কক্সবাজার ও নারিকেল জিঞ্জিরা ভ্রমন ২ : সমূদ্র সৈকতে
ঝলমলে শীতের সকাল। কোমল রোদ্দুরের পরশ শরীরে নিয়ে উঠে বসলাম রিক্সায়। ছুটির দিন, চারিদিকে নেই ব্যস্ততা, মানুষ ও গড়ির ভীড়। বাসা থেকে মিনিট বিশেকের পথ সোহাগ বাস কাউন্টার। বেশ কয়েকদিনের জন্য ঢাকার কোলাহল ছেড়ে সমূদ্রের পাশে থাকার আনন্দ ভাবনায় প্রান উৎফুল্ল। মন গান গেয়ে উঠে, কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা।
বস কল করে। রওনা দিয়েছি কিনা জানতে। সে প্রায় পৌছে গেছে, পাঁচ মিনিটের দূরত্বে কাউন্টার থেকে। আমি ভাবি যাক সব কিছু ভালোমতই হচ্ছে। হোটেল বুক করা সেখান থেকে সেন্ট মার্টিন'স যাওয়ার আয়োজন, সব কিছুই ঠিক । যদিও বাসের টিকিট না পাওয়ায় যাত্রা এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়ে এখন যাচ্ছি। এখন মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধান আমাদের স্বপ্ন যাত্রা থেকে। কোন ঝামেলা যেন বাধা হয়ে না আসে। এই সব ভাবছি এমন সময় মোবাইলে আবার রিং, বসের। মনটায় একটা মোচড় লাগল। আবার ফোন কেন। নিশ্চয়ই ঝামেলা হয়েছে। বস জানায় একটা গলতি হয়ে গেছে। আমরা চেয়েছি সকাল বেলা রওনা দিয়ে সারদিন জার্নি করে কক্সবাজারে রাতে বিশ্রাম নিয়ে তারপর থেকে যেন পুরো উদ্দমে ঘোরাঘুরি করতে পারি। সেজন্য টিকিট চেয়েছি সকালের। এদিকে টিকিট দিয়েছে রাত্রের। পিএম লেখা আমরা কেউই লক্ষ করি নাই। কী বেইজ্জতী! ব্যাগ ব্যগেজ নিয়া এইভাবে এসে ফিরে যাওয়া! এইটা নিয়ে মুন্নি যাতে খ্যাচ খ্যাচ না করে সুলতান ভাই বলে, ভাবিকে বলবেন আমি ভুল করে টিকিট কেনেছি। অবাক ব্যাপার! মুন্নি বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। এ নিয়ে খারাপ কিছু বলে নাই বরং বলেছে এমন ভুল হতেই পারে।
হায়। কী আর করা! উৎফুল্ল মন নিয়ে বের হয়েছিলাম, ভগ্ন হৃদয় নিয়ে আবার বাসায় ফেরত গেলাম। সারাদিন সময় যেন কাটে না। শুয়ে বসে দিন পার করে রাতে খেয়ে দেয়ে কাউন্টারে গিয়ে বাসে উঠলাম। আর কোনো ঝামেলা ছাড়াই আমাদের যাত্রা শুরু হল কক্সবাজার ও নারিকেল জিঞ্জিরার পানে।
ঘুমিয়ে পরেছিলাম। ঘুম ভাঙলে জানালা দিয়ে দেখা যায় সূর্য পাহাড়ের নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে। তখন আমরা সারা রাতের ভ্রমন শেষে পৌছাই কক্সবাজারে। আমাদের বাসাস্থান এখন হোটেল সায়মন। রুমে এসে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেই বিছানায়। রেস্ট নিয়ে, রিমঝিমকে ঘুম থেকে তুলে, নাস্তা করতে বের হই। কক্সবাজারের এই দিকটা মোটামুটি নিরিবিলি। কয়েকটা ভালো রেস্তোরা আছে। নাম গুলিও সুন্দর, ঝাউবন, পউষী। নাস্তা করে রিক্সায় কলাতলী সৈকত।
