদের গভীর প্রেমের কোন ঘাটতিই নেই। শৈশবে তারা "হাঁও মাঁও খাঁও, মাঁনুষের গঁন্ধ পাঁও" জপ করে ভূতের গল্প শোনে, যৌবনে তারা শুঁড়িখানায় যেতে চায়, হরদম শুভ্র দেবের গলার ভীষণ নাঁকি নাঁকি গান শুনে আমোদিত হয় ,আর খানিক বয়স বাড়লে ভুঁড়ি গজায়।

"চন্দ্রবিন্দু"র প্রতি আমার গভীর ভালবাসাও সেই পিচ্চিবেলার বর্ণশিক্ষার প্রথম পাঠ থেকেই।মানুষ যে কারণে আইপড ভালবাসে, যে কারণে যুগে যুগে ভোক্সওয়াগন ভালবেসেছে , ঠিক সে কারণেই আমিও চন্দ্রবিন্দুকে আমার মন দিয়েছিলাম। আকারে ছোট, ভীষণ কিউট আর চাঁদ-তারাসদৃশ মুখশ্রীই কেবল নয় , অন্য আর কোন বর্ণটি আছে যাকে বাকি বর্ণেরা মিলে মাথায় তুলেও রাখে?

ফাও প্যাচাল

পড়াশোনায় মন বসাতে পারি না ইদানিং , পারি না মানে একদমই না। ভার্সিটিতে বিশাল রিসার্চ বিল্ডিংয়ের উদ্বোধন হয়েছে জানুয়ারীতে। সেখানে নিজের একটা অফিসরুমও বরাদ্দ পেয়েছি, কিন্তু আসা হয় না এই রুমে।ধুলোর স্তর জমে যেত বাংলাদেশ হলে, এখানে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মাঝের ৬ টি মাস রুম খুলে পরিচ্ছন্ন করে গেছে বলে আগের মত তকতকেই রয়ে গেছে । দিন দুয়েক আগে সিদ্ধান্ত নিলাম সকাল সকাল রুমে চলে আসব । আসার পর ভালই লাগছে , একটা দেয়ালের পুরোটা কাঁচের , সেখান থেকে শহরের অনেকটা অংশ দেখা যায় । খানিক দূরেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঢেকে রাখা স্টেডিয়াম। এসব দেখে আগডুম বাগডুম করে দু'দিন সন্ধ্যা হয়ে এল। পড়াশোনা জিনিসটা আর হবে কিনা কোনদিন কে জানে

Third Week of May তে দেখা অসাধারণ পাঁচটি Documentary

ডকুমেন্টারির প্রতি আমার আগ্রহটা অনেক পুরনো । মুভির ধাক্কায় ডকুমেন্টারি দেখাই হয়নি মাঝের দু'বছর । এ সপ্তাহে মোটামুটি মনস্থির করেই দেখে ফেললাম ৮/৯ টি ডকুমেন্টারি । তার মাঝে সেরা ৫ টি নিয়ে হালকা রিভিউ :

মার্চ অফ দ্যা পেঙ্গুইনস (March of the Penguins):
220px-March_of_the_penguins_poster.jpg

ক্রিকেট স্মৃতি :: রাবণের পুনর্জন্ম পর্ব

ক্রিকেট খেলাটা বুঝতে একটু দেরীই হয়ে গেল , দোষটা অবশ্য আমার নয় , দোষটা ক্রিকেট না চেনা পৃথিবীর সে অংশের, যেখানে আমি দীর্ঘদিন কাটিয়েছি ।

ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম পত্রিকার পোকা , খেলার পাতাগুলি পড়তে পড়তে যেমন উইপোকার মত কাটতাম , তেমনি খেলার রেজাল্ট মুখস্থ করে , খাতায় লিখে বা কাউকে বলে জাবর কাটতাম গরুর মত।

৯৪ সালের কথা , ভোরবেলা ইত্তেফাক আসত , আমি জীবনে প্রথম বাংলা পত্রিকা পড়ছি । ইত্তেফাক বরাবরই খেলার খবরে ফাঁকি দিত , দেশের বাইরের খেলাধুলা নিয়ে যা এক আধটা খবর থাকত সেটাও ক্রিকেট নিয়ে । খবর পড়ে পড়ে ক্রিকেট জ্ঞান বাড়াতে মনযোগ দিলাম ।

সময়ের ডায়েরী-১

এক
দেশে থাকতে আমার বসের মাসের অন্তত দু'সপ্তাহ কাটতো ওয়াশিংটনে। প্রতিবার দেশে ফিরেই কি করবেন সেটা মোটামুটি মুখস্থ হয়ে গেল । উস্কখুস্ক চুল আর লালাভ চোখ নিয়ে প্রথম মিটিংয়ে বলবেন -- "আমার জেটল্যাগ কাটেনি"। বারবার শুনতে শুনতে জেটল্যাগ খাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা হালকাভাবে মাথাচাড়া দিল।

মুনাফেকি

১..
সেই দুঃস্বপ্নটা আবার ফিরে আসছে .....

