আকাশ, আগ্নেয়গিরি আর আমি
আকাশ
## প্রত্যেক মানুষের নাকি নিজের একটা আকাশ থাকে। সেই আকাশে প্রাকৃতিক আকাশের মতো নিজের কিছু তারা , কষ্ট নামের মেঘ , কান্না নামের বৃষ্টি থাকে। রোদ নামের ঘাম থাকে, চাঁদ নামের আলো থাকে, জোছনারুপী ভালোবাসা থাকে। কখনো কখনো শূন্যতার মতো অনন্ত নক্ষত্রবীথি থাকে, সুখগুলো হারানোর কৃষ্ণ গহবর থাকে। এতকিছু কোনোকিছুই থাকে না, যদি আকাশটা না থাকে। তবে অনেকেই আছে যারা এই আকাশের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত না হয়েও অনুভূতির চোরাবালিতে আটকে পড়ে হাঁসফাঁস করতে করতে জীবন কাটিয়ে দেয়। আমি সেই দলভূক্ত নই।
মেঘগুলোকে আমার সুখের মতোই মনে হয়। তারা সুখের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করে, অস্থির হয়ে। অস্থির মেঘ আমি ভালোবাসি!
বৃষ্টি ব্যাপারটাও অনেকটা তাই। বেরসিক নগরবাসী বৃষ্টি এলেই হৈ হৈ করে আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই শহরের যেন ঠান্ডার ধাত আছে- একটু ভিজলেই নাক বন্ধ হয়ে আসবে। তারা কান্না ভয় পায়। আসলে বৃষ্টির মতো আনন্দের কিছু আছে বলে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। আমার নাক বন্ধ হয়ে যাক, জ্বরে পুড়তে থাকা উত্তপ্ত কপালে আস্ত একটা ডিম সিদ্ধ হয়ে যাক- তবু কান্নার মতো বৃষ্টি আমি ভালোবাসি।
চাঁদের ব্যাপার-স্যাপার চিরকাল-ই রোমান্টিক। কৈশোরে উঠে মানুষ চাঁদ নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করে, যৌবনে গয়ে চাঁদের আলোতে খুন করতে শেখে- কখনো মানুষকে, কখনো আত্নাকে। আমি ঘরে বসে চাঁদ দেখি। জানালার পর্দা সরিয়ে দেই, চাঁদের আলো আমার ঘরে। শুয়ে থাকি,আমি নিথর! আত্মা খুন করি না, কবিতা লিখি না। আমি কেবল বৃষ্টির মতো করে আলোতে ভিজি। চাঁদ নামের আলোকে আমি ভালোবাসি।
আমার সবকিছুই আছে, আকাশটাও আছে। কিন্তু ঘরে কোনো খাট নেই, সোফা নেই, মোজাইক করা ফ্লোর নেই, বাথটাব সহ বাথরুম নেই।
এশা এসেছিল একদিন আমার ঘরে। সে থাকে সবসময় আমার আকাশে। আমি ঘুড়ি ওড়াতে পারি না। নিজেই ঘুড়ি হয়ে উড়ি।
আমার চাঁদ মাখানো ঘর দেখে, সে ছিল চুপ করে। বসার কোনো সোফা ছিল না। তাই সে ছিল দাঁড়িয়ে। আমি দেখি তার চোখে আশার মৃত্যু। তার মর্মান্তিক চাহনি, আমার আকাশে তৈরী হওয়া কৃষ্ণ গহ্বর। সুখগুলো তীব্র পলায়নপ্রবনতায় আক্রান্ত। আমি দৃষ্টিবিদ্ধ হয়ে দেখি অনন্ত নক্ষত্রবীথি- আমার শুন্যতা।
তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছিলে? এই তোমার প্রাসাদ? বোকা মেয়ে আমার আকাশটাকে দেখতে পারেনি।
আমার আকাশে তখন বৃষ্টি। বৃষ্টিস্নাত আমি। এই বৃষ্টিটাকেও ভালোবাসা আবদ্ধ করে ফেলি।
সে চলে যায়। তাকিয়ে থাকি আমি। দরজা বন্ধ হয় ঠাস শব্দে। আকাশ ফুটো হয়ে গেছে। পুরো আকাশটাই যেন এক কৃষ্ণগহবর।
আগ্নেয়গিরি
