এলেবেলে নামগুলো
(নিকোলাসের নাম কীর্তণ লেখাটা পড়ে...)
আমার দেখা, শোনা এবং পরিচিত অনেক মানুষ আছেন- যারা অদ্ভুত কিছু নাম নিয়ে চলাফেরা করছেন। এসব নাম শুনলে, নামের পেছনের মানুষটাকে না চিনলে আপনার পক্ষে বোঝা মুশকিল হবে যে- সে পুরুষ না মহিলা। এসব নাম সংক্রান্ত একটি লেখা বোধ করি অনেকদিন আগে কোথাও লিখেছিলাম। এ মূহুর্ত্যে ঠিক মনে করতে পারছিনা।
আমাদের বাড়ির নাম দিয়েইই শুরু করা যাক। আমাদের বাড়ির নাম "যন্ত্রণা"। আমার জানা নেই- বিশ্বের কোথাও কারো বাড়ির এমন নাম আছে কিনা ? এই যন্ত্রণা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছোট মেয়েটির নাম 'সুলতানা শিপলু'। কুমিল্লা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া কলেজে ওর লেখাপড়া। ওর ছিল ডজন খানেক বান্ধবী। ওরা প্রায়ই আমাদের বাসায় এসে নিজের বাসা মনে করে থাকত, খেত। ওদের যন্ত্রণাতেই আমাদের বাসার নাম রাখা হয় 'যন্ত্রণা'। তো, শিপলুর এক বান্ধবীর নাম ছিল বেবি। কলেজে পড়ত। প্রেম করত একটা ছেলের সাথে। সেই ছেলেটির নাম ছিল- 'শিশু'। পরবর্তী জীবনে শুনেছি ওদের বিয়েও হয়েছে। তবে ছেলে মেয়েদের নাম কী রেখেছে- সেটা আর জানা হয়নি।
কুমিল্লাতে আমার এক বন্ধু ছিল। ওর নাম ছিল তৌহিদুল মাওলা। ডাকনাম শাহিন। আমরা ঝাউতলায় আর ওদের বাসা ছিল বাদুর তলায়। পাশাপাশি মহল্লা। আমাদের পাড়ার একটা মেয়ের সাথে শাহিনের প্রেম হয়। সে আবার আমাদের আরেক বন্ধু বাবুলের বোন। মেয়েটার নামও ছিল শাহীন। পরবর্তীতে ওদের বিয়ে হয়। ওদের একটাই মাত্র ছেলে ছিল। যার নাম ছিল অরণ্য।
আমার মায়ের আপন খালাত ভাই। পশ্চিম রাজা বাজারে বাড়ি। মামা- মামী আজ আর বেঁচে নেই। বেঁচে আছেন তাদের সন্তানেরা। যাদের নাম- মানিক, মুক্তা, হীরা, পান্না, চূনি আর ফেরদৌসি। আরেক মামা থাকেন ঢাকার মিরপুরে। তাদের চার ছেলে। ডলার, রিয়েল, রুবেল আর দিনার।
ফেনীতে যখন থাকতাম- তখন আমাদের কলোনীর পাশে একটা পরিবারের সাথে সখ্যতা হয় আমাদের। সে পরিবারে ছিল তিন কন্যা। তাদের মেজোজনের সাথে আমার একটা ইয়ে টাইপের বন্ধুত্ব ছিল। সেটির নাম ছিল- পাতা। বড়টা লতা আর ছোটটির নাম ছিল কলি।
হারান চন্দ্র ভৌমিক। হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। আমরা ডাকি হারানদা। তার এক ছেলে আর এক মেয়ে। সুখি পরিবার। মেয়েটির নাম কথা আর ছেলেটির নাম পাথর। নারায়ণগঞ্জের মেয়ে রিনা। আমার বৌয়ের বান্ধবী। মেয়ের নাম বর্ণ আর ছেলের নাম অক্ষর।
