১৯৭১ : কতটুকু ভেতরে, কতটুকু বাইরে?
এ. কে. খোন্দকার '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' লিখে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। বিতর্কের বড় একটি অংশে রয়েছে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে। এ. কে. খোন্দকার দাবি করছেন বঙ্গবন্ধু ভাষণের শেষে জয় বাংলার পর জয় পাকিস্তান বলেছিলেন। এ তত্ত্ব খোন্দকার সাহেবই প্রথম তোলেননি, এর আগেও তোলা হয়েছিলো। বিশেষ করে কবি শামসুর রাহমানের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'কালের ধুলোয় লেখা' ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় দৈনিক জনকণ্ঠে। পরে সেটা বইয়ের আকারও পায়। এই বইয়ে শামসুর রাহমান উল্লেখ করেছেন ভাষণে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক জয় পাকিস্তান বলার বিষয়টি। কী একটা বিতর্কের জের ধরে তা আমি সাপ্তাহিক ২০০০-এ লিখেছিলাম। ২০০০-এর সম্পাদক তখন শাহাদত চৌধুরী।
এ. কে. খোন্দকার বর্তমানে যে দাবি করছেন, শামসুর রাহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে একই 'সত্য ভাষণ' দিয়েছিলাম আমিও, ২০০৪ সালে। পরবর্তীকালে নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের আমার লেখাটির প্রতিক্রিয়া লেখেন। তিনি শুধরে দিতে চেষ্টা করেন আমার এবং আমাদের ভুল জানাটুকু। কিন্তু গোয়ার্তুমি করে আমি তা মানিনি; উল্টো ২০০০-এ আবার দীর্ঘ চিঠি লিখে তাঁর যুক্তি খারিজ করে দিয়েছিলাম। লেখাটির পক্ষে-বিপেক্ষে লিখেছিলেন অনেকেই। টানা তিন মাস বিতর্কে জমজমাট ছিলো ২০০০-এর পাতা। এক পর্যায়ে নিজের ভুল স্বীকার করে শামসুর রাহমান ২০০০-এ প্রতিক্রিয়া লেখেন।
এরপর আমি চুপ করে যাই। এটাই সত্য, আলী যাকেরের মতো প্রাজ্ঞ লোক, শামসুর রাহমান দেশের প্রধান কবি- তাঁরা অন্তত মিথ্যাচার করবেন না।
আমি মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর প্রজন্ম। সঠিক ইতিহাস জেনে তা মেনেও নিয়েছি। আমার কারণে আরো অনেকেই সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছেন।
খোন্দকার সাহেব অগ্রগণ্য মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীও ছিলেন। তার হঠাৎ এ ভীমরতি কেন!
কারণ একটাই, যে কোনো সময় মানুষের নৈতিক স্খলন ঘটে যেতে পারে। খোন্দকার সাহেব অন্ধকারে গিয়ে সেটাই প্রমাণ করলেন! জানি না, কাদের ইশারায়, কোন স্বার্থে তিনি জল ঘোলা করতে চাইছেন। তার এই প্রচেষ্টা যে কোনো ফল বয়ে আনবে না, ইতোমধ্যেই বোঝা গেছে। বিএনপি-জামায়াত বড়জোর বক্তৃতার একটা ইস্যু পেয়েছে।
পুনশ্চ : গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলাম, আমার লেখাটি নিয়ে সচলায়তন ব্লগসহ আরো কোথাও কোথাও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কেউই সূত্র উল্লেখ করার সৌজন্যতাটুকু দেখাননি!
এই ডিবেটটা খুবই অযথা লাগে আমার কাছে!
মন্তব্য করুন