রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব
জীবনে প্রথম রক্ত দেবার কথা আজ আর মনে নেই। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাদ ধসে পড়ার সেদিেনর কথা মনে আছে। আমরা ৪ বন্ধু মিলে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে রক্ত দিয়েছিলাম।
এর পর রক্ত দিয়েছি বই মেলায়। ১৯৯২ সালে। বাংলা একাডেমীর বইয়ের দোকানে সাথেই ছিল সন্ধানীর স্টল। মিষ্টি হেসে ডাক্তার মেয়েটা ডাকলো- ভাইয়া, আপনার এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে একটি অমূল্য জীবন... টাইপের কথা বলে। আমি রাজী হলাম রক্ত দিতে। রক্ত দেবার পর ওরা "কেক আর কোক" খেতে দিল। খেলাম। বললো, ১৫/২০ মিনিট বসে তারপর যান। স্মার্টলি বললাম, দুর কিছু হবে না। কত বার দিলাম। চেয়ার ছেড়ে উঠতেই মাথা ঘুরে পড়লাম। একদম মাটিতে। জ্ঞান হারাবার আগে ডাক্তার মেয়েটার চেহারা দেখলাম। ও কি একটু মুচকি হেসেছিল ?
এরপর প্রতি বছরই ২/৩ বার রক্ত দিতাম। একবার এক ভদ্রলোক তার মায়ের জন্য রক্ত চেয়ে ফোন করলেন। দিতে রাজী হলাম। তার মা বারডেমে ভর্তি। রক্ত দিলাম। এরপর শুরু হলো ভদ্রলোকের যন্ত্রণা। তিনি তার গাড়ীতে করে আমাকে নিয়ে গেলেন শেরাটনে। সেখানে ২/৩ রকমের ফলের জুশ খাওয়ালেন। তারপর দুপুরের খাবার খাওয়ালেন। সেই প্রথম আমার শেরাটনে খাবার খাওয়া। আমার কোনো কথা শুনছেন না। সোজা তার গাড়ীতে করে আমাকে নিয়ে গেলেন নারায়ণগঞ্জ। তার বাসায় সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তার বিরাট ব্যবসা। অফিসে নিয়ে গেলেন। সেখান থেকে টি-শার্ট দিলেন। আমি অপ্রস্তুত। আবার তার গাড়ীতে করে আমাকে ঢাকার বাসায় পৌঁছে দিলেন।
বন্ধূ স্বপন একদিন রাতে ফোন করে বললো- স্কয়ার হাসপাতালে চলে আয়। একজনকে রক্ত দিতে হবে। গেলাম, রক্ত দিলাম ভদ্রমহিলাকে। স্বপনের বসের স্ত্রী। তার কী জানি একটা অপারেশন হবে। ভদ্রলোকের বাড়ি চাঁপাই নবাবগঞ্জ। পৈ পৈ করে বলে দিলেন যদি কখনও আম বাগান দেখার শখ হয়, তাকে যেন জানাই। তার নিজেরই ৩/৪ টা আম বাগান আছে। ২০০৯ সালে চাঁপাই গিয়েছিলাম। পুরো পরিবার। উদ্দেশ্য আম বাগান দেখা, আম খাওয়া আর আম আনা। সে ভদ্রলোকের কথা আর মনে নেই। স্বপন জানতো আমি চাঁপাইতে। একদিন সকালে অপরিচিত নং থেকে ফোন পেলাম। কোন হোটেলে আছি, জানতে চাইলো ওই প্রান্ত থেকে। এরপর ঘন্টাখানেক বাদে একটি মাইক্রো নিয়ে এক ভদ্রলোক হোটেলে এলেন। স্বপনের বসের রেফারেন্স দিলেন। কোনো কথা না শুনে আমাদের নিয়ে গাড়ীতে করে তাদের বাগানে নিয়ে গেলেন। চাঁপাইয়ের সেই আম পাকা গরমে এসি মাইক্রোতে ঘুরতে বেশ ভালোই লেগেছিলো। শুধু কী ঘোরা ? আম খাওয়ানো, আম দেয়া... আরো কত কী !
