ফুল রাঙা পথ
মে মাসটা বাংলাদেশের জন্য মোটেও সুবিধাজনক মাস না। দিনের দৈর্ঘ্য প্রতিদিন একটু একটু করে লম্বা হতে থাকে। তাতে অসুবিধা ছিলো না, যদি গরমটা এমন চাঁদি-ফাটানো না হতো। তার ওপর এই সময়ে লোড শেডিং-ও থাকে সর্বোচ্চ মাত্রায়। ফ্যান চালালেও আর্দ্রতা বেশি বলে বিশেষ সুবিধা হয় না। এমনকি রাতের বেলাও একটু হাঁটলে ঘামে জবজবে হয়ে যেতে হয়। তবু একটা কারণে মে মাসটা আমার কাছে অসাধারণ লাগে। আমি সারাটা বছর শুধু এই কারণে মে মাসের জন্য অপেক্ষা করি। কারণটা আর কিছুই না, এই সময় বনস্পতিরা রঙিন হয়ে ওঠেন।
আমরা জানি, মার্চের শেষের দিক থেকে কৃষ্ণচূড়া (আর্লি ভ্যারাইটি), পলাশ/কিংশুক আর শিমুল ফুলের মওসুম শুরু হয়। এই তিন সেনাপতি চারদিক খুন-খারাবীর রঙে রাঙিয়ে তোলেন। ফাঁকে ফাঁকে কোথাও অশোকের দেখাও মেলে। কংক্রিটের জঙ্গল এই নগরে কোথাও কোথাও তখন কনকচাঁপা/মুচকুন্দ, গোবরেচাঁপা, রক্তকরবী, শ্বেতকরবীর দেখাও পাবেন। করবীরা একটু শক্তপোক্ত জাতের ফুল; তাই এদের দেখা পাবেন একটু লম্বা সময় ধরেই। এর মাঝেই দুই/তিনরঙা কাঠগোলাপ গাছও সমান তালে ফুল ফুটিয়ে যেতে থাকে। ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে বা ট্রাফিক জ্যামে বসে থাকার সময় একটু খেয়াল রাখলে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে কমদামে অমূল্য সব ফুল কিনতে পারবেন।
মে মাসের শুরুতে যদি চোখ-কান খোলা রাখেন তাহলে হঠাৎ এক সকালে দেখবেন হালকা বেগুনীরঙা জারুল এসে হাজির হয়েছেন। আজকের দিনে জন্মানো এক দাঁড়িওয়ালা বুড়ো বলেছিলেন,
“কাল ছিলো ডাল খালি
আজ ফুলে গেছে ভরে
বল দেখি তুই মালী
হয় সে কেমন করে”
জারুল মহাপুরুষের এই হঠাৎ আগমন দেখলে দাঁড়িওয়ালার বুড়োর কথা কতোটা যে সত্য তা বুঝবেন। অবশ্য ঐ ব্যাটার কোন কথাটাকে যে অস্বীকার করা যায় তাই ভেবে পাইনা।
জারুলকে দেখে থেমে গেলে চলবেনা। দু-এক দিনের মধ্যে দেখবেন মাঠে হলুদরঙা পেল্টোফোরাম, কমলারঙা রাধাচূড়া, গোলাপীরঙা ক্যাসিয়া (ক্যাসিয়া নডেসা) হাজির। তাদের সাথে খুনরঙা লেট ভ্যারাইটির কৃষ্ণচূড়া আবারও হাজির। ওস্তাদের মারটা দেয় এর দিন তিন/চারের মধ্যে সোনালী রঙা সোনালু/অমলতাস। এক রাতের মধ্যে গাছে গাছে সোনালী আলোর ঝরণা বইয়ে দেয়। বনস্পতিদের এই কাণ্ডকারখানায় যদি ভাবেন যে ছোটরা চুপচাপ আছে তা কিন্তু নয়। অড়হর, মধুজবা, কাঁটা বাবলা, শ্বেতদ্রোণ, রক্তদ্রোণ এমন আরো দশটা হাবিলদার-সৈনিকেরাও চারপাশটা আরো দশটা রঙে রঙিন করে তোলেন।
রোজ সকালে বাচ্চাকে স্কুলে নামাতে যখন ধানমণ্ডি যাই তখন লেকের পাড়ের গাছগুলোর নিচটা দেখি ফুলে ফুলে ভরে কোথাও হলুদ, কোথাও গোলাপী, কোথাও বেগুনী, কোথাও লাল হয়ে আছে। যেনো এক একটা রঙিন চাদর বিছানো। সিটি কর্পোরেশনের ঝাড়ুদাররা দেখি ঝাঁট দিয়ে ফুলের স্তুপ বানাচ্ছেন, হাতে ঠেলা ছোট ছোট টাব-গাড়িতে করে ফুল ভরে নিয়ে যাচ্ছেন ভাগাড়ে ফেলার জন্য। ঢাকার মতো অপরিকল্পিত নগরায়ণের শহরে এ’এক অকল্পনীয় দৃশ্য!
