জামায়াত-শিবির কেন আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি
বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে বিভিন্ন সামরিক সরকার এবং রাজনৈতিক দলের কাঁধে ভর করে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একথা যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি এই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা কখনো মনে প্রাণে স্বীকার করেনি এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সময়কালীন তাদের অবস্থানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাতো দূরের কথা, বিন্দুমাত্র লজ্জ্বিত হতে তাদেরকে দেখা যায়নি। উলটো জনগনের সামনে নির্লজ্জ্বের মত বলতে দেখা গেছে, “দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই।”
এছাড়া এই জামায়াতে ইসলামী আরেকটা মিথ্যা প্রপাগান্ডার আশ্রয় নেয় তা হলো, বঙ্গবন্ধু সকল যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে গেছেন।
দেশের যুদ্ধাপরাধী নেই এই কথা যে চরম মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সে কথা ব্যাখ্যা করার অপেক্ষা রাখেনা। এখনো প্রশ্ন আসে, যেহেতু তারা বলে বেড়াচ্ছেন দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই, তাহলে বঙ্গবন্ধু কাকে ক্ষমা করে গেছেন সেই কথা তাদের মনে কেন আসে? প্রথম কথার মাধ্যমে তারা বলতে চায়, তারা যুদ্ধাপরাধী নয়। আর দ্বিতীয় কথার মাধ্যমে তারা বলতে চায়, তারা যদি যুদ্ধাপরাধী হয়েও থাকে তাদেরকে বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমা করে গেছেন। এই কথাটা যে মিথ্যা তার একটি প্রমাণ হলো বঙ্গবন্ধুর নিজ কন্ঠে শুনুন।
http://www.youtube.com/watch?v=1grCx9JNhnw&feature=share
এছাড়া এই প্রেস ব্রিফিংটাও দেখে নিতে পারেনঃ
http://www.youtube.com/watch?v=HJNJOf7EJuI
জামায়াতে ইসলামী নামক এই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালীন ভূমিকার কথা এখন আমদের সকলেরই জানা। তবুও এক শ্রেণীর চাঁড়াল প্রজাতীর মানুষ আছে, তারা মনে করেন ৭১ সালে নাকি আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, কতটুকু মাথা মোটা হলে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি অশ্রদ্ধা কতটা চরম হলে মানুষ এই কথা বলতে পারে। আমি তাদের রক্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করি। এর জন্য অনেকে বলে, কারো পরিবার এবং জন্মপরিচয় নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। এই কথার জবাবে, আমার প্রশ্ন যারা আমাদের সমগ্র জাতির জন্ম নিয়ে সন্দিহান, তাদের মত দু’চারটে শুকর শাবকের জন্মপরিচয় নিয়ে কথা তুলে আমি কোন পাপ করিনা বরং পূণ্যই করছি। সেসব কথা এখন মোটামুটি সকলেরই জানা।
আসছি মূল কথায়। জামায়াতে ইসলামী আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী এবং তারা এখনো আমাদের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। কারণ খুবই সহজ, যদি মেনেই নিতো, তারা জনগণের কাছে তাদের তৎকালীন কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা চাইত কিংবা লজ্জ্বিত হতো। যেই দেশে রাজাকার শব্দটি একটি গালি, সেই দেশেই সেই রাজাকারের মূল হোতা গোলাম আযমদের পক্ষে আইনজীবিও পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, সেই গোলাম আযমদের আবার অন্ধভাবে সমর্থন করে কথা বলছে তরুন প্রজন্মের একাংশ, যদিও তারা এই দেশে সবসময় পরাজিত শক্তি হিসেবেই থেকে গেছে এবং থাকবে।
জামায়াতে ইসলামীকে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলার পেছনে এবার কিছু যুক্তি প্রমাণ খুঁজি, খুব সহজ একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। যারা আজকে দেশে ইসলাম কায়েম করার নামে এই জামায়াত ইসলামী কিংবা ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সমর্থন করে থাকে, তারা কি আসলেই সুস্থ মস্তিষ্কের। আমার মন্তব্য “না।” কারণ, যেই দল সরাসরি আমাদের দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে, এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ এবং সম্ভ্রম হারানোর জন্য দায়ী, তারা কিভাবে ইসলামের মত শান্তির ধর্ম প্রচার করবে? এই সহজ যুক্তিটা যাদের মাথায় ধরেনা, তাদেরকে আমি কখনোই সুস্থ বলবো না।
