অনিমেষ রহমানের নাগরিক গল্পঃ ১২- রিম ঝিম বর্ষায় মন খারাপ করতে নেই
সত্য যুগে ছিলেন হরি,
দ্বাপরে রাম ধনুকধারী,
ত্রেতায় কৃষ্ণ বংশীধারী,
তাই লালন কয়, কলিতে হচ্ছে লীলা
ও নিত্য কথা কেউ কয় না।।
-ফকির লালন সাঁই
ঢাকা শহরের উত্তরের এই এলাকা পুরো ঢাকা শহর থেকে অন্যরকম। দূরে বিমান উড়ে যাচ্ছে। উঠছে আর নামছে। পাঁচতলার এই অফিসফ্ল্যাটে হাওয়া খেলছে। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলেও তেমন অসহ্য গরম নেই। শুধু আওয়াজ আসে ইউ পি এস থেকে- এক ধরনের বিফ আওয়াজ বিরক্তিকর। এই সময় অরুপ দাঁড়িয়ে আছে তার এক চিলতে বারান্দায়; অফিস লাগোয়া। দক্ষিনে ঢাকা শহর–বামে বিক্ষিপ্ত গুলশান। আর সোজা নিচের দিকে তাকালে বাউন্ডারী লাগোয়া বেশকিছু টিনের ঘর। ঠিক বস্তি বলা যায়না। বস্তিতে থাকে পেশাহীন কিছু মানুষ! কিন্তু এখানে মনে হয় কিছু মানুষ থাকে যাদের খুব কম আয় রোজগার হলেও তা নিয়মিত। তিনজন মহিলা ঘরের দাওয়ায় বসে আছেন লাইন ধরে-একজন আরেকজনের মাথায় উকুন দেখছে। কেমন আয়েশী ভঙ্গি। টিনের ঘরগুলোর ঠিক মাঝখানে একটা এঁদোডোবা। টিনের ঘরগুলোর একটা অংশ ডোবা কিংবা পুকুর যাই বলা যায়-তার উপরে। দূর থেকে বোঝা যায়-ডোবাটা অব্যবহৃত! ধোয়া কিংবা গোসল কোনো কাজেই লাগেনা কিংবা লাগানো হয়না। দূরে একটা সবুজ করই গাছ দাঁড়িয়ে আছে-অনেক জায়গা দখল করে। খুব সুন্দর ভঙ্গিতে। যেনো আঁচল বিছানো মা।আলা নামের অফিসের টি বয়টা এসে দাঁড়ালো।
-স্যার বাড়িত যামু।
-ফিরবা কবে?
-স্যার শনিবার।
-কোনো সমস্যা?
-না ঠিক তা না-জমি জমা নিয়ে ঝামেলা।
-আপনি যদি মশিউর স্যারকে বলে দিতেন। আলা কিছুটা চক চকে চোখে তাকালো।
-মশিউর তো পুলিশে চাকরী করে-সে জমি জমার ঝামেলায় কি করবে?
-মানে স্যার আমার বিরুদ্ধে থানায় জিডি হইছে।
-কে করছে?
-আমার বড় ভাই।
-সমস্যা কি?
-আমার আব্বা-মা দুজনেই মারা গেছেন-এখন আমার বড় ভাই বলতেছে-জায়গাসম্পত্তি সব তার-বাপে তারেই দিছে-এমনকি ঘরভিটাও। আমারে এতোদিন এমনি থাকতে দিছে-এখন আমি থাকতে হইলে তার থেকে কিনতে হবে। মানে ভাইরে টাকা দিতে হবে। আলা আবার বললো।
-গ্রামের লোকজন নিয়া মিমাংসা করে ফেলো।
-সালিশ বসছিলো; কিন্তু চেয়ারম্যান আর মেম্বাররা ভাইয়ের পক্ষে।
-তো তুমি কি করবা?
-আদালতে যামু স্যার।
-আদালতে গেলে?
-স্যার উকিলের সাথে কথা বলেছি-কোর্টে গেলে আমি রায় পামু। আমার ভাইয়ের দলিল জাল।
-ঠিক আছে যাও আর মশিউরের সাথে দেখা করবা সে তোমাদের ওই অঞ্চলের বড় অফিসার। বাদ দাও আমিই কথা বলবোনে।এখন আমারে এক কাপ চা দাও।
আবার মেইলে মন দিলো অরুপ। কারেন্ট আসার পর নেট লাইন চালু হওয়াতে মেইল আবার লোড হচ্ছে। আর ভাইভ্রেশনে থাকা ফোন বাজছে।চিটাগং অফিস। টুক টাক কথা বলে আবার মেইলে চোখ বুলায় অরুপ। ঠান্ডা হাওয়া আসছে জানালা দিয়ে। পিঠে লাগছে। আহা! শান্তি। হঠাত মনে হলো আলা আবার মামলা মোকদ্দমা করলে ঝামেলা। মশিউর যদি বিষয়টা সমাধান করে দিতে পারে-ভালো হয়।
-দোস্ত কি করো?
-আরে থানায় আসছি-কিছু সমস্যা হইতাছে এইদিকে-বর্ডার এরিয়া তো সারা বছর কিছু না কিছু ঘটতেছে।
-দোস্ত একটা তদবির।
-আমি তো মফস্বলে থাকি-এই ধরনের জেলায় তোমার কিসের তদবির?