আমার কলিগ হারুন ভাই। তার বাবার খুব অসুখ। রক্ত দরকার। আমার কাছে এলেন, রক্তের তালিকা নেবার জন্য। গ্রুপ জেনে বললাম, আমি দেব। হারুন ভাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কেউ এত সহজে কাউকে রক্ত দিতে রাজী হয় ? আমি তাড়া দিচ্ছি তাকে। এসব আমার কাছে কোনো ব্যাপার না! তিনি কৃতজ্ঞতায় আমার হাত চেপে ধরলেন...
আমার আরেক কলিগ লেনিন। আমরা একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করতাম। তার বৌয়ের অপারেশন হবে। আমাকে বললো- অপারেশনটা জটিল। বেশ কয়েক ব্যাগ রক্ত লাগবে। ৩/৪ জন আত্নীয়ের সাথে কথা ছিল আসবে। অথচ কেউ আসেনি। কী আর করা। প্রথম ব্যাগ দিলাম আমি। দ্বিতীয়টা দিল আমার ছোট ভাই সাইফুল। ডাক্তার বললেন, আপাতত আর লাগবেনা। পরে লাগলে জানাবেন। সে অপারেশনে লেনিনের বৌয়ের দ্বিতীয় কন্যা সন্তান হল।
সামু ব্লগের এক ব্লগার (নাম মনে পড়ছে না) ফোন করলেন। তার এক আত্মীয় ল্যাবএইডে ভর্তি আছেন। বাইপাস সার্জারি হবে। রক্ত লাগবে। আমি দিতে পারবো কিনা ? দিলাম। রোগী হাসপাতালে থাকা পর্যন্ত প্রতিদিন সে ব্লগার বন্ধুর সাথে দেখা হতো। এরপর আর দেখা হয়নি। হয়নি কথাও।
আরেক ব্লগার ইউনুস খান। কোনো এক রাতে ফোনে করে বললো- বস, আমার এমডির মায়ের অপারেশন হবে। স্কয়ারে। আপনি যদি এক ব্যাগ রক্ত দিতেন ! বললাম আসছি। স্কয়ারে যাওয়া পর্যন্ত ভদ্রলোক কয়েকবার ফোন করলেন। তার মাকে রক্ত দিয়ে নিচে নামলাম। ভদ্রলোক জুস-টুস ম্যালা কিছু খাওয়ালেন। বিদায় নিয়ে বাসায় এলাম। পরদিন রোগীর খবর নিতে ফোন করলাম। ভদ্রলোক ফোন ধরলেন না। ২/৩ বার ফোন না ধরার কারনে শেষে এসএমএস করে তার মায়ের শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলাম। তারও কোনো জবাব দেননি তিনি...
৩/৪ দিন আগে সিলেট থেকে বন্ধু হাসান মোরশেন ফোন করে জানালো- তার এক কাজিনের ব্লাড ক্যান্সার। ঢাকায় নিয়ে আসবে। আমি যেন একটু সাহায্য করি। চেষ্টা করলাম। ১৬ বছরের পুচকে একটা ছেলে। ১ দিন ল্যাবএইডে থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলো ওকে। এখন আছে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে। প্রতিদিন ৫/৬ ব্যাগ করে রক্ত দিতে হচ্ছে ওকে। তারপরও ডাক্তাররা বলেছে- অবস্থা আশংকাজনক। রোগ ধরাই পড়েছে শেষ পর্যায়ে। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কাল রাতে হাসান মোরেশেদের বোন ফোন করে বললো- রক্ত লাগকে। এ পজেটিভ। বললাম, সকালে আসছি। সকালে গিয়ে দিয়ে এলাম। ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে...