এরপর আসি, ইসলাম প্রচারের নামে এই জামায়াতে ইসলামী বিশাল বিশাল অনুদান নিয়ে আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। বাংলাদেশে আর কোন রাজনৈতিক দলের এত অনুদান উৎস নেই যতটা রয়েছে এই জামায়াতে ইসলামীর। এই কথা, অলিখিত সত্য নয়, বরং তাদের অগণিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামী এনজিও এবং সে সকল প্রতিষ্ঠানের রমরমা অবস্থা দেখলেও অনুধাবণ করা যায়। জামায়াতে ইসলামী আজ পর্যন্ত নির্দলীয় ভাবে কোনা মানুষের সাহায্য করেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই, যেখানে স্বয়ং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে আমি নিজে পর্যবেক্ষণ করেছি, শিবিরের সমর্থক হলে টিউশন ফী এর কি পরিমান মূল্যহ্রাস অফার পাওয়া যেত এবং পাস করার পর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী।
চলে আসি, একটি রেফারেন্সে। যখন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে যুদ্ধাপরাধীর দায় দেয়া হয়, তারা খুব কৌশলে বলে ইসলামী ছাত্র শিবির একটি ছাত্র সংগঠন এদের মূল লক্ষ্য “আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনবির্ন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।” – কাগজে কলমে এ কথা সত্য। কিন্তু বাস্তবে? চলে যাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওয়েব সাইটে। তাদের ওয়েব সাইটে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বিভাগে এই কথাটিই লিখা। তবে শিবিরের প্রথম দুই কর্ণধার মীর কাশেম আলী এবং মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বর্তমানে আটক আছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে তাদের বিরুদ্ধের আনীত অভিযোগ সমূহ বিচারাধীণ রয়েছে।
এছাড়া আরো চমক রয়েছে। এই ছাত্র সংগঠনের ওয়েব সাইটের গ্যালারী বিভাগে (http://shibir.org.bd/video/gallery/) গেলেই দেখা যাবে ছাত্রসংগঠনের যুদ্ধাপরাধী বিচার বিরোধী প্রচারণা।
ইসলামী ছাত্র শিবিরের বদর দিবস পালনের কথা আমরা সকলেই জানি। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে জামায়াতের এবং শিবিরের দোয়া মাহফিল আয়োজন করার কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমরা কি জানতে চেষ্টা করেছি এই ধরনের দিবসগুলো জামায়াত আসলেই কি কারণে পালন করে?
অমি রহমান পিয়াল ভাইয়ের সাম্প্রতিক একটি লিখা থেকে তুলে ধরলাম একটি অংশ,
জামাতে ইসলামী ২১ ফেব্রুয়ারি বিশেষ দোয়া দিবস পালন করে। কিন্তু আমরা কেউ হয়তো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি তারা কেনো এটা করে, এখানে কি বিষয়ে দোয়া হয়। ভাষা দিবস একটা উছিলা মাত্র, তবে তারা এদিন সত্যিই শহীদ দিবস পালন করে এবং শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিল আয়োজন করে। অত্যন্ত গোপন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে এদিন তারা আসলে কাদের ভজনা করে। জানেন এই শহীদদের পরিচয়? ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় একদল বন্দী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এরা সবাই ছিলো ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির) আল-বদর বাহিনীর সদস্য।সেই নিহত ১৮ জন আল-বদরকে জামাত শহীদি মর্যাদায় এদিন স্মরণ করে।
গোলাম আযম গ্রেপ্তারের পূর্বে এই জামায়াত শিবিরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছেন একটি ভাষন, সেটিই তারা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রচার করে। সেই ভাষণে এই খুনী কি পরিমান মিথ্যাচার করেছে তার কিছুটা ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি নিচে।
জামায়াতের প্রচারিত গোলাম আযমের জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষনে বলেছে, "আমি অত্যন্ত দৃার সাথে দ্ব্যর্থহীনভাবে দাবী করছি যে এসব অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। নিরপেক্ষ বিচার হলে এগুলোর একটিরও প্রমাণ পাওয়া যাবে না।" - এক নম্বর মিথ্যা। একাত্তরে তারা কি করেছে তার অসংখ্য প্রমাণ আছে।
"এ মামলার বাদী বর্তমান সরকার। আসামীদের অপরাধের তদন্ত করার জন্য যে সংস্থা, তা এ সরকারই তাদের নিজেদের লোকদের সমন্বয়ে গঠন করেছে।" - সরকার বাদী না হয়ে কি কোন দল বাদী হবে? এইটুকু কথা কি অধ্যাপক সাহেবের মাথায় ঢুকেনা?