## কৃষ্ণগহবরে যখন আমার আকাশ সম্পূর্ণভাবে বিলীন, তখন আমি বের হই পথে। শহরের সবচেয়ে কোলাহলমূখর এলাকা রাতে হয়ে পড়ে বিষণ্ণ একোরিয়ামবন্দী গোল্ড ফিস। সূর্যভেজা, ঘাম ভরা স্মৃতি গোল্ড ফিসের মতো ভুলে গিয়ে এলাকাটি রাতের স্নিগ্ধ আবরণ হয়ে যায়।
কাঁচাপাকা দাঁড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ ফুটপাতে বসে বিড়ি ফুঁকছিল। কোথা থেকে এসে দুই লাস্যময়ী তরুণী বৃদ্ধের কাছে গিয়ে কিছু একটা বলে। বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে পেছনের বন্ধ দোকানের শাটার টেনে তোলে। কর্ণকুহরে আক্রান্ত হয়ে শব্দটি আমাকে বিরক্তিতে ফেলে দেয়। কত সুন্দর চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম, সঙ্গী আমার শূন্যতা।
আমার একটা আকাশ লাগবে।
চয়েস করে দেখেন। দুইটা একসাথে নিলে দামে কম পাবেন।
কানে আসে বৃদ্ধ আর তরুণীর কথোপকথন।
কিছুক্ষণ পর তারা হাসতে হাসতে চলে যায়।
আমার আকাশ ফুটো হয়ে গেছে।
বৃদ্ধ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে, সেইটার ব্যবস্থা আছে। টাকা-পয়সা আছে?
মাথা ঝাঁকায় আমি।
বৃদ্ধ দোকানের ভেতর থেকে কিছু একটা এগিয়ে দেয় আমার দিকে, র্যাপিং পেপারে মোড়ানো। যাদের আকাশ ফুটো হয়ে যায়, তাদের জন্য আগ্নেয়গিরি।
দাম পরিশোধ করে আমি বাসার দিকে এগিয়ে যাই। আমার ঘরে কোনো খাট নেই, তাই পাটিতে গা এলিয়ে দেই। পাশে র্যাপিং পেপারে মোড়ানো আগ্নেয়গিরি। দাম পড়েছে মাত্র দশ টাকা।
আর আমি
##
প্রত্যেকটা মানুষের নাকি নিজের একটা আকাশ থাকে। কেউ টের পায়, কেউ পায় না, কেউ কিনে আনে, কেউ বেঁচে দেয়। আবার কারো আকাশের অবস্থা হয় আমার মতো। তখন কেউ কেউ আগ্নেয়গিরি কিনে আনে। এখন আমার একটা আগ্নেয়গিরি আছে।
কখনো থাকে সুপ্ত অবস্থায়, কখনো জ্বলন্ত। আমার ঘরে চাঁদের আলোর লুটোপুটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সেখানে লালচে উত্তাপ, আমি পোড়ে, আসবাবহীন ঘর পোড়ে, আমার সার্টিফিকেটগুলো পোড়ে।
এশা এলে অবাক হয়ে যাবে। নিষ্প্রাণ ঘরে এখন রক্তমাখা প্রাণ। গতকাল একজনকে খুন করেছি। খুন করতে চাইনি, আসলে আগ্নেয়গিরির আগুনে কখন কে পুড়ে যায়, বলা মুশকিল। বৃদ্ধ দোকানদার আমাকে বলেছে, রক্ত হচ্ছে জ্বালানির মতো। রক্ত নিয়মিত না দিলে এই উত্তাপ নাকি বন্ধ হয়ে যাবে।
দশ টাকার বিনিময়ে আমি রক্ত খুঁজে বেড়াই।
বৃষ্টিতে আগুন নিভে যায়, রক্ত ধুয়ে যায়। বৃষ্টি আমি পছন্দ করি না তাই।
এখন তাই আমি আর আগুন পাশাপাশি শুয়ে থাকি, ভালোবাসি, হাসি, গান গাই, নাচি। আকাশহীনতায়, আগ্নেয়গিরিই যে আমার বেঁচে থাকার সম্বল।
মাশাল্লাহ
এরচেয়ে যুতসই কোন কমেন্ট দিতে পারলাম না।
আপু, আপনাদের কাছ থেকেই শিখছি
সবাই একটার পর একটা সেইরকম সেইরকম লেখা দিয়ে যাচ্ছে
সেইরকম লেখা মানে কি? আমার ব্লগে স্বাগতম আপনাকে
বাপ্রে! রিশাদ তো দারুন লেখে!
