প্রকারান্তর
ভনিতা: পাঠক হিসেবেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। লেখালেখি আমার কম্মো না। টুকটাক যা লেখি, সেগুলো কতোটাই লেখা সে নিয়েও ঘোর সন্দেহ আছে। কিন্তু কেউ কেউ এমন আশকারা দেন, যে ইচ্ছে হয় রাতারাতি লেখক বনে যাই। আমার জানের দুস্তোর বিশ্বাস, আমাকে দিয়ে 'হবে'! সে আমায় আগে বাড়তে বলে। তার বিশ্বাসকে মুঠোয় পুরে আমার এই প্রথম গল্প আপনাদের সামনে হাজির করবার সাহস দেখালাম। আমি প্রচুর বানান ভুল করি, যতিচিহ্ন এর ব্যবহারেও ভীষণ দুর্বল, দয়া করে ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
==========================================================
কথাগুলো শোনার পর কেমন থম ধরে বসে পড়ে কনক। পাশের ঘরে এখনো কানে ফোন গুঁজে বকেই চলেছে টুই। টুইয়ের জানবার কথা নয় পাশের রুমে খানিক আগেও যাকে কম্পিউটারে ডুবে থাকতে দেখেছিলো, সে আড়িপেতে তার কথা শুনছে! ঠিক আড়িপেতে কারো কথা শোনার মানসিকতার মানুষ না কনক। কাজের ফাঁকে হঠাৎ ভীষণ চায়ের তেষ্টা পাওয়ায় এক কাপ চা পাওয়া যাবে কিনা তার খোঁজ নিতে গিয়ে ওদের বেডরুমের দরোজায় এসে থমকে যেতে হয় কনককে।
শুনতে পায় টুই ষড়যন্ত্রী গলায় ওপাশের কাউকে তার সম্পর্কেই কিছু বলছে। মানুষের স্বাভাবিক ইন্দ্রিয়ই হয়ত এমন মুহূর্তে কান খাড়া করতে বাধ্য করে । নিষিদ্ধের প্রতি নিষেধাজ্ঞার ছুৎমার্গই বুঝি ঠেলে দেয় এমন আচরণের দিকে । অসহায় কনকও নিজের দু'কানকে ছেড়ে দেয় অশোভন আচরণের হাতে । প্রায় চোরের মতোই কান খাড়া করে শুনে নেয় টুইয়ের কথোপকথন ।
বোকার মতো বেডরুমের দরোজায় কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে নিজের স্টাডিরুমে ফিরে আসে নীরব পায়ে। কনক আর টুইয়ের বিয়ে প্রায় দেড়বছরে গড়াতে চললো । যদিও বিয়ের আগেই ওরা চুটিয়ে প্রেম করেছে । কিন্তু বিয়েটা হয়েছে পারিবারিক সমঝোতার ভিত্তিতেই । টুইকে বিয়ে করে কনক যে মহাখুশি, সেটা যে কেউ ওর তেল চকচকে চেহারা আর গজিয়ে ওঠা ভূঁড়ির মাথা ফুঁড়ে বেরুনো দেখেই বলে দেবে।
অফিসে এটা নিয়ে ওর সহকর্মীরা রীতিমতো ঈর্ষাই করে বলা যায় । রোজ নিয়ম করে কনক লাঞ্চ বক্স নিয়ে আসে বাড়ি থেকে । বউয়ের হাতের রান্না ছাড়া কনক এখন কোথাও খেয়ে খুব একটা তৃপ্তি পায় না । এটা নিয়ে কনকের মা সেদিন অনুযোগই করে বসলেন ! কিন্তু, কনক ওসব খুব একটা গায়ে মাখে না । টুই যে কেবল ভালো রান্নাই করে তা তো নয় । কেমন মায়া করে পাশে বসিয়ে খাওয়ায় । সে কথা মাকে বলেই কোন মুখে যে, 'তোমরা তো টেবিলে খানা দিয়েই কতর্ব্য শেষ মনে করো' !