"এ জঘন্য উদ্দেশ্যেই ১৯৭৩ সালের মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধ ইস্যুর দোহাই দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে তাদের মনগড়া ট্রাইব্যুনালে এক জংলী আইনে বিচার করে শাস্তি দেয়ার চক্রান্ত করছে" - আরেকটি মিথ্যা, এটা মিমাংসিত ইস্যু নয়, মিমাংসিত ইস্যু হলে এই তথাকথিত অধ্যাপক জিয়াউর রহমানের আমলে কেন দেশে আসতে হয়?
"আমার ডান পায়ে সায়াটিকা ও বাম হাঁটুতে আর্থরাইটিস। এর জন্য দু’বেলা এমন কতক ব্যায়াম করতে হয়, যা অন্য কারো সাহায্য ছাড়া করা যায় না। একা চলাফেরা করতে পারি না।" - আরেকটি মিথ্যা, তার স্ত্রী এর ভাষ্যমতে গ্রেপ্তারের আগের দিন সে নিজে পায়ে হেটে সিড়ি দিয়ে তার বাসায় উঠে।
"জনাব আব্দুস সামাদ আযাদের সাথে ২৫শে মার্চেও আমার টেলিফোনে আলোচনা হয়। তিনি আমাকে পুনরায় আশ্বস্ত করে বলেন যে, তাঁরা অখণ্ড পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোন বিকল্প চিন্তা করছেন না।" - আরেকটি মিথ্যা, ৭ই মার্চের ভাষনেই বঙ্গবন্ধু ঘোষনা দিয়ে দিয়েছিলেন "এভাবের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
"১৯৪৭ সাল থেকে ’৭০ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার এ দেশের সাথে যে আধিপত্যবাদী আচরণ করেছে তাতে আমাদের নিশ্চিত এ বিশ্বাস ছিল যে, ভারতের সহযোগিতা নিয়ে দেশ স্বাধীন হলে তা ভারতের তাবেদার রাষ্ট্রই হবে। তাই, কিছু বামপন্থী, সকল ডানপন্থী ও সকল ইসলামী দলগুলোসহ প্রায় সকল সুপরিচিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব এ সুস্পষ্ট ধারণার কারণেই ভারতের সাহায্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা সঠিক মনে করেননি। ভারতের সাহায্য না নিয়ে যদি স্বাধীনতা যুদ্ধ করা হতো, তাহলে আমরা অবশ্যই সে যুদ্ধে যোগদান করতাম।" - আরেকটি মিথ্যা, ভারত শুরুতে শুরুমাত্র আমাদের স্মরণার্থীদের স্থান দিয়েছিল, তখন কই ছিলো, ২৫শে মার্চ রাত থেকেইতো যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবং ছয়টি দল মিলে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা বুঝে নেয়ার পায়তারা চলছিল। ৪ঠা অক্টোবর ১৯৭১ এ প্রাদেশিক জামায়াতে শুরার বৈঠক উদ্ভোধন কালে সে নিজ মুখে বলেছে, পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
"প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭০-এ নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য জনাব নুরুল আমীনের বাসায় সমবেত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, জেনারেল টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে গণহত্যা বন্ধ করার দাবি জানাতে হবে এবং সেনাবাহিনীর জুলুম-নির্যাতনের শিকার অসহায় জনগণের সহায়তার জন্য আমাদেরকে সুযোগ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।" - আরেকটি মিথ্যা, বরং রাজাকারদের উদ্দেশ্যে এই গোলাম আযম এরা হিন্দু তাই এদের মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
"১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারা রাজনৈতিক নেতাগণ জনগণকে যুলুম থেকে রক্ষা করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনে বিজয়ী নেতৃবৃন্দ দেশে না থাকায় সাহায্যপ্রার্থী অসহায় জনগণের সমস্যার সমাধান করাই তাদের একমাত্র দায়িত্ব ও চেষ্টা ছিল। আমিও এ চেষ্টাই করেছি" - এখানে খেয়াল করতে হবে "মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারা", কেন, তখন কি তার শক্তি সামর্থ ছিলো না?
