শাহাবাজ সাহেবের ঘটকালি
শাহাবাজ সাহেব আমার নতুন সহকর্মী।মাসখানেক আগে আমাদের সাথে জয়েন্ট করেছেন।নিস্পাপ চেহারার দারুণ স্মার্ট একটাছেলে।মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এম এস করা ছাত্র।কথায় কথায় হাসেন।কর্ম জীবনে নতুন হলেও একদুপুরে জানতে পারলাম তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।এই বয়সে তিনি সাত-সাতটি বিয়ের ঘটকালি করেছেন।অথাৎ তিনি একজন সফল(?)ঘটক।শুনে টাসকি খেয়ে গেলাম।এই ছেলে বলে কী?আমি এই বুড়ো বয়সে একটা ঘটকালি করতে গিয়ে কত নাকানি-চুবানি খাচ্ছি।আর শাহাবাজ সাহেব কিনা সাত-সাতটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন(কোন এক বিখ্যাত দার্শনিক বলেছেন যিনি ঘটনা ঘটান তিনি হলেন ঘটক !)সব বিয়েতে তিনি খেয়ে-ধেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও বিপপ্তি ঘটল ৫ম বিয়েতে।সেবার পাত্রী ছিল শাহাবাজ সাহেবের বন্ধুর ছোট বোন।বন্ধুমানে একেবারে ঘনিষ্ট বন্ধু।স্কুল থেকে ভার্সিটি এক সাথে পড়ালেখা ।এক সাথে নাওয়া খাওয়া।একেবারে হরিহর আত্মা।দু’জনের বাড়ীও একই এলাকায়।উল্লেখ্য উনার বন্ধুটি ছিলেন হিন্দু ধর্মালম্বী।ঘটক সাহেব একদিন যথারীতি প্রস্তাব নিয়ে পাত্রীর বাড়ীতে হাজির হলেন।পাত্রও বেশ ভাল।একেবারে উপযুক্ত পাত্রীর উপযুক্ত পাত্র।সবাই খুশী।এদিকে ঘটক সাহেব এবং পাত্রীর পরিবারের অজান্তে পাত্র-পাত্রীর মন দেওয়া-নেওয়া অনেক দূর এগিয়ে গেল।
একদিন পাত্রীর পরিবার গণক ঠাকুরকে দিয়ে দুজনের রাশি-কুষ্ঠি গুনিয়ে দেখলেন।ঠাকুর মহাশয় সব কিছু দেখে শুনে জানালেন এই বিয়ে কোনভাবে মঙ্গলকর হবেনা।ঠাকুরের সাফ কথা ! আর যাই হউক মেয়ের ভবিষৎত নিয়েতো কানামাছি খেলা যায়না।অভিভাবকেরা সিন্ধান্ত নিলেন এই বিয়ে কোনভাবে হতে পারেনা।অতএব বিয়ে বন্ধ।ঠাকুরের কথায় বিয়ে ভাঙ্গলেও দুজনের মন ভাঙ্গেনি।সবার অজান্তে পাত্র-পাত্রীর প্রেম এত গভীর হয়ে গেল কেউ টেরওও পায়নি।এখন দুজনের ভবিষৎত দুজনের হাতে।একদিন সব শংকা উড়িয়ে দিয়ে দুজনে পালিয়ে বিয়ে করে ফেললো।পাত্রীর বাড়ীতে শুরু হল ঘুর্নিঝড়।এই অশুভ বিয়ে কোনভাবে মেনে নেওয়া যাবেনা।অবশেষে সব দোষ চাপল ঘটক ব্যাটার কাঁধে।তাইতো তাইতো ঘটক প্রস্তাব না আনলেতো এই অঘটন ঘটতোনা।পাত্রীর পরিবারের রায়ে ঘটককে আজীবন পাত্রীর বাড়ীর ত্রিসীমানায় নিষিদ্ধ করা হল।এত অঘটনের পরেও শাহাবাজ সাহেবদের বন্ধুত্ব আগের মতই টিকে আছে।তবে দুবন্ধুর মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছে।এলাকায় তাদের বন্ধুত্ব আর প্রকাশ্যে থাকবেনা।বিশেষ করে বন্ধুর মা-বাবার সামনে।কী দারুণ বন্ধুত্ব।একেবারে নিখাদ বন্ধুত্ব।
আমার সহকর্মী শাহাবাজ সাহেব বেশ আত্মবিশ্বাসী মানুষ।এত ঝড় ঝাপটার পরেও তিনি নুয়ে পড়েননি।বরং আরো প্রবল বেগে এগিয়ে যাচ্ছেন।ঐ বিয়ের পরে তিনি আরো দু-দুটি বিয়ের ঘটকালি করেছেন।শাহাবাজ সাহেব মনে করেন ঘটকালি একটা মহৎ কাজ।পৃথিবীর সব মহৎ কাজে নাকি বাঁধা-বিপত্তি থাকে।তাই বলে তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন।বছর দেড়েক আগে ঘটে যাওয়া সেই ‘অশুভ’বিয়ের পাত্র-পাত্রীরা সব অমঙ্গল আর শংকাকে ছাপিয়ে বেশ সুখেই দিনযাপন করছে।চলুন আমরা সবাই প্রর্থনা করি তারা দুজন আজীবন সুখে থাকুক সাথে আমার সহকর্মীও।
আগেই বলেছি, আপনি অনেক ভাল লেখেন| আমি এই ব্লগে নতুন| কিন্তু যে ক'জনের লেখা পড়েছি, তার মধ্যে আপনার লেখা উৎকৃষ্টতার দিক থেকে অন্যতম|
একটা ছোট্ট অভিযোগ- "জয়েন্ট হয়েছেন" কিংবা "জয়েন করেছেন" বলা যায়| "জয়েন্ট করেছেন" কি বলা যায়? অবশ্য এটা টাইপিং মিসটেইক হলে ঠিক আছে|
ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ অভিযোগের জন্য।
ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
ভাই আমিও কিন্তু ব্লগে একেবারে নতুন ।
আমিন
ধন্যবাদ তানবীরা।
মন্তব্য করুন