আর ওদিকে টুই ? কেমন পাশে পাশে থাকে খাওয়ার সময়টাতে । জোর করে এটা-ওটা ঠেসে খাওয়াবে । খালি বলে, 'মাথার কাজ করো তুমি, সেভাবে না খেলে হয় সোনা?' বউয়ের এহেন ভালোবাসায় কনক তখন গোটা পৃথিবীটাই গিলে খেতে পারে যেনো ! দিনের পর দিন, টুইয়ের হাতের সুস্বাদু রান্না আর মনকাড়া আদরের ফল ওর শরীরে বেখাপ্পা ধরনের একটা ভূঁড়ি।
ভূঁড়ির অস্তিত্ব টের পেয়ে কনক সর্তক পদক্ষেপ নেবার জন্য ব্যস্ত যে হয়নি তা নয় । কিন্তু টুইয়ের নাকি এই ভূঁড়ির জন্যই আরো বেশি আদর আদর লাগে ওকে । কোন বোকা চায় না প্রিয়জনের ভালোবাসায় ভেসে যেতে ! কনকও ভেসে যায় । আর আস্তে আস্তে ওর খাপখোলা তলোয়ারের মতো শরীর বন্দরে সর্বনাশী মেদ এসে ভীড় জমাতে থাকে। সুদর্শন কনকের এহেন পরিবর্তনে ওর দু'একজন বন্ধু হা হা করে উঠলেও কনক সেসব অবহেলায় উড়িয়ে দিয়েছিলো । বন্ধুদের ভাষায় কনক তাই 'জরুকা গোলাম' ! সেই জরু তাকে এভাবে গরু বানালো! ভাবা যায়!!
একটা গোঁয়ার ধরনের রাগ কনকের ভেতর থেকে ঠেলে ঠেলে উঠে আসতে চায় । কিন্তু ফুটে বেরুবার অনভ্যাসের কারণে সেটা সেভাবে নিজেকে প্রকাশের সুযোগ পায় না । কনক খুবই শান্ত মেজাজের সুবোধ ছেলে । ওর স্বভাবে গোয়ার্তুমিটাই নেই । টুই অবশ্য খানিকটা অভিমানী ধরনের ।বিয়ের এতোদিন হয়ে গেলোও ওদের তেমন বড় ধরনের ঝগড়া বাঁধেনি ।কনকের এই সব কিছু মেনে নেবার সুবোধ স্বভাবের জন্য । এ কথা টুইও স্বীকার করে ।কিন্তু তাই বলে ওর ভালোমানুষীর সুযোগ নিয়ে টুই এমনটা করতে পারলো?
থম্ ধরে বসে বসে এসব নিয়েই খানিক ভাবলো কনক । যে কোন বিষয়, কেনো ঘটলো বা কেনো ঘটে তার পেছনের উদ্দেশ্যটাই বা কী, এসব নিয়ে কনক বরাবরই আগুপিছু ভাবে । হুট করেই তাই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়াটা কনকের স্বভাব বিরুদ্ধ । আর এ কারণেই কি বাড়ি, কি অফিস বা শিক্ষাজীবনে কনককে কখনোই অনুশোচনায় ভুগতে হয়নি। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবার এই গুণের কারণে কনক সবারই প্রিয়ভাজন।
বউয়ের প্রতি অতি ভালোবাসায় সে টুই যা বলে তেমনটাই করে যায় ।সেটা সম্ভাব্য বিরোধ ঠেকানোর জন্যই করা ।সে কারণে কনককে বেকুব ভাববার কোনই কারণ নেই ।একটা সুখী জীবন বা সংসার পাওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা সহায়ক হাতিয়ার । এর জন্য কিছুটা ছাড় দেবার মানসিকতাটুকু থাকা চাই ।কেবলমাত্র বউয়ের কারণে এক তরফা ভাবে সংসার সুখের হতে পারে না। এখানে স্বামী সাহেবেরও বিরাট ভূমিকা থাকে । একই কথা, সমাজ-রাজনীতির ক্ষেত্রেও খাটে বৈকি! যতক্ষণ না নিজেদের তেমন ক্ষতি না হয়, দরকার কী মারমুখী নীতি গ্রহণ করে পরিবেশের শরীরে সীসে্ ঠুসে দিয়ে?