"বাংলাদেশের স্থপতি স¡য়ং যুদ্ধাপরাধী ব্র্যুর চূড়ান্ত মীমাংসা করে গেছেন
শেখ সাহেব এর সরকার তদন্তের মাধ্যমে পাক-সেনাবাহিনী ও সহযোগী অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে থেকে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। তাদের বিচার করার জন্য ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই জাতীয় সংসদে International Crimes (Tribunals) Act পাস করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে ঐ যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করা হয়। " - এটা মোটেই মিমাংসিত বিষয় নয়। এই মিথ্যাটায় জামায়াতের প্রপাগান্ডা।
"পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের সামরিক সরকার সরকারি আদেশের মাধ্যমে জনগণ থেকে রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামস নামে বিভিন্ন বাহিনী গঠন করে।" - লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে। তার আগের বক্তব্য ছিল সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অন্যতম। এখানে বের হল, আসল কথা, তাহলে পূর্বের কথার সংশোধনী দেয়া উচিত এভাবে, "পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগীতা করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী নেতারা......।"
"পরবর্তীতে, ১৯৭৩ সালের নবেম্বরে সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার পর গ্রেফতারকৃত ও সাজাপ্রাপ্ত সকলেই মুক্তি পায়। অবশ্য যারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মত অপরাধে অপরাধী তাদেরকে ঐ আইনে বিচার করার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখা হয়।" - প্রথমে সে নিজেই বলেছে সাজাপ্রাপ্তরা সকলেই মুক্তি পায়, পরের বাক্যে আবার অন্য কথা।
"১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। সকল আন্দোলনকারী দলের লিয়াজোঁ কমিটি একত্রে বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করতো। তখন তো কোন দিন আওয়ামী লীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী মনে করেনি।" - একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কথা ভুলেই গেল বেচারা এখানে।
"২০০১ সালের পূর্বে কখনো জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলা হয়নি। এখন পাকিস্তানী ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বিচার করার জন্য ১৯৭৩ সালে যে আইন করা হয়েছিল সে আইনেই আওয়ামী লীগ নতুনভাবে আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে বিচার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে" - বঙ্গবন্ধু নিজে বলে গেছেন যুদ্ধবন্দি এবং যুদ্ধাপরাধী এক নয়। (http://www.youtube.com/watch?v=1grCx9JNhnw&feature=share)
"যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর যে মীমাংসা শেখ সাহেব স্বয়ং করে গেছেন তা নাকচ করে নতুনভাবে বিচার করাই যদি আসল উদ্দেশ্য হতো, তাহলে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার আগে করতে হতো। কিন্তু সেটা সরকার করছে না। শেখ সাহেবের সমাপ্ত করা সে বিচার নাকচ না করেই অন্যায়ভাবে গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়ে সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতকে দুর্বল ও জামায়াত নেতৃবৃন্দকে দৃশ্যপট থেকে সরানোর জন্যেই নতুন করে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু সৃষ্টি করেছে।" - জবাব আগের ভিডিও।
"যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানে করতে হলে সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করতে হবে, বিচারক হতে হবে উভয়পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক মানের নিরপেক্ষ বিচারকও সেখানে থাকতে হবে।" - পৃথিবীর কোন যুদ্ধাপরাধের বিচারে পেয়েছে উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিচারক?
"তদন্ত সংস্থা আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনেছে এসবই সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, কালনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা রাজনৈতিকভাবে আমাকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ তারাই নিজস্ব হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে এ জঘন্য পন্থা বেছে নিয়েছে ।" - সে তো রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছে, তাকে ঘায়েল করে কি লাভ, ভেবে দেখার বিষয়।
"বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত তাদের সেনাবাহিনীর ভূমিকাকেই বড় করে দেখে। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার কৃতিত্ব সবটুকুই ভারত তাদের বলে মনে করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে তারা স্বীকারই করে না।" - এই কথা একমাত্র গোলাম এবং তার উত্তরসূরীদের পক্ষেই বলা সম্ভব।
"এর পাশাপাশি ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট ও করিডোর আদায় এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে তার আঙিনা বানাতে চাচ্ছে। এটা হলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলবে।" - ইউরোপের সব দেশগুলো বর্ডার খোলা, তাই বলে কি সব দেশ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছে? কই দেখলাম নাতো
এক কথায় বলে, "কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তার ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়।" ঠিক তার পর মূহুর্তেই বলে, "ভারত বিভক্ত না হলে ১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশ ভূখণ্ডের যে উন্নতি হয়েছে তা কখনো হতো না।" - দুই কথার মিল কোথায়?