-আরে তোমার জেলায় আমার অফিসের টি বয়ের বাড়ি। তো তার ভাইয়ের লগে জায়গা-জমি নিয়া ঝামেলা। সে আবার কইতাছে-কেউ জানি তারে কইছে-কোর্টে গেলে জমি ফেরত পাইবো। তুমি সালিশ করে পোলাডারে কোর্টে যাওন ঠেকাও। দেওয়ানী মামলা শেষ হতে ৩০/৪০ বছর লাগে!
-তা ঠিক-আমার বাপের করা মামলা এখোনো চলতেছে-তোমাদের টার কি অবস্থা।
-আমাদেরো একি অবস্থা-বাপের আমলের মামলা এখোনো চলছে-আশা করতেছি আমার পরের জেনারেশন চালাইবো। দেখা যাক।তো কথা এই থাকলো-আমার টি বয়টা যেনো কোর্টে না যাইতে হয় আর যেনো ভালো সমাধান হয় দেইখো।
-আমার ফোন নাম্বার দিয়া আমারে কল দিতে বলবা। দেখি কি করা যায়।
ঠিক সন্ধের মুখে অরুপ বেরিয়ে পড়ে। ঠিক তখনি বৃষ্টি বেরিয়ে পড়ে তার মেঘের ঝোলা থেকে! রিক্সা পেতে আরো কিছু পথ হাঁটতে হবে। ভিজতে ভিজতে এগিয়ে গিয়ে রিক্সায় উঠলো। এই লোকটা প্রায় সময় অরুপকে নিয়ে যায়-একটা হাত নেই। ঢাকা শহরের এই অংশে এখনো মফস্বল মানসিকতা ধরে রেখেছে মানুষ। রিক্সায় উঠতেই এক হাত দিয়ে প্লাষ্টিকের পর্দা দিয়ে দেয় লোকটা। চলছে অরুপ-বাইরে টুপ টাপ বৃষ্টি। খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে!বৃষ্টি বাড়ছে। রিক্সাওয়ালা মানুষটা এক হাতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রিক্সা। অরুপ রিক্সার হুড ফেলে দিয়ে ভিজতে থাকলো-লোকটা শুধু একবার পিছন ফিরে দেখলো তারপর আবার প্যাডেল।অরুপ বৃষ্টির সাথে কথা বলছে নিজে নিজে।না বৃষ্টি এখানে এসে পানি হয়ে গেছে।
-পানি তুমি কি বৃষ্টি?
-তা বলতে পারো-আমি মেঘ কিংবা বৃষ্টি আর এখন পানি!
-বাহ তুমি কংকনার মতো?
-হা কিভাবে? তোমার কংকনা কেমন?
-সে কোনদিন মেঘের মতো স্বাধীন-উড়ে আর আমাকে উড়ায়!
-তারপর?
-কোনোদিন বৃষ্টির মতো ছন্দে ছন্দে আমাকে নাচায়!
-তারপর?
-কোনোদিন শুধুই পানির মতো প্রয়োজনীয়!
-প্রতিটা মানুষ কিংবা বস্ত মনে হয় এমনি।
-হা তা হতে পারে?
-তোমার বাড়ী কোথায়? বৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করলো অরুপ।
-মেঘের দেশে!
-কোথায়?
-আকাশনীলে!
-বাহ সুন্দর বলেছো।
-সবকিছুর শেষ কি আকাশ? অরুপ জিজ্ঞেস করে।
-হতে পারে; মানুষ তো সৃষ্টিকর্তার বসবাস মনে করে আকাশেই!
-আর মাটি?
-মাটি; মাটি তো ফসল দেয়-স্বপ্ন দেখায়।
-তুমি তো সুন্দর ভাবতে পারো?
-তা পারি-আমার তো কোনো কাজ নেই শুধু ভাবা ছাড়া!
-মানুষ আবার মিশে যাবে মাটিতে-আকাশে তো আর মিশবেনা?
-না মিশবেনা!মানুষ আকাশ দেখবে আর দুঃখ করবে-আহা কতো অজানারে!
-আমার তো আকাশ দেখার খুব শখ!
-পাখি কিংবা প্রজাপতি হতে-উড়তে আর দেখতে!
-আমি ইচ্ছে করলে পাখি কিংবা প্রজাপতি হতে পারবো?
-পারবানা কেনো? অবশ্যই পারবা!
বাসষ্ট্যান্ডে এসে থেমে গেলো রিক্সা। থই থই পানি! মাত্র আধাঘন্টার বৃষ্টিতে এই এলাকা পানিতে সয়লাব। অরুপ চিন্তিত ভঙ্গিতে ডানে বামে তাকায়। ভাবছে একটা সি এন জি দরকার। আরো সামনে যাওয়া দরকার। রিক্সাওয়ালাকে ইশারা দিয়ে সামনে যেতে বললো অরুপ। একহাতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মানুষটা গোটা পৃথিবী!
শেষ বিচারে জিতবে মানুষ!
দারুন ! টি-বয়টার জমির ঝামেলাটুক মিটিয়ে দেবেন । বেচারা খামাকা টেনশনে থাকবে !দারুন ! টি-বয়টার জমির ঝামেলাটুক মিটিয়ে দেবেন । বেচারা খামাকা টেনশনে থাকবে !
ওক্কে !!

