ঈদের ছবির নায়ক-নায়িকাদের সাথে গোল টেবিল বৈঠক
এবারের (২০১২) ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে ৮টি বাংলা সিনেমা। অনেক শীর্ষ তারকা এই ঈদে উপস্থিত ছিলেন না রূপালি পর্দায়―মৌসুমী, শাবনূর, রিয়াজ, পপি, পূর্ণিমা, আমিন খানদের নাম উল্লেখ করা যায়। ৮টি ছবির কলাকুশলীদের সাথে এক বিশেষ গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন শফিক হাসান
শফিক হাসান : মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমরা জেনে নিই এবারের ঈদের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো কী কী। ছবি মুক্তি পেয়েছে মোট ৮টি, এর মধ্যে শাকিব খানেরই ৪টি। শাকিব অভিনীত ছবিগুলোর নাম-এফআই মানিক পরিচালিত ‘মাই নেম ইজ সুলতান’, বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘ডন নাম্বার ওয়ান’, সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘সে আমার মন কেড়েছে’, সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘ঢাকার কিং’। অন্য ৪টি ছবি হচ্ছে―অনন্য মামুন পরিচালিত ‘মোস্ট ওয়েলকাম’, আশরাফুর রহমান পরিচালিত ‘তুমি আসবে বলে’, বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘হঠাৎ সেদিন’, শাহজাহান চৌধুরী পরিচালিত সরকারি অনুদানের ছবি ‘আত্মদান’। ‘হঠাৎ সেদিন’ ও ‘আত্মদান’ ছবির বিশ্ব প্রদর্শনী হয়েছে চ্যানেল আইতে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রথমেই কথা বলছি নায়ক শাকিব খানের সাথে। আচ্ছা শাকিব, অনেক তারকার যেখানে ১টি ছবিও মুক্তি পায়নি যেখানে আপনার চার চারটি ছবি। কেমন লাগছে?
শাকিব খান : কেমন লাগবে আবার? আমার বাড়তি কোনো ফিলিংস নেই!
শফিক হাসান : বাড়তি কিংবা কমতি ফিলিংসের কথা বলছি না। আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাচ্ছি। এক গণ্ডা ছবির নায়ক হিসেবে...।
শাকিব খান : ভোদাইয়ের মতো কথা বলবেন না। আমি বলিউডের কিং খান, আমার ৪টা ছবি কি বেশি কিছু? ৪০টা ছবিকেও তো আমি অপ্রতুল ভাববো। সেখানে আপনি আবার সর্বোচ্চের সিল দেয়ার চেষ্টা করছেন!
শফিক হাসান : আপনার রুচি যে এতোটা উপরে আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। স্যরি। ইদানীং বাংলা ছবির ইংরেজি নামকরণের বিষয়ে অনেকেরই ব্যাপক আগ্রহ। আপনার অভিনীত দুটি ছবির নাম এবার ইংরেজিতে-মাই নেম ইজ সুলতান ও ডন নাম্বার ওয়ান।
শাকিব খান : এভাবেই ইংরেজি চর্চা করতে হয়। আমাদের ছবির দর্শক যেহেতু নিম্ন আয়ের অশিক্ষিত মানুষ, এসব নাম দেখে দেখেই তারা ইংরেজি শিখবে। দেখছেন না মোবাইল ফোন কীভাবে শিক্ষাটা দিচ্ছে? গ্রামেগঞ্জে, আনাচেকানাচে এখন জিরো ওয়ান সেভেন, জিরো ওয়ান এইট, জিরো ওয়ান সিক্স, জিরো ওয়ান ওয়ান...।
শফিক হাসান : বুঝেছি ভাই, শাকিব খান নাম্বার ওয়ান! আমরা বরং এবার ২টি ছবিতে অভিনয়কারীর কাছে যাই। নিপুণ, আপনার তো ২টি ছবি মুক্তি পেয়েছে এবার।
নিপুণ : জি। তবে শুধু আমার ২টি নয়, সাহারা আপুরও ২টি।
সাহারা : নিপুণ, তুমি শুধু আমার ২টাই দেখলে তোমারও যে ২টা সে কথাটা একবার ভাবলে না।
নিপুণ : সেই কথাই বলছি আপু।
সাহারা : নাহ, তুমি বড্ড জেলাস!
নিপুণ : আপনি নামে যেমন, তেমনি আপনার হৃদয়টাও সাহারা মরুভূমি!
সাহারা : ক্ক্ক্ ক্কী? আ আ আ আমি...!
