সবার ওপরে Boss সত্য
বস-ভীতি কমবেশি সব চাকুরেরই আছে। অবশ্য বস মানে যে কারও অধীনে চাকরি করতে হবে, চাকরি করলেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বস হয়ে যাবেন_ তা নয়। ক্ষেত্রবিশেষে বসের সংজ্ঞাও পাল্টে যেতে পারে। কর্মসূত্রে যার বস নেই, তার দজ্জাল বউ (বা প্রেমিকা) আছে, ঘরে মা-বাবা আছে। ধরণীর পথে পথে আরও কতজন কতভাবে যে বসের আসন অলঙ্কৃত করে আছেন, তার ইয়ত্তা নেই।
বস বিষয়ে সাধারণের ভুল ধারণা
- চিকনা-চাকনা মানুষকে অনেকেই পাত্তা দিতে চায় না। কিন্তু সেই 'চিকনা'টা যদি বস হয়, তার ঠেলায় পুরো অফিস থরকম্প হয়ে যেতে বাধ্য।
- দুর্বল চিত্তের কর্মচারীরা বসকে হিংস্র জন্তুর মতো ভয় পায়। প্রকৃতপক্ষে কোনো বসই অতটা ভয়ানক নন।
- বুদ্ধিমানরা বস নয়, ভয় করে বসের ক্ষমতাশালী চেয়ারকে। মামুলি একটা চেয়ারের কত ক্ষমতা! কাউকে লহমায় ওপরে তুলতে পারে আবার কাউকে নিচেও আছড়ে ফেলতে পারে!
- বস মানেই যেন অলৌকিক শক্তিধর। এ অলৌকিক শক্তির হাতেই রয়ে গেছে মরণকাঠি-জিয়নকাঠি।
- বসকে তার আত্মীয়স্বজন, কাছের মানুষ, দূরের মানুষ কেউই পছন্দ করে না।
বসের দৃষ্টিতে কর্মচারী
ষ ফাঁকিবাজ একেকটা। তক্কে তক্কে থাকে, কখন সুযোগ হবে ফাঁকি মারার! ফাঁকি দেওয়া ছাড়া এরা কোনো কাজই শেখেনি।
- অশিক্ষিত, মূর্খ, নরাধম! কোনো যোগ্যতাই নেই! আমি ভালোমানুষ বলে এখনও যোগ্যতার প্রশ্ন তুলিনি! ঘুষটুকুও ভালোভাবে খেতে পারে না!
- এই অফিস সহনশীল বলে চাকরিটা এখনও টিকে আছে। অন্য কোনো অফিস হলে আরও আগেই বিদায় নিত!
ষ অফিসে এরা কী কাজ করবে, একজনও শার্টটা ভালোভাবে ইন করতে পারে না। পেছন দিকে লেজের মতো বেরিয়ে থাকে! দেখলেই হনুমানের কথা মনে পড়ে!
- যত্তসব থার্ড ক্লাস মার্কা লোক নিয়ে কাজ করতে হবে_ আগে জানলে কি এই চেয়ারে বসি! আমার স্ট্যাটাস নেমে গেছে!
কর্মচারীর দৃষ্টিতে বস
ষ বাসায় বউ কঠিন কথা বললে ভেদা মাছের মতো চুপসে থাকে। অফিসে এসেই যত চোটপাট! বাসার ঝামেলা বাসায় চুকিয়ে এলে কী হয়!
- কোন ছাতার কাজ করে, সারাদিনই তো বসে বসে ঝিমায় আর টেলিফোনে বেহুদা প্যাঁচাল পাড়ে! চেয়ারে হেলান দেওয়াটা আবার কবে থেকে কাজ হিসেবে গণ্য হচ্ছে!
- কাজ তো কিছু করার মতো নাই, ভুল ধরা আর বকাঝকাই ওনার কাজ! উনিও তো কত ভুল করেন! কই, আমরা কি ধরিয়ে দিয়ে বকা দিই!
- উনি যে কাজ করেন, তার জন্য আবার এত টাকা বেতন নিতে হয় নাকি? এর এক-চতুর্থাংশ টাকায় আমিই তো ওই কাজ আরও ভালোভাবে করে দিতে পারি।
ষ জন্মের সময় বোধহয় বাবা-মা মুখে মধু দেয় নাই! মধু দিলে ভদ্রতা, আচার-ব্যবহারও কিছু শিখতে পারত!
বস ইজ অলওয়েজ রাইট
একটা কথা অনেকদিন ধরেই প্রচলিত_ বস ইজ অলওয়েজ রাইট! কীভাবে? দেখুন_
স কুলকুল করে সবাই ঘেমে যাচ্ছেন। এ সময় হঠাৎ বস বলে বসলেন, 'আজ বেশ ঠাণ্ডা পড়ছে! মাঘ মাস বোধহয় এসেই গেল!' যদিও চৈত্র মাস চলছে। কিন্তু বসের সঙ্গে দ্বিমত করবে_ এমন বুকের পাটা কার!
