ইউজার লগইন

চরম ফাও প্যাঁচাল-২

বাঙালী যতই অস্বীকার করুক "চন্দ্রবিন্দু"র প্রতি তাদের গভীর প্রেমের কোন ঘাটতিই নেই। শৈশবে তারা "হাঁও মাঁও খাঁও, মাঁনুষের গঁন্ধ পাঁও" জপ করে ভূতের গল্প শোনে, যৌবনে তারা শুঁড়িখানায় যেতে চায়, হরদম শুভ্র দেবের গলার ভীষণ নাঁকি নাঁকি গান শুনে আমোদিত হয় ,আর খানিক বয়স বাড়লে ভুঁড়ি গজায়।

"চন্দ্রবিন্দু"র প্রতি আমার গভীর ভালবাসাও সেই পিচ্চিবেলার বর্ণশিক্ষার প্রথম পাঠ থেকেই।মানুষ যে কারণে আইপড ভালবাসে, যে কারণে যুগে যুগে ভোক্সওয়াগন ভালবেসেছে , ঠিক সে কারণেই আমিও চন্দ্রবিন্দুকে আমার মন দিয়েছিলাম। আকারে ছোট, ভীষণ কিউট আর চাঁদ-তারাসদৃশ মুখশ্রীই কেবল নয় , অন্য আর কোন বর্ণটি আছে যাকে বাকি বর্ণেরা মিলে মাথায় তুলেও রাখে?

বাংলা ভাষাকে মায়াবী করে তোলার পেছনেও চন্দ্রবিন্দুর অবদানের শেষ কোথায়? চন্দ্রবিন্দু বিহনে "হাতি শুঁড় তোলে"র বদলে যদি বলতে হত "হাতি সুর তোলে", কেমন লাগত বলুনতো ? সঠিকভাবে চন্দ্রবিন্দু প্রয়োগ করতে জানাটাও একরকম শিল্প , সে শিল্প ঠিকমত প্রয়োগ না করতে পারলে হতে পারে ঘোরতর সংকট।শৈশবের বাগধারা শেখার দিনগুলিতে এমনতর চন্দ্রবিন্দু সংকটে পড়ে কি বেহাল দশাটাই না আমার হয়েছিল , সেই গল্পই না হয় বলি ।

বাংলায় একটি বাগধারা আছে "গুড়ে বালি" , তা বোধ করি সবাই জানেন,(আখ/খেজুর)গুড়ে বালি থাকাটাও কতটা মর্মান্তিক তাও জানেন।শৈশবে বাগধারাটি প্রথম শেখার পর , শুধু তার অর্থই জানতাম তা নয়, সেটা দিয়ে চমৎকার বাক্যও রচনা করতে পারতাম। কিন্তু কোন এক কারণে বাগধারাটির শাব্দিক অর্থ আমার কাছে রহস্যাবৃত রয়ে গেল। কথ্য বাংলায় "গুঁড়ো" কে "গুঁড়ে" বা "গুঁড়া"ও বলা হয় । কিন্তু উচ্চারণের সময় ভূত-তাড়ানো মনোভাব থেকে নাকিসুর বর্জনের চেষ্টায় "চন্দ্রবিন্দু" টা অনেকেই উহ্য রাখেন । "গুঁড়া দুধ" তখন হয় - "গুড়া দুধ" , সোজা সাপ্টা ইংরেজি যার "Powder Milk" । যাই হোক , যেভাবেই হোক , আমি "গুড়ে বালি"র গুড়কে সোজা গুঁড়া সাব্যস্ত করে "গুড়ে বালি" কে উল্টে পাল্টে শাব্দিক অর্থটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।ফলাফল যা দাঁড়ালো, Powder Sand থেকে "গুঁড়া বালি" আবার সেখান থেকে Powder Sand , এই বৃত্ত থেকে বেরুতেই পারলাম না।বালি তো এমনিতেই গুড়া গুড়া সেটা আলাদা করে বলার কি আছে , কিছুতেই সে কথা মাথায় খেলতো না । অনেক চেষ্টার পর জোড়াতালি দিয়ে একটা ব্যখ্যা অবশ্য দাঁড় করানো গেল। এক বিকেলে ঘরের পাশে কনস্ট্রাকশনের জন্য রাখা বালুর ঢিবি থেকে হাত ভরে এক মুঠো বালু নেয়ার পরই হাতের ফাঁক গলে সবটুকু বালি ঝরঝর করে ঝরে গেল। বাগধারার নিগূঢ় অর্থও বোধ করি সেই মুহূর্তে টলটলে পরিস্কার হয়ে গেল।ভেবে দেখলাম , বালি ভেজা হলে বিনা বাক্য ব্যয়ে আপনার হাতের মুঠোয় বন্দীদশা মেনে নেবে ।কিন্তু শুকনো "গুড়া গুড়া বালি" আপনার সমস্ত ধ্যান-জপ-সাধনা বরবাদ করে দিয়ে হুড়মুড় করে হাত গলে বেরিয়ে যাবে,ঠিক তেমনি কোন ইচ্ছা বা চেষ্টা অহেতুক/হুদাহুদি/নিরর্থক ভাবে করার নামই "গুড়া বালি" ।

