ইউজার লগইন

২০৩৬ - এ ব্লগ স্টোরি (১৭)

আমাদের যাবার কথা ছিলো পোভার্টি মিউজিয়ামে। মিরপুর যাবার জন্য সাবওয়ে বেস্ট হয়তো, স্কাইরিভার থেকে দশমিনিটের পথ। কিন্তু ইদানিং সাবওয়ের ভেতরে হকারদের উৎপাতে দাড়িয়ে থাকা দায়। বসার তো কোনো সুযোগই নেই। এত ঘিঞ্জি, স্যাতস্যাতে আর টেকনো-এডাল্টির দাপট যে সাবওয়েতে পারতপক্ষে আমরা চড়ি না। গাড়ীতে যেতে ঘন্টাখানেক লাগবে বটে, কিন্তু তারপরেও আমরা ফ্লাই-ওভার বেছে নিলাম। বিলাসিতার লোভ সামলাতে না পেরে একেবারে পেট্রোল-কারই ভাড়া করলাম। টাপুরের মা আর আমি খরচ এড়াতে ওয়াটার রিফুয়েলারই ব্যবহার করি নন-ইন্সুরেন্সড ঝুঁকি নিয়ে। তবে পেট্রোল-কারে চড়ার পরে টাপুরের মা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠলো, যাক – এটলিস্ট এই পথটুকুনে কিছু হয়ে গেলে ইন্সুরেন্সের বেনেফিটের সাথে আমার দেহটা ঠাঁই পাবে স্ট্রিট-এক্সিডেন্ট ভিকটিম মিউজিয়ামে। তোমাকে দেখবো ভুত হয়ে!

হোহো করে হেসে উঠি। এই এক পাগলামী। ইদানিং ইন্সুরেন্সের সাথে অমরত্বের সংযোগ ঘটেছে। বিশাল বিশাল রঙচঙা বুলি। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে আর যদি সেটা পেট্রোল চালিত কোনো বাহন হয়ে থাকে তবে আপনার মমির সৌধ হবে। আমার রোড এক্সিডেন্টে মরার সাধ নাই। কিন্তু অনেকে আবার এজন্যই পেট্রোল-বাহিত কার খরিদ করছে বা চড়ছে। কর্পোরেট ধান্ধাবাজির চূড়ান্ত - মধ্যপ্রাচ্যের বাজারি প্রোপাগান্ডায় পেট্রোল গছানোর অপচেষ্টা। পশ্চিমে পেট্রোলের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় এখন আমাদের মত ফিফথ ওয়ার্ল্ডের দেশে এসব বাণিজ্য-প্রনোদনা চালিয়ে আসছে আরব্যবাদীরা। অথচ আমাদের ওয়াটার রিফুয়েলার কিন্তু যথেষ্ট হবার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওবামা লরিয়েট ডঃ সায়াহ্ন নিখিলুদ্দিন ওয়াটার এনার্জি সেভিং জাতীয় কমিটির কনভেনশনে সরকারের অভ্যন্তরে আরব্যবাদী চরদের তৎপরতা দেখিয়েছিলেন, কিন্তু কে শোনে কার কথা। ইস্টার্ন কালচারে অভ্যস্ত এদেশীয় বুদ্ধবাদীরা এখন হোমিসাইড সুইসাইড নিয়ে ব্যস্ত।

পোভার্টি মিউজিয়ামের আশেপাশে কোনো রোদ্দুর নেই। স্যাটালাইট নিয়ন্ত্রিত মেঘের আনাগোনা, রোদে যেন নষ্ট না হয়ে যায় অশীতিপর দরিদ্রতার নিদর্শন। কুখ্যাত নোবেল লরিয়েট ইউনূসের এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত দারিদ্রতা দূর করার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু কালক্রমে বাংলাদেশ এক ভিন্ন চিত্র দেখলো। অ-অর্থশাস্ত্রের অবৈজ্ঞানিক প্রপঞ্চ দেখিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইউনূসের পিরমাডিক্যাল তত্ত্বের দেউলিয়াপনা টের পেতে শুরু করে মানুষ কিছুদিন পরেই। বিশাল বাণিজ্য-লাভ নিয়ে নির্মিত গ্রামীণ ব্যাংক নামক প্রতিষ্ঠানগুলো দারিদ্রতার করালগ্রাসে নিপতিত হলো। সরকারের কাছ থকে জনসাধারণ বিনাসুদে কয়েক-কোটি টাকা পযর্ন্ত লোন পেতে শুরু করার পর থেকে। হিউম্যান ট্রাকিং স্যাটালাইটের সুবাদে জামানতের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। মূলত মানুষ ঋণ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। সেজন্য সবার লোন নেবারও প্রয়োজন পরে না। কেউ একজন কোনো একটা বিশাল ইন্ডাস্ট্রি শুরু করলেই হলো, বিশাল একটা অংশের এমনিতেই কাজের সংস্থান হয়ে যায়। সেটাই ঘটেছিলো। ফলে ইউনূসের সমগ্র প্রতিষ্ঠান পড়ে গেলো সীমাহীন দুর্ভিক্ষে। দীর্ঘকাল মাইক্রো-ফাইন্যান্সের ভোক্তা হয়ে রইলো ড্রাগ-আসক্ত জনগোষ্ঠী। এর মাঝে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিজোরাম ও অরুনাচলে অবকাঠামোগত বড় ধরণের একটা উন্নয়ন-বিনিয়োগ ব্যাক ফায়ার করে। এজন্য কয়েকবছর আগে গ্রামীণ ব্যাংককেই রূপান্তরিত করা হয় পোভার্টি মিউজিয়ামে - একটা সমৃদ্ধিশালী প্রতিষ্ঠান নিজেই কিভাবে দরিদ্র-কবলিত হয়ে পড়ে তার ঐতিহাসিক বিবর্তনের চিত্র দেখানো হয়। আমরা ভেতরে গেলাম। ঐতিহ্য ধরে রাখায় গেটে একটা ক্ষুদ্রঋণ নিতে হলো। বের হবার সময় ফিফটি-পার্সেন্ট যোগ করে ফেরত দিতে হবে।

