ব্লগিং করা সহজ নয়
...সকলেরই ঘোরতর দুশ্চিন্তা।
এমন সময় পিওন আসিয়া আমাকে একখানা চিঠি দিয়া গেল।
নৃপেন বলিল, কার চিঠি হে?
আমি চিঠি পড়া শেষ করিয়া বলিলাম, বউ লিখেছে - বুঁচি মারা গেছে। কাল।
এতদূর লিখিয়া বলাই থামিল। কে জানে অণুগল্পখানি ব্লগে প্রকাশ করিবার উপযুক্ত হইয়াছে কিনা। তবে প্রকাশিবার পূর্বে সদ্যপ্রসূত সাহিত্যকর্মটার একখানা ব্যাকআপ রাখিয়া দিলে মন্দ হয় না, বলাতো যায় না - যেই হারে চলতি বইমেলায় বানের জলের ন্যায় ব্লগারগণের বই বাহির হইতেছে - তাতে করিয়া এতটুকু আশা করাই যায় যে স্বরস্বতী তাঁহার রাজহংস সমেত গলা তুলিয়া চাইলে হয়তোবা পরবর্তী বইমেলায় বলাইয়ের বই বাহির করিবার সদিচ্ছাটার কোন একটা গতিক হইবে। পোস্ট করিবার পূর্বে আরো একবার ভালো করিয়া নজর বুলাইয়া লইল সে নিজের লেখাটার
উপর - আজকাল বানান টানান ভুল হইলে বিচ্ছিরিপ্রকারের কটুবাক্য বর্ষণ করিয়া জ্ঞাতিগুষ্টি উদ্ধার করিয়া ছাড়ে ব্লগের কুলীন সম্প্রদায়। ছাপার অযোগ্য কয়েকটা গালি মনে পুষিয়া রাখিয়া বলাই স্বরস্বতীর নাম জপিতে জপিতে চক্ষু মুদিত অবস্থাতেই "প্রকাশ করুন" বোতামে ক্লিকাইল। তারপর দুদ্দাড় করিয়া হোম পেজ - দু্চ্ছাই, কি জানি বলে আজকাল ..."নীড় পাতা" তে গিয়ে অনলাইনে বিরাজমান ব্লগারদের লিস্টিতে একবার নজর বুলাতেই দিলটা ঠান্ডা হইল। যাক, তাহার লিখাখানা পড়িবার মতো যথেষ্ট মানুষজন রইয়াছে। ইনাদের সিংহভাগই ব্লগে লিখিবার পরিবর্তে মন্তব্যের তুফান তোলাটাকে রোজকার রুটিন বানাইয়া ফেলিছেন। ইনাদের হাতে লিখাটার ভাগ্য ছাড়িয়া দিয়া বলাই উদাস মনে সিটি বাজাইতে বাজাইতে ঘর হইতে বাহির হইল।
বহুত বেলা পর্যন্ত রকবাজি করিবার পর ঘরে ফিরিয়া অগ্নিশৃগালের জানালায় দৃষ্টিপাত করিতেই বলাইয়ের মেজাজটা বিগড়াইয়া গেল। কেবল দু একটা পরিচিত ব্যক্তি ব্যতীত কেউই মন্তব্যই করিবার প্রয়োজন মনে করে নাই! মেজাজটা বঙ্গদেশীয় ক্রিকেট টিমের ব্যাটিংয়ের মতোই দ্রুত বিগড়াইয়া গেল। গোদের উপর বিষফোড়ার ন্যায় সকলে আবার লিখাটা লইয়া টিটকারী মারিতেও বাকি রাখে নাই। তবে রে! আজি যদি প্রত্যেককে সে তুলাধুনা না করিয়াছে তবে সত্যই পিতৃপ্রদত্ত নাম পরিত্যাগ করিয়া ব্লগের নিক "বনফুল" কেই নিজের পরিচয় হিসেবে গ্রহণ করিবে। এই পণ করিয়া লুংগিতে গর্ডিয়ানের গিঁট কষাইয়া সে মন্তব্যের জবাব দিতে বসিল।
ভানুসিংহ লিখিয়াছেন: দেখো বাবা বলাই। তোমার "সমাধান" শিরোনামের অখাদ্যটা, যাহাকে তুমি অণুগল্প বলে চালাইবার অপচেষ্টায় ব্যস্ত তাহা বিশেষ উপাদেয় মনে হইল না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উত্তম তবে সেই পরীক্ষার ফলাফল যদি এতটা ক্ষুদ্র হয় তবে তো মুশকিল।
