কক্সবাজার ও নারিকেল জিঞ্জিরা ভ্রমন ৩ : দারুচিনি দ্বীপে
সকালে, খুব ভোরে উঠে তৈরী হতে হয়। গন্তব্য সেন্ট মার্টিনস। হোটেল থেকে ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সেখানে একদিন এক রাত থেকে তারপর আবার কক্সবাজার। এটা অবশ্য ঢাকা থেকে ঠিক করা হয়েছে। আমাদের কলিগ মারিয়া সব পাকা ব্যাবস্থা করেছে। এই সব অরগানাইজিংয়ে সে তুখোড়। মাইক্রো চলে এসেছে। সেটাতে করে টেকনাফ সেখান থেকে লঞ্চে সেন্ট মার্টিন। আমরা কিছু মালপত্র হোটেলে রেখে এসেছি। ফিরে এখানেই উঠবো। এত তাড়াহুড়া করে সকালে তৈরি হলাম কিন্তু গাড়ি ছাড়তে দেরি হচ্ছে। আমাদের সাথে এই হোটেল থেকে আরেকটা দল যাচ্ছে ওদের জন্যই দেরী। এই লেট লতিফ বাহিনী পুরা টুরেই দেরি করেছে। মারিয়ার ছোট ভাই জিশান টেকনাফে আমাদের সাথে যোগ দিবে । সে রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে। সকালে টেকনাফে পৌছবে।
কবির, সেন্ট মার্টিনের ছেলে। আঠার উনিশ বছের বয়স। আমাদের গাইড। কক্সবাজার থেকে নিয়ে সেন্ট মার্টিন ঘুরিয়ে আবার কক্সবাজারে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে আমাদের। খাওয়া দাওয়া, ঘুরাঘুরি সব পয়সা ও দায়িত্ব কবিরের। মাইক্রো চলছে পাহাড়ি পথে। সকালের আলো তখন উঠি উঠি করছে। মাইক্রোতেই নাস্তার করা হয়। কোথাও পাহাড়, আবার কোথাও সমতল কৃষি ভূমি, আবার লবন চাষের জমি। এইসব প্রাকৃতিক স্থাপনা দেখতে দেখতে চলে আসি টেকনাফ।
সাজ সাজ অবস্থা। পর্যটনের এই পিক সময়ে ভ্রমন পিয়াসুদের পদভারে কোলাহলে প্রকম্পিত টেকনাফ। উৎসবের আমেজ, লোকজনের আনন্দচ্ছল মুখ সব মিলিয়ে মন ভালো করা পরিবেশ। হাজার হাজার মানুষ গাড়ি করে এসে নামছে টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনে যেতে। বড়বড় চারটি জাহাজ জেটিতে। সবাই জাহাজমুখি। আমরা অপেক্ষা করি জিশানের জন্য। মিনিট দশ পর জিশানের বাস আসে। তারপর বিরাট লাইন ধরে জাহাজে উঠি।
জাহাজ চলে নাফ নদী দিয়ে। নদীর এক পাশে বাংলাদেশ আরেক পাশে মিয়ানমার। দুই ধারেই পাহাড়। মিয়ানমারের পাহাড় অনেক উঁচু। মন উড়ে যায় পাহাড়ের চূড়ায়। বছর পনের আগে এই নাফ নদী দিয়ে সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলাম ট্রলারে চেপে। দুই দেশের মাঝখান চিরে সেই ভ্রমন এক অন্যরকম আবেশ করেছিল মনে। নদীতে মাছ ধরার দুই দেশের নৌকা। আমাদের সাথে উড়ে চলে সাদা ডানার গাংচিল। সব কেমন ছবির মত মনে হয়। দূরের মিয়ানমারের উঁচু পাহাড় যেন মেঘের সাথে মিশে গেছে। চোখে পড়ে মিয়ানমারের পাহাড়ের মাঝে সাদা প্যাগোডার চূড়ায় আছড়ে পরা সূর্যের সোনালী আলোর ঝিলিক।
নদী থেকে এখন আমরা সাগরে। চারিদিকে সবুজাভ নীল স্বচ্ছ জলরাশি। টেকনাফের স্থলভূমি ছোট হতে হতে একসময় বিন্দু হয়ে মিশে যায় সাগরের জলে। চারপাশে শুধুই পানি। খালি মেঘের মত মিয়ানমারের পাহাড় হালকা অবয়ব নিয়ে দৃশ্যমান। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় সগরের জলের ভিতর সবুজ টিপ। ঐতো দারুচিনি দ্বীপ। কাছে আসতেই দেখা যায় মাছ ধরার নৌকা, জাহাজ ভেরানোর জেটি। জাহাজ ভিড়লে আবার হাজার হাজার মানুষের মিছিল নামে এই ছোট্ট দ্বীপে। কবির আমাদের সরাসরি নিয়ে যায় হোটেলে, দুপুরের খাবার খেতে।
সেন্ট মার্টিনের প্রায় সব বাড়ি এখন একেকটা রেস্ট হাউস। বাড়ির এক কোনায় আসল মালিকের ঘর। সাথে পর্যটকদের জন্য নতুন বানানো স্থাপনা। এই রকম একটা নতুন বাড়িতে আমরা উঠি। যেখানে আমাদের কমফোর্টের জন্য শহুরে সব ব্যাবস্থা করা আছে। বিশ্রাম নিই কিছুক্ষণ। তারপর ছুট সৈকতের পানে।
পুরা গমগম করছে সৈকত। ছেলে বুড়ো সবাই যেন এই অপরূপ পরিবেশে এসে আনন্দে ভাসছে। চারিদিকে পরিষ্কার নীল পানি আহবানে সাড়া না দিয়ে পারছেনা কেউ। রিমঝিম আমার হাত ধরে পানিতে নিয়ে যায়। বয়স্ক একজন পানি থেকে উঠে আসছেন, বলেন যাও বাবাকে ভালো মত গোসল করিয়ে দাও। রিমঝিম পানিতে নামে আমাকেও গভীরে নামতে বলে। আশ্বাস দেয়, ভয় কী বাবা আমি আছিনা !