ছোট বোনের দুই কন্যা। বড়টি অন্যতমা, ছোটটি বর্ণমালা। বড় ভাইয়ার এক মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েটি বড়। ওর নাম অগত্যা। বড় আপার ছোট ছেলেটির জন্ম আদ্ব-দীন হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত ওর নাম রাখা হয়- আদ্ব-দীন। আমার বিয়ের আগেই আমার ভাই বোনেরা আমাদের সন্তানদের নাম ঠিক করে রাখে। সে অনুযায়ী আমার ছেলের নাম রাখা হয় রোদ্দুর। মেয়ে হলে রাখার কথা ছিল ফূর্তি। যেহেতু মেয়ে আর হলোনা- তাই দ্বিতীয় ছেলেটির নাম বড়টির সাথে মিলিয়ে রাখা হল- সমুদ্দুর।
১৯৯১ সাল। আমি তখন স্কয়ারে কাজ করি। নিয়মিত আমার ঠিকানায় চিঠি আসত সপ্তাহে কমপক্ষে ২০/২২ টি। আমার ঠিকানা ছিল একটা ফার্মেসি। তো, সেই ঠিকানায় একদিন একটা চিঠি আসল। খামের উপরে নাম লিখা- মেসবাহ মেরিল য়াযাদ। হাতের লেখাটা পরিচিত। ফার্মেসির মালিক নয়ন ভাই আমার এই চিঠি আসার বিষয়টা নিয়ে বেশ মজা করতেন। নয়ন ভাই এই চিঠিটা আলাদা করে রাখলেন। সন্ধ্যায় অন্য চিঠিগুলো দেবার পরে আলাদা করে এই চিঠিটা দিলেন। জানতে চাইলেন, কে পাঠিয়েছে এবং এই ভাবে নাম লিখার মানে কী ? আমি কিছু না বলে হাসলাম। সেই থেকে আমার নাম হয়ে গেল- মেসবাহ য়াযাদ। বলাবাহুল্য, সেই চিঠিটি ছিল আমার বড় ভাইয়ের লেখা। সেই থেকে লেখালেখিতে আমি এই নামটা ব্যবহার করে আসছি।
আমার নামের এই বানানটা নিয়ে অনেকেই ভুল করেন। করবারই কথা। এমন বিটকেল টাইপে কেউ 'আজাদ' লিখতে পারে এটা সচরাচর অন্যেরা ভাবেননা। লিখতে শুধু ভুল করে তা নয়- বলতেও ভুল করে অনেকে। মেসবাহ ঠিকমত বললেও পরের শব্দে গিয়ে- আয়াদ, যায়াদ, ইয়াযাদ, যাযাদ, ইয়াজিদ- কত নামেই না ডাকে মানুষ। আমার নামের শেষাংশকে যে যেভাবেই ডাকুক না কেন, আমার কিন্তু ভারি মজাই লাগে। বড় ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যিনি আমাকে এমন চমৎকার একটা নাম দিয়েছিলেন...
এখানে এক ভদ্রলোকের সাথে দৈবসুত্রে আলাপ হয়েছিল। তার দুই জমজ কন্যা, কিমা বেগম এবং কোরমা বেগম
ভদ্রলোক মনে লয় খাদ্যরসিক
হার্ডকোর রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ি
অভিমানে কিছুদিন ব্লগে ঢুঁ মারিনি..আজ অভিমানকে টাটা বলে এসেই এই লেখাটি পড়লাম..আর কিমা- কোরমা পড়ে হাসতে হাসতে হেঁচকি উঠে গেল..এখনও উচ্চস্বরে হাসছি..
মনে হচ্ছে, আমার বাচ্চাদের নাম হওয়া উচিৎ তাহলে "মিষ্টি, বুন্দিয়া আর কাবাব"...
ক্যান ক্যান, তোমার অভিমানের হেতু কী ?
আমগো পাড়ায় দুইবুন আছিলো। ইরানী আর তুরানি। তাগো ভাই আছিলো ডলার।
ইস্কুলের বাংলা স্যারের পুলার্নাম জয়, মাইয়ার্নাম বাংলা।
ইরানীগো বাপ-মায়ে কি ইরান আছিলো ?
না না হেগো বাপে ছৌদিত আছেলে
বেডার বাড়ি কি বরিশাল ?
না না। হেরা খাটি বাঘেরহাইট্যা
তাইলে আমি নিশ্চিত, আমগো গ্রিফিন ভাইয়ের বাড়ি কৈলাম বরিশাল
"মেসবাহ য়াযাদ" নামের আকিকা টা মনে হয় বাকি পড়ে আছে...নিজের আকিকা নিজেই দিয়ে ফেলেন...আর আমাদেরও একটু..............
~
আপনাদেরকে একটু কী...? খাওয়া-দাওয়া করামু ?