স বাংলা সিনেমায় শাকিব খান-অপু বিশ্বাসের অনবদ্য অভিনয়শৈলীতে দর্শক আবার হলমুখী হয়েছে_ বসের এমনতর বিশ্লেষণে কোন কর্মী বলতে পারবে_ 'শাবনূর আপা জিন্দাবাদ, ফেরদৌস ভাই সুপার হিরো!'
স অফিসের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে না, আরও এক ঘণ্টা বেশি কাজ করতে হবে_ এ রকম ঘোষণায় সবাই মুখে ক্যাবলাকান্ত মার্কা হাসি ঝোলালেও মুখ ফুটে প্রতিবাদ জানানোর ভাষা কারোরই যেন নেই!
স ছদরুল বা বদরুল সাহেবকে বস যখন বলবেন, অফিস ছুটির পর আমার অমুক অমুক বাজার করে একটু বাসায় পেঁৗছে দিয়ে আইসেন তো_ লাজওয়াব। না হয়ে উপায় কী! মনে রাখবেন, এটাই বর্তমানের জরুরি কাজ!
স লাদেন তো এখনও জন্মগ্রহণই করে নাই, তাহলে আমেরিকা তারে মারল কেমনে_ এ জাতীয় উক্তি শ্রবণ করেও বলতে হবে_ আরে তাই তো! তবে কি ওই লোকটা লাদেনের আব্বা অথবা দাদা ছিল!
কর্মীরা কেমন বস চায়
স অফিসে আসতে একটু দেরি হলেও বস কিছু বলবেন না, মাইন্ড করবেন না! জ্যামের অজুহাত বিশ্বাস করবেন!
স বল্গগ, ফেসবুক এবং ইন্টারনেটের আরও 'সামাজিক' সাইটগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করে নিজেকে সামাজিক হিসেবে প্রমাণ করার প্রচেষ্টা দেখে বস উল্টো খুশি হবেন। ভালো কর্মী, অসামাজিক লোক তো নয়!
স টেলিফোন থেকে শুরু করে অফিসের সব জিনিসে আমার সমান অধিকার_ এমনটি ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ বন্ধ রেখে ফোনালাপ চালিয়ে যাওয়া। অবশ্যই তা ব্যক্তিগত! বস দেখেও দেখবেন না!
স বসকে শ্বশুর পরিচয়ে দেখতে অধস্তন কর্মীর মন চাইতেই পারে! দুঃখজনক খবর হচ্ছে, বস এ রকম দাবিকে কেন যেন কমই আমল দেন!
স দুই দিনের ছুটি নিয়ে পনেরো দিন কাটিয়ে এলেও যদি বস মনে করেন_ জরুরি কাজ ছিল বোধহয়!
বসরা কেমন কর্মী চান
স কর্মীকে হতে হবে সুপারম্যান। যেন চাহিবামাত্র কাজ হয়ে যায়। পারি না, বুঝি না_ এ ধরনের বাক্য ভীষণ অপছন্দের।
স ছুটির দিনে বা অফিস আওয়ারে ব্যক্তিগত কাজগুলো করে দিতে সামান্যতম ইতঃস্তত বোধ করবে না।
স দাবিদাওয়া বা কোনো সমস্যার কথা কখনও মুখ ফুটে বলবে না।
স 'চাকরি পেয়েছি এই তো বেশি, আর কী চাই'_ কোনো কর্মী এমন মনোভাব পোষণ করলে।
স প্রতিটি বাক্যে বসকে কমসে কম তিনবার স্যার সম্বোধন করলে। স্যার শব্দটা বসদের খুব প্রিয়।
বসের সঙ্গে বলা কিছু কমন মিথ্যা
প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে অনেক কর্মীই বসের সঙ্গে মিথ্যা বলেন। এমনই মিথ্যা, সহজেই ধরা পড়ে যায় শুভঙ্করের ফাঁকিটুকু_
ড় স্যার, গতকাল আসতে পারিনি, খুব কঠিন ডায়রিয়া হয়েছিল। (বস পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন, 'কঠিন ডায়রিয়া' কি একদিনে ভালো হয়ে যায়)!