নতুন আসছি আপনাদের কাছে। মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ!!
চমৎকার লেখা... ভালো লাগলো... নিয়মিত থাইকেন
যদিও পুরান মানুষ ... তাই স্বাগতম বলবো কিনা বুঝতেছি না
আছি বস!!

একটু দম নিতাছি; চালামু ইনশাল্লাহ।
শেষ কথা সেটাই
ধন্যবাদ!!
প্রথম পোষ্টে সাথে থাকার জন্য।
সোয়াগোটম
কামে আছি পরে আপনার নাগরিক ক্যাচাল পড়তাছি
আপনি আইসা পড়ছেন?

লাফাইতে ইচ্ছে করতাছে !!
অনিমেষ @ আইস্যা পরলাম, মডুরা অনুমতি নি এখনো অপেক্ষায় আছি।
নাছিম ভাই এখানে এইডা আমার প্রথম পোষ্ট!

মডু ভাইয়েরা একটু নাছিম ভাইরে এড কইরা নেন প্লীজ!
ওস্তাদ লেখাতো চমতকার হয়েছে। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
অসাধারণ লাগলো। সিম্পলি অসাধারণ!
বস আপনার তুলনায় কিছুইনা!!

আপনার মীম সিরিজ জটিল।
আমারটা যদি ২৫ নম্বর পায়, আপনেরটা তাইলে পাবে ১২০০। মানুষজন যে কেমনে এত দুর্দান্ত লেখে!!!
জলদি জলদি আরেকটা ছাড়েন।
উস্তাদ আপনার মীম সিরিজ রিয়েলী চমতকার।

১২০০০ দিলাম।
আমি আছি-লেখতে থাকুম।
নম্বর যেটা একবার দেয়া হয়ে গেছে, সেটাই ফাইনাল। আপনে নম্বর দিতে চাইলে অন্য কোনো লেখায় ট্রাই করতে হবে
লেখতে থাকবেন শুনে খুশি। আমাদের এখানে মেয়েদের মধ্যে সেরা লিখিয়ে হচ্ছেন লীনা আপু। আর ছেলেদের মধ্যে নীড়দা'। দুইজনই এখন অনিয়মিত। আপনার কাছে নিয়মিত হওয়ার একটা রিকুশ ড্রপ কইরা গেলাম।
অবশ্যই আমি আসলে একটু জোর তালে লিখি-আপাততঃ একটু স্লো হলেও ধীরে ধীরে স্পীড দেবো ওস্তাদ। আমার ধারনা আমি পাঠক হিসেবে বেশী ভালো।