শফিক হাসান : বাদানুবাদ না করে আমরা বরং স্তব্ধতার অনুবাদ করতে সচেষ্ট হই। প্রশ্ন নিপুণের কাছে। আপনার অভিনীত একটি ছবির নাম ‘তুমি আসবে বলে’। আমরা লক্ষ্য করছি, ছবির নামে বাক্য চলে আসছে। আগে নামকরণ হতো শব্দ দিয়ে, এখন হচ্ছে বাক্য দিয়ে। কেন?
নিপুণ : সেটাই কি ভালো নয়? নাম-বাক্যের মাঝেই দর্শক ছবির গল্পটি সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। যেমন ‘তুমি আসবে বলে’ নামটি শুনলেই বোঝা যায় এটা নিটোল প্রেমের ছবি!
শফিক হাসান : আসলে এতো বড় নাম আমাদের দর্শক রুচির সাথে খাপ খায় না আরকি!
নিপুণ : ওইসব কুরুচি ফালায়া দিতে কন!
শফিক হাসান : সাহারা, এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
সাহারা : আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু আমারও যেহেতু দীর্ঘ বাক্যে ছবির নাম আছে, চাইলে বেশিকিছু বলার সম্ভব হচ্ছে না!
নিপুণ : ছি আপু! যেখানে আমি দ্বিমত করবো, সেখানে তুমি একমত হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছো।
সাহারা : মাথা গরম করিস না! তোর সাথে আবার একমত দ্বিমত কিরে! জানিস, কত বছর ধরে দাপটের সাথে অভিনয় করছি?
নিপুণ : কী আমার দাপটওয়ালীরে!
শফিক হাসান : অপু বিশ্বাসের সাথে কথা বলছি। অপু, আপনার ছবি তো এবার ১টি।
অপু বিশ্বাস : হ্যাঁ, ১টি।
শফিক হাসান : আপনার মতো শীর্ষ অভিনেত্রীর ১টি ছবি বিস্ময়কর।
অপু বিশ্বাস : বিস্ময়ের কিছু নেই। আপনারা জানেন, শাকিব খানের সাথে অভিনয় করে আমি এখন বলিউডের ১ নম্বর নায়িকা। ১ নম্বর নায়িকার ১টা ছবিই সঙ্গত!
শফিক হাসান : ছোট পর্দার অভিনেত্রী তিন্নির এবারই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ছবিতে অভিষেক হলো। তারও ছবি ১টি। তিন্নি, আপনিও কি নিজেকে ১ নম্বর নায়িকা ভাবছেন?
তিন্নি : ঐসব নম্বর নিয়ে ভাবাভাবির দিন শেষ! আমি নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাই। দেখি, সুন্দরীতমাকে দর্শক কীভাবে নেয়!
অপু বিশ্বাস : এসব ফাও প্যাঁচাল বাদ দিয়ে চা-পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন!
শফিক হাসান : ইয়ে... আজ তো হোটেল-ক্যান্টিন সব বন্ধ!
অপু বিশ্বাস : বুঝেছি, আপনারা কঞ্জুস ছিলেন, কঞ্জুসই আছেন। আগেও আপনাদের একটা অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। রোজার আগে। তখনও মামুলি লাল চা-টুকু খাওয়ানোর সৌজন্যতা দেখাননি।
শফিক হাসান : আসলে আমরা সংযমে বিশ্বাসী! তাছাড়া ডাক্তাররা বলেন, কম খেলে নাকি স্বাস্থ্য ভালো থাকে!
অপু বিশ্বাস : আর যুক্তি দিয়েন না, সং কোথাকার!
শফিক হাসান : এবার আমরা অনন্ত’র কাছে। অনন্ত, কেমন আছেন?
অনন্ত : এ্যাই বর্ষা, বলো তো আমি কেমন আছি?
বর্ষা : জলিল ভালো আছে ভাইয়া।
শফিক হাসান : জলিল? জলিল কে?
বর্ষা : অনন্তকে আমরা জলিল ডাকি। সিনেমার দর্শকদের কাছে সে অনন্ত নামে পরিচিত।
শফিক হাসান : অনন্ত, আপনার ছবির নামেও আমরা ইংরেজির ব্যবহার দেখি। এতো ইংরেজি কেন?
অনন্ত : ইংরেজি সবাইকে শেখাতে চাই। প্রথম ছবির নাম রেখেছিলাম খোঁজ- দ্য সার্চ। বাংলার পাশাপাশি মানুষ ইংরেজিটাও শিখে নিয়েছে!
