বন্ধুদের সাথে আড্ডা
স্কুল জীবনটা থাকে সোনায় মোড়ানো। পেরিয়ে যাওয়ার সময় সেটা বোঝা যায়না। পেরিয়ে যাওয়ারও অনেক বছর পর পেছনে ফিরে তাকালে বোঝা যায়। যাহোক এতোকথার অর্থ হলো আমি সবথেকে বেশী মিস করি আমার স্কুলজীবনকে। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির মতো ছিলোনা, তবু আমার স্কুলজীবন ছিলো আমার মতো করে অদ্ভুত মায়া আর আকর্ষণে ভরা। দুপুর ১২টা বাজলেই আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য অস্থির হতাম। জানি ক্লাসে পড়া বলতে গেলে হয়তো পারবোনা, প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে যাওয়া যাবেনা, তবু যেতামই। গিয়ে দেখতাম অল্প কয়েকজন বাদে কেউ আসেনি, তখন মন খারাপ হতো। কেন এলোনা? এলে কতো সুন্দর আড্ডা দেয়া যেত, কত কথা বলা যেত!
সেই স্কুলের সাথে বন্ধন ছিন্ন হয়েছে ১২ বছর। আর সেই বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছিলো। আমার খুব মন খারাপ লাগতো স্কুলের কেউ আমাকে মনে রাখেনি! কেউ আমাকে খোঁজে না! ফেসবুকে নাকি কতোজন কতো পুরোনো বন্ধু খুঁজে পায় আর আমাকে কেউ পেলোনা! যদিও বা আমি খুঁজে পাই এড পাঠালে দিনের পর দিন ঝুলে থাকি, মেসেজ করলে আদার্স বক্সে পড়ে থাকে, কেউ খুলেও দেখেনা!
পরিবর্তনটা হলো কয়েকমাস আগেই। হঠাৎ করে ফারাবী নক দিলো ফেসবুকে, "অই হালা, তুই সোহান না? আমাগো পাগলা সোহান না? হারামজাদা এইটা তোর আইডি?"
আমি থতমত খেয়ে গেলাম, স্কুলের পাগলা সোহান ডাকটা স্কুল বন্ধু ছাড়া আর কারও জানার কথা না ঘুনাক্ষরেও! আমি প্রোফাইলে গিয়ে ছবি দেখেই চিনে ফেললাম, আরে এযে ফারাবী! ও মাই গড! ফারাবী আমারে মনে রাখছে! কিন্তু আমিতো ফারাবীদের সার্কেলে বেশীদিন ছিলামনা, ও কীভাবে আমারে মনে রাখছে! আমি যাদের সাথে চলতাম তাদের বেশীরভাগই আমারে চিনেনা, আর ও মনে রাখছে, তাও ছবি দেখেই চিনে ফেলছে!
আমি একরাশ বিস্ময় নিয়ে ফারাবীকে রিপ্লাই দিলাম, তারপর রাতভর ফারাবীর সাথে ফেসবুকে আড্ডা! ফারাবী জোর করে বলছে দেশে গেলে যেন ওকে জানাই, কোন লুকোছাপা না করি, আমাকে সহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে নাকি ওরা প্রায়ই কথা বলে কোথায় হারায় গেলো, কোন খোঁজ নাই কেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
স্কুলের বন্ধু বলে কথা, আমি প্রচণ্ড আবেগী হয়ে গেছিলাম। দেশে এসে জানাতে দেরী করি নাই ফারাবীকে। ফারাবী আড্ডার আয়োজন করলো। গতকাল গেছিলাম সেই আড্ডায়। ১০/১২ জন বন্ধুর সাথে দেখায় আমি মাত্র ৩জনকে চিনতে পারছি। আর বাকীদেরকে চিনতে পারছি এক কথায় দুই কথায়, খুব লজ্জা লাগতেছিলো। বলে ফেলছি, "স্যরি দোস্ত চিনতে পারি নাইরে, মাফ করে দিস।" জবাব এলো, "মাফ কিরে, তোরেতো এখন আমরা পিটানি দিমু।"
সবচেয়ে মজা হলো যখন অভি এসে জড়ায় ধরলো। বললো, "মামা, তুই আমারে ভুইলা গেছস? সেই যে কোচিং থেকে আসার সময় বৃষ্টি হইলো, তুই আমি ভিজ্যা গেলাম, তোরে আমার বাসায় নিয়া গেলাম, তুই আমার শার্ট পইড়া আইলি?"
আমার মনে পড়লো, "নারে দোস্ত, ভুলি নাই ভুলি নাই, কিন্তু তুই এতো ফুইলা গেছস ক্যান?" পাশ থেকে বিপ্লব উত্তর, "হারামজাদা বৃষ্টির মধ্যে ওর বাসায় গিয়া কি করছিলি তা কি এখন আমাদের বুঝতে বাকী আছে নাকিরে? এরলিগাতো অভির পেট ফুইলা গেছে।"
অভিতো ক্ষেইপা গেলো।
এরপর এলো ইয়াসিন। ইয়াসিনকে আমার চিনতে ভুল হয় নাই। ফারাবী কইলো, "ওরেতো মনে রাখবাই। আমরা কি বুঝি না? ওইতো ছিলো তোর কমলাপুরের সিডি সাপ্লাইয়ার।"
মাঝে এলো ড্রিন। ড্রিনকে আমার সত্যি মনে নাই। ড্রিন শুনে কষ্ট পেলো। বললো, "কস কী! আমি ছিলাম এইটের ক্লাস ক্যাপ্টেন। তুই নুরা পাগলা স্যারের হাত থেকে বাঁচতে আমারে যে নাচতে নাচতে তেল মারতি ভুইলা গেছস? কষ্ট পাইলাম দোস্ত!" আমি বুকে টেনে নিসি দ্বিধা ছাড়াই। কিন্তু ড্রিনকে আমার এখনও মনে পড়েনি।
আড্ডায় ছোটবেলার সব কেলেঙ্কারি ফাঁস হইতে লাগলো সবার। গভীররাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে এলাম। বছরের শেষে এসে মন ভরে গেছে। জীবনটা যদি সবসময় এমন হতো এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলিনি। কারণ জানি জীবন এমন হলে টুকরো টুকরো অসাধারণ মুহুর্তগুলো জীবনে আসতোনা।
পাগলা সোহান এখন সামুর রাজসোহান, ফুটবল ফ্রিকের রাইসুল সোহান!
সেই হইছে!
মন্তব্য করুন