ইউজার লগইন

খোলা চিঠি

প্রিয় নানুআপা,
ছোট বেলায় ভোররাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে অন্ধকার ঘরে শুনতাম মিষ্টি সুরে ‘কোরআন শরিফ’ পড়ার ধ্বনি। আমি এমন দরদ মাখা সুরেলা কণ্ঠ আজ পর্যন্ত আর শুনি নাই। সেই সময় অবাক হয়ে ভাবতাম নানুআপা অন্ধকারে দেখতে পান কী করে! তারপর কত দিন,মাস,বছর পেরিয়ে গেছে- তোমার ছায়ায় অনেকটা সময় কাটিয়ে আজ আমি অনেক বড়। জীবনের যত শিক্ষা, যত দীক্ষা তার অর্ধেক তোমার দান। তুমি খাইয়ে না দিলে অনেক বড় হয়েও নিজ হাতে ভাত খাইনি,তোমার ভয়ে ঠকঠক কেঁপেছি;আবার তোমাতেই নির্ভর ছিলাম। শিউলি ফুল কুরানোর জন্য কোনও সকালে তুমি ডাকতে ভুলে গেলে কিরকম রাগ হয়ে থাকতাম, সত্যি নানুআপা ছোট থেকে বড় - সব বেলাতেই তোমার সঙ্গে কত রাগ-অভিমান যে করেছি। তুমি তো দুঃখও পেয়েছ কত। জান নানুআপা এখন মেয়েকে যখন পড়তে বসাই,মনে পড়ে যায় দুপুরে তুমি শুয়ে থাকতে আমি তোমার পাশে বসে হোমওয়ার্ক করতাম। স্কুলে যাওয়ার সময় কেঁদে বুক ভাসাতাম, ইশ কত জ্বালিয়েছি তোমায়।
তুমি কথায় কথায় প্রবাদ বলতে সেগুলো সব এখন আমার মুখস্থ। তোমার মধ্যে কখনো কোনও ভান দেখিনি। তুমি এত ধার্মিক এবং পর্দানশীন ছিলে অথচ কোনও গোঁড়ামি বা বর্ণবৈষম্য তোমার মধ্যে ছিল না। তোমার সময় থেকে তুমি অনেক এগিয়ে ছিলে নানুআপা। তোমার কথা বলে তো শেষ হবার নয়। তোমার অবিচল সৌম্যমূর্তির আড়ালে যে ব্যাথিত অভিমানী মন, তা আমি দেখেছি। আর তাই এই চিঠির মাধ্যমে সবাইকে বলতে চাই- মায়েরা সন্তানের কাছে কিছু চান না ।মাকে কিছু দিতে না পারলে মায়ের দুঃখ নাই, কিন্তু মাকে কখনো উপেক্ষা যেন না করি কেউ। মা যতদিন আছেন প্রত্যেকেরই উচিত মায়ের মনের কাছাকাছি থাকা তার খোঁজখবর রাখা।
২২ এপ্রিল ২০০১, সকাল থেকেই দিনটা বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিলো। সন্ধ্যার মুখে আমরা পৌঁছলাম তোমার বাড়ি, তোমার কাছে। বাড়িতে ঢোকার পথ কামিনী ফুলে ছাওয়া ছিল, যেন সাদা চাদর বিছানো পথ। তারপর তোমার দেখা,সব কিছু এত সাদা আমি চোখ ফিরিয়ে নিই।আর সেই দিন থেকে আমি যেন সত্যি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। তুমি চলে গেলে নানু আপা। আমাদের দুঃখের এপ্রিলকে আরও দুঃখময় করে দিয়ে গেলে। তুমি যদি আরও কিছুদিন থাকতে; আমি তো তোমার মাকেও দেখেছি-তাই নিজের মেয়েটাকে বড় দুর্ভাগা মনে হয়। যদিও মেয়েটা আমার অনেক ভালবাসায় সিক্ত তবু অভাবী মন কাঁদে। পাশাপাশি এও ভাবি-ভালই হয়েছে তুমি আগে চলে গিয়েছ, অন্তত অথই’এর চলে যাওয়াটা তোমায় দেখতে হোল না।
আজ লিখতে বসে কত কথা মনে পরছে নানুআপা,আমার স্মৃতির সব পিঠে যে তোমার অবাধ চলাচল। ছোটবেলায় বৃষ্টি হলে তোমায় প্রশ্ন করতাম- কোথা থেকে বৃষ্টি পরে? তুমি বলে ছিলে, ‘যারা মরে যায় তারা তো সবই দেখতে পায়। নিজের প্রিয় মানুষদের দুঃখ দেখে তারা যখন কাঁদে সেই কান্না বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পরে।’
কী থেকে কী হয় জানি না। শুধু জানি তোমাকে আর কোনদিন দেখবনা। আল্লা তোমায় ভাল রাখুন।
তোমার প্রিয় অদ্বিতী