শফিক হাসান : বউকে অন্যের সাথে অভিনয় করতে দেন না কেন?
অনন্ত : ওকেই প্রশ্ন করুন!
শফিক হাসান : বর্ষা, আপনি বলুন, কেন অন্যদের সাথে অভিনয় করেন না...?
বর্ষা : তুমি প্রশ্ন করো না আমায়/ আমি মরেই যাবো লজ্জায়! আসলে অনন্ত চায় না, অন্য কেউ তার বউয়ের হাত ধরুক!
শফিক হাসান : হা হা হা। এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা জরুরি। এবার যাচ্ছি ঋদিমার কাছে। ঋদিমা, আপনি হঠাৎ ফেরদৌসের সাথে জুটি বাঁধলেন?
ঋদিমা : প্রশ্নটা আমাকে না করাই ভালো দাদা। হঠাৎ করে কাজটি করিয়ে দিলেন বাসু চ্যাটার্জি। তিনি তো হঠাৎ বৃষ্টি বানানোর পর থেকেই হঠাৎ শব্দে আক্রান্ত হয়ে আছেন...। যা কিছু করেন হঠাৎ হঠাৎ!
শফিক হাসান : বাংলাদেশের টিভিতে আপনার অভিনীত ছবি মুক্তি পেয়েছে। হলে যাওয়ার আগেই। কেমন লাগছে?
ঋদিমা : আমার মতামতের মূল্য কী এখানে? পরিচালক যা ভালো মনে করেন!
ফেরদৌস : এখানে আমার একটা কথা আছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, টিভিতে হঠাৎ বৃষ্টি প্রথম মুক্তি পেয়েছিলো বলেই এতোটা জনপ্রিয় হয়েছিলো। বিষয়টা বাসুদা বুঝেছেন। তাই তো পরের ছবি চুপি চুপিও মুক্তি দিয়েছিলেন টিভিতেই।
ঋদিমা : বেশি বুইঝেন না তো দাদা! ভাল্লাগে না।
শফিক হাসান : ফেরদৌস, ওপার বাংলায়ও তো আপনি সমান জনপ্রিয়...?
ফেরদৌস : তা বলতে পারেন। ওপার বাংলায় কাজ করে মজাও পাই। সেখানে গেলে বন্ধু ঋতুপর্ণার সাথে দেখা হয়। ভালোই লাগে।
শফিক হাসান : এবার নীরবকে সরব করার পালা। নীরব, অনন্তকে যে প্রশ্নটা করেছিলাম, সেই প্রশ্নটাই আপনাকে করতে চাই। সারিকা চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন না কেন?
নিরব : কী বলবো রে ভাই, কম তো আর বোঝালাম না। রাজি হয় না।
শফিক হাসান : ফেরদৌস আমাদের সিনিয়র অভিনেতা। তার কাছে জানতে চাইবো, বাংলা ছবির নামে যে অশুভ তৎপরতা শুরু হয়েছে সে বিষয়ে। নামের কোনো তাললয় নাই। উদ্ভট উদ্ভট সব নাম। যে যেভাবে পারে, নামকরণ করছে...।
ফেরদৌস : নামগুলো উদ্ভট বলেই আমাদের দর্শকরা পছন্দ করে। আমাদের মূল দর্শক, টার্গেট শ্রেণি কারা তা তো জানেনই। কোনো ছবির নাম যদি হয় ‘বদনা হাতে মদনা চলে’ তাহলে মদনার বদনা দেখতে কেমন বোঝার জন্য হলেও দর্শকরা ছবিটি দেখবে। সুতরাং এটাকে অন্যভাবে দেখার কিছু নেই। আমাদের বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা করতে হবে।
শফিক হাসান : ধন্যবাদ সবাইকে। এখানে আসার জন্য এবং মূল্যবান কিছু সময় ব্যয় করার জন্য। আমাদের গোলটেবিল বৈঠক এখানেই শেষ করছি। অবশ্য শেষ না করেও বা উপায় কী, লাঞ্চের সময় হয়ে আসছে!
রচনাকাল : ঈদুল ফিতর ২০১২
স্যাটায়ার ভাল হয়েছে। ২০১৩টা পড়ার আশায় রইলাম
বাপরে!
ধন্যবাদ। স্যাটায়ার ২০১৩-র টা আর করা যাবে না, করলে ২০১৪ সালেরটা করতে হবে। (যদি তখন নতুন কোনো ছবি মুক্তি পায়)!
@ তানবীরা, সামছা আকিদা জাহান
মন্তব্য করুন