২০৩৬ - এ ব্লগ স্টোরি (১৯)
টাপুরের মায়ের চলনশক্তি ফিরে এলে আমরা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড থেকে অবহরোহন করি। ঘুম থেকে জেগেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, চলো এবার একটা সাবমিশন করি। তুমি ধর্মকর্ম একেবারে ভুলে গেছো! মেনে নিলাম। ধর্মে অনাসক্তি আমার বরাবরের। প্রথম টেকপ্রফেটের অনুসারী হয়েও যে হারে রিচুয়াল অমান্য করে যাচ্ছি, রীতিমত আতঙ্কজনক। যেকোনো সময় আমার ভার্চু-অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। টাপুরের মা বললো, গতরাতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যদি এমাসের বিগ রিকভারী ঘটে তবে সফটওয়ারম্যানের ওয়েবক্যামের সামনে বসে দশ হাজার টেট্রা ডাটা সরাসরি সার্ভারে যুক্ত করে দেবো। আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। এইসব টেকধর্মগুরুদের বুজরুকি হাড়ে হাড়ে টের পাই। কিন্তু প্রচলিত বিশ্বাসের বাইরে কিছু করতে গেলে অস্তিত্ব রীতিমত বিপন্ন হয়ে পড়বে। প্রেয়সী আমার তার পার্সোনাল ম্যাটারের সাবমিশন করুক, তুমুল বিরক্তি নিয়েও হয়তো আমার পাশে বসে থাকতে হবে।
টাপুরের মা ভ্রু কুচকে বললো, তুমি কোনো বদ মতলব আটছো না তো? টেকনোস্তিক নিয়ে আর পারি না! তার বিরক্তিসূচক বক্রোক্তিতে চুপ থাকি। কিছুদিন আগে এনড্রনিল বকশালাম, বিখ্যাত টোকনোস্তিক, একটা বিপ্লবী স্লোগান তুলেছিলো প্রফেটের বিরুদ্ধে। তার স্বাধীন পার্সোনাল ড্রাইভের দাবী হঠাৎ করে তুমুল জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠে। কিন্তু নির্দয়ভাবে লোকাল সফটওয়ারম্যানরা আন্দোলনের সকল রাস্তা ওয়েবে নিষিদ্ধ করে। উশৃংখল এক দঙ্গল টেকিটারদের ছেড়ে দেয়া হয়। বকশালামের আস্তানায় ওয়েবলিংক নামিয়ে দেয়া হয় সেই ঐতিহাসিক আমলের গ্রামীন ফোনের থ্রিজিতে। সমস্ত ব্যাংক, রিটেলার শপ বকশালামকে পরিত্যাগ করে, তার সব সোশ্যাল একাউন্ট ডিসঅনার হতে থাকে। টাপুরের মা জানে না সেসময় আমারা কয়েকজন বন্ধু মিলে তরুন এই বিপ্লবীকে ওয়েবলিংক ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম, টাপুরের মায়ের মেডিক্যাল সাবসিডিতে পাওয়া ব্যান্ডউইথ থেকে। একমাত্র এই লিংকগুলোর উপরেই প্রফেট চরদের নজর কম থাকে।
যাই হোক মেনে নিলাম সাবমিশন। প্রেমের জন্য ধর্মকর্ম করতে কোনো অরূচি নাই। দশ হাজার টেট্রা পার্সোনাল ম্যাটার টেকপ্রফেটের পায়ের তলে সমর্পণের যে নিয়ম-কানুন তাও না হয় বসে বসে পালন করবো। ফলোয়ারদের একটা করে প্রেয়ার মেসেজ পাঠানো, প্রত্যেকের সম্ভাব্য ডেথ ডের জন্য একজন ক্রন্দন কারী সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান, লাইফ টাইমে একবার তার সাথে দেখা করে তার স্প্যাম ফোল্ডার খালি করে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে অথচ এখনও আমরা ভার্চুগডদের প্রতি অপার বিশ্বাস নিয়ে বসে আছি। বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থায় সফটবাদ যে কি পরিমাণ আগ্রাসনমূলক হয়ে উঠছে সেটা বোঝার জন্য একটা মাত্র দৃষ্টান্তই যথেষ্ট। কিছুদিন আগে ট্যাক্সিডোতে একজন ড্রাগিস্ট জিপিআরএস পাচ্ছিলো না তার জুতার সোলে। ধর্ম-প্রচারকরা নাকি এর জন্য দায়ি করেছে মনিবহীন কুকুরদের আধিক্য এবং এটার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না। ক্যাপিটাল সাইবার পুলিশ বা সিএসবি’র সাথে যোগাযোগ করলে তারা নাকি বলেছে ড্রাগিস্টদের নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে টেকপ্রোফেটের কোনো মাথাব্যথা নাই, কিন্তু তাদের ধর্মে কুকুরদের ঠিকানা জানাটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। জিপিআরএস ফ্রিকোয়েন্সিতে যে সমাজে কুকুরের গ্রহণযোগ্যতা সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় বেশী থাকে সেখানে একজন বকশালামের বেঁচে থাকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমি টাপুরের মাকে এতসব ব্যাখ্যা দিতে রাজি নই, প্রেমের জন্য দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথের সাইকো-রোমান্টিকাল মিউজ অনেক বেশী সংগীতময়। বরঞ্চ তাই শুনে রিকভারী সাবমিশনের জন্য প্রস্তুতি নেই।
এই পর্বটা একটু বেশি টেকি হইয়া গেছে মনে হয়...আগের গুলির আবেগ এইটাতে নাই। তয় পড়তে খারাপ লাগে নাই।
বুঝতে পারছি একটু খটোমটো হয়ে গেলো!
কৌশিকের কল্পনার রশি যে লাগামছাড়া!
ভাস্কর দার সাথে একমত, এই পর্বটা একটু বেশি টেকি হয়ে গিয়েছে।
সরি বস। দেখি সামনের পর্বে টেকি জিনিসটাই ঠেকি বানিয়ে দেবো!
আপনার এই লেখাগুলো নিয়মিতই পড়ছি, আশা করছি অচিরেই একটা সু-দী-র্ঘ কমেন্ট অবতীর্ণ হবে!
তবে, একটা কথা আগেভাগেই বলে রাখি - ২০৩৬ কিন্তু খুব বেশি দূরে নয়, মাত্র ২৫ বছর। এই অল্প সময়ে এতখানি পরিবর্তন আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রে শিরোনামটা ২১৩৬ বা এরকম কিছু হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। এটা ফিকশন হলেও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে সাল নির্ণয়ে কৌশলী হওয়াই ভালো।
বস, আপনার পরামর্শ যুক্তিপূর্ণ মনে হলো। এটাকে ২০৭১ করার কথা ভাবছি। স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি দিয়ে শেষ হবে।
এটা চলনসই, বড় লেখার মাঝে ২-৩ পাতা যেমন থাকার জন্যে থাকে তেমন...
থ্যাংকস বস।
আপনার কল্পনাশক্তিকে ঈর্ষা জানাচ্ছি
পড়ার জন্য ধন্যবাদ বস।
মন্তব্য করুন