"'গুষ্টিকিলাই সমাজ-সংসারের!" রাগের মুখে ছিটকে বেরিয়ে আসা শব্দে কনক নিজেই কেমন অস্বস্তিতে পড়ে যায় । খুব দ্রুত নিজের রাগ সামাল দেবার জন্য সিগারেটের প্যাকেট খুলে ঠোঁটে গুঁজে দেয় একটা শলা । বুকভরে ধোঁয়া ছেড়ে টুইয়ের ফোনালাপের সংলাপগুলো মনে করতে থাকে কনক ।
'..........বিয়ের আগে থেকেই আমার বরটার দিকে অনেকেরই ছোঁকছোঁক ভাব কী আর আমি ধরতে পারিনি? আরে বাবা, ধরতে পেরেছি বলেই না সময়ে সর্তক হয়ে ওর সুন্দর শরীরে একটা ভূঁড়ি তুলে দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগা । কেনো? জানিস না! টেকো আর ভূঁড়িওয়ালাদের কাছ থেকে লুলোপনা মেয়েগুলো একটু দূরেই থাকে । কনকদের বংশে টাকের ধাত নেই । আর যদি টাক পড়েও সেও তো সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । কবে টাক পড়বে...আমি রিস্ক নিতে চাইনি বাবা ! ভূঁড়ি হয়ে গেলে ওর সৌন্দর্য্যে খানিক খামতি ঘটবে ।তাতে যদি ছুঁচো মেয়েগুলোর ছোঁকছোঁকানি যায় । পুরুষমানুষকে কিসের বিশ্বাস বল? তাই ঘর ঠিক রাখার জন্য এমন নিষ্ঠুরের মতো কাজটা করা । জানিসই তো, আমার বরটাকে আমি কতোটাই ভালোবাসি! ভূঁড়ি তো কোন ছার! কনকটা যদি কানা-খোঁড়াও হয় তাতেও আমার কিছু যায় আসে না । শুধু যেনো জীবনভর সে আমারই থাকে .........'
হাতের সিগারেটে শেষ টানটা দিতে দিতে কনকের মুখ জুড়ে এক ধরনের হাসি খেলা করে যায় । টুইটা তাকে এরকমভাবে ভালোবাসে! শুধুমাত্র তাকে হারাবার ভয়ে পাগলীটা এমন করেছে! কনকের বুকের ভেতর রাগ নয়, একটা সুখের মতো ব্যথা ওকে দ্রুত গ্রাস করতে থাকে।
হাতের সিগারেট এ্যাশট্রেতে গুঁজে দিতে দিতে মনে মনে বিড়বিড় করে ' এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার!' ওর চঞ্চল মন টুইকে একনজর দেখবার জন্য ছটফটিয়ে ওঠে । দ্রুত বেডরুমের দিকে পা বাড়ায় কনক ।
==========================================================
পুতু পুতু প্রেমের কাহিনী
আহারে এইরাম ভালোবেসে যদি কেউ বিষও খাওয়াতো !!!
ওয়াও! চমৎকার লাগলো ভাইয়া। ভালো আছেন?
মারাত্মক শিক্ষামূলক গল্প হয়েছে এটা! যাদের ঘরের বউ আছে সবাই সাবধান হতে পারবে। বেশী খানাপিনা মানে কেবল মহব্বত না, অন্য কিছুও থাকতে পারে। ঘটনার পেছনে ঘটনা থাকে।
বড় প্রেম কেবল কাছেই টানে না, ভুড়িটাও ঠেলে বের করে দেয়! (৫০% পাইরেটেড কোট)
বিবাহের বাসনা আবার প্রগাঢ় হইয়া দেখা দিল
ইয়ে মানে.....অসু্বিধা হয় না?
মাসুম ভাই আপনের প্রশ্ন স্বচ্ছ না। ক্লিয়ার কইরা বলেন কি জানতে চান
উদরাজীনামাটা পইড়া আসেন..................বিশেষ কইরা এইখানে
মাসুম ভাই, বিবাহের পরবতি গল্প গুলো এমন ই হয়!!!!! যদি পাইতাম অবস্থা!!!!!!
উদরাজী ভাই, বিয়ের পর পর কৈ করলেন? আপনি তো কইলেন
ক্যামনে কি?
'অনেক কিছু বাকী' কথাটা খুব ভাবনার কিন্তু!!!