পড়ছি সবার লেখা; নতুনতো!!
আপনার ধারণা আংশিক সঠিক। পাঠক হিসাবে আপনে ভালো ঠিকই (আপনে দাবি করলেন- তাই মানলাম, যদিও আমার হাতে কোনো প্রমাণ নাই ); কিন্তু পাঠক ও লেখক সত্ত্বার মধ্যে তুলনা করলে আমার ধারণা, আপনে লেখক হিসাবে অনেক বেশি ভালো। পাঠক হিসাবে এরচে' ভালো হইতে হলে একজন মানুষরে অন্তত হাজার দশেক বই পড়তে হবে। সেইটা কি ইতোমধ্যে করে ফেলসেন?
দশ হাজার!!

না ভাই-পড়ি নাই !!
করেন, লেখালেখি আর পড়াশোনা- দুইটাই সমানতালে করতে থাকেন। একদিন রকেটের মতো দুর্বার-দুরন্ত গতিতে আকাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবেন। আমার শুভকামনা থাকলো
আপনি কি আমার আগের কোনো লেখা পড়েছেন?

আমি আগে কিন্তু আরেকটা ব্লগে লিখতাম!!
পড়ি নাই। লিংক দেন। খুশি হবো।
এখানে গুতা দেন।
দিতাছি
আর আজকে রাতের মতো গুড নাইট, ওকে?
শুভ রাত্রী !!

খাইছে
লেখা সেরাম হৈছে। নিয়মিত হন এবিতে। আমাদের বঞ্চিত কৈরেন্না পিলিজ
মেসবাহ ভাইজান-আপনার লেখা অনেক আগে পড়েছি।

সম্ভবতঃ ভোরের কাগজ পাঠক ফোরাম।
লজ্জা দিয়েননা; আমি আপনার ভক্ত।
অনি দা,
ক’দিন খুব মিস করছিলাম। চারিদিকে খুঁজে না পেয়ে অবশেষে পেয়ে গেলাম এই বন্ধুর আড্ডায়।
লেখা কিন্তু আগের মতই ফাটাফাটি।
ভাল থাকবেন
নিভৃত স্বপ্নচারী
স্বাগতম!!

ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
অনি দা,
ক’দিন খুব মিস করছিলাম। চারিদিকে খুঁজে না পেয়ে অবশেষে পেয়ে গেলাম এই বন্ধুর আড্ডায়।
লেখা কিন্তু আগের মতই ফাটাফাটি।
ভাল থাকবেন
চমৎকার লেখা... ভালো লাগলো... নিয়মিত চাই
ধন্যবাদ!!
দারুণ একটা রেখা পড়লাম। মাইনষে এত্ত সুন্দর কেমনে লেখে?
এবি তে স্বাগতম। নিয়মিত লেইখেন।
চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
স্বাগতম জানাইলাম
ধন্যবাদ!!

আপনারে দেখে এখানে আসলাম।
(
(
এখানে আমার সাথে কেউ কথা বলে না
তাই নাকি?

আমি নতুন-তারপরে সবাই তো দেখি আমারে ভালোভাবে গ্রহন করছে।
কন কী শাহ নাজ আপা ? তাজ্জব কতা। আমিতো আপনের পোস্টে কমেন্ট করছিলাম। মনে নাই বুঝি ? আবারও সেই কমেন্ট টা তুলে দিলাম...
শানুপা মিচা মাত মাতে।
খ্যাকজ!!

চমৎকার গল্প। আর স্বাগতম আপনাকে। নিয়মিত লিখবেন
ধন্যবাদ!!
সুন্দর গল্প। এবিতে স্বাগতম।
ধন্যবাদ!!
সাথে থাকার জন্য।
ওস্তাদ, লিখে যান।
বি।দ্র। এই ব্লগের মডু কারা?
জাগো ভাই মডু দিয়া কি করবেন?

ঘাড় ধাক্কা দিলে যাইমুগা।
চলুক...
দাদা বরাবরের মতই দূর্দান্তিস।
দাদা বরাবরের মতো ধন্যবাদ!!

সাথে থাকার জন্য।
লেখা ভাল লাগলো।
আশা করি, নিয়মিত লিখবেন।
ভাল থাকুন।
এবি তে সুস্বাগত।

মন্তব্য করুন