আব্বু , তোমাকে যে চিঠির কথা কখনও বলতে পারব না
ঢাকা , সেই সন্ধ্যা
আব্বু ,
১৬ বছর তো কত্ত লম্বা সময় , তাইনা ? কত সহস্র দিন ,আমার কতই না বদলে যাবার কথা , ছোটবেলার সময় পেরিয়ে কত বড় হয়ে যাবার কথা । তবুও কেন সেই পুরোটা সময় নিমিষেই বিলীন হতে চলেছে? কেন বারবার ১৬ বছর আগের দিনটার কথা মনে পড়ছে , যেদিন শেষবার এই পাচিল ঘেরা ঘরে এসেছিলাম? আম্মু কেন আজ এতগুলো বছর পর আমার জুতার ফিতে বেঁধে দিল , শেষ মুহূর্তে তোমার চোখ কেন জলে ছলছল হয়ে উঠল ? এমন অশ্রুসজল তোমাকে যে আমার বড্ড অচেনা লাগে।
এতগুলো দিন পরে চোখের সামনে দু'পাশে ডানা বিস্তৃত বিমান দেখে আমার না কত উচ্ছসিত হবার কথা ছিল ? ক্ষণিকের শিহরণ আমার , তারপর কেন সব দপ করে নিভে গেল ? সেই ছোট্টবেলার পর ১৬ বছর মাঝে রেখে প্লেনে চড়ছি ভেবে যে উত্তেজনা অনুভব করেছিলাম , সেটাকি চোখের পলকে হারিয়ে যাবার কথা ছিল ?
আব্বু ,
ডক ধরে প্লেনের ভেতর পা ফেলতেই কি ভীষণ একা লাগছে । ছোটবেলায় কত কত বার এই চেনা যানে চড়েছি , আজ না আমি কত বড় হয়েছি। তবুও কেন তোমার ধরে থাকা হাতটা এত খুঁজছি ? মনে আছে তোমার , আমি খুব কম আব্দার করতাম ? শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম , আমরা প্লেনের একদম সামনের এই চওড়া সিটগুলোতে না বসে কেন সবসময় পেছনে যাই ? কি বলেছিলে তুমি মনে নেই? জানো আব্বু, আজ এয়ারপোর্টের লোকটা আমার নামের সাথে তার নামের মিল দেখে আমাকে একদম সামনের চওড়া সিটটা দিয়ে দিল , ছোট্টবেলার সেই ভীষণ শখের চওড়া সিট । তারপরও একটা বারও ভাল লাগার অনুভূতিটা কেন দোলা দিল না ?
আব্বু ,
এই প্রথম প্লেনে আমার পাশে তুমি নেই । এই প্রথম আমি জানালার ধারে বসিনি । মনে আছে ? সবসময় আমি জানালার ধারে বসতাম ?
তুমি একটিবার আমায় একটু বলবে , আমি কি হারাতে চলেছি ? সাড়ে আটটা বাজতে বড়জোর অর্ধসহস্র সেকেন্ড বাকি , আমি প্রতিটা সেকেন্ড হারিয়ে খুঁজছি। প্রতিটা মুহূর্তের সাথে আমি যেন জীবন থেকে মহাকাল হারিয়ে ফেলছি । কেন মনে হচ্ছে , আরেকটা দিন , আরেকটা দিন আমার ভীষণ প্রয়োজন । কেন আরেকবার লোডশেডিংয়ের আঁধারে ঢাকা আমাদের ঐ বড় বারান্দায় অস্থির হয়ে বসে রাত কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে ?
আব্বু,
তোমরা কি এখনও দাঁড়িয়ে আছো ইমিগ্রেশনের পেছনে ? আমাকে দেখছিলে না তোমরা , একটু আমাকে খুঁজে নেবার জন্য কতবার চেষ্টা করছিলে। আমি দূর থেকে নিষ্পলক হয়ে তোমাদের দেখছিলাম । আমি চলে এসেছি , সব ফেলে এসেছি , তবুও কেন দাঁড়িয়ে ছিলে তোমরা এতটা ক্ষণ ? আমি বেশি পড়াশোনা নিয়ে কথা বলি দেখে ছোটবোনটার না কত অভিমান আমার উপর ? সব অভিমান ভুলে কেন এত কাঁদছে ও ?