সেই চেনাজানা ঘটনা কিন্তু কি চমত্কার করে উপস্হাপন করলেন, ভালো হইছে।
আপু, আপনি তো আগেও পড়েছেন। এটা তো পুরান কথা। :p

আগেও পড়ছি মানে?!!
বুঝলাম না তো!
আপু, আমার অন্যান্য লেখা আগে পড়সেন। এই কথা বলছি
আমি জেবীনের কথার পুনরাবৃত্তি করলাম। চেনা বিষয়ের এমন অভিনব উপস্থাপন, সত্যিই মন কাড়া। কিছু লাইনতো কোট না করলেই নয়
ভাষার খেলা এবং অলংকরন দুইই অপূর্ব, অসাধারণ।
আরো বেশি বেশি লেখা পাবার আশা রাখছি
আমি আসলে এই ব্লগে অতটা নিয়মিত না। এজন্য এখানে নিয়মিত লেখা থাকেনা। আর আপনাদের লেখা যখন পড়ি, আপনাদের মজার মজার মন্তব্য পড়ি ভালো লাগে। আপনারা একটা পরিবারের মতো
হুম চমৎকার লিখেছেন। ভাললাগা।
আমার একটা গল্প আছে, সরোজ পাখি হতে চেয়েছিল। যদি সময় হয়, মন্তব্যে জানাবেন।
ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা।
আপনি এখানে আছেন জানতাম না। অবশ্যই পড়ে দেখব। কৃতজ্ঞতা
আপনার লেখার হাত ভালো, গল্পটিও চমৎকার লিখেছেন।
শব্দ ব্যবহারের ব্যাপারে কয়েকটা অযাচিত কথা বলি :
তিনটি বাক্যেই 'আসলে' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু প্রথম দুই বাক্যে 'আসা' অর্থে, আর তৃতীয় বাক্যে 'প্রকৃতপক্ষে' অর্থে। একই শব্দ যে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয় না, তা নয়। তবে সুন্দর বিকল্প থাকলে বিকল্পটাই ব্যবহার করা শোভন। যেমন প্রথম দুই বাক্যে 'আসলে'র বদলে 'এলে' ব্যবহার করতে পারেন, সেক্ষেত্র বাক্য দুটো দাঁড়াবে এরকম :
খারাপ শোনাচ্ছে, না ভালো?
আবার,
এই বাক্যে 'রাত্রিতে' ব্যবহার না করে 'রাতে' ব্যবহার করলেই অধিকতর শ্রুতিমধুর হতো।
আশা করি, অযাচিত এই বড়ভাইগিরিতে বিরক্ত হননি।
এটাকে যে গল্প বলছেন, এতেই ভালো লাগছে। আমি এটাকে গল্প ট্যাগ দিতে সন্দিহান ছিলাম।
প্রথম প্যারাটা ফেবুতে স্ট্যাটাস হিসেবে দিয়েছিলাম। বিচ্ছিন্ন কিছু লাইন। একসাথে জোড়া লেগে গেল। মাঝের অংশে একটু পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা।
আপনি বলার পর ওই অনুযায়ী ঠিক করে দিলাম। শ্রুতিমধুর লাগছে।
এই ধরনের বড়ভাইগিরি খুব ভালো পাই।। বিরক্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

ফাকিবাজি চলতো না... নিয়মিত লেখা চাই
আর লেখা নিয়ে অন্যরা আমার চাইতে অনেক চমতকার করে বলেছেন
চেষ্টা করব।
আমার এখানে আপনার প্রথম মন্তব্য। কৃতজ্ঞতা।

কি বলেন এইসব? আপানর এত এত লেখা পড়লাম আর কিছু বলি নাই?
আশ্চর্য্য!!!
সরি
গল্প ভালো লাগলো।
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।
এখানে প্রায় মাসখানেক পর লেখা দিলাম। চেষ্টা করব, মাঝে মাঝে দেওয়ার।
চুপ চাপ পড়ে গেলাম।
চুপচাপ কেন?
ডাক্তর ভাই@ লেখা চুপচাপ পড়ে গেলাম।
কেন?
মন্তব্য করুন