একজন সুইপারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা।
২০০২ সালের দিকে আমি কাজ করতাম কালুরঘাটস্হ রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলে।সেখানে ৩০/৩৫ বছরের বোকা-সোকা ধরনের একজন লোক কাজ করতো।তার নাম রাজু।রাজ বিহারী জলদাস(রাজু)।তত
তার সাথে আমার দারুণ ভাব ছিল।আমাদের ভাবের মূল কারণ আমরা দুজনেই একটু বেকুব(বোকা)টাইপের মানুষ।আমি কাজ করতাম যন্ত্রিক বিভাগে আর সে ছিল সুইপার মানে টয়লেট পরিস্কার
করতো।সেজন্য অনেকে আমাদের ভাবটাকে একটু বাঁকা চোখে দেখতো।সময়ে অসময়ে রাজু আমার কানের কাছে এসে ঘ্যান ঘ্যান করতো তাকে যেন আমি উপর থেকে নিচে নামিয়ে আনি অথাৎ
অফিসের টয়লেটগুলো ছিল দোতালায়।তার এই কাজ করতে ভাল লাগেনা।নাকে সব সময় গন্ধ লেগে থাকে।ঠিকমত খেতে পারেনা।তাছাড়া তার পূর্বপুরুষরা কেউ এই পেশায় ছিলনা।রাজুরা
বংশ পরিক্রমায় সবাই মৎস্যজীবি।আমি তাকে উল্টো প্রশ্ন করতাম তহলে এই লাইনে এলি কেন ? তার সোজা সাপ্টা জবাব পেটের দায়ে।আমি চুপ করে থাকতাম। রাজুকে আমি বোঝাতে
পারতামনা ছাপোষা একজন জুনিয়র অফিসারের পক্ষে একজন সুইপারকে প্রমোশন দিয়ে জেনারেল লেবার করার ক্ষমতা আমার নেই।
একদিন কথা প্রসঙ্গে আমার এক টেকনিশিয়ান বললো- জানেন স্যার রাজুর বাবা অনেক বড় মানুষ ছিলেন।উনার সৎকারের সময় অনেক অনেক বড় বড় মানুষ এসেছিলেন।পরে আমি
নিশ্তিত হয়েছিলাম রাজু উপমহাদেশের প্রখ্যাত ঢোল বাদক এবং একুশে পদক জয়ী বিনয় বাশীঁ জলদাসের পুত্র।শিল্পি বিনয় বাশীঁ পারিবারিক ব্য্যাপারে খুব উদাসীন ছিলেন।তাই শিল্পির পুরো
পরিবারটি দারিদ্যক্লিষ্ট ছিল।এ ঘটনা জানার পর আমি রাজুকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম।তখন ঝোকের বশে পত্রিকায় টুকটাক লেখালেখি করতাম।মনে মনে ঠিক করলাম রাজুকে নিয়ে
কোন পত্রিকায় একটা ফিচার লিখব।একদিন তাকে ডেকে তার এককপি ছবি দিতে বললাম।সে লাফিয়ে উঠল-স্যার আমাকে নিচে নিয়ে আসবেন ? না তোকে নিয়ে পত্রিকায় কিছু লিখব।
সে একদিন আমাকে একটা পিপি সাইজের ছবি এনে দিল।ছবিটা আমি যত্ন করে আমার মানি ব্যাগে রেখে দিলাম।
এর মধ্যে আমিও রাজুর মত পেটের তাগিদে চাকরী পাল্টে ফেললাম।যন্ত্রিকতা আর হাজারো ব্যস্ততায় মাঝে মাঝে ছবিটার কথা ভুলে যেতাম।আর যখন মনে পড়ত তখন একটা অপরাধবোধ
কাজ করত।একদিন স্হানিয় দৈনিক পূর্বকোণে রাজুকে নিয়ে স্বচিত্র লিখে ফেললাম।শিরোনাম ছিল একজন পরিচ্ছনতা কর্মীর কথা। ফিচারটা শেষ করেছিলাম অনেকটা এভাবে -একজন একুশে
পদক প্রপ্ত শিল্পির পুত্র হিসেবে রাজু কী একটু উন্নত কাজ পেতে পারে না ?
এই ১০ বছরে রাজুর সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি।রাজু কেমন আছে আমি জানিনা।রাজু সব সময় আমার কাছে একটা আবদার করত।সে একটু উন্নত কাজ চাইত।নিজের অক্ষমতার
জন্য কিছুই করতে পারিনি।আজ রাজুর থেকে আমি কিছু চাইবো।ক্ষমা। রাজু পারলে ক্ষমা করে দিস আমাকে।
বেশ লেখেন তো আপনি!
আমি ভাল লিখি (?)!!! ধন্যবাদ আপনাকে।
ক্ষমা চাইলে রাজু ক্ষমা করবে কেনো?
ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
মন্তব্য করুন