আব্বু ,
প্লেনের শব্দ গাঢ় হচ্ছে , আমি যেন জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ফেলছি । আরবীতে ক্যাপ্টেন কিছু বলছে , আমার কানে ঢুকছে না । শুধু বুঝতে পারছি , আমাকে আজ যেতেই হবে । কেউ যদি বলত --- আজ প্লেন ডানা মেলবে না । আর হয়ত শ'খানেক সেকেন্ড । কেউ বলছে না আব্বু , কেউ বলছে না , প্লেনের দরজা আটকে যাচ্ছে । আমার শক্তিহীন নিথর হাতগুলো সিটবেল্ট বাঁধছে । আমি না কত বড় হয়ে গেছি । সেই ছোট্টবেলায় কতবার প্লেনে চড়েছি , কই কখনও কি কেঁদেছি তোমার মনে পড়ে ? রানওয়েতে আসতে প্লেন নড়তে শুরু করতেই কেন আমার দু'চোখ ফেটে কান্না আসছে , কেন মনে হচ্ছে অসীমে আমি হারিয়ে যাচ্ছি ? আমার শ্বাস কেন বন্ধ হয়ে আসছে ? পাশে বসা তোমার বয়েসী এক রাশভারি ভদ্রলোক , তার সামনে এত বড় আমার এমন আচরণ কি মানায় বল ?
আব্বু ,
এ শহরকে আমি এতটা ভালবাসি তুমি বিশ্বাস করবে ? বিদ্যুতের জ্বালায় , গরমের জ্বালায় , মশার জ্বালায় কত না অভিযোগ ছিল আমার । কেন এ মাটি ছুঁয়ে থাকতে আমার এত আকুতি । প্লেন রানওয়েতে দৌড়াচ্ছে , গতি বাড়ছে , আমি অনুভব করছি চাকা ছুঁয়ে আছে আমার মাটি , আমার নাড়ির বন্ধন । ভেতরে তীব্র উৎকন্ঠা কেউ যেন এই মাটি , এই মায়ের কোল থেকে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে । জীবনে কোনদিন কখনও এতটা অসহায় লাগেনি যে আমার । হঠাৎ অনুভব করি , মাটি ছেড়ে আকাশে উড়াল দেবার অনুভূতি । কেউ যেন টেনে হিঁচড়ে আমার নাড়ি ছিন্ন করে ফেলল । ঘাড় উঁচিয়ে, পাশের লোকটির জানালা দিয়ে বারবার ঢাকাকে কেন বারবার দেখে নেবার এত চেষ্টা করি , কেউ আমাকে তোমরা বলবে ?
আব্বু ,
জানতে যদি , জানালার পাশে নেই বলে শহরটাকে ঠিকমত দেখতে পাচ্ছি না বলে কি ভীষণ আফসোস হচ্ছে আমার । আমার ইচ্ছে হচ্ছে আকাশের তারার মত করে ঢাকার আলোকবিন্দুগুলো গুনে আমার ঘরের জানালা খুঁজে নিই । ক্ষণিকের ঝলকে ল্যাম্পপোস্ট আর গাড়ির আলোয় স্পষ্ট করে একটা রাস্তা যেন দেখি ।কেন যেন ভীষণ করে মনে বলে ওটা গুলশান থেকে রামপুরার রাস্তা ? ঐ রাস্তা ধরে গত আড়াইটা বছর কি ভীষণ ক্লান্তি শেষে আমি এমন সময়টায় ঘরে পৌছুতাম তোমার মনে আছে ? নিজেকে কেন হঠাৎ এত ভীষণ নিঃস্ব একাকী লাগছে , ধুলোমলিন ভীষণ জ্যামের ঐ রাস্তায় একটা বার ফিরে যেতে কেন এত অস্থির লাগছে ?
আব্বু,
তোমার মনে আছে আমি বাইরের কোন মানুষের সামনে কোনদিন কাঁদিনি ? আজ তবে কেন আমি দু'চোখে রুমাল চেপে ধরে অঝোরে কাঁদছি ? প্লেনের খাবারের মেন্যুটা তুমি সবসময় আমাকে পড়ে শোনাতে , আজ তুমি কেন পড়ে শোনাচ্ছ না ? কেন এখনও বারবার বোকার মত ভাবছি বাংলাদেশের আকাশসীমা পেরিয়ে গেলাম কিনা? নিজের দেশের শেষ নিঃশ্বাসটুকু আঁকড়ে ধরার জন্য কেন আমার এত ভীষণ আকুতি । হয়ত ভীষণ অপ্রাসঙ্গিক , তবুও মাথায় কেন বারবার বাজছে :
বিরহেরও অনলেতে..