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নাজ's picture


পৃথিবীর সব নানু-ই মনেহয় এমনই হয়!

‘যারা মরে যায় তারা তো সবই দেখতে পায়। নিজের প্রিয় মানুষদের দুঃখ দেখে তারা যখন কাঁদে সেই কান্না বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পরে।’

Sad

মাফরুহা অদ্বিতী's picture


আসলেই তাই

অথৈ সাগর's picture


সান্তনা

একজন মায়াবতী's picture


তুমি এত ধার্মিক এবং পর্দানশীন ছিলে অথচ কোনও গোঁড়ামি বা বর্ণবৈষম্য তোমার মধ্যে ছিল না।

একজন মায়াবতী's picture


আমার নানু ও ঠিক এমনই ছিলেন।

মাফরুহা অদ্বিতী's picture


ধন্যবাদ

আরিশ ময়ূখ রিশাদ's picture


আমার নানুর সাথে আমার খুব চমৎকার সম্পর্ক। সুন্দর লেখা। আল্লাহ নানুদের ভালো রাখুক

মাফরুহা অদ্বিতী's picture


ড়ার জন্য ধন্যবাদ, সব নানুদের সালাম জানাই

মীর's picture


আলতাফুন্নেসা খেলার মাঠের কথা এখনো বলেন নাই। টাচ এন্ড টেকের কথাও বলেন নাই। জলেশ্বরীতলা কালীমন্দির, বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র, রহমান নগর, মালতী নগর, বকশি বাজার- কোনোকিছুর কথাই লিখেন নাই। কবে লিখবেন? অবশ্য যা লিখেছেন তাও চমৎকার হয়েছে। শুভেচ্ছা। Smile

১০

মাফরুহা অদ্বিতী's picture


যে জায়গাগুলোর নাম বলেছেন সেখানেই আমি বড় হয়েছি, আমার প্রানের শহর।। ।
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

১১

সামছা আকিদা জাহান's picture


লেখাটা খুব নস্টালজিক। আমার নানু চলে গেলেন এই তো আড়াই বছর আগে। কি ঐশ্বর্য্যময় ছিল তাদের জীবন।

১২

মাফরুহা অদ্বিতী's picture


সত্যি ,আমরা তাদের ধারে কাছেও যেতে পারবো না।।।

১৩

মেসবাহ য়াযাদ's picture


নানু নেই, নানুর হাতের সে পিঠাও নেই। নানুর কথা মনে পড়লো।

১৪

মাফরুহা অদ্বিতী's picture


সকল চলে যাওয়া নানুদেরকে আল্লা ভাল রাখুন

১৫

টুটুল's picture


Sad

১৬

কৌশিক আহমেদ's picture


মায়ের পরে মনে হয় নানুই সবচেয়ে বেশী আপন!

১৭

জেবীন's picture


সকল চলে যাওয়া নানুদেরকে আল্লা ভাল রাখুন .... Sad

১৮

তানবীরা's picture


খুবই হৃদয় ছোঁয়া লেখা

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.