মানুষের সৌজন্যতাবোধ !
বিষ্যুদবার সকাল ১১ টার দিকে বাসা থেকে ফোন এল। সাধারণত বাসা থেকে ফোন করলে লাইন কেটে কল ব্যাক করি। কখনো সখনো কল করতে ভুলে যাই। ক্যানো জানি সেদিন কল রিসিভ করে ফেল্লাম। ওপাশে একাধিক মানুষের চিৎকার শুনতে পেলাম। কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল বুঝতে ! ওপাশ থেকে চিৎকার করে বলছে, বাবু খাট থেকে পড়ে গেছে।
ততধিক চিৎকার করে আমি জানতে চাইলাম, বাবু এখন কোথায় ?
বাসায়...। আমি আসছি... বলে লাইন কেটে দিলাম।
মোটর সাইকেলে অফিস থেকে বাসায় যেতে ১০/১২ মিনিট লাগে। সেদিন মনে হয় আরো কম সময় লেগেছে। মোটর সাইকেলটা রেখে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠলাম চার তলায়। সিঁড়িতে দুইবার হোঁচট খেলাম। বাসার দরজা খোলাই ছিল। ঢুকেই বাবুর মা'র কোল ছেলেকে কোলে তুলে নিলাম। পাশের বাসার ভাবী ছেলের মা'কে সান্তনা দিচ্ছেন। কীভাবে পড়েছে, জানলাম...। ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে সামনের রুমে রেখে তার মা পাশের রুমে জামা কাপড় গুছাচ্ছিল। হঠাৎ ধপাস শব্দ শুনে এসে দেখে- ছেলে মাটিতে পড়ে আছে। কাঁদছে। কপালের বা-পাশ ফুলে গেছে। পাশের বাসার ভাবী এসে বরফ পেঁচিয়ে কাপড় দিয়ে ফোলা জায়গাটা ম্যাসেজ করে দিয়েছে। এখন ফোলাটা কমেছে। বাবার কোলে ছেলে হাঁসছে...। ফোনে ডাক্তারের সাথে কথা বল্লাম। ডাক্তার জানতে চাইলেন, বমি করেছে কি না ? শরীরের অন্য কোথায়ও আঘাত পেয়েছে কি না ? সব শুনে বললেন, টিনশনের কিছু নেই। বিকাল পর্যন্ত দেখেন। প্রয়োজন হলে বিকালে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিতে বললেন।
ঘন্টা খানেক বাসায় থেকে আবার অফিসে চলে এলাম। দুপুরে আবার গেলাম বাসায়। ছেলেটাকে দেখতে আর দুপুরের খাবার খেতে। ছেলে আল্লাহর রহমতে ভাল আছে। খাবার খেয়ে আবার অফিসের পথে রওয়ানা হলাম। ধামনন্ডি ৬ নম্বরের সামনে এসে দেখলাম- গ্রিণ রোডে অনেক জ্যাম। আমি সোজা না গিয়ে ৬ নম্বর দিয়ে ঢুকে মিরপুর রোডে উঠলাম। বায়ে মোড় নিয়ে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের সামনে এলাম। সাদা রঙয়ের একটা প্রাইভেট কার গণস্বাস্থ্যের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে গাড়ীর ডানপাশের দরজা খুলে বেরুতে গেলেন এক ভদ্রমহিলা। গাড়ীর ডান পাশের পেছনের দরজায় বাড়ি খেয়ে আমি মোটর সাইকেল নিয়ে পড়লাম- রাস্তার ডানপাশে। ঠিক পড়লাম না, একটা ৮ নং বাসের গায়ের সাথে ধাক্কা খেলাম। বাসের লোকজন হৈ হৈ করে উঠলো। মোটর সাইকেল আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাস আমাকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষাণিকটা দুরে নিয়ে গেল। তারপর বায়ে আছড়ে পড়লাম আমি। এক্কেবারে চিৎপটাং...।
