আপনজন
১৭বার ফোন দেয়ার পরও রিসিভ না করার পর মেসেজ দিলো রবি।
"তমা, একটু ফোনটা রিসিভ করো।শুধুমাত্র ভয়েসটা শুনবো,তারপর কেটে দিও।"
তমা বড় বেশি বাস্তববাদী।স্বার্থপরতা তার রক্তে রক্তে।বাস্তবতাকে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করে পারে ও।একই ভার্সিটিতে পড়ে ওরা কিন্তু ডিপার্টমেন্ট আলাদা।আলাদা ডিপার্টমেন্ট হওয়া সত্ত্বেও ফেসবুক,স্কাইপিরএই যুগে বন্ধুত্ব তৈরি হতে সময় লাগেনি।
ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করার পর মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান হতেও দেরি হয়নি দুজনের।বেশ কয়েকদিন কথা বলার পর হঠাৎই রবি টের পায় তমার প্রতি তার নিজস্ব কিছু অনুভূতি আছে।তমার সাথে কথা বলতে বড় বেশি ভালো লাগে ওর।মোবাইলে কথা বলাতে তমার চরম বিরক্তি থাকা সত্ত্বেও রবির অনুরোধে কথা চালিয়ে যায় ও।
আস্তে আস্তে তমার প্রতি বড় বেশি অনুরক্ত হয়ে যায় রবি।একদিন সাহস করে তমাকে ভালোবাসার কথা বলে দেবে রবি,এই ভাবনায় দিন কাটে ওর।অন্যদিকে তমার কাছ থেকেও কিছুটা ভালবাসার ইঙ্গিত পেতে থাকে ও।সবকিছু ভেবেচিন্তে একদিন তমাকে ভালোবাসার কথাটা বলেই দেয় রবি।কিন্তু তমার কাছ থেকে যতোটা রিএকশন পাবে বলে আশা করেছিলো তেমনটা না পেয়ে হতাশ হয় ও।অন্যদিকে তমা হ্যা না কিছুই বলে না রবিকে।আস্তে আস্তে রবির সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয় তমা।ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করে না,ভার্সিটিতে দেখা হলেও কথা বলে না বরং একটু যেন বিরক্ত হয়।রবি ওর সাথে অনেকবার কথা বলার বা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কিছুই।
বিগত একমাস ধরে এভাবেই তমার ফোনে কল ,মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে ও কিন্তু তমা নিরুত্তর।সবার উপেক্ষা বা আঘাত সহ্য করা যায় কিন্তু ভালবাসার মানুষের আঘাত সহ্য করবার শক্তি মানুষকে দেয়া হয়নি।তমার এই উপেক্ষাও সহ্য করতে পারে না রবি।মরমে মরমে মর যেতে থাকে ও।তবুও বারবার তমার জন্য নিজে ছোট হয়।শত উপেক্ষা সত্ত্বেও তমার ভালোমন্দ সব দিকে খেয়াল থাকে রবির।
মেসেজ করবার পর আরো বেশ কয়েকবার ফোন দিতে থাকে রবি,কিন্তু তমার কোন রেসপন্স পায় না।হঠাৎ করেই উপলব্ধি করে ও,ওর সাথে কথা বললে বিরক্তি বোধ করে তমা।তমাকে আর বিরক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয় ও।তমাকে আর কখনো বিরক্ত করবে না ও।আর কখনোই না।
বিড়বিড় করে রবি বলতে থাকে আর বিরক্ত করবো না।যখন বুড়ী হয়ে যাবি,নিজেকে যখন খুব একলা লাগবে তখন বিকেলবেলার পড়ন্ত সূর্যটার দিকে তাকিয়ে মনে করিস জীবনের প্রক্ ত ভালোবাসাটিকে নিজ হাতে খুন করেছিস।হয়তোবা তখন চোখ গড়িয়ে দুএক ফোটা জলও গাল বেয়ে নেমে আসতে পারে।বিকেলের আলোয় চিকচিক করা অশ্রুটাকে মুছে দেবার লোকটিকেও খুঁজে পাবি না কখনো।
রবি ওঠে দাড়ায়।চলতে চলতে হঠাৎই ওর চোখের জল গাল বেয়ে নামতে থাকে।চোখের জল মুছে দেবার জন্য একজন অতি আপনের খুব প্রয়োজন আজকে ওর।
ভাল লাগল।
রবি নিজের ভাবনাতেই কবি হয়ে আছে দেখছি। তমা হয়তো কাউকে খুজে পেয়েছে যে রবির চেয়েও বেশি তাকে ভালবাসে
মন্তব্য করুন