পর্যটনের মৌসুম। সৈকত লোকে লোকারণ্য। আমার কাছে ভালো লাগে মানুষের এই আনন্দোচ্ছল কোলাহল মুখরতা।
আমার তখন মনে পরছে প্রথম সমূদ্র দেখার স্মৃতি। বেশ কয়বছর আগে এইরকম সকালে প্রথম সমূদ্রের সামনে দাঁড়াই। বিষ্ময়ে অভিভূত আমি ধীরে ধীরে ডুবে যাই অন্য এক জগতে। মনে হয় জ্যান্ত বিশাল এক কিছুর সামনে আমি। আমার হাত পা সারা শরীর অবশ হয়ে আসে। এরপর অনেকবার আসা হয়েছে কিন্তু প্রথমবারের সে অনুভূতি আর হয় নাই। যদিও সমূদ্রের প্রতি প্রচন্ড ভালোলাগা এখনো আছে। আমি ভাবছি রিমঝিম এই প্রথম সমূদ্র দেখতে যাচ্ছে। ও অনেক খুশি হবে।
প্রথম একটু ভয় পেল। একটু পরেই মহানন্দে লাফাতে লাগল সমূদ্রের পানিতে। ঢেউ একবার আসে আবার দূরে চলে যায় এটা দেখে অবাক। পানিকে জড়িয়ে ধরতে চায় রিমঝিম। খুশিতে কী করবে বুঝতে পারে না। একবার পানিতে নামে আবার ফিরে আসে ঢেউ আসলে। শেষে পানিতে নেমে নাচতে শুরু করল।
সৈকতে অনেক উপকড়ণ যোগ হয়েছে। স্পিড বোট দিয়ে তীরের পাশ দিয়ে চক্কর তার একটা। সবাই মিলে আমারাও এক চক্কর দিলাম। তেমন ভালো লাগলনা। পাল তোলা মাছ ধরার নৌকায় ঘুরতে পারলে ভালো লাগত।
রিমঝিম এত মজা পেয়েছে যে পানি থেকে উঠতে চায় না। দুপুর হয়ে গেছে। খেতে যেতে হবে। রিমঝিম বলে আরেকটু থাকি। আরো অনেক বার আসব বলে বুঝিয়ে পানি থেকে উঠানো হল। ফেরার পথে সৈকত মার্কেট থেকে সবার জন্য বার্মিজ চপ্পল কেনা হল।
বিকালে গেলাম বৌদ্ধ মন্দির দর্শনে। রিমঝিম ঠাকুর দেখে মহা খুশি। মন্দিরে একজন খুব রকম মুখ কালো করে ঘুরিয়ে দেখালো আড়াইশ বছরের পুরান মন্দির, টাল পাতায় লেখা ত্রিপিটক, বুদ্ধের নানা মূর্তি। বিভিন্ন জিনিসের বর্ণনা দিল মহা বিরক্তির সাথে, যদিও আমরা তাকে কিছু বলতে বলি নাই। দেখা শেষ হলে বিরক্ত মুখ নিয়াই হাত পাতলো টিপসের জন্য। মন্দিরের কাঠের সিড়িটা সুন্দর। ফটোসেশনের জন্য উপযুক্ত। বিভিন্ন পোজে ছবি তোলা হল রিমঝিম ও তার মার। যেসব কাঠের ভিত্তির উপর মন্দিরটা দাঁড়িয়ে সেগুলিও দেখার মত।
বিকালে আবার সৈকতে। সূর্য আস্তে আস্তে অস্তমিত হচ্ছে। গোধূলির সোনালী আলোয় সৃষ্টি হয় এক মায়াময় পরিবেশের। তারপর একসময় গোল থালাটা হারিয়ে যায় দূর সমূদ্রের তট রেখায়।
কক্সবাজার নারিকেল জিঞ্জিরা ভ্রমন ১ : প্রস্তুতি
[ অনেকে বেইজ্জতী শোনার জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন। উনারা একটু হতাশই হবেন মনে হয়। যাই হোক লেখাটা শুরু করেছিলাম অনেক আগে। শেষ করা দরকার। আশাকরি এই বেলা শেষ করে ফেলব]
চোখ কচলায়া দেখলাম বারবার! অবশেষে ২য় পর্ব আসিলো!! বিশাল ব্যাপার......