গাড়ীর মহিলা বেরিয়ে এলেন গাড়ী থেকে। আশ পাশ থেকে লোকজন ছুটে এল। আমাকে ধরে নিয়ে বসানো হল ফুটপাতে। মহিলা বারবার বলতে থাকলেন, আমার ড্রাইভারের কোন দোষ নেই। আমারই দোষ। আমি ডান পাশের দরজা খুলে বেরুচ্ছিলাম। আপনার দয়া করে আমার ড্রাইভারকে মারবেন না। গাড়ীতে আরো দু'জন মহিলা বসে আছেন। ভয় পেয়েছেন সবাই। অফিসে ফোন করলাম। অফিস থেকে ৩ কলিগ দৌড়ে এলেন। মহিলা বার বার করে তার ভুলের জন্য মাফ চাইছিলেন। আমাকে বললেন, আপনার চিকিৎসা আর মোটর সাইকেল ঠিক করতে যা খরচ হয় আমি দেব। আমি আমার কার্ড দিলাম তাকে। তিনি আমার কলিকদের কাছে তার নাম/ ঠিকানা/ ফোন নং দিলেন। কলিগরা আমাকে নিয়ে এলেন অফিসের ইমার্জেন্সিতে। বাম পা আর বাম হাতের কয়েক জায়গায় কেটে গেছে। ড্রেসিং করে দিলো ডাক্তার। বাসায় চলে গেলাম...। আজ ৪ দিন। একবারের জন্যও সেই মহিলা (যার নাম নাজনীন আক্তার, বাসা- সাভারের ব্যাংক কলোনীতে, গাড়ীর নং-ঢাকা-মেট্রে-খ-১১-৫৭৮৫) আমার খোঁজ নিলেন না। অবাক হলাম। আমিতো তাকে আটকাতে পারতাম। গাড়ী আটকাতে পারতাম। ক্ষতিপূরণ নিতে পারতাম। কিছুই করিনি, কিছুই বলিনি...। সেখানে এটলিস্ট তার কাছ থেকে একটা সৌজন্য ফোন কল পেতে পারতাম...।
কিছু বলার নাই। তবে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন এটাই হলো বড় কথা। ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন।
বাবুর জন্য অনেক দোয়া, আদর।
মেজাবাহ ভাই ক্রমাগত খারাপ সময় পার করছেন। শুভকামনা।
আর সৌজন্যতাবোধের পরিচয় দিতে বাঙালীর চেয়ে কম আর কেউ জানে না। সুতরাং এইসবকে নিয়ে আফসোস করেন না।
সৌজন্যতাবোধের পরিচয় দিতে বাঙালীর চেয়ে কম আর কেউ জানে না
নারে দাদা, তোমার সাথে এই ব্যাপারে দ্বিমত করছি।
সৌজন্যতার বিরাট সুনাম আছে আমাদের... ব্যতিক্রমও আছে।
অস্ট্রেলিয়া হইলে মাইরধোর বা ভাঙার দরকার হইতো না। পুলিশ রিপোর্ট মাস্ট। ক্ষতিপূরন না দিলে সব ট্রিটমেন্টের খরচ, বাইক মেরামতের খরচ আর শারিরীক + মানসিক ক্ষতি সারানোর বিল পাঠায়া মহিলার বাঙি ফাটায়া ফেলা যাইতো।
মহিলা কান্ড কারখানা দেইখাতো মানুষের উপরে বিশ্বাষটা আরো মনে গেলো।
ব্যাপার না বস। মহিলার ফোন নম্বরের সূত্র ধরে আমি তার বাসার ঠিকানাটাও পেয়েছি। সাভারে আমার কিছু পরিচিত লোকজনও আছে। কিন্তু রুচিতে দিচ্ছেনা, কিছু বলতে বা করতে...
যার সৌজন্যতাবোধ নাই তার সাথে সৌজন্য দেখানোর মানে হয় না।
এখন এইটাই নিয়ম হইছে। কাউরে ঠকাইয়া বা যেমনেই হোক নিজে জিততে পারলে ই হইল। সৌজন্য মৌজন্য হু কেয়ারস। ঐজে টাকা দেয়ন লাগলনা চামে বাইচা গেল এইটাই ওরা ভাবতাছে বিরাট লাভ কইরা ফেলছে।
ঐজে টাকা দেয়ন লাগলনা চামে বাইচা গেল এইটাই ওরা ভাবতাছে বিরাট লাভ কইরা ফেলছে... আপনের এই কথাটা লাইক কর্লাম বস।
তবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো আপনার খবর শুনে।
আধা বেলা করে অফিস করছি বস। বা পায়ের হাঁটুতে বেশ ব্যথা...
বেপার না বস... এইসব ভাইবা মন খারাপ কইরেননা...
তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠুন...
কালকে আপনার ওইখানে গেছিলাম.. ভাবছিলাম দেখা হপে .. হইলো না
হ, বেপার না। মুক্লা ফোন করছিলো। আমি বাসায় চইলা গেছিলাম। আধাবেলা কৈরা অফিস করতাছি...
মানুষের কাছ থেকে কখনো প্রত্যাশা রাখবেন না, দেখবেন অনেক ভাল থাকতে পারবেন।
আবার মানুষের উপর বিশ্বাসও হারাইয়েন না।
ওস্তাদের কথা ওস্তাদি কথা।
রবীন্দ্রনাথ কিন্তু আরো একটা কথা বলছে........মাসুমের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ
রবীন্দ্রনাথ কে ?