তবে অপূর্নতাই সুখের লক্ষণ, এইটাও ঠিক। উদারজীর কোনটা?
মাসুম ভাই পাঠক হিসেবে ভালা না.।
... একলাইনে লেখা আছেনা যে কনক কিছুখন আগে কম্পুতে ডুইবা ছিল.... অসুবিধা হয় বিধায় কনক ইন্টারনেটে স্টাডি করতাছিল ফ্রন্টফুট ব্যাকফুট ইত্যাদি পজিশনাল ডিফেন্স পজিশনাল অফেন্স নিয়া 
কমেন্টের রাজাতো বাংগী ফাটানো গল্প লিখছে!! লেখনী আসলেও উমদা....। চালায়া যান..।
মোরাল হইলো বেশি ভালুবাসাও ভালু না
এরম প্রেম কাহিনী শুনতে ভালোই লাগে।
একটা কৌতুহল রয়েই গেল। টুই কার সাথে কথা বলছিল ফোনে। বোনের সাথে নাকি বান্ধবীর সাথে? কনক কি সেটা জানে?
প্রশ্ন টা তে ভুল আছে!!! প্রশ্নটা হবে এরকম- টুই কার সাথে কুটনামি করছিল ফোনে? খেক খেক খেক ... লেখা ভাল্লাগছে... আমি ভাবছিলাম মাইরপিট নাকি শুরু হয়... খুনাখুনি যদি হয়া যায়!!! হ্যাপি এন্ডিং-ই ভাল্লাগে
ওয়েল, বন্ধু ব্লগে এ লেখাটাই এখনো পর্যন্ত চুম্বকের মতো টানলো।
ei golpo lekhar karone kina janina, amar laptoper matha bigraiche...tai shobar montobber uttoer ekhon dite parcchina bole dhukkhito! hoite pare apnader karo kora montobbo laptoper shishumone aatonkker shisti korcche tai emon birup aachoron ....shobaike Onek dhonnobad aajira golpota porber jonno . Bhalo thakben shobey .( aaha re kotto bhalu bhalu postu dekhi kintu bangla ashena ekhane
)
গল্প ফাটাফাটি। লাইক দিলাম। আবার কবে এমন গল্প আসবে?
গল্প পছন্দ হইছে, নরমালি এই টাইপ গল্প'রে দুখীভাব নিয়ে আসা হয়... আপ্নেরটা তো পুরা "অতঃপর রাজপুত্র-রাজকন্যা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল" টাইপ হইছে...
এই পোস্ট পড়ার পর চোখ বন্ধ কৈরা দেখলাম- আমি, টুটুল, উদরাজী, নজরুলসহ আরো বিবাহিত ২/১ জনের আল্প বিস্তর ভুড়ি আছে... মাগার মাসুমভাই, রায়হান ভাইয়ের ভুড়ি নাই...!!!!!
তারমানে কী দাঁড়াইলো?
আমাদের বউরা আমাদেরকে ভালোবাসে আর মাসুম ভাই রায়হান ভাইয়ের বউ নিজ নিজ স্বামীকে ভালোবাসে না?
তার মানে মাসুম্ভাই আর অচিন্দা রিস্ক-ফ্রি
পরিশ্রম বাড়ান। ভুরি কমবে
এরচেয়ে বেশি আর কি বলবো?
কেমন আছেন দাদা ? সব ভালো ?
আপনাকে মিস করছিলাম , এখানে রেজি করায় থ্যাংকু
গল্পটা উপভোগ করলাম। প্রথমার্ধটুকু বেশী টানটান, পরে খানিক ভুঁড়ি গজিয়ে গেছে
অনেক অনেক গল্প চাই বাতিঘরের কাছে।
[যতিচিহ্নের আগে স্পেস দিতে হয় না, পরে দিতে হয়। তবে পোস্টে এটা বোধহয় নিছক টাইপো]
এবার তাইলে ভূঁড়িটা গজিয়েই ফেলি!!
চ্রম চ্রমমমমমম।

চমৎকার একটা ভালোবাসাবাসিময় গল্প।
ওরে প্রেম ওরেএএএ
এমন একটা বউ কই যে পামু
শুকায়া কাঠি হয়া যাইতাসি
নয়া লেখা কই?
মন্তব্য করুন