যদিও বর্ষা আসতে এখনো ঢেড় দেরি তবু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর ধানমণ্ডি লেকের পাড়ের কিছু হিজল গাছও দেখি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। আমি ফটুরে নই, আমার ক্যামেরাও নেই। এবি’র যারা ফটুরে আছেন তারা আজই ক্যামেরা হাতে বের হয়ে পড়তে পারেন। নিশ্চিতভাবে আপনি হতাশ হবেন না। আর আপনাদের কল্যানে আমরাও কতগুলো ছবিব্লগ পেয়ে যাবো। আপনাদের সুবিধার্থে কয়েকটা স্পটের নাম বলে দিচ্ছি। যাদের হাতে ক্যামেরা নেই তারাও একটু হেঁটে আসতে পারেন।
১. ধানমণ্ডি পুরাতন ৩২ নাম্বার থেকে শুরু করে ৩২ নাম্বার ব্রিজ হয়ে লেকের পাড় ঘেঁষে ৮ নাম্বার ব্রিজ হয়ে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে যাবার পথ পর্যন্ত।
২. রূপসী বাংলা হোটেলের (শেরাটন) সামনে থেকে মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, বেইলী রোডে যাবার রাস্তা পর্যন্ত।
৩. মৎস ভবনের পরের পূর্ত ভবন, উলটো দিকে হাইকোর্ট।
৪. শিক্ষা ভবন থেকে শুরু করে সচিবালয়ের আগে খাদ্য ভবন, বিদ্যুৎ ভবন পর্যন্ত।
৫. ওসমানী মেমোরিয়াল হলের সামনের চত্বর, জিপিও চত্বর।
৬. বলাই বাহুল্য, গোটা রমনা পার্ক আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।





দারুণ পোস্ট
সঙ্গে ফুলগুলোর ছবি দিলে ভালো হতো
ধন্যবাদ।
- এই বাক্যটা খেয়াল করেন নাই মনে হয়। যাকগে, ধানমণ্ডির যে জায়গার কথা বললাম সেটা তো আপনার বাসা থেকে হাঁটার দূরত্বে। সকালে নিধিকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে একটা ফটো সেশন করে ফেলতে পারেন। সে সময় দরকার পড়লে আমাকেও একটা কল করতে পারেন। একসাথে চা-বিড়ি খাওয়া যাবে।
ক্রিসেন্ট লেক এলাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বাদ পড়ছে
ধন্যবাদ। আমি যেগুলো দেখেছি সেগুলোর কথা বলেছি। এখন আপনারা অন্য যে জায়গাগুলো দেখেছেন সেগুলো অ্যাড করে দিতে পারেন।
আজকেই যাবো হাটতে।
ছেলেকে ধানমন্ডি দিতে আসেন জানতাম নাতো। তারপরও একদিন চা খেতে আসেন নাই আমাদের বাড়িতে? অবাক হলাম বেশ।
আজকে হাঁটতে বের হবেন, কখন? খবর দেবেন, সাথে যোগ দেয়া যাবে। আপনি ঢাকায় তাতো জানতাম না, আর আপনার মোবাইল নাম্বারও জানি না। তাছাড়া আমি তো আপনাদের বাসা চিনি না, শুধু জানি কলাবাগানে। সকাল সোয়া সাতটায় না ঘুমিয়ে আমার জন্য যদি চা বানাতে পারেন তাহলে খেতে আসবো না কেন - অবশ্যই আসবো।
আমি এখন ঢাকায় না। আমি স্পিরিচুয়ালী হাটবো ন । এবারের কথা বলি নাই, এর আগে যতোবার আসছি সেগুলোর কথাই বলেছি
 । এবারের কথা বলি নাই, এর আগে যতোবার আসছি সেগুলোর কথাই বলেছি   । আমিতো গুরুত্বপূর্ন কেউ না, আমার মোবাইল নাম্বার নোট করবেন না, জানা কথা। এফবির পুরান ম্যসেজ চেক করে দেখেন বিডি মোবাইল নাম্বার পাবেন খুঁজে