পুড়িয়া অন্তরেএএ...
হারাইলাম আপন ঠিকানা..আ.।
স্বপ্নবাঁশীর
তাই
জটিল মনের জটিল পাশা জটিল মন্দিরা ...
বাহরাইন , গভীর রাত
আব্বু ,
আজ বুঝলাম আমি সেই ষোল বছর আগের দিনটা থেকে মাত্র একটা দিন বড় হয়েছি । জানো তুমি , এখনও বারবার বাহরাইন থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব কম ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছি ? এখান থেকে কি আর পেছনে ফেরা সম্ভব বলবে তুমি ?
তোমরা কি সেহরী খেতে উঠেছ সবাই ? সত্যি পারছো আমাকে ছাড়া কিছু মুখে দিতে ? মনে পড়ে আব্বু , ৮ বছর বয়েসে সেই যে তোমাদের সাথে সেহরী খেতে শুরু করলাম , তারপর আর কোনদিন সেহরী মিস হয়নি । আরও যখন ছোট ছিলাম , তখন আমাকে সেহরীতে ডাকোনি বলে কতই না নীরব অভিমান করতাম ? আজ এত বছর পর কেন তোমাদের উপর সেই অভিমানটাই কি আমার আবার হচ্ছে ?
আব্বু ,
প্লেন জুড়ে ভীষণ নীরবতা , অনেকে ঘুমাচ্ছে , অনেকে সীটের পেছনে স্ক্রীণে মুভি দেখছে । শুধু আমি নিষ্পলকভাবে মানচিত্রে প্লেনের গতিপথ দেখছি । ছোটবেলায় তুমি আমাকে কোলে তুলে আমাদের দেয়ালে টানানো বিশাল ম্যাপটায় পৃথিবী চেনাতে মনে আছে তোমার ? জানো ? গতিপথ দেখে বুঝতে পারছি , আমি এখন ইরাকী কুরদিস্তানের উপর দিয়ে চলছি , এইতো পাশেই ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশ , যেখানে আমার জন্ম , যেখানে জড়িয়ে আছে জীবনের প্রথম ১০ টি বছরের স্মৃতি । জন্মদাত্রীকে ছেড়ে জন্মস্থান ছুঁয়ে যাওয়া কত কষ্টের তুমি জানো ? স্বদেশ থেকে যত দূরে যাচ্ছি , বেদনাগুলো শেল হয়ে বিঁধছে এই রক্তাক্ত হৃদয়ে সে রক্ত তুমি চেনো?
আব্বু ,
ঘন্টার পর ঘন্টা কিসের নেশায় আমি গতিপথ দেখছি আমি জানিনা। তোমার চেনানো দেশগুলির আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছি এক এক করে --- তুরস্ক , বুলগেরিয়া , রোমানিয়া , চেক । এমন বৃত্তাকার গতিতে চললে পথে পড়বে হাংগেরি , জার্মানি , নেদারল্যান্ডস , লন্ডন। রোমানিয়ার আকাশে যখন বিমান , তখন দেখেছি দিগন্ত জুড়ে নতুন সূর্যের বর্নিল আভা । ইরাক , তুরস্ক , বুলগেরিয়া , কুয়েতের আকাশ ছুঁয়ে যাবার সময় বাইরে দেখেছি ঘুটঘুটে আঁধার । তবুও জানালা দিয়ে বারবার কি যেন খুঁজেছি , হঠাৎ দু'একবার মেঘহীন আকাশের ফালি দিয়ে নিচে ঝলমলে কোন জনপদ দেখেছি । ইউরোপে দেখেছি সাজানো খামার , দিগন্ত প্রসারী সরলরেখার মত রাস্তা । বিশ্বাস কর , এর কোনটাই আমার ঢাকার মত না ।
গানের কতগুলো লাইন কখন যে আপনাআপনি বদলে ভেতরে বাজছে ---
ইচ্ছে করছে জানতে কাঁদছে কি মন?
কি করছে আমার ঢাকা এখন ?
লন্ডন , সকাল..