চন্দ্রবিন্দু সংক্রান্ত সংকট "গুড়ে বালি" তেই সীমাবদ্ধ রইল না, আছড় পরল অন্যান্য বাগধারার উপর। এর মাঝে একটি হল "গাঁয়ে মানে না , আপনি মোড়ল" ।সেবার চন্দ্রবিন্দু আমার চোখকে ফাঁকি দিল,আমি পড়লাম "গায়ে মানে না আপনি মোড়ল"। তারপর বহু বহুদিন আকাশ পাতাল ভাবলাম , কিসে থেকে কি হল , "গা=শরীর" মানে না "আপনি=You" মোড়ল কোথেকেই বা এল , কোথায় বা গেল ? বাক্য রচনা আর অর্থ যথারীতি এটারও জানা ছিল , শুধু কোথায় যেন সংযোগ করতে পারতাম না। এটার ব্যাখ্যাটাও শেষ পর্যন্ত বের হয়েছিল । তবে সেটা বেশ নাটকীয়ই বটে, বর্ণনা করতে গেলে আপনাদের কল্পনাশক্তি মোটামুটি পরিপক্ক হতেই হবে। ধরুন , দু'জন লোক সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে, প্রথম লোকটি বেশ বিবেকবান , কর্মঠ, চেহারায় ঝড়ে পড়ছে নূরের আভা। দ্বিতীয়জন রীতিমত অকর্মণ্য , গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো কিসিমের লোক, তবে গায়ে গতরে বেশ তাগড়া , ফিক ফিক করে ভিলেনী হাসি হাসে ,খোঁচা দাড়ি বিশিষ্ট মাঝ বয়েসী। কথা ছিল, সমাজ প্রথম মানুষটিকেই সেরার সম্মান দেবে, কিন্তু "একদিন সব কিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাওয়া" স্টাইলে দ্বিতীয় লোকটিই কোন ভাবে এলাকা জুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করল । মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিবেকবান লোকটির সমস্ত শরীর কাঁপছে বিবেকের তাড়নায় , কিছুতেই সে মানতে পারছে না , তার "গা=শরীর" মানছে না , তারপরও অনেক কষ্টে সে বশ্যতা শিকার করে দ্বিতীয় লোকটিকে বলল "স্যার আপনিই মোড়ল" । ব্যাস হয়ে গেল "গায়ে মানে না , আপনি মোড়ল"।

এই চন্দ্রবিন্দু দুর্বিপাকের ঘনঘটায় আরও বেশ ক'টি বাগধারা আমার কল্পনাশক্তি কর্তৃক নির্মমভাবে হয়রানির শিকার হল , তার মাঝে একটি না বললেই নয়, সেটি হল -- "মরার উপর খাঁড়ার ঘা" । আমি কোন এক অজানা কারণে জেনেছিলাম, "মরার উপর খোঁড়ার ঘা" । কল্পনায় যে ছবিটা আঁকতাম সেটি এমন -- "কেউ মরে গেছে , পড়ে আছে তার লাশ । কোন এক খোঁড়া লোক অবিরাম লাথি মেরে চলছে সে লাশে" -- কি বীভৎস । খোঁড়া লোক লাথিই মারতে পারবে না এমন কোন কথা নেই , তবে হাতে মারাটাই তার সাথে বেশি মানানসই। তার চেয়েও বড় কথা কিছুতেই ভেবে পেতাম না শেষ পর্যন্ত যদি মারামারিই, বীভৎসতা আর চরম বিপদই বুঝাতে হয়, তবে খোঁড়াকেই কেন আমদানি করতে হবে? তারপর নিজেকে প্রবোধ দিলাম,মনের মাঝে গড়লাম তার ব্যখ্যা, দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো-- "খোঁড়া লোকের পা ছোট , বা অকেজো , কিন্তু সেই পা-তেই তার অসীম শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে, ঠিক যেমন অটিস্টিক বাচ্চাদের মাথা ভর্তি থাকে গণিত। সেই পায়ে সে হাঁটতে পারে না বটে, কিন্তু একবার যদি পা তুলে কষে একটা লাথি মারতে পারে , তাহলে জীবন্ত মানুষের লাশ হতে সময় নেয় না" । একবার যদি সেটা ঘটেই যায় , খোঁড়া লোকের রাগ তাতেও পড়বে না , সে মেরেই যাবে , মেরেই যাবে , লোকে বলবে "মরার উপর খোঁড়ার ঘা"।

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

রাসেল আশরাফ's picture


কইছিলেন ফাও প্যাচাল পারবেন।কিন্তু আমরিকায় বইসা থেকে দেখি বাংলার কিলাস নিয়া নিলেন।

===========

লেখা ভালো লাগছে।

==================

আইজ রাইতে এই পোস্টে খেলবোরে শ্যাম।

মেহরাব শাহরিয়ার's picture


ফাও প্যাঁচালই বলতে পারেন । ফাও সিরিজের সবগুলিই লেখাই দেয়া হবে আমার রিসার্চ বিল্ডিংয়ের অফিসে বসে, রিসার্চের কাজে ফাঁকি দিয়ে। কাজেই বাই ডিফল্ট এইটা ফাও । আর লাইফে কিন্তু আমাদের সবারই সবচেয়ে বেশি ফাওগুলি কথাগুলি"বাংলা" সাবজেক্ট কে ঘিরেই Smile

লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

সামছা আকিদা জাহান's picture


আপনার লেখা পড়ে জানিনা কেন যেন খালি হাসি পাচ্ছে বিশেষ করে মরার উপর খাঁড়ার ঘা--এই প্যারাটা পড়ে।

নাকে খৎ , কান নিয়ে গেল চিলে ও নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ নিয়ে কিছু বলুন।

মেহরাব শাহরিয়ার's picture


নাকে খৎ, কান নিয়ে গেল চিলে এইগুলি শিখেছি আবার বড় হয়ে , একদম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সমেত । তবে এক কথায় প্রকাশ আর গানের কলি নিয়ে নানান টাইপের অদ্ভূত ভাবনা ভেবেছি ছোটবেলায় , সেগুলো শেয়ার করব একদিন

হাসাতে পারার কৃতিত্বের জন্য ছোটবেলার আমাকে থ্যাংকস Smile

অপু's picture


সুন্দর লেখা। Smile

মেহরাব শাহরিয়ার's picture


অনেক ধন্যবাদ

রশীদা আফরোজ's picture


আমার মনে হলো এতক্ষণ বাংলা শিক্ষকের লেকচার শুনলাম, অনেকদিন পর ফিরে গেলাম নবম শ্রেণীর ব্যাকরণ ক্লাসে। সালাম নেন স্যার।

রায়েহাত শুভ's picture


ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আপ্নের দিকে নজর দিয়া গেলাম
Cool Steve Glasses Day Dreaming Nerd Rolling Eyes Hypnotized চোখ টিপি

রশীদা আফরোজ's picture


বৃত্ত কি আমার দিকে নজর দিয়ে গেলে নাকি? মাশাল্লাহ বলেছেন তো? আমি কিন্তু কাজল দেই নাই। প্লিজ ৮ বার মাশাল্লাহ বলেন।

১০

রায়েহাত শুভ's picture


মার্শাল ল কৈতে কন কেনু? আপ্নে কি দেশে মার্শাল ল ডাইকা আন্তে চান???

১১

রশীদা আফরোজ's picture


আমার হাতের লেখা খারাপ নাকি বৃত্তর চোখের পাওয়ার কম বুঝলাম না।

১২

রায়েহাত শুভ's picture


আপ্নে কি গরিপ মানুষ? গাছে চড়তে পারেন্না? তাত্তারি এন্ছার দেন Wink

১৩

রশীদা আফরোজ's picture


্নসার কি দেবো, কি বইরতেছেন সেটাই বুঝলাম না

১৪

রশীদা আফরোজ's picture


এডিট: এনসার/ বইলতেছেন

১৫

রায়েহাত শুভ's picture


না মাইনে আপ্নে যদি গরিপ হন, তাইলে আপ্নের হাতের লেখা খারাপ হৈবো, আপ্নে গাছেও চড়তে পারবেন্না। সেল্লিগাই জিগাইলাম আরকি Smile

১৬

রশীদা আফরোজ's picture


হা হা হা।
হাতের লেখা আগে খারাপ আছিল যখন কলম দিয়া কাগজে লিখতাম, এখন কম্পিউটারে লিখি হাতের লেখা মাশাল্লাহ ময়মুরুব্বির দোয়ায় এখন ভালো।

১৭

রায়েহাত শুভ's picture


এক্কেবারে টাইপ রাইটারের মতো লেখা তাইনা? Wink

১৮

রশীদা আফরোজ's picture


ফকফকা-ঝরঝরা, নিজের লেখা দেখে নিজেই অবাক হই, মুগ্ধ হই।

১৯

মেহরাব শাহরিয়ার's picture


ব্যকরণের ক্লাসগুলি ভীষণ বোরিং ছিল , তাই না ? কিন্তু আপনারা সবাই লাইক করে গেলেন । ভাল স্টুডেন্টদের ব্লগ , বুঝছি !! Sad

ভাল লাগল আপনার কমেন্ট , ভাল থাকবেন Smile

২০

রায়েহাত শুভ's picture


লেখা পৈড়া Rolling On The Floor Rolling On The Floor Rolling On The Floor

২১

মেহরাব শাহরিয়ার's picture


Wink Wink Stare Stare Cool Cool

২২

সন্ধ্যা প্রদীপ's picture


Rolling On The Floor Rolling On The Floor Rolling On The Floor

২৩

মেহরাব শাহরিয়ার's picture


Innocent :Cool Smile Steve

২৪

জ্যোতি's picture


মজা Fishing

২৫

তানবীরা's picture


কেলাশ দেখি শেষ। সটুডেনট মাষটার সব ঘুমায়। আমিতো লেট করতে যেয়ে দেরি করে ফেললাম Sad

২৬

একজন মায়াবতী's picture


Rolling On The Floor Rolling On The Floor

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.