জবাব: দেখুন গুরুদেব আমার যতদূর মনে পড়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা যৌবনকালে আপনিই সর্বাপেক্ষা বেশি চালাইয়াছেন। আজ এই বৃদ্ধবয়সে এসে এই পশ্চাদপসরণ আর রসবোধের অভাব কি ভীমরতির লক্ষণ? নিশ্চয়ই ভীমরতি, নতুবা জুনিয়র ব্লগারদের পিছনে লাগিবার কোন উপযুক্ত কারণ আছে কি? আপনার ব্লগিংয়ের সোনার তরী যে শিগগির ডুবিবে তাহাতে কোনরূপ সন্দেহ নাই।
আলী লিখিয়াছেন: সাবাশ ব্যাটা। বেড়ে লিখেছিস। চালিয়ে যা বৎস।চেষ্টা করিলে আরো ভালো লিখিতে পারবি তাতে কোন সন্দেহ নাই।
জবাব: তুমি যবনের পো অত চেঁচাও কেন? আফগান মুল্লুকে বসিয়া বসিয়া শুধু ভ্রমণকাহিনী লিখিলে চলিবে? ঐখানকার তন্বীদের বড়ই সুখ্যাতি শুনি, তাদের সাথে মাখামাখির কাহিনী নয় নাই শোনালে দু একখানা ছবি শেয়ার করিলে এমন কি ক্ষতি??
দুখু লিখিয়াছেন: বড্ড পানসে লাগল হে, অনেক দিনের জমানো জলের মতো।
জবাব: ওরে পামর! অনেক দিনের জমানো পানির স্বাদের মাহাত্ম্য তুমি ছাড়া আর কে বুঝিবে?? তোমার লুলামির সকল ইতিহাস যে এখনও ফাঁস করিয়া দেই নাই তার জন্য ঈশ্বরের কাছে বেশি করিয়া শুকরিয়া আদায় কর।
এতটুকু লিখিয়া বলাই একটু দম ফেলিল। পাবলিক রিঅ্যাকশন দেখিয়া বাকিগুলার জবাব ছাড়িতে হইবে। আজি কারো নিস্তার নাই। ব্লগার ব্যাসদেবের সেই অগ্নিঝরা মন্তব্য বলাইয়ের মনে পড়িয়া গেল "বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী"।
(চলবে??)
প্রিয়তে। এ লেখাটা খুবই ভাল লেগেছে। আমি ঝড়ঝড়ে সাধু ভাষার বিরাট ভক্ত, হয়ত নিজে লিখতে পারিনা তাই।
লেখাটা আসলে অন্যভাবে লিখার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু প্রয়োজনীয় বইপত্র, তথ্য এবং পরিশ্রমের অভাবে শেষমেষ এই বস্তুতে দাড়িয়েছে। তবু ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।
সাধু ভাষায় লেখার মজাই আলাদা। সাধুতের প্রতি আমার বিশাল আকর্ষণ - অপোজিটস অ্যাট্রাক্ট
সত্যজিত বলিয়াছেনঃ লেখাটায় জীবন ঘনিষ্টতা তেমন একটা আসে নি। লেখককে আরো জীবনঘনিষ্ট হবার অনুরোধ করা গেল, রেফারেন্স হিসাবে আমার পথের পাঁচালী উপন্যাস টা আরো গুটিকয়েকবার পড়িবার প্রেস্ক্রিপশন দেয়া গেল ।
সত্যজিত বলিয়াছেনঃ লেখাটায় জীবন ঘনিষ্টতা তেমন একটা আসে নি। লেখককে আরো জীবনঘনিষ্ট হবার অনুরোধ করা গেল, রেফারেন্স হিসাবে আমার পথের পাঁচালী উপন্যাস টা আরো গুটিকয়েকবার পড়িবার প্রেস্ক্রিপশন দেয়া গেল

লেখক কাহার সহিত ঘনিষ্ট হপে ... সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা আবশ্যক
বৎস, তোমার চেষ্টার প্রতি সম্মান রাখিয়া বলিতেছি, লেখা কেমন হইয়াছে তাহা বিষয় না। তুমি লিখিতে থাকো... একদিন নিশ্ছয়ই ভালো লিখিতে পারিবে। সেই
দিন পর্যন্ত তোমার যেন ধৈর্য্য থাকে। আর মনে রাখিও, ভালো লেখিবার জন্য অনেক পড়িতে হইবে।
বাঁচতে হলে পড়তে হবে। আশা করি ভাল লিখব .... কোন এক কালে।
সেই রকম হইছে ।
১০ টা (বুইড়া আঙ্গুল) ।
আইডিয়াটাই সেই রকম পছন্দ হইছে!