আব্বু ,
লন্ডন ছেড়ে আবার সুদীর্ঘ যাত্রা । এবার ১০ ঘন্টা , মাঝে অতলান্তিক । মজার ব্যাপার জানো ? বৃত্তাকার পথ ঘুরতে গিয়ে বিমান আইসল্যান্ডের খুব কাছে চলে গেল , কানাডার আকাশেই রইল প্রায় ৪ ঘন্টা । অনুভব করছি , আমি অনেক অনেক দূরে চলে এসেছি , আর ফিরতে পারব না , কবে তোমাদের আবার দেখব জানিনা। আম্মুকে জিজ্ঞেস করো , ঢাকা এয়ারপোর্টে এতগুলো ইফতার কেন আমাকে বানিয়ে দিয়েছিল ? আমি একা মানুষ এত কিছু খেতে পারি ? নিজের অংশটাও তো পারলাম না খেতে , এত কষ্ট হচ্ছিল দূরে তোমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে , সবটুকু এয়ারপোর্টের নামাজের ঘরে দিয়ে এসেছি । মনটা এত অস্থির হয়ে আছে ঐ ইফতারটুকুর জন্য । কেন সাথে করে নিয়ে এলাম না , পচে যেত যদি তবুও একটু মুখে দিয়ে দেখতাম , মায়ার যে ছোঁয়া ছিল ঐ খাবারে , সেটা আর কবে ফিরে পাব ?
...................
টেক্সাস , বিকেল
আব্বু ,
মাত্র ১৫ মিনিট আগে আমার অ্যাপার্টমেন্টে এসে পৌছেছি । বিশ্বাস হতে অনেক কষ্ট হয় । এত দূরে চলে এলাম , কবে আবার তোমাদের দেখব জানিনা । তোমরা অনেক ভাল থেক , আমার জন্য অন্তত , কথা দাও থাকবে , আজ থেকে শুরু আমার ঘরে ফেরার অপেক্ষার পালা । জানি এতটা দূরে আসা আমার দরকার ছিল ভীষণ , না আসলে জানা হত না ঐ ভীষণ কষ্টের দেশটা , অমন বিশৃংখল শহরটা আমি এত ভালবাসি । জানা হত না , তুমি কোনদিন এমন করে কাঁদতে পারো , জানা হত না চিরকাল পড়াশোনার জন্য বকুনি দেয়া আমার ছোট বোনটা এমন অধীর হয়ে প্রহরের পর প্রহর জল ফেলতে পারে । জানা হত না , ঘর থেকে বেরুবার সময় ছোটবেলার কথা মনে করে মা আমার জুতার ফিতা বেঁধে দেবে , সে জুতোর উপর পড়া দু'ফোটা অশ্রু সবার চোখ এড়ালেও বিকেলের আলোয় আমার চোখে মুক্তো হয়ে চমকাবে । অ্যালাবামা এখান থেকে বেশ কিছুটা দূর , মাঝে লুইজিয়ানা । কিন্তু আমি যে টেবিলটায় বসে লিখছি , তারপাশে জানালা । মৃদুস্বরে আমার বন্ধুর ল্যাপটপে চলছে ---
কেউ জানলা খুলে অ্যালাবামায় বাংলা গান গায়
কেউ পড়ছে কোরান বসে তার জাপানী জানালায় ......
ছোট বোনটা আমার , বাসার প্রতিটা মানুষ সারাক্ষণ , সারাটা সময় তোর কথাই শুধু ভাবে , জানিস তো ? আমি চলে এসেছি , আমাকে ফোন করে বলবি না ভাল কোন সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছিস সে কথা ? আমার , আমাদের বাসার সবার জীবনে সবচেয়ে বড় উৎসবের দিনটা হবে সেদিনই । আমি জানি , সেদিনটার অপেক্ষায় আজ থেকে আমার অস্থির প্রহর শুরু...। আব্বু-আম্মুকে সবসময় যত্নে রাখিস, এক ফোটাও কষ্ট দিও না । তোকে সবাই এত বেশি ভালবাসে বলে সবার কত কত আশা তুই বুঝবি তো ?
আম্মু , কোনদিন তোমায় বলা হল না , আমি তোমার কাছে কতটা ঋণী । রোজ তুমি আমার ঘরের চৌকো জানালা দিয়ে ঐ আকাশটা দেখে নিও । তোমার আমার সেই একই আকাশ ...
জানলার শার্সিতে বারবার যেন লেগে ফিরে আসছে কথাগুলি ----
আমার জানলা দিয়ে ...
আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়
একটু বর্ষা , একটু গ্রীষ্ম , একটুখানি শীত
সেই একটুখানি চৌকো ছবি আঁকড়ে ধরে রাখি
সেই পৃথিবীতে বিকেলের রং হেমন্তে হলুদ ...