এভাবে কত মানুষকে যে রক্ত দিয়েছি, তার হিসেব নেই। আমরা কয়েকজন বন্ধু নিয়মিতই করি এ কাজটি। আমি, গিয়াস, বিপুল, রাশেদ, সাখাওয়াত...। রক্ত দিতে যেয়ে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না হয়... তবু ভাল লাগে...





আপনার মত মানুষ হয় না - এজন্যই তো বলি। ধমক দিয়েন না আবার।
একবার রক্ত দিয়েছি। রক্ত দিয়ে উঠে দাঁড়াইলাম, ঠাস করে পড়ে গেলাম।
পড়ার আগে ঠাস নাকী পড়ার পরে ঠাস শব্দ হৈছিলো ?
স্যালুট মেসবাহ ভাই।
ওয়ালাইকুম
একবার কোরিয়া যাওন দরকার। তোমারে চটকানোর লাইগা...
কোরিয়া আসেন আপত্তি নাই। কিন্তু চটকাইবেন ক্যান?? সেইটা কন।
কি অপরাধ করলাম।

কতগুলান কমু ? যাউগগা, সুখে থাইকো, ভাল থাইকো আর দুরে থাইকো...
ভাই এমনে কইলেন দূরে থাইকো।কষ্ট পাইলাম।
আসলে আসার আগে নিজের উপর দিয়ে সুনামী গেছে তাই ফোন দিতে পারি নাই। মাফ কইরা দেন।প্লিজ।
ক্যান? জ্বীনে ধর্ছিলো?
ধরতে চাইছিলো। কিন্তু পেত্নীটার(সময়) জন্য পারে নাই।
ল্যাবের বৌ কই?আমারে ক্রসফায়ারে ফেলাইয়া কই গেছে।

রাসেলের অভিজ্ঞতা কম। খালি খিচুড়ী, রসমঞ্জুরী ই খাইলো।
ঝাড়ি মাত্র শুরু হইছে

জয়ীতা ঠাস কৈরা পৈরা যাওয়া চোটপাট আইসা পর্লো রাসেলের উপ্রে
রাসেল সাবধান... হেলমেট পৈরা লন
রাসেল ভাবছিলো, ধমক খালি আমরাই খামু। সে আলাভোলা ভাব ধরছিলো বলে ধমক থেকে বাঁচপে। বুঝলেন না। ল্যাব এইডের খিচুড়ী দিল্লিকা লাড্ডুর মতোই। একবার খাইছেন তো সারাজীবন ধমক।
সেদিন আমি ছিলাম বলে বাচঁছিলেন আবার সাথে রসমঞ্জরীও খায়ছিলেন।
এই জন্য আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
আমার হেলমেট নাই।

মাসুম ভাইয়ের লগে যোগাযোগ করেন
মোটরসাইকেল ই জুটায়তে পারলাম না হুদায় কামে হেলমেট দিয়া কি করুম।

এইটা ভাল কৈছো রাসেল
আপ্নেও "এ পজিটিভ" জানা থাকলো... এই গ্রুপ কি খুব বেশি নাকি, আশেপাশে এতো জনের দেখি!!...
সিটি হসপিটালের ছেলেটার কি অবস্থা... এখনো লাগবে নাকি ওর রক্ত?
অবস্থা ভালো না। তুমি দিবা নাকি এক- দুই ব্যাগ ?
আমার মামা'কেও তো আপনি রক্ত দিয়েছিলেন, ভাইয়া
আমি অবশ্য জীবনেও কাউকে রক্ত দেইনি। পঁচা রক্ত তো
হ, মনে পড়ছে। ওইটা দিছিলাম পপুলারে। কত মনে থাকবো কও ! বয়স হৈছে না !!
