জাকির তালুকদারের মুসলমান দর্শন-মুসলমানমঙ্গল উপন্যাসের পাঠ থেকে।
একটা উপন্যাসের নাম মুসলমানমঙ্গল-লেখক জাকির তালুকদার। আগ্রহী হইলাম নাম শুইনা। জাকির তালুকদারের আলাপ সালাপ কিছু শোনা আছে, লেখাপত্রও পড়ছি কিছু। তাছাড়া মুসলমানমঙ্গল নামটা উপন্যাসের নাম হিসেবে দারুন পছন্দ হইছে। বার কয়েক কেনার চেষ্টা কইরাও পারলাম না। এইবারের বই মেলা থেকে কিনলাম। পড়তে শুরু করলাম, আর প্রচন্ড রকম বিরক্ত হইলাম। প্রথমত গ্রন্থখানাকে উপন্যাস বলিবার কোন সুযোগ আমি পাইলাম না। শুরুতেই যখন পড়তেছিলাম, ইউসুফ যখন তার বোনের বাড়ি গেল সেই বর্ণনাটুকু পড়তে পড়তে আবদুল্লাহ উপন্যাসের কথা মনে হইতেছিল। এই যুগের লেখক হয়েও জাকির সাহেব আব্দুল্লাহর মতো একটা উপন্যাস লিখবেন কেন। কারণ বুঝতে পারলাম ভেতরে গিয়া। আব্দুল্লাহ মুসলমান, মুসলমান না হইলে- হিন্দু হইলে, বৌদ্ধ হইলে, অথবা নাস্তিক হইলে কি আর মুসলমান ধর্ম নিয়া চিন্তা ভাবনা করা যায় । যায় না, মুসলমানদের নিয়া চিন্তা করতে হইলে প্রথম শর্ত মুসলমান হইতে হইবে। জাকির তালুকদার সেই শর্ত পালন করিলেন। এই বিষয়ে আমার দুইটা ঘটনা মনে পড়িল- প্রথমত, পাকিরা আমাদের পুরুষদের মুসলমানিত্ব প্রমাণ করিবার একটা উপায় খুঁজিয়া বাহির করছিল। যা নিশ্চয় উল্লেখ করার প্রয়োজন নাই। আর দ্বিতীয়ত লালনের গানটা মনে পড়ল- সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারীর তবে কি হয় বিধান।
জাকির তালুকদার এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষরে আড়ালে রাইখা মুসলমানদের মুক্তির পথ অন্বেষণ করছেন। পুরা গ্রন্থ জুইড়া মুসলমানদের ইতিহাস। সেই মহানবীর সময় বা তারো আগে ইব্রাহিমের আমল। মহানবীর মৃত্যুর পরের খলিফাদের শাসন, পারিবারিক অবস্থা। মহানবীর বিবাহ, যুদ্ধ, বুদ্ধিমত্তা সমাজ সংস্কার। সব মিলিয়ে ইসলাম ধর্মের ইতিহাস জানতে চায় এমন কোন লোকের জন্য এই গ্রন্থ পাঠ লাভজনক হতে পারে। অন্তত এই ধর্ম সম্পর্কে জানা বুঝার পরিমাণ বাড়বে। আমাদের দেশে খেলাফত আন্দোলন, মনস্তাত্ত্বিকভাবে তুরস্কের প্রভাব এই দেশের মুসলমানদের ওপর ব্রিটিশদের শাসনামলে মুসলমান বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, এমন অনেক বিষয় তিনি এই উপন্যাসে হাজির করছেন। কিন্তু জাকির তালুকদার যেখানে গিয়া সমস্যায় পড়ছেন, এবং যার সমাধান বোধহয় তার কাছে নাই বইলা তিনি কোন কিছু উল্লেখও করেন নাই। তা হইল পৃথীবিতে ইসলামই সম্ভবত সবচাইতে পরিবর্তীত ধর্ম। এর পরিবর্তন এতো বিপুল পরিমাণে ঘটছে যে আকর ধর্ম আর খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে কি না সন্দেহ। অন্যদেশের আলাপ বাদ। আমাদের দেশে সুফিবাদ এসে ইসলামের কতো পরিমাণ অদল বদল