 । আমিতো গুরুত্বপূর্ন কেউ না, আমার মোবাইল নাম্বার নোট করবেন না, জানা কথা। এফবির পুরান ম্যসেজ চেক করে দেখেন বিডি মোবাইল নাম্বার পাবেন খুঁজে  
নজরুল ভাই সেদিন বলছিলেন, আপনি সব ফুলের নাম জানেন। আপনাকে এখানে পেয়ে ভালো হলো। ফটুরে না হলেও কিছু ফুলের ছবি দেন।
ঢা বি ক্যাম্পাসে জারুল ফুল ফুটে ভরে গেছে। দারুণ লাগে দেখতে।
আপনার সাথে একদিন ভোরবেলায় বের হওয়া যায়, ফুল দেখব, রাস্তায় বসে চা খাবো।
নজরুল একটা কথা বললেন আর আপনি বিশ্বাস করে ফেললেন! সব ফুলের নাম জানে এমন মানুষ হয় নাকি? আমার কাছে কোনো ফুলের ছবি নেই। কারণ, কোনো কালেই আমার ক্যামেরা ছিলো না, এখনো নেই।
আপনি আমাকে ফুল দেখিয়ে নাম জিজ্ঞেস করবেন আর আমি পটাপট উত্তর দিতে পারবো - এমনটা ভেবে যদি আমার সাথে বের হতে চান তাহলে হতাশ হবেন। তবে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বা বসে চা খেতে আমার কখনোই কোনো আপত্তি নেই।
ধানমন্ডি সকালবেলা নরক হয়ে যায়, ভোরের সমস্ত স্নিগ্ধতা নষ্ট করেছে স্কুলগুলো। ফুল দেখবো কোথায়, মানুষ দেখেই মাথা ধরে যায়-ফুলে অসংখ্য কাঁটা।
আপনার কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলি,
তারা বেরিয়ে পড়ুক, আমরা ছবি দেখি
কথাটা আংশিক সত্য দিদি। যে রাস্তাটা ভীড়ে নরক ঠিক তার পাশে দেয়াল/রেলিংটা পার হয়ে লেকের ধারে গাছগুলোর কাছে গেলে ভীড়টা আর টের পাওয়া যায় না। গাড়ি/রিকশাটা ছেড়ে দিয়ে হাঁটলেও দেখবেন মন্দ লাগে না। আর সকাল সাতটার আগে বের হতে পারলে তো কথাই নেই। আজ ভোরেই আমি হেঁটে ৩২ নাম্বারের কাছ থেকে একেবারে ১ নাম্বার পর্যন্ত গেলাম।
এবি'র ফটুরেদের কাছে ছবির দাবীটা বহাল থাকলো।
আপনারে খুজতে ছিলাম... বর্ষা নিয়ে একটা ইপুস্তক বের হবে এবি থেকে ... বর্ষার ফুল নিয়ে আপনার একটা লেখা প্রয়োজন... সম্ভব?
করজোরে ক্ষমা প্রার্থণা করছি। কোনো ধরনের বিষয় ঠিক করে দিয়ে, কোনো ধরনের ডেডলাইন ঠিক করে দিয়ে কোনো লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার সেই ক্ষমতা ও যোগ্যতা নেই। এক কালে পরীক্ষার খাতায় বিষয় ও সময় নির্ধারণ করে রচনা লিখেছি; ওগুলো যে ভালো কিছু হয়নি সেটা আজ প্রমাণিত সত্য।
দারুন লেখা। একজন নতুন (নাকী পুরান পাপী ?) ফুলপ্রেমী পাওয়া গেল...
ধন্যবাদ। প্রেমিকরা চিরনবীন, তারা কখনো পুরনো হয় না।
আমি সেদিন একজনকে বললাম, টিএসসি'র গেট দিয়ে পার্কে ঢুকলেই একটা ছবি পাওয়া যাবে। ভয়ংকর ছবি।
আরেকটা ছবি পাওয়া যাবে রোকেয়া হলের একটু আগে দাঁড়িয়ে নীলক্ষেতের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটায় তাকালেই।
ইস! আপনার লেখা পড়ে এখন সেই সব পথ ধরে হাটতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু, সাথে হাঁটার মত কেউ নাই
মন্তব্য করুন