উড়ুক্কু কথা-১
ক্লাশ টেনের কথা।স্কুলের চৌকাঠ পেরুবো পেরুবো করছিলাম।পড়াশোনার হালকা পাতলা চাপও ছিল।স্যারদের কাছে প্রাইভেট তো দূরে থাক ,মায় স্কুলের ক্লাস কামাই করাটা রীতিমত দুষ্কর ছিল।ক্যাণ্ডিডেট ব্যাচ বলে স্যাররা আমাদের ওপর একেবারে শ্যেন দৃষ্টি রাখতেন,একদম এদিক ওদিক করার সুযোগ দিতেননা।ক্লাস শেষে তাই খেলার মাঠে দাপিয়ে বেড়ানোর মওকাও খুব একটা মিলতনা।সব মিলে বেশ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা,কদিন পরেই আমরা দস্তুরমত হাঁপিয়ে উঠলাম,আর কিছু করার জন্য ফন্দি ঠাওরাতে লাগলাম।স্যার কিন্তু আমাদের নিয়ম করে ধমকাতেন ,"ক্লাস শেষে কাউকে যাতে রাস্তায় না দেখি,একেবারে সোজা বাসায় চলে যাবি"।কিন্তু ব্যাপারটা হয়ে গেল অনেকটা পাগলকে সাঁকো নাড়তে নিষেধ করার মতই ,আমরাও নিয়ম করে গুরুর অমোঘবাণীকে কাঁচকলা দেখিয়ে প্রায়ই স্কুলের মাঠে গিয়ে আড্ডা জুড়ে দিতাম,নয় মোড়ের চায়ের দোকানে গিয়ে গুলতানি মারতাম। কিন্তু খেলাটা আর হয়ে উঠছিলনা মোটেই।ওদিকে সকালে স্কুল ,বিকেলে স্যারের বাসা,সবমিলিয়ে দুষ্ট ছেলের দলের অবস্থা তখন বেশ সঙ্গীন।
তো পরীক্ষা কাছে আসতেই স্কুলও একদিন ছুটি হয়ে গেল।উপরি লাভ হল এই ,স্যারের কাছে বিকেলের বদলে সকালে হাজিরা দিতে লাগলাম।তখন বর্ষাকাল। না বলে কয়েই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যেত।এমনই একদিনে তুমুল বৃষ্টিতে বর্ষাতি মাথায় দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,গন্তব্য ওই স্যারের বাসা।আকাশের মুখ বেশ কালোপানা,আর আমার মুখ তার চেয়ে ঢের কালো।এই বাদলা দিনেও অঙ্ক ঠেঙ্গিয়ে বেড়াতে হবে,হুহ !স্যারের বাসায় এসে অবশ্য মেজাজটা বিলকুল তোফা হয়ে গেল।একগাল হেসে বন্ধু বলল,স্যারের কোন আত্মীয় নাকি মারা গেছেন ,তাই স্যার আজ পড়াবেননা।আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার আসল মাজেজা সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম।এক দোস্ত প্রস্তাব দিল,চল,মাঠে যাই।সবাই একবাক্যে রাজি।মাঠে গিয়ে দেখি অবস্থা বেগতিক।সারা মাঠ পানিতে পুরোপুরি সয়লাব,কিন্তু আমাদের দমাবে তখন কার সাধ্যি,আর মাঠ যেমনি হোক,খেলাটা মাঠে মারার যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠেনা।হাঁটু গুটিয়ে সবাই নেমে পড়লাম মাঠে।অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে,আর আমারা সমানে বলে লাথি মেরে চলছি।পজিশনিং এর কোন বাছবিচার নেই,পাসিং এর কোন লেশমাত্র নেই ,শুধু বল পেলেই ধুন্দুমার লাথি মারা।সে এক বিচিত্র অবস্থা।মাঠ হয়ে ছিল ভয়াবহ পিচ্ছিল,আর দৌড়াতে গিয়ে একেকজন চিতপটাং হচ্ছিল নিয়মিত বিরতিতে।তাতেও কারো কোন বিকার নেই।বলটাকে প্যাদাতে তখন সবাই পাগলপারা।একটু একটু করে অবশ্য খানিক বাদে বৃষ্টি ধরে এল।আমরা অবশ্য তখনও খেলায় ইস্তফা দিইনি।তবে খানিক দূরব থেকে একটা মোটর সাইকেলের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম।কাছে আসতে কেমন যেন পরিচিত ঠেকছিল ,তবে খেলার জোশে তখন ঠাহর করতে পারছিলামনা।আচমকা গেট দিয়ে মোটর সাইকেল ঢুকতেই আমাদের হুঁশ হল,সবাই ব্যাগ নিয়ে পড়িমড়ি করে দে ছুট।আমিও চোঁ চোঁ করে দৌড় লাগালাম।
স্যার তখন পেছন থেকে সমানে চেঁচিয়ে চলছেন,"ওই রাস্কেলের দল,হল্ট,হল্ট"।রাগলে আবার স্যারের মুখ দিয়ে বাংলা বের হয়না কিনা !!
হা হা, মজা পাইলাম। চলুক।
গল্পের নাম দেখি পাল্টায় গেল
চর্মগোলকের কি হইলো
আচমকা ইচ্ছা হল তাই,কোন কারণ নাই
।
দাড়িগুলোর পর বোধহয় স্পেস দিতে হতো। ফুটবল ইবুকের জন্য কি এলেখাটা দেয়া হচ্ছে?
ফুটবল নিয়ে বেশুমার লেখা যায়,ইবুকের জন্য অন্য লেখাই দিলাম
।
জিল্লুর স্যারকে আমাদের স্কুলে সবাই পাগলা বলে ডাকতো। রামানুজন টাইপের অংকবিশারদ। তবে পুরাই পাগলা। নিজের ছেলে অংক না পারলে বলতেন, 'লম্পট! রাতভর কি জুয়াচুরি করেছিস যে সামান্য কস থিটা ফাংশন মিলাতে পারছিস না?'
এসএসসি পরীক্ষার আগে আগে এরকম একদিনে বেত নিয়ে পেছন পেছন দৌড়েছিলেন, মনে আছে। বেঁচে থাকুক জিল্লুর স্যার।
পোস্টটা অনেকদিনের পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে। ভালো লাগলো। পছন্দ হইসে।
এবার স্মৃতি খুঁড়ে আপনিও কিছু বের করেন,আমরা একটু পড়ি।
ভালো লাগলো। দারুন সব সময় জানলাম।
মন্তব্য করুন