রুটিন
এখন দিনগুলো যেভাবে কাটেঃ
সকাল ৮টায় উঠি। ৯টা পর্যন্ত গড়াগড়ি, ইন্টারনেটিং, তারপর ব্রেকফাষ্ট সেরে ঠিক ১০টায় কামলায় হাজির। লাঞ্চের আগ পর্যন্ত কামলা দিই আর সুন্দরী দেখি। সুন্দরী দেখি আর বসের হুমহাম শুনি। বসের হুমহাম শুনি আর হাওয়া তাড়াই। হাওয়া তাড়াই আর ফেসবুকে সস্তা কৌতুক পড়ি।
লাঞ্চ আওয়ারে চলে যাই সাবওয়েতে, কখনও যাই ম্যাকডোনাল্ডসে কখনওবা অতি সস্তা বাঙালি হোটেলে গিয়ে ডাল ভাত মেরে দিই। খেতে পারলেই হলো, খাওয়া নিয়ে একসময় প্রচুর ফ্যান্টাসী ছিলো, তখন অবশ্য জীবনটা নিয়েই ফ্যান্টাসী ছিলো। এখন কোন ফ্যান্টাসি নেই, অপেক্ষা আছে। সময় থেমে যাওয়ার অপেক্ষা।
লাঞ্চ আওয়ারটা খুব উপভোগ করি। তখন আশেপাশে আরও মানুষ দেখি। মানুষ দেখতে ভালো লাগে, এক একটা মানুষ, এক একটা উপন্যাস। উপন্যাস পড়ার মতো করে মানুষ দেখি।
এরপর আবার ফিরে আসি কর্মস্থলে, সকাল থেকে দুপুর অব্দি যা করছিলাম, দুপুর থেকে সন্ধ্যা অব্দি সেটাই করি। একচুল এদিক সেদিক নেই। তবে সন্ধ্যে যতো এগিয়ে আসে তত অস্থির হয়ে যাই ছুটির জন্য। ঠিক যেমন স্কুলের ছুটির জন্য শেষ ক্লাসে অস্থির হয়ে যেতাম। ছুটি হয়ে গেলে মুক্ত পাখির মতো কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরি। ফ্রি বাসে উঠে ঘন্টাখানেক ঘোরাঘুরি এসে কোন এক এলআরটি স্টেশনে নেমে যাই। হাতে সময় থাকলে কিছু দূরে কোথাও যাবার চেষ্টা করি, না থাকলে খাবার কিনে ফিরে আসি ঘরে।
ঘরে এসে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ মোবাইলে ল্যাপটপে ইন্টারনেটিং, মুভি তারপর এক চোট ঘুম। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে খাবার খেয়ে নিই। মাঝেমাঝে বাড়িতে ফোন দিয়ে কথা বলতে হয়, নইলে আম্মার কান্নাকাটি শোনা লাগে। একমাত্র ছেলে হওয়ায় অনেক আবেগ। আগে চেষ্টা করতাম এইসব আবেগ পাশ কাটিয়ে রাখার, কিন্তু পরিবার অনেক বড় একটা ব্যাপার।
পরেরদিন একইভাবে শুরু হয়ে একইভাবে শেষ হয়ে যায়। ব্যতিক্রম হয় উইকএণ্ডের দিনগুলোতে। প্রায় সারাদিন ঘুমে কাটিয়ে দিই, ঘুমাতে বিরক্ত লাগলে আশেপাশে কোন বারে যাই, কিছু খাই, কিছু দেখি, কিছু পড়ি মাঝেমাঝে কিছু আঁকি।
আগে দিনগুলো যেভাবে কাটতোঃ
ঘুম ভাঙতো মোবাইলের এলার্মের শব্দে। আসলে সেটা ছিলো মোবাইল কল। কেউ একজন কল দিতো, "অ্যাই, এতো বেলা হইছে, এখন পর্যন্ত ঘুমাচ্ছ?"
- আজকেতো ক্লাস নাই আর বাইরে অনেক রোদ, প্লীজ এখন বের না হই।
- কোন কথা না, তুমি এক্ষণই উঠো, আমি তোমার জন্য রাস্তায় দাঁড়ায় আছি!
- শিট, আগে বলবা না, আসছি দাঁড়াও!
তড়িঘড়ি করে ব্রাশ করে, গোসল করে ছুটে যেতাম তার কাছে। দেরী হয়ে যেতো বলে পথিমধ্যে একটা গোলাপ কিনে লুকিয়ে ফেলতাম শার্টের মধ্যে। এরপর কিছুটা নাটকীয় কায়দায় গোলাপ বের করে তার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা। এরপর কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় সেটার জন্য সিদ্ধান্তে আসা। যদিও ঢাকা শহরে কোথাও ঘোরার জায়গা থাকতোনা, তবু আমরা এরমাঝেই ঘুরতাম নতুন কোন গলিতে হয়তো, অথবা নতুন কোন এলাকায় যেখানে আগে কখনও যাওয়া হয়নি। ঢাকা শহরের বায়ান্না গলি তেপান্ন বাজারের সব গলিতেই আমরা যেতে চাইতাম।
তারপর দুপুর হয়ে গেলে কোথাও খেয়ে নেয়া, খাওয়া নিয়ে ছিলো প্রচুর জল্পনা। নতুন কোন রেস্টুরেণ্ট খুললো কীনা তার খোঁজ নেয়া এবং সেখানে হাজির হওয়া। পুরান ঢাকার সব খাবারের দোকানে হামলা চালানো। দুপুরের পর রিক্সায় ঘোরাঘুরি। সবার অলক্ষ্যে চট করে তার গালে চুমু দিলে চোখ পাকিয়ে সে যখন রাগী মুখে তাকাতো তখন আমি হেসে দিতাম। বিকেলবেলা ক্লান্ত হয়ে গেলে টি এস সিতে এসে দুজন পিঠেপিঠি হেলান দিয়ে বসে বিশ্রাম নেয়া আর যত অবাস্তব স্বপ্নের কথা বলে রঙিন হওয়া।
এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দুজন দুজনের বাসার দিকে রওনা দেয়া। মাঝেমাঝে আমরা একটু রাত করতাম, যখন আরও বেশী সময় কাছে থাকার ইচ্ছে হতো। আমাদের প্রতিদিন দেখা হতো, প্রতিদিন ভালোবাসা বেড়ে যেতো। তাকে চমকে দেয়ার জন্য মাঝরাতে সাইকেল নিয়ে তার বাসার সামনে গিয়ে বেল বাজাতাম, সে জানালায় উঁকি দিয়ে দেখে চমকে যেতো। তারপর মধুর সব বকা, সকালে আমাদের ক্লাস আছে জলদি ঘুমানো লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি!
তখন জীবনটা ছিলো এমন রঙিন, ছিলো স্বপ্ন, গল্প আর কবিতা।
সামনের দিনগুলো যেভাবে কাটবেঃ
জানিনা!
তখন জীবনটা ছিলো এমন রঙিন, ছিলো স্বপ্ন, গল্প আর কবিতা।
সামনের দিনগুলো যেভাবে কাটবেঃ জানিনা!
ধন্যবাদ ভাই ছাইপাশ পড়ার জন্য
সামনের দিনগুলো নিয়ে একটা স্বাপ্নিক সিডিউল লেখেন
সামুর স্টার ব্লগার সোহানকে ওয়েলকাম
নিয়মিত লেখা চাই।
রুটিন সফল হোক।
পড়ে ভাল লাগলো.।
বাহ্ চমৎকার........ সামনের জীবন আরোও চমৎকার হোক......... শুভ কামনা ....
মন্তব্য করুন