ড় স্যার, এটা আমাদের পুকুরের ইলিশ স্যার! (বসকে খুশি করতে নজরানা হিসেবে ইলিশ মাছ উপহার দেয় অনেক কর্মীই! ইলিশ মাছগুলো আবার তাদের পুকুর থেকে ধরা! সুখের কথা হচ্ছে, আজকাল পুকুরেও ইলিশ চাষ হচ্ছে! কিন্তু বস যদি কৌতূহলী হয়ে 'মৎস্য চাষ প্রকল্প' সরেজমিন পরিদর্শনের বাসনা ব্যক্ত করেন, তখন বারোটা না বেজে যাবে কই)!
ড় আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা, নিষ্ঠায় এই অফিস আজ অনেক দূর এগিয়ে এসেছে! আমাদের অফিসটি আদর্শ অফিসের স্বীকৃতি পাবে অচিরেই! (অফিস এমন এগোনোই এগিয়েছে, প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা লস গুনতে হচ্ছে)!
ড় আপনার মতো দিলদরিয়া মানুষকে বস হিসেবে পেয়েছি_ এ আমার পরম সৌভাগ্য! (দিলের জায়গায় দিল থাকবে, প্রয়োজনে দিলে খিল দিতে হবে আর দরিয়ার পানি একটুও কমানো যাবে না)!
ড় স্যার, আমার মা/বাবা অসুস্থ। বাড়ি যেতে হবে ছুটি চাই! (বসের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব না, মা/বাবার মৃত্যুর নাম ভাঙিয়ে যে লোকটি এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে এসেছিল, এরপর তার চেহারায় আবিষ্কার করা গিয়েছিল নতুন ধরনের উজ্জ্বলতা)!
অফিসের বাড়তি সুবিধা
বস তথা অফিসের প্রতি সব কর্মীরই একটু বাড়তি 'নজর' থাকে। বাড়তি 'নজর' মানে একটু বাড়তি সুবিধা আদায়। কোনো কোনো অফিসে এটা মিলেও যায়। বাড়তি সুবিধাগুলো_
ষ এই মাসে সহকর্মী কুদ্দুস সাহেবের কাছে ২০০ টাকা ধার করা হয়েছে। আগামী মাসে সোবহান সাহেবের কাছে আরও ৩০০ টাকা ধার করতে হবে। কুদ্দুস সাহেব যেমন টাকার কথা ভুলে গেছেন, সোবহান সাহেবও ভুলে গেলে হয়। (ভুলোমনা হওয়া সব সময় খারাপ না)।
ষ মোটামুটি একটু নামকরা প্রতিষ্ঠান হলে এলাকায় গিয়ে ঠাটবাট দেখানো যায়_ 'আরে আমি তো ওই প্রতিষ্ঠানের জিএম! জিএম মানে বুঝলা না? ব্যবস্থাপনা পরিচালক! এমডির পরের পোস্টটাই!'
ষ আজকে অমুক কলিগের গাড়িতে লিফট পাওয়া গেছে, আগামীকাল আরেকজনকে ম্যানেজ করতে হবে। (কিন্তু সব কলিগের গাড়ি নেই কেন, প্রতিদিন লিফট পাওয়া যায় না। তারা গাড়ি, নিদেনপক্ষে মোটরসাইকেল কিনতে পারে না)।
ষ নারী সহকর্মী থাকলে ভালো, তাতে অফিসে কাজ করার পরিবেশ বজায় থাকে। তার মেজাজ এবং আচরণ বসন্তের বাতাসের মতো শান্তির পরশ জাগানিয়া। কণ্ঠ থেকে কোকিলের কুহুধ্বনি ঝরলে চমৎকার। এর অন্যথা হলে অর্থাৎ মরুভূমির লু হাওয়া এলে তো সমূহ বিপদ।
ষ আশপাশে খবরদারি করার কেউ না থাকলে নিজের দরকারি কাজগুলো অফিসে বসেই সেরে নেওয়া যায়। অফিসও চলল, আবার নিজের কাজও হলো।
অন্যরকম বস
বস কি শুধু অফিসেই থাকবেন? না, অফিসে যত রকম বস আছেন, বাইরে আছেন আরও অনেক বেশি! দেখা যাক তারা কারা? সত্যিকার অর্থে কে কার বস?
বেকার যুবক : বদরাগী বাবা
ঘরজামাই : শ্বশুরকুল
আমজনতা : রাজনীতিবিদ
গোবেচারা প্রেমিক : দজ্জাল প্রেমিকা
বিক্রেতা : ক্রেতা
আগন্তুক : দারোয়ান
বুয়া : গৃহকর্ত্রী
লেখক : মূর্খ প্রকাশক
ভাড়াটিয়া :বাড়িঅলা
বাস কন্ডাক্টর : যাত্রী
স্ত্রী : স্বামী
বস আর বস এই নিয়েই তো দুনিয়া!
উইশফুল থিংকিং
ধন্যবাদ। @ আরাফাত শান্ত, তানবীরা।

মন্তব্য করুন