আপনি কি পরোক্ষভাবে আমারে মুরগা হৈতে কৈতাছেন ?
আকিকা তো মুরগা দিয়া হয় না, এক জোড়া ছাগল কিংবা গরু অথবা উট লাগিবে বস
~
(
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের তিন মেয়ের নাম—অর্ণ কমলিকা, অর্চি মধুরিমা, প্রকৃতি শ্যামলিমা
আমাদের পাশের বাসার চার ভাইয়ের নাম ছিল বিমান, সিমান, নোমান, হিলমান
আমাদের এক বন্ধুর নাম আজাদ, কিন্তু এখন লেখে য়াজাদ
এইখানেও ভুল করলেন দুলাভাই ! য়াজাদ না হৈবো য়াযাদ
আমার কাজিনের তিন ছেলের নাম ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউটন।
দু ভাই আমরা, মিতুল ও রাতুল। আমার একমাত্র ভাগ্নিটির নাম তুতুল।:-D
পুতুল নামে কোনো বোন নেই আপনার ?
নাই।:-)
নাই।:-)
নামে কি আসে যায়?
হ, ঠিক কথা
আমাদের পরিচিত এক পরিবারের ছেলেদের নাম- নেতা, সেনাপতি, কর্নেল
গুল্লি মারেন ক্যান! এই ছেলেগুলো পিঠাপিঠি, আমার বয়সের প্রায়। বিব্রতকর সব নাম না? সেনাপতিরে দেখি বাড়ীর লোকজন এখন সেনা বলে ডাকে। নেতাকে ওর বউ ইফতেখার না কি যেন নামে ডাকে, ভাল নাম বোধহয়।
আরে না, গুল্লি তোমারে মারি নাই। গুল্লি মারছি এই কারনে- নেতা, সেনাপতি আর কর্ণেল আছে যেখানে- সেখানে যুদ্ধ অবধারিত... আমি পলাই....
হাহাহাহহা
ভাই, যুদ্ধ-এর কোনই সম্ভাবনা নাই। নেতা, কর্নেল, সেনাপতি --- ক্ষমতা তো পুরাটাই এই ফামিলির হাতে...
তারপরও বিরোধী দল বৈলা একটা ব্যাপারতো আছে
'৯৭ এর দিকে এক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকের ছেলের কাছে গেছিলাম আমরা কয়েকজন বন্ধু মিল্লা। সেইখানে আরেক পুলার সাথে পরিচয় হইছিলো সেই পুলার নাম 'প্রতিবাদ'।
কয়দিন আগে ব্লগার আনোয়ার সাদাত শিমুল এর স্ট্যাটাসে দেখলাম সে এক ছেলের সাথে পরিচয় হইছে সেই ছেলের নাম 'আহত শামস রহমান'
অভিনেতা শওকত আকবরের মোহাম্মদপুরের বাড়ির নাম ছিল 'সুখ'। বন্যার সময় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে তাঁর এক ছেলে মারা যাবার পর সে বাড়ির নাম হয়ে যায়- 'আহত সুখ'
পাশের বাড়ির এক খালাম্মার ভাই গো নাম - নিটেল, প্যেটেল, ডিটেল!
আমার নিজের খালাতো বোন - মুক্তা, হীরা, পান্না এরপর দেখি জহরত বাদ দিয়া ফুলের দিকে গেছে গিয়া - মুকুল, জেসমিন
আজীবন শুইনা/দেইখা আসলাম ফারজানা'র বইনের নাম ফারহানা!
ঠিক কইসেন। রুবেলের ভাই এর নাম, রাসেল।
নামের একটা ক্রম মেইনটেইন করে।
আমার নাম আর আমার আপ্পীর নাম কে যেন নিল!!!...
আমার দুই মামাত ভাই-এর নাম ডলার, সিজার।
আপনের লেখা কাহিনী পড়তে মজা লাগে সত্যি।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে করে, নাম মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে কিনা! কিছুটা তো করে মনে হয়...
সবসময় যে প্রভাব পড়ে, তা কিন্তু না। আবার একদমই পড়েনা এটাও ঠিক না।
অন্ততঃ আমাগো এলাকার পুরানো বিহারী নাপিত ‘লাখপতি’র জীবনে কোনও প্রভাব ফেলে নাই...। সেলুন-টার অবস্থা ক্রমশই করুণ হতে হতে একসময় উঠেই গেলো!!!