বস সিরিয়াসলিই কইছি সবার কমেন্টের মধ্যে আপনারটাই ভালো লাগছে সব থিকা বেশি। আজকা পেচ্ছাপেছ্ছি মুডে আছিতো তাই কথাবার্তা অন্যরকম লাগ্তারে। তারপরো আপনের উপরে কথা নাই।
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়
তদ্যপি আমার গুরু শ্রী নিত্যানন্দ রায়।
বস সিরিয়াসলিই কইছি সবার কমেন্টের মধ্যে আপনারটাই ভালো লাগছে সব থিকা বেশি। আজকা পেচ্ছাপেছ্ছি মুডে আছিতো তাই কথাবার্তা অন্যরকম লাগ্তারে। তারপরো আপনের উপরে কথা নাই।
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি বাড়ি যায়
তদ্যপি আমার গুরু শ্রী নিত্যানন্দ রায়।
তীব্র সহমত। তয় এক্সিডেন্ট কইরা মেসবাহ ভাইয়ে মাথাযও ব্যাথা পাইছে এইটা বুঝলাম।
আপনে বুঝবেন্নাতো কে বুঝবো ? আপনে সমজদার মানুষ...
প্রত্যাশা করিনা ব্রাদার, তারপরও...
মেসবাহ ভাই ইদানিং শুধু একসিডেন্ট করতাছেন। কয়দিনে আগেই গাজীপুরে আসা-যাওয়ার সময়, তারপর ল্যাব এইডে কাঁচ ভাইঙ্গা পড়লো, এখন আবার গণস্বাস্থ্যের সামনে !!!
আসলে সৌজন্যবোধ না শুধু, আমাদের ভিতর থেকে মানবিক বোধ গুলো ও উঠে যাচ্ছে ।
যাক , বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটেনাই, এটাই বড় কথা। আর মটর সাইকেল জিনিসটা আমার এম্নিতেই ভয় লাগে, আমার বাবা ৩ বার একসিডেন্ট করে মাথায় ব্যাথা পেয়েছিলেন তারপর মাথায় টিউমার তারপর ................ , যাক ভাই ভালো থাকেন।
কান ধৈরা উঠবস করাইলে ভালো হৈতো, অত মধুর কথা-ভদ্র ব্যাবহার সবই মাইরের ডরে, সৌজন্যেরে জন্য না---
আপনের অবস্থা এখন কেমন?
আছি কিরাম ? এফবি'র স্ট্যাটাস দেইখো...
আজ-কাল সৌজন্যবোধ কমে গেছে মানুষের। সবাই কেমন নিজের পিঠ বাঁচানো ছাড়া আর কিছু বুঝে না। ভার্চুয়ালি হয়তো এখনো আমরা অনেক ভদ্রলোক আছি। তবে সেটাও বোধহয় খুব বেশিদিন থাকতে পারবো না। একসময় নেটেও দেথা যাবে কেউ নেটিকেটের ধার দিয়েও যাচ্ছে না। যার যা মনে হচ্ছে তা করছে। যেভাবে পারছে নিজেরটা বুঝে নিচ্ছে। একবার বিপদ থেকে বের হয়ে যেতে পারলেই উপকারীকে ভুলে যাচ্ছে।
এরকম মনে হয় চলতেই থাকবে। মনে হয়।
বাঁচতে পারলে আর ঝামেলায় পড়তে যাবে ক্যান?! চাপা দেনেওয়ালাদের এই মেন্টালিটির জন্যই তো গাড়ি ভাংচুর হয়।
রিকশাকে চাপা দেয়া বাসের ভিতরে যে মানুষ থাকে, বাস-চাপা পড়া মানুষটার জায়গায় সেও হতে পারতো জেনেও সে ঝামেলা এড়াতে বাস-ড্রাইভারকে সাপোর্ট করে। এটাই বাঙ্গালি!
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায় ?
এই দুনিয়া এখনতো আার সেই দুনিয়া নয়
মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই!
এই মানুষের ভিড়ে আমার সেই মানুষ নাই....
সমস্যা,কষ্ট,দুঃখ,যন্ত্রনা এগুলো আসে দল বেঁধে ..সাবধানে থাকবেন.!
ঠিক বলেছেন, থ্যাংকু
শুভ কামনা রইলো। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন ভাই। ভাল থাকুন।
জ্বী, ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকুন
মাসুম ভাইয়ের কমেন্টটা ভাল।
মানুষের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা কইরেন না। স্পেশালী বাঙালীর কাছে থেকে। তাহলে ভাল অনুভব করবেন।
মাসুম ভাইয়ের সব কমেন্টসই আমার কাছে দুর্দান্ত মনে হয়...
মেজবাহ ভাই, আশা করি ভালো আছেন এখন। সুস্থ হন এই কামনাই করি।
কিন্তু ঢাকার রাস্তায় চেনা কেউ মোটর সাইকেল চালাবে-এটা ভাবতেই পারি না। এই বাহন এবং বাহক ঢাকার রাস্তায় মোটেও নিরাপদ ন্য়।
আগের চেয়ে ভালো আছি। মোটর সাইকেল নিরাপদ না হলেও ঢাকায় এই বাহন ছাড়া চলা সত্যিই মুশকিল। কী করবো বলুন ?
মানুষের কাছ থেকে কখনো প্রত্যাশা রাখবেন না, দেখবেন অনেক ভাল থাকতে পারবেন। আবার মানুষের উপর বিশ্বাসও হারাইয়েন না।
মন্তব্য করুন