আয় হায় আমারো এ পজিটিভ.।.।শেষ মেষ জসিম ভাইর রক্ত নিতে হইব।
আমি কিন্তুক ল্যাবএইডের খিচুরী খাই নাই, তাই আমারে ঝাড়ি দিতে পারবেন না, তাইলে আমি উলটা ঝাড়ি দিমু। ঝাড়ি দিতে চাইলে আগে খিচুরী খাওয়ান 
আরে অঞ্জু আফায় কয় কী ? আপনের রক্ত লাগলেতো জ্বিনেই দিবো... নৈলে মাসুম ভাই আর রায়হান ভাই আছেনা ! আমারে লৈয়া টানাটানি করেন ক্যা ! আমিতো জ্বিন না...
আপ্নারে লৈয়া টানাটানি করি না !
আমিতো জ্বিন ্লাইক করি না, মানুষ লাইক করি
ল্যাবিডের খিচুড়ি জিন্দেগীতেও খাই নাই, কবে খাব???????????????????
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
আপনার কোপাল ভাল। আমিও অনেকবার রক্ত দিয়েছি, ১২/১৫ বার হতে পারে। ভাল রক্ত গ্রহীতার দেখা এখনো পাই নাই! আমার কপালে সব সামু ব্লগারের মত ঝুটেছে!
দুর মিয়া, অত চিন্তা কৈরা কী আর রক্ত দেই... মাইনসের উপকার হয়, এইটাই বড় বিষয়
আপনাদের মত মানুষ আরো দরকার ...
খাইছে আমারে !
আপনার এ মহত্ কাজ আরো দশজনকে উত্সাহিত করবে। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুক।
আল্লাহ আপনারও মঙ্গল করুক।
৩৮ বার দিছি
এমন করে মানুষের জন্য দাঁড়াতে আমাদের মেজবাহ ভাই অতুলনীয় এবং অদ্বিতীয়।
এমন করে মানুষের জন্য দাঁড়াতে আমাদের মেজবাহ ভাই অতুলনীয় এবং অদ্বিতীয় - চুপে চুপে জাইন্যা গেলাম.।.।.।.।.।
ভালো লাগলো বস্। রক্ত দিই। তবে কম। অনেকদিন হয় কাউরে দিই নাই।
আমি একবার রক্ত দিয়েছিলাম বইমেলায় একুশে ফেব্রুয়ারীতে, বাসায় বকা খেয়ে শেষ
হাসান মোরশেদ ভাই কি এখন দেশে নাকি?
হাসান মোরশেদ দেশেই আছে...
আপনে লুক তাইলে ওতো খারাপ না
আপনে যতটা ভাবছেন, ততটা ভালোও না...
স্যালুট
ওয়ালাইকুম, আছেন কিরাম ? পিচ্ছি আর তার মায়ে...
আমার এক বেয়ানের রক্ত প্রয়োজন । বি+ গ্রুপের একজনকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে । টেস্ট করে দেখা গেল তিনি এ+ । কি আর করা - সেই ৫৬ বছর বয়স আর নিম্নরক্তচাপ নিয়ে আমিই শেষে - - - । এটাই প্রথম এবং শেষ । মহৎপ্রাণ মেসবাহ য়াজাদ কে শতকোটি সালাম ।
একটি প্রস্তাবঃ
'আমরা বন্ধু'র কারোর রক্ত প্রয়োজন হতে পারে । যারা রক্ত দিতে ইচ্ছুক, তাদের একটা তালিকা সংরক্ষণ করা যায়, যে তালিকায় রক্তের গ্রুপ ও টেলিফোন নং থাকবে। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য আমার প্রস্তাবটি বিবেচনা করা যেতে পারে ।
সিলেটে হাসান মোরশেদের সাথে কথা হল। গতকাল সকাল ৭ টায় ছেলেটা মরে গেল। কাল রাতেই সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার মরদেহ। আজ সকালে গ্রামের বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। শুনে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে। কত ক্ষুদ্র আর তুচ্ছ এ জীবন ! মাত্র ১৬ বছর বয়সে ছেলেটা চলে গেল...
মন্তব্য করুন