স্বীকারোক্তি
মান্যবর,
অপরাধ নেবেন না,আমি এখন পুরোদস্তুর শহুরে মানুষ। গাঁওগেরাম আর পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির রং বহুকাল আগেই ভুলে গেছি। কোন এককালে আমার দাদাজান নিজ হাতেই কষতেন লাঙ্গল,আমার বাবাও করতেন,এটা আমার জন্য ঘেন্না বিশেষ!!বাজানের কোদাল হাতুড়ির ঠোকাঠুকি এ বোধকরি অপমানকর কথাই;
কেননা আমি এখন শহুরে আদলে গড়া অন্য মানুষ।
ছোট্টবেলায় নাটমন্দিরে যাতায়াত,দাদীর কোলে বসে শোনা রূপকথা,অথবা উদাসী বোষ্ঠমের দানে ভিজে যেত দুচোখের পাতা, বোষ্ঠমের বিরহে;
দয়া করে এসব কথা মনে করিয়ে দেবেন না,কেননা,বহুকাল আগেই ভুলে গেছি ওসব।
আমি এখন শহুরে আদলে গড়া অন্য মানুষ।
ভাবতেও চাই না ধানী জমির আল ধরে মায়ের পুঁটুলিতে বেঁধে দেওয়া পান্তা ভাত পৌঁছে দিয়েছি বাজানের হাতে কোনকালে। অথবা বাজানের ভাত খাওয়ার ফাঁকে ধরেছি লাঙ্গলের গুটি নিজ হাতেই। হাড়সিলে হাভাতে ছেলেমেয়েদের সাথে খেলেছি গোল্লাছুট,বৌচি,গেয়েছি পালাগান সেজেছি যাত্রার নট। অথবা বৌচি খেলতে খেলতে ভালোবেসে ফেলেছি পাশের বাসার কুসুমকেই। শ্রাবনের ভরা বর্ষায় একান্তেই কাছে এসেছি দুজন শাপলা তোলার ছলে জ্যোৎস্না রাতে ডিঙ্গি নায়। অথবা বুকে জড়িয়ে ধরে ভিজে হয়েছি একাকার বৃষ্টিতে। ‘বউ’ করব বলে দিয়েছি বারংবার প্রতিশ্রুতি,বিনিময়ে ভোগ করেছি শ্রেষ্ঠ ধন তার!
এসব তখন নিতান্তই কথার কথাই বোধ করি,কেননা,সে এখন নিশিপুরের মিঞাবাড়ির লক্ষী কূলবধূ।
আর আমি শহুরে আদলে গড়া অন্যরকমের এক মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডরে গো-বেচারা বলে তিরস্কারকারী সহ পাঠিনীর একান্ত বাধ্যগত ভদ্র স্বামী।
তাই দয়া করে পুরোনো কাসুন্দী ঘেঁটে আমাকে অপমানিত করবেন না।
কেননা,আমি ওসব স্বীকার করি না,পাছে কেউ কিছু বলে উপহাস করে।
অবলীলায় তাই অস্বীকার করি ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমিও ছিলাম।
৩০লাখ শহীদের হতে পারতাম আমিও একজন।
যদিও দেখেছি মাতৃভূমিকে ভালবেসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ভয়ঙ্কর সুন্দর দৃশ্য;
আমিও সারথি ছিলাম তার।
যদিও জানি,দুলাখ মা-বোনের ইজ্জতের মধ্যে আমার স্নেহের বোনও ছিল অথবা ছিল প্রেমিকা কুসুমও,তবুও স্বীকার করি না ওসব।
স্বীকার করি না কখনো,আমিও ফ্রন্টে ছিলাম দীঘ ন'মাস এই দুহাতে অস্ত্র ধরে লড়াই করেছি। কুসুমের জন্যই মৃত্যুকে করেছি সোনালী যৌবনের প্রতিশ্রুতিতে।
কি লাভ ওসব কথায়??
আমি শহুরে আদলে গড়া অন্যরকমের এক মানুষ।
ইদানিং বড় বড় বুলি আউড়িয়ে হয়ে গেছি নব্য রাজা। উচ্চ বিত্তের বাজারে ছুটন্ত ঘৌড় সওয়ারী এবং একে একে উপরে ওঠার সিড়ি যাচ্ছি টপকিয়ে,তাই কলমটাকে এদিক ওদিকে চালিয়ে দিচ্ছি নির্দ্বিধায়।
কেননা এখন বুঝেছি ক্ষমতা টাকার কাছে প্রেম বড় বেশী বেমানান। যুদ্ধজয়ী সৈনিক তাই এখন খোঁজে না তার প্রেমিকাকে। কারণ ক্ষমতাবানদের থাকতে নেই চক্ষুলজ্জা। তাই বাজানের ধানী জমির বদলে কিনেছি বিরাস(শিক্ষা)। শুনেছি সে বাজান নাকি গত হয়েছেন বহুদিন,মা কলেরার কল্যাণে কবরে আছেন নিশ্চিন্তে।
অতএব এও বুঝেছি আসলে এ গেঁয়ো দেশে জন্ম হলেও,আমি বাঙ্গালী নই। তাই সুইস ব্যাঙ্কে টাকা রাখব বলে ভাবছি।
এবং নিউইর্য়ক বা ক্যালিফোর্নিয়ায় বাড়ী করব বলে ঠিক করেছি।
মান্যবর,
এবার আপনিই বলুন আমি কি খুব বেশী অন্যায় করেছি?
অদ্ভুত! দারুণ টানলো লেখাটা, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
যতিচিহ্নের পরে স্পেস না দিলে বড় চোখে লাগে
দাঁড়ি বোধহয় সমস্যা করতেসিলো ? ঠিক করে দিয়েছি ।
নুশেরাবু লেখাটা পড়লে বলে অনেক থ্যাংকস জেনো আমার !
নাট্যমন্দির বোধহয় নাটমন্দির হবে, অবশ্য নিশ্চিত নই
আমিও নিশ্চিত নই
তবু ঠিক করলাম 
পোস্টটা 'আমরা ব্ন্ধু'র নীতিমালার সাথে যায় না।
ভাইজান, মডু আসার আগেই সরাইতে অনুরোধ জানাই। মডু পোস্ট সরাইলে কষ্ট লাগে।
বুঝিনি !
http://www.amrabondhu.com/nitimala
হুম , ঠিক আছে ।
মন্তব্য করুন