---- ---- ----- ------ ------
--
---
---
---
--- --- --- -- --- ---- ---- -- - - - - - -- - --- - - - --- ---- - - - --- - ---- -- - - -- -- - ------

আব্বু , তোমাকে যে চিঠির কথা কখনও বলতে পারব না

ঢাকা , সেই সন্ধ্যা

আব্বু ,
১৬ বছর তো কত্ত লম্বা সময় , তাইনা ? কত সহস্র দিন ,আমার কতই না বদলে যাবার কথা , ছোটবেলার সময় পেরিয়ে কত বড় হয়ে যাবার কথা । তবুও কেন সেই পুরোটা সময় নিমিষেই বিলীন হতে চলেছে? কেন বারবার ১৬ বছর আগের দিনটার কথা মনে পড়ছে , যেদিন শেষবার এই পাচিল ঘেরা ঘরে এসেছিলাম? আম্মু কেন আজ এতগুলো বছর পর আমার জুতার ফিতে বেঁধে দিল , শেষ মুহূর্তে তোমার চোখ কেন জলে ছলছল হয়ে উঠল ? এমন অশ্রুসজল তোমাকে যে আমার বড্ড অচেনা লাগে।

এতগুলো দিন পরে চোখের সামনে দু'পাশে ডানা বিস্তৃত বিমান দেখে আমার না কত উচ্ছসিত হবার কথা ছিল ? ক্ষণিকের শিহরণ আমার , তারপর কেন সব দপ করে নিভে গেল ? সেই ছোট্টবেলার পর ১৬ বছর মাঝে রেখে প্লেনে চড়ছি ভেবে যে উত্তেজনা অনুভব করেছিলাম , সেটাকি চোখের পলকে হারিয়ে যাবার কথা ছিল ?

আব্বু ,

আহা , সিগ্রেট !!

ধোঁয়া ওড়ানোতে পারস্য বেজায় পটু ।গাঁয়ের পুরুষেরা যৌবন পেরিয়ে প্রৌড়ত্বের দাঁড়প্রান্তে উপনীত হতে না হতেই তামাক ভরা স্টিলের তামাকদানীর সাথে সবার পকেটে ঠাঁই করে নেয় নোট টোকার মত বিশেষ কিসিমের পাতলা ছোট ছোট কাগজ। সে কাগজে তামাক মুড়ে যত্ন করে বানানো শলাকার মাস্তুলে ধোঁয়া ওড়ে হর-হামেশা । সন্ধ্যার পরে কারও ঘরে ঢুকলে অবধারিতভাবেই কানে আসে শিশা টানার টগরবগড় শব্দ । মোটাসোটা বৃদ্ধাংগুলি সদৃশ আরেক ধরণের শলাকাও চোখে পড়ে খুব বেশি , বয়স হওয়ার জেনেছি তার নাম চুরুট । আর খানিক কোনাচে করে ঝুলে থাকা পাইপ ? সে তো বলতে গেলে ঠোঁটে ঠোঁটে ....

শম্বুক বাস-গতি , সেদ্ধ বাস-মতি

"৬০ বছর বেঁচে থাকা কোন মানুষ ২০ বছর ঘুমিয়ে কাটায়" এহেন মামুলি তথ্যও যখন প্রথমবার মস্তিষ্কের নিউরণে যুতসইভাবে আঘাত করেছিল, শিরদাঁড়া বেয়ে নেমেছিল শীতল স্রোত । দু'দিন বাদেই যখন মস্তিষ্ক জানবে ৬০ বছরের ১০ বছর বাসে কেটে গেছে , তখন আর অবাক হব না । ঢাকার ট্রাফিক জ্যামকে টেক্কা দিয়ে বাস-কারা-জীবনের দৈর্ঘ্য ১০ বছরের নীচে নামিয়ে আনা এখন রীতিমত সৌভাগ্যের ব্যাপার।

ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১০ অ্যানালাইসিস -১ (বিগ ম্যাচে জায়ান্টরা কেমন?)

গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে অনেক কিছুই ঘটে যায় , টগবগিয়ে লালে লাল হয়ে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বকে ছেয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া , পূর্বের আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি আর রানার আপ আর্জেন্টিনাকে তুমুল বীরত্বে পরাভূত করে বলকানের দেশ বুলগেরিয়া সবার নজর কাড়ে । কখনও বা প্রথমবার বিশ্বকাপে এসেই বিশ্ব কাঁপায় ক্রোয়েশিয়া , বা ন্যাড়া মাথার হাসান সাসের দল তুরস্ক পৌছে যায় ফাইনালের দোড়গোড়ায় । কিন্তু একটা জায়গায় ব্যাতিক্রম হয়ে ওঠেনা

উপনির্বাচনের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি

[ভোলার উপনির্বাচন দেখে হঠাৎ করেই ক্লাশ এইটে দেখা একটি উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে ইচ্ছে হল]

আহমেদ তফিজউদ্দিন পারিবারিকভাবে আমার দাদার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন । ৭০ এর গণপরিষদে নির্বাচিত এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হন ।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ : এই সুন্দর স্বর্ণালী সকালে (ফিচার রিপোর্ট)

১....
ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটার দিকে তাকিয়ে আজও চোখের জল ফেলেন আদাবর এলাকার গৃহিনী সবিতা শাহনাজ । খেলাচ্ছলে ঘরের ইলেকট্রিসিটির প্লাগ পয়েন্টে হাত দিয়ে বসেছিল ৪ বছরের অবুঝ শিশু শাহেদ। সেই যে ছেলেটি জ্ঞান হারালো , আর ফিরে আসেনি। ছেলের চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না সবিতা ।