আমার চেনা তিন ভাই বোনের নামঃ
সদ্য সমুজ্জ্বল
রোদেলা রঙ্গন হৃদ্য
সুরেলা সঙ্গীত স্নিগ্ধ
দারুন কাব্যিক নাম
আমার চেনা পাচ ভাই নাম হ্ল- মিল্টন, নিউটন, হিল্টন, প্রোটন, ফিঊশন
আরেকটা হ্ল তিন বোন- প্রথমটা মৌ, পরেরটা মিতা, তিন নাম্বারটা মৌমিতা
আরেক ভাই বোনের নাম- লুচি আর ছানা
ছোটবেলায় ক্যাস্পার কার্টুন দেখতাম সেটা থেকে শুনি এক মা তার বাচ্চার নাম রেখেছে ক্যাস্পার
এলেবেলে লেখাটা ব্যাপক মজার হইছে
ক্যাস্পার! শুনতে তো ক্যাস্পারস্কি মনে হৈতেছে
কাকলি নামটা কিন্তু বেশ, কেমন যেন কোকিল কোকিল শোনায়, আপা একটা গান শোনান
থ্যাংকু, থ্যাংকু
হিটলার, ট্রুম্যান, চার্চিল - আমার দেখে তিন ভাইয়ের আজব নাম
~
পুরো আলোচনা পইড়া একটা মন্তব্যই মাথায় আসলো
নাম নিয়ে আমার নিজের একটি লেখা আছে এই ব্লগেই.."নামকরণ এবং কিছু"..
আবারো, কিছু নাম দেই.. এবার দুই বোনের সােথ সাক্ষ্যাৎ, বড়বোনের নাম নাম "জেনিফার মিষ্টি" আর ছোটটির নাম "ভিক্টোরিয়া রোদেলা"..ভালো লাগলো..আমার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়ের দিকে এমন নামের বন্যা আছে, যথাক্রমে- হেক্টো, ডেকা, ডেসি, সেন্টি..মজার ব্যাপার হলো এনারা সবাই ফুপাতো-চাচাতো ভাইবোন এবং এই নামের মধ্যে যে নামটি হতে পারতো, সেই "মিলি" নামটি কারো নেই..
আমার মায়ের মামাদের নাম, পোখরাজ এবং স্ফটিক..
আরেক খানদানের চারকন্যার নাম, ইয়াকুদ, জমরুদ, আকীক, ফিরোজ..
আমার আত্মীয়দের মাঝে আছে, রুবেল..তারপর বানান ভুলে সুবেল, সুজেল...
আরো আছে..এখানেই শেষ নয়..তবে আরেকদিন...
আমার বংশ দূর্যোধনের বলে নামের বাহার আর ছড়াছড়িতে আমার জীবন বিনোদনে পূর্ণ..
(বিশেষ ধন্যবাদ গভর্নর সাহেবের কন্যাদের নাম এখানে দেয়ায়..আমি খুঁজছিলাম নামগুলো....)
বাংলাদেশে থাকতে আমার স্কুলের ঝাড়ুদারের নাম ছিল লাখপতি আর তার মেয়ের নাম ছিল কোটিপড়ি
আমি তো ভাবতাম আপনার নামই মনে হয় য়াযাদ এখন তো দেখি আমার নামের শেষ অংশ এর সাথে মিল .."আজাদ"
আমার মেজ দুলাভাইয়ের ভাইবোনের নাম - রাজ, নীতি, শুভ
আমার আম্মুর এক বাল্যকালের বান্ধবীর নাম নাকি ছিল, "তুলা বালি"
আবার আমার বান্ধবীর চার ভাইদের নাম- "নেপচুন" "প্লুটো" "দ্য সান" "দ্য মুন"
তবে বিকৃত নামগুলো বেশি মজার লাগে। আমাদের এক বড় আপু আছে। নাম শিমু আপু। উনাকে আমরা ডাকি "শিয়াপু"
আমার এক দুরসম্পর্কের নানী আছেন, তারা দুই বোন। মিথেন আর ইথেন। উল্লেখ্য যে, ওনাদের চৌদ্দ পুরুষের ইতিহাসে রসায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ নাই। ওনাদের এই নামদুটো আমার কাছে এক বিরাট গবেষণার বিষয়।
মন্তব্য করুন