আমরা সাগরের অনেক দূর চলে যাই। পানি ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করেনা। রিমঝিমের তো না ই। ভয় হয় যদি ওর জ্বর আসে! জোর করে উঠাই পানি থেকে। রুমে ফিরে বিছানাই শরীর দেই। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। একসময় ঘুমিয়ে পড়ি।
বিকালে ঘুম ভাঙ্গে। দ্বীপটা ঘুরে দেখা ও সূর্যাস্তের ছবি তোলার বাসনা নিয়ে বের হই। চারিদিকে এত সাবজেক্ট! একটার পর একটা ছবি তুলি। সৈকতের পাশেই নানা রকমের দোকান। কাপড়ের খাবারের। মাছ ভেজে বিক্রি করছে কেউ। আমারা সদ্য কড়াই থেকে তোলা গরম গরম মাছ ভাজা খাই। সূর্যটা এক সময় ডুবে যায় নীল জলে। আকাশে উঠে চাঁদ। চাঁদের সাদা আলোয় এই দারুচিনি দ্বীপে মায়াবী পরিবেশের সৃস্টি হয়। আমরা হাটতে থাকি চাঁদের আলো নিয়ে। আমরা হাটতে থাকি পায়ে সাগরের ঢেউ নিয়ে। আমরা হাটতে থাকি সাগরের গর্জন নিয়ে।
ফোন আসে কবিরের। খেতে ডাকে। আমরা খাবার হোটেলে গিয়ে খাই। রুমে এসে অল্প সময়ে ঘুমিয়ে পড়ি। মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গে। আমি আবার ছুটে যাই সৈকতে। চাঁদনি রাতে এই নির্জন সৈকতে দাড়িয়ে থাকি। চাঁদের আলোয় ঢেউ গুলো সব সাদা রং নিয়েছে। নির্জন না। অনেকেই চুপচাপ বসে আছে চেয়ারে। অপলক নয়নে চেয়ে দেখছে বালুতে সফেদ ঢেউয়ের আছড়ে পরা।
সেইন্ট মার্টিনসে গিয়া প্ল্যাইং পিশ ভাজা খাইছেন তো, নাকি মিস করছেন

প্লাইং পিশ নিয়া এক মজা হইছিল .... হোটেলের বয়রে দিয়া ৫ বার বলানোর পর ধরতে পারছিলাম যে সে বলতে চাচ্ছে প্লাইং পিশ.. এরপর বুঝলাম ইনি হলেন ফ্লাইং ফিশ
একটা কথা ঐখানে কয়েকবার শুনছি - চ্যান্ট মার্টিনে তারটি পাস্ট।
উড়ুক্কু মাছ খাই নাই তবে দেখছি পানি থেকে শূন্যে উঠতে। সেইটাও দারুন অভিজ্ঞতা।
ছবি দেখে তো মাথা আউলাইয়া গেছে রায়হান ভাই।কি সুন্দর ছবিগুলো!
মেয়ে বাবাকে সাহস দিবে না তো কে দিবে?
ছবি তোলার যায়গাইতো ঐটা। পানির এরম অদ্ভূত রং আর কোথাও দেখহি নাই। মাথা খারাপ করে দেয়।
ছবিগুলা অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য্য হৈছে...
এতদিন পোস্ট না দেয়ার জন্য মাইনাচ
এত মানুষের ভীড় এখন ওখানে!! সেই পুরানা যুগের কথা ভেবে আফসোস করি। টুরিষ্ট দ্বীপ হবার আগে আদিম দ্বীপটাতে আরো কয়েকবার যেতে পারতাম যদি!! কোটি টাকা খরচ করেও সেই আদিম দ্বীপটাকে ফেরত আনা যাবে না। সেই আদিম সৌন্দর্যের ছবিগুলো পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে আমার। চোখ বুজে স্মৃতিচারন করা ছাড়া আর কোন অ্যালবাম নেই আর।
দারুন কাহিনী দারুন সৌন্দর্য হইছে ছবি । ।
দারুন ! আমার স্বপ্নের স্থান... নারকেল জিঞ্জিরা... কতবার যে গেছি... হাজারবার গেলেও আমার তৃপ্তি মিটবে না। চমৎকার সব ছবি আর লেখার জন্য থ্যাংকু...
চরম হিংশিত
অবাক হওয়ার ইমো হবো.।.।.।.।.।.।।।এক কথায় জটিল।।
হিংসা...
এই টার্ম পরীক্ষা দিয়া বাঁচতে পারলে নেক্সট ছুটিতে সেন্ট মার্টিন্স...
ছবি গুলা বড়ই সৌন্দর্য্য হইছে ...... আর সেইন্টমার্টিন তো বস্।
দারুণ ফটোগ্রাফি!
সেন্টমার্টিন যে কবে যামু !!!!
প্রত্যেকটা ফটু দুর্দান্ত হইছে
ছবিগুলা মারাত্মক দারুন হয়েছে
অসাধারণ সব ছবি ভাইজান। আহারে সেন্ট মার্টিন কোনোদিন দেখা হইলো না, কবে যে বড় হমু!
সুন্দর ছবিগুলোর জন্য ধন্যবাদ
চরম সুন্দর। আমিও ফটোগ্রাফার হমু।
আগামী জানুয়ারীতে দামী মোবাইল কিনুম।
হা হা হা.।।
মন্তব্য করুন