এত এর মিথ্যা বুলি ভড়া বক্তব্য পুরোটা পড়ার মত ধৈর্য্য আমার নেই, কোন সুস্থ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তির থাকবে বলে আমার মনে হয় না।
এরপর কি বলা যায় এই জামায়াত শিবির আমাদের দেশে ইসলাম কায়েম করার জন্যই রাজনীতি করবে, যারা স্বয়ং নিজেরাই একের পর এক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করে থাকে?
এরপর এই সব ঘাতকদের প্রতি নতশীরে সম্মান দিয়ে কথা বলে যে সকল মানুষ তাদের রক্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললে কি খুব খারাপ কথা বলা হয়? এরা কি আসলেই আমাদের দেশকে ভালবাসে নাকি গত ৩৭ বছর ধরে জামায়াত ইসলামী মিথ্যা প্রপাগান্ডায় নিজেদের বিবেক বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে এই সকল দালালদের ভক্তি দেখায়!!
এবার আসি, মানুষ বলে থাকে আওয়ামীলীগ সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার হয়েও পাকিস্তানের মত দেশের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেনা কেন? কিংবা কেন তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষমা প্রার্থণার জন্য চাপ প্রয়োগ করেনা। এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে হঠাৎ মনে পড়লো একটি সংবাদের কথা। আর সেই সংবাদটি ছিল এমন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সাথে সাক্ষাৎ করতে এলে দীপু মনি ১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান। জবাবে ইসলামাবাদে পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অতীতকে ভুলে যাবার জন্য ঢাকার প্রতি আহ্বান জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে, “দুই দেশের সম্পর্ক অতীতের কাছে জিম্মি হবে না।”
কিন্তু পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির তিন দিনের মাথায় বাংলাদেশ তার প্রতিক্রিয়ায় দৃঢ়তার সাথে জানায়, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি চাইলে পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা চালিয়েছে তার জন্য তাকে ক্ষমা চাইতেই হবে।” সংবাদ সূত্রঃ (http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=ae1b1cff76570e181856445bca185674&nttl=12062012118695)
আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন জানে একাত্তরে কাদের ভূমিকা কি ছিল, কারা আবার নিজেদের দল ভারী করতে সেই খুনী দালালদের এই স্বাধীন বাংলায় প্রতিষ্ঠিত করেছে, কারা এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে কলংকিত করেছে, কারা এই দেশের গৌরবকে বার বার ধর্ষণের চেষ্টা করেছে, কারা জয় বাংলা কে সকল বাঙ্গালীর শ্লোগান থেকে শুধু মাত্র আওয়ামীলীগের শ্লোগানে রুপান্তরিত করেছে, কারা “জিন্দাবাদ” শব্দের মত উর্দূ শব্দ দিয়ে দলীয় শ্লোগান করেছে, কারা তাদের দলীয় সংবিধানের কোথাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের কথা স্বীকার না করার কারণে নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় নমিনেশন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের দলীয় সংবিধান পরিবর্ত্ন করেছে (ক্ষমতার জন্য, দেশের জন্য নয়), এবং কারা দলীয় নামও পরিবর্তন করেছে শুধু মাত্র নির্বাচন করার জন্য, যা ক্ষমতায় যাবার একমাত্র উপায় গনতান্ত্রিক একটি দেশে। নতুন প্রজন্ম এদের কখনোই ক্ষমা করবে না। অনন্ত শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এদের ঘৃণা করে যাবে দেশ প্রেমী প্রতিটি বাঙ্গালী।
ডিটেইলস লিখেছেন মিশু।
চমতকার!!
কীপ ইট আপ।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ চাই।
~
দারুণ লিখেছেন মিশু...
প্রিয়তে নিলাম সাথে শেয়ার দিলাম।
ঠিক আছে
চমতকার পোষ্ট।
জামাত শিবির কে নিষিদ্ধ করা গেলে শান্তি পেতাম।
ফেসবুক থেকে পড়ছিলাম কিন্তু কমেন্ট করা হয় নাই!
সুপার লাইক...
দরকারি লেখা
চমতকার পোষ্ট।
দারুন লিখেছেন। বিস্তারিত উঠে এসেছে।
চমৎকার একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখার জন্য লেখককে অসংখ্য অভিনন্দন।
মন্তব্য করুন