অনুভব করছি আমি শেষবারের মত কাঁদছি....
আমি ২৬ বছরের জীবনে কখনও ঘরের বাইরে সেভাবে খুব বেশিদিন থাকিনি । বন্ধুদের সাথে অনেক ঘুরতে যেতাম , কিন্তু ঘর মিস করতাম না কখনও । আমার ধারণা ছিল , আমি অন্যরকম কেউ । ভেতরে ভেতরে অল্প যতটা অনুভূতি হত সেটাও কখনও আব্বু-আম্মুকে বলিনি। বাইরে আসার সময় ঘনিয়ে এলো যখন , আমি জানতাম আমি নির্বিকার ভাবেই বিদায় নেব । কিন্তু কি হল আমি জানিনা ... জীবনে ৩০ টা ঘন্টা আমার ভেতরটা কুঁকড়ে ছোটমানুষের মত হয়ে গেল ।
চিঠিটা লিখেছিলাম ১৫/১৬ আগস্ট , ২০১০ । খুব ইচ্ছে হয়েছিল আব্বুকে দেব । কিন্তু আমার ভেতরের বড় মানুষটা জেগে উঠল ভীষণ তাড়াতাড়ি , আর দেয়া হল না , কাগজটা রেখে দিলাম সযতনে । খুব আনাড়ি হাতের লেখা , জানিনা প্রথম ঘর ছাড়ার সময় কারও এমন অনুভূতি হয়েছিল কিনা ।
আজ রাতে হঠাৎ এত মনে পড়ছে বাসার কথা , টাইপ করে ফেললাম । আজ না করলে কে জানে হয়ত সারাজীবনেও করা হত না ।
সে রাতে আমার কি হয়েছিল , সেটা ব্যাখ্যাতী্ত । কারও কাছে , ভাষাটা ন্যাকামি লাগতে পারে , মন থেকে ক্ষমা করবেন
আপনার লেখাটা পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, ঠিক একইরকম অনুভুতি আমাকে ২ বছর আগে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে যেদিন বাবা মায়ের ভেজা চোখ পিছনে ফেলে অন্য দেশে এসেছি, মনে হলে এখনো গলা বেয়ে কান্নার দলা উঠে আসে ... অনেক অনেক শুভকামনা রইলো ...
পুরো চিঠিটা পড়লাম। কি বলা যায়? ভালো থাকবেন। ঘরের ছেলে সহজে ঘরে ফিরে যান, দোয়া করি। আপনার জন্য শুভকামনা।
দোয়া করবেন , যেন ফিরতে পারি
ন্যাকামী কেনো লাগবে শাহরিয়ার। আমরা যারা প্রবাসী তারা প্রত্যেকেই কখনো না কখনো এ ধরনের অনুভূতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। সবারটা হয়তো এক নয় কিন্তু কাছাকাছিতো বটেই।
প্রথম দিকের প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের, নষ্টালজিয়ায় ভুগবেন। একসময় সহ্য শক্তি জন্মাবে এটাই আশার কথা।
ভালো থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ তানবীরাপু । ফেরার সময় আমার পাশের সিটে বসেছিলেন যে ভ্দ্রলোক , উনার সাথে বাহরাইনে ল্যান্ড করার ২০/২৫ আগে প্রথম কথা হল ।
জিজ্ঞেস করলেন : "তুমি করেই বলি , প্রথমবার বাইরে যাচ্ছ?"