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

হাসান রায়হান's picture


হা হা হা । ঝাক্কাস। আপনার কল্পনাশক্তিরে সেল্যুট।

কৌশিক আহমেদ's picture


থ্যাংকুবস।

মেঘকন্যা's picture


কি যে দিলেন না বস্‌..দিল খুশ... Big smile

কৌশিক আহমেদ's picture


গ্রাসিয়া

লীনা দিলরুবা's picture


জটিল জটিল

আমরা ভেতরে গেলাম। ঐতিহ্য ধরে রাখায় গেটে একটা ক্ষুদ্রঋণ নিতে হলো। বের হবার সময় ফিফটি-পার্সেন্ট যোগ করে ফেরত দিতে হবে। চোখ টিপি

কৌশিক আহমেদ's picture


ঐতিহ্য বলে কথা Smile

আরিশ ময়ূখ রিশাদ's picture


আপনার কল্পনা শক্তি অসাধারণ। এই সইরিজ নিয়ে চমৎকার একটা বই হতে পারে

কৌশিক আহমেদ's picture


থ্যাংকস।

গৌতম's picture


আগামী বইমেলায় এই শিরোনামে একটা উপন্যাস চাই। জনগণ হিসেবে দাবি জানায়া গেলাম।

১০

কৌশিক আহমেদ's picture


উপন্যাস হইতে হইলে কয় পৃষ্ঠা লাগবে বস?

১১

গৌতম's picture


১. ১৪ ফন্টে বই বের করা যাবে না।
২. লাইন স্পেস দেড় বা দুই হতে পারবে না।
৩. পেজ মার্জিন ৩ ইঞ্চি হতে পারবে না।
৪. ৮০ পৃষ্ঠা হতে পারবে না।

এগুলো মেনে চলতে পারলেই আপনি একটা সার্থক উপন্যাসের মালিক হতে পারবেন। তবে নিশ্চিতভাবে সেটি বেস্টসেলার হবে না।

১২

শওকত মাসুম's picture


শেষ পর্যন্ত গ্রামীণব্যাংকই দারিদ্র্য মিউজিয়াম! হাহাহাহাহহাহাহাহা। আপনে একটা জিনিষ। দারুণ হইছে এই পর্বটা।

১৩

তানবীরা's picture


ঐতিহ্য ধরে রাখায় গেটে একটা ক্ষুদ্রঋণ নিতে হলো। বের হবার সময় ফিফটি-পার্সেন্ট যোগ করে ফেরত দিতে হবে।

Big smile Big smile Big smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

কৌশিক আহমেদ's picture

নিজের সম্পর্কে

ঠিক যে সময়ে তুমি অ-সিদ্ধান্তের স্থির ভলকানো
হরতাল-বিভ্রমে অফিস নামক খাঁচার জন্য অনিরাপদ
উদ্দেশ্যবিহীন রিমোট ঘুরিয়ে দুচোখের আশ্রয়ে
এক অথবা একাধিক নিউজ নিউজে বিচারক
একটু কি অবসর হবে? এক কাপ চা?

এই যে ধরুন বিগলিত ডিনারের পাশে অপেক্ষমান শ্রোতা
আমাদের ডাল-ভাত সকাশে বিনিদ্র মূল্যযান
রোজগেরে টমোটো-শশার উপরিতে
ভদ্রলোকের মত চামচ বাজিয়ে আলাপের করতল
একটু কি অবসর মেলে? কি হচ্ছে দেশে?

দুই দিকে যাচ্ছি বিলক্ষণ
তোমার দয়ার্দ্র রাজনীতির ভেতরে আমার গোরস্থান।