বনফুল্রে পচানোর তেব্র পর্তিবাদ!
বনফুলরে কে পচাইবে কার এতো বুকের পাটা ব্যাটা??? আমরা সেইদিন নিজেরা বলাবলি করতিসিলাম বনফুল যদি ব্লগার হইতেন তবে হয়তো তাকে আমরা আজ হিমু নামেই চিনতাম!! সেই থেকে ...
একদিক দিয়া ব্লগার যারা লেখক হয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল দেখতে পাচ্ছি। নবীন ক্যাটাগরিতে দুইখানা ব্লগাররা দখল করলো। সামনেরবার হয়তো প্রবীণ ক্যাটাগরির দুইখানাও দখলে আসবে
সেটাই
।
না চললে তো বুঝতে পারছি না শেষ পর্যন্ত কেমন হবে
অন্ততঃ এই পর্বে প্লটে নতুনত্ব নেই, ব্লগে লেখা আর মন্তব্য নিয়ে রম্যঘেঁষা লেখা ব্লগাররা আরও লিখেছেন। সাধু রীতির ভাষারূপ বিষয়ে একটু বলতে চাই। শুধু সর্বনাম (তাকে->তাহাকে) আর ক্রিয়াপদের (করে->করিয়া) বিলম্বিত রূপ প্রয়োগ করাই যথেষ্ট নয়। বিশেষ্য, বিশেষণ, এমনকি কখনও কখনও অব্যয়বাচক শব্দের ক্ষেত্রেও শব্দচয়নে কুশলী হতে হয়। যেমন এই লেখায় শুরুর দিকেই "চিঠি" শব্দটা আছে, যেখানে "পত্র" শব্দটি ব্যবহৃত হলে সাধুরীতির উপভোগ্যতা বাড়তো বই কমতো না। একইভাবে বইয়ের বদলে বহি/পুস্তক হতে পারতো। নির্দেশক হিসেবে টা/টি এর বদলে খানা/খানি ব্যবহৃত হতে পারতো। টেকনিক্যাল এবং ইংরেজি টার্মগুলোর বাংলা অনুবাদে (এবং সাধুরূপ প্রদানে) একটু সময় দেয়া যেতো।
কিছু শব্দ ( হয়তো লেখকের অনভ্যস্ততাহেতু) চলিতরূপে রয়ে গেছে, যেমন তুলোধুনো->তুলাধুনা, গেরো দিয়ে-> গিঁট কষাইয়া ইত্যাদি।
সবকিছুর পরও এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।
লেখাটা যখন ভোরের দিকে লিখলাম তখন ঘূমে এক চোখ প্রায় বন্ধ। তবুও ভদ্রতার খাতিরে একটা রিভাউজ দিতে যাবো তখন অদ্রোহ বলল, লাগবে না, সকালে উঠে দেখবি নুশেরাপু প্রুফ রিডিং করে দেবেন!! আর সেটাই হল!
তবে প্রথমেই আপনার ভুল ধরি! প্রথম "চিঠি" শব্দটি - আসলে প্রথম প্যারাটিই সত্যিই বনফুলের "সমাধান" নামের অনুগল্পটির শেষ কয়েকটা লাইন। বইয়ের পরিবর্তে পুস্তক লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ঐ মুহূর্তে কানে ভালো বাজছিল না শব্দটা। কিছু ইংলিশ টার্ম ইচ্ছে করেই রেখে দিয়েছিলাম ফাঁকে ফাঁকে যাতে লেখাটা বেশি জটিল না হয়ে হাল্কার দিকে যায়। কিন্তু প্লেসিং ঠিকমতো হয় নাই এখন বুঝতে পারছি।
আরো মানুষ "তুলাধুনা" করবার আগেই "গিঁটগুলো কষাইয়া" নেই। হোমওয়ার্ক না করে লেখার ফল ভালো হবে সেটা টের পাচ্ছিলাম কিন্তু কি আর করা ...