বললাম , জ্বি । উনি বললেন "সারাটা পথ আমার ১৯৮৭ সালের স্মৃতি মনে পড়ছে । আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল তুমি প্রথমবার বাইরে যাচ্ছ । ৮৭ তে আমি স্কলারশীপ নিয়ে জাপানে পড়তে যাই , সেদিন সবাইকে ছেড়ে যাওয়াটা কি ভীষণ কষ্টের ছিল , বলে বোঝাতে পারব না। আজ কেন যেন তোমাকে দেখে মনে হল ঠিক এমন কিছু একটা অনুভব করছিলাম । কিছু মনে কর না তুমি । অনেকদিন পেরিয়ে গেছে , এখন আমি আমেরিকায় সেটেলড। প্রথমবার সবাইকে ছেড়ে যাওয়াটা ইমোশনালি অনেক কঠিন। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে"
আমি বাকিটা সময় উনার কথাগুলো শুনলাম কেবল
এবার এখানে বাঙালি যারা ছিল , প্রায় প্রত্যেকেই এখন দেশে । আমি মাত্র ৫ মাস আগে এসেছি বলে যাবার কথা ভাবিনি। আজ ঘন্টাছয়েক আগে সবার শেষে গেল আমার বন্ধু । হঠাৎ এত খারাপ লাগা অনুভূতিটা মাথাচারা দিল
আমি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলাম আপনার অনুভূতি। এটাও বুঝতে পেরেছিলাম কেনো পোষ্ট প্রথম পাতায় নাই। একটা এ্যাডভাইস, ব্লগিং করেন ওর ফেসবুকিং, মাথাকে বেশি চিন্তা ভাবনা করতে দিয়েন না। সময় কিছুটা প্রলেপ দিবে ব্যাথার ওপর
পোষ্ট কেনো প্রথম পাতায় নাই? প্রথম পাতায় অনায়াসে এই পোষ্ট থাকতে পারে
বড়মানুষ আর ছোটমানুষের দ্বন্দ্বে ভীষণ ইতস্তত লাগছিল । ক্ষমা করবেন , আবার দিচ্ছি
[কমেন্ট সাবমিট করে দেখি পোস্ট প্রথম পাতায় নেই, আমার কমেন্টটাও গায়েব।]
চোখ ভেজানো লেখা...
মেহরাবের জন্য শুভকামনা
আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী নুশেরাপু । কমেন্টটা হারানোর কথা শুনে খারাপ লাগছে । আমি প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম
আমি প্রবাসে নেই তবে যেদিন প্রথম ইন্ডিয়ার দার্জিলিং যাবার জন্য বর্ডার পার হলাম। মানে মাত্র যেই বাংলাদেশ বর্ডার থেকে ভারতের বর্ডারে ঢুকলাম, কেন জানি পেছনে ফিরে তাকালাম। সেই প্রথম বাংলাদেশকে বাংলাদেশের বাইরে থেকে দেখলাম। অদ্ভুত শিহরন লাগলো! মনে হচ্ছিল ঐ আমার নিজের দেশ! ইস! কি সুন্দর। এই অনুভুতি আরো প্রবল হলো যখন ইমিগ্রেশনে বাজে ব্যাবহার পেলাম আর বয়ষ্ক একজনকে চরম অপমানিত হতে দেখলাম। নিজেকে সবচেয়ে গরীব আর অসহায় মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল তখনি আবার বাংলাদেশ ফিরে আসি। সত্যিই অদ্ভুত অনুভুতি।
আসলেই তাই । ইন্ডিয়া যাবার প্রিপারেশন নেয়ার সময় অন্যরকম একটা ফিলিংস হচ্ছিল , যেটা দেশে কোথাও বেড়াতে যাবার সময় হয়নি । আরও গভীরভাবে অনুভব করবেন যখন জানতে পারবেন না কখন ফিরে আসা হবে ।
অনেক ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য
মর্মস্পর্শী ! মেহরাব শাহরিয়ারের অনুভূতির প্রকাশভঙ্গী অসাধারন ।
দোয়া করবেন
মন খারাপ করা লেখা। খুব ভালো লেগেছে। খুব।
মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা, এটিকে চিঠি বলবো না রোজ নামচা? পড়তে গিয়ে এটিকে বাবা ছেড়ে আসা মা ছেড়ে আসা সব বাচ্চাদের কান্নার মত শোনালো।
আমার বাবা মারা গেছেন ১৩ বছর হলো।
ভালো থাকবেন শাহরিয়ার ।
-আমারও একই কথা
বাচ্চু এভাবে লেখার জন্য তোমার শাস্তি হওয়া উচিত। এভাবে কেউ লেখে? এবার আমি দেশ ছেড়ে চলে আসার সময় অনেকটা এরকমই বোধ হচ্ছিল।
এবার ফিরে এসে বুকে পাথর বেঁধেছি, পণ করেছি কাঁদবোনা। তোমার লেখা পড়ে.....। লেখা একদম ভালো হয়নি। কিচ্ছু হয়নি।
অনেক অনেক ভালো থেকো।
আক্রান্ত হলাম আবেগে!
কিছু আর বলা নিস্প্রয়োয়জন বা বলার ভাষা নাই!
কষ্ট লাগলো খুবি
পুনশ্চ: লেখাটা প্রিয়তে থাকলো... কখনো লেখাটা মুছে দিয়েন না.
বুকের গভীরে ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।ভালো থাকেন।
মন্তব্য করুন