লেখা ভালো লাগছে। তয় আরেকটু বর্ননা দেন.... সেই কবে গেছি কক্সবাজার... সব মনে হয় বদলে গেছে।
দিব, ছিলাম তো কয়েকদিন।
হতাশ হইলাম । বেইজ্জতি হইলেন না।রিমঝিম এর আনন্দ দেখে আর লেখা পড়ে মন্টা উড়ে বেড়াচ্ছে যাওয়ার জন্য। কতদিন ঢাকার বাইরে ঘুরতে যাই না।
হা হুতাশ।
কবেকার কাহিনী আল্লাহ মালুম! দুইদিন আগে গেছিলাম, মেঘের জন্য সূর্য আর পানিতে অস্ত যাইতে দেখলাম না
লিংকু ধৈরা পেত্থম পুষ্টে যাও
হতাশ হইলাম পোস্ট পইড়া

এরম কথা ছিল না
আরে আসল ঘটনা বলে বলে নাই। এতদিন ধরে ভাবছে কেমনে ইজ্জত বাঁচায়া লেখন যায়।এইজন্য এমন ফাঁকি দিলো।
সব পিচ্চিই মনে হয় পানি দেখলে পাগল হইয়া যায়
সেটাই।
কক্সবাজার ভমণপর্ব-২ থেকে একটু থমকে গেছিলাম কেননা, এর আগে আমার পড়া হয়েছে শুধু রাঙামাটি, তো ভাবলাম ১ পর্বটি গেলো কই! এখন দেখলাম আছে আছে, দিব্যি নাক উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
পড়ে ফেলব আজই।
রাঙামাটি ৫ দিন আগের আর কক্সবাজার ৫ মাস আগের কাহিনী।
বেইজ্জতির কথাটা ভুলে গেছিলাম। যাক মনে করায়া দিলেন, আশায় থাকলাম।
লিখলেন জিঞ্জিরা ভ্রমন, এখনো সায়মনেই রয়ে গেছেন ব্যাপার কি? আরেক পর্বে পাঠায় দিলেন নাকি? আল্লা মাবুদ জানে পরের পর্ব আসা পর্যন্ত বাইচা থাকুম কিনা! যাই হোক, আশায় বসতি করলাম। (বেইজ্জতীর না কিন্তু)
রিমঝিমকে প্রথম সমুদ্র দেখানোর ভিডিও করেন নাই? আমার মেয়েরেও এইবার প্রথম সমুদ্র দেখালাম এবং বিপত্তি ঘটে গিয়েছিল।
আমি ভাই সকালে টেকনাফ দুপুরে তেতুলিয়া তরীকায় ভ্রমনে বিশ্বাসী না। মাত্রর তো কক্সবাজার গেলুম তারপর নারিকেল জিঞ্জিরা। আসিতেছে।
ভিডিও করছি বাট হাই ডেফিনিশন ভিডিও সাইজ অনেক বড় হয়ে গেছে।
রিমঝিম মেয়েটা একা একা খেলে। একটা ভাই বা বোন থাকলে দুইজনে পানিতে কতই না মজা করতে পারতো। আহারে...............
একমত।
আমার এক বন্ধু এক বাচ্চা নিয়ে হানিমুনে গেছিল তিনজনে। পরের বছর ওরা চারজন!
একমত। কথা ঠিক বলছেন।
রিমঝিম প্রায়ই বলে হাসপাতাল থেকে বাবু নিয়া আসতে
কবে যেন প্রথম পর্ব দিছিলেন ???
ভাইরে হাতে জং ধইরা গেছিল, এখন জং পরিস্কার করার চেষ্টা করতেছি, একটু উৎসাহ দিবা তা না :৯
দুলাভাইয়ের সাথে সহমত পোষন করিলাম (কমেন্ট লম্বর ১৫)
দিলেন তো কক্সবাজার যাওনের নেশাটা চাগড়ায়া
বান্ধবী নিয়া যদি যাইতে পারেন সেইরম মজা পাইবেন (আশা করতেছি নুপুর এই কমেন্ট টা দেখবে না
)
রায়হান ভাই, বৌদ্ধ মন্দিরের মুখ কালো করে ঘোরানোটা বোধ হয় ইউনিক
ছবি সব অপূর্ব
থ্যান্কু ।
কি সুন্দর সুন্দর ছবি। হিংসায় হিংসিত। কক্সবাজার ট্যুরটায় মেলা ছবি তুলছিলাম কোনটাই আপনার গুলার ধারে কাছে যাবেনা
একটু বেশি হয়া গেল না! ইয়ে প্রশংসা আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে।
ফডু গুলা আগের পর্বের মত স্বপ্নীল একটু কম, আগের যেই যায়গা, চরম-----কক্সবাজার আর ভালো লাগেনা, তাও যাওয়ার চান্স পাইলে ছাড়ান নাই-------
বর্ননা দারুন লাগছে, বিশেষত বেইজ্জতি হওনের ঘটনাটা মজাদার----পরে ভাবী কিছু কয়নাই ডিসক্লেইমার দেয়াটার মাঝে কিরাম জানি একটু---;)
মিরাকলস ডু হ্যাপেন
খাওন দাওনের ছবি নাই ??
সমুদ্র প্রথমবার দেখার অভিজ্ঞতা একটা অসাধারণ ব্যাপার। কোন কিছুর সাথেই তুলনা করা যাবে না।
গেলবার সাইমনে ছিলাম। অন্য হোটেলগুলার চাইতে সস্তা মনে হইছে। পিক সিজনে কক্সবাজার যাওয়া মানে কসাইয়ের কাছে গলা আগায়ে দিয়ে কোপ দিতে বলা। পুরা ডাকাতি কারবার। প্রচন্ড ভাড়া।
ছবিগুলা ফাটাফাটি।
আমি প্রথমবার সমুদ্র দেখে তেমন ইমপ্রেসড হয়নি!! কেন জানিনা।
মন্তব্য করুন