বলাইচাঁদবাবুর লেখাকে তোমার লেখা বলে ভুল করবো কেন!!! আমি শুধু শব্দরূপের উদাহরণ দিলাম। সেখানে চিঠির বদলে পত্র হলে আবেদন কমতো কী? (সাধুরীতিতে যেমনটা হয় "লেখা"র বদলে "রচনা" লিখলে)
আর একটা কথা, কোন লেখার বানান বা ভাষারীতি এগুলো নিয়ে কথা বলা বাহাদুরির কিছু না, মন দিয়ে পড়াই যথেষ্ট। এর জন্য কোন পুরস্কারটুরস্কার নেই, বরং তিরস্কার আছে ষোলআনা। তারপরও যারা করেন, তাদের সদিচ্ছাটুকু দেখার চোখ আমরা যেন বুজে না ফেলি।
পুরষ্কার থাকবে না কেন? কোন এক আকাট গন্ডমুর্খ প্রকাশক যদি ার সকল বোধবুদ্ধি হারিয়ে কোনদিন আমার কোন লেখা ছাপাতা রাজি হয় তবে তাতে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ অবশ্যই আপনার নাম আসবে একেবারে ভদ্রলোকের প্রতিজ্ঞা!!
আপনার মতো মনোযোগ দিয়ে সবাই ব্লগ পড়লে আরো আগেই এসব ভুল শুধরে যেত
আইডিয়া ভাল ,আর কিস্তিতে দেওয়ায় ভালই হয়েছে ,পরের পর্বটা আরেকটু গোছানো হবে ।
দড়িদড়া কিনে আনা দরকার, আটঘাট বেঁধে নামতে হবে।
কালকেই পড়ছি। কমেন্ট করতে পারি নাই। চলুক। আইডিয়া ভালো।
হুমম ... চলবে নাকি হাঁটবে কে জানে ...
উমদা আইডিয়া। উত্তম জাঝা।
পোষ্ট খানি ঝাঝা হইয়াছে। উহা পড়িতে বড়ই আরাম বোধ করিয়াছি হে বৎস।
চালাইয়া যান ভ্রাতঃ , আমাদেরও কিছু মনোরঞ্জন হউক পাঠ করিয়া।
আপনার উৎসাহই হউক আগামীতে আরো একখানা পঠনের অনুপযোগ্য পোস্টের পাথেয়!
banglay likhte partesina kan
অভ্র নামান! আর স্বাগতম!!
কতিপয় গুরুচন্ডালী বিভ্রাট ব্যাতিরেকে পোষ্টখানা জবরদস্ত এবং তুন্দুরুস্ত হইয়াছে।
এই জন্য, লেখক ধন্যবাদার্হ্য।
মাথা পেতে নিলাম!
লেখা পছন্দৈছে।
লাইক্সদিস!
শুরুটা দেখে চমকেছিলাম, বুঝিসই তো কেনো ...
নামকরণ চেনা চেনা লাগে...
চলুক, কিছু বলবার মতন জ্ঞানগর্ভ এখনো হৈ নি। আলীর ভাষায়- এখনো সরবত খাচ্ছি। খাবো না ?? রেফারি আর কতক্ষণ বাজালো, আমরাই তো সিটি বাজিয়ে গেলাম সারাটা সময়..
আরো লিখার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বইপত্তরের অভাবে রিখতে পারি নাই।
তুই ঢাকায় নাকি?
বিকালে এসে পৌঁছলাম...
হা হা হা হা হা!!!
মাটিতে লুটোপুটি খাইলাম!!!
"দুখু লিখিয়াছেন: বড্ড পানসে লাগল হে, অনেক দিনের জমানো জলের মতো।
জবাব: ওরে পামর! অনেক দিনের জমানো পানির স্বাদের মাহাত্ম্য তুমি ছাড়া আর কে বুঝিবে?? তোমার লুলামির সকল ইতিহাস যে এখনও ফাঁস করিয়া দেই নাই তার জন্য ঈশ্বরের কাছে বেশি করিয়া শুকরিয়া আদায় কর।"
হা হা প গে। পছন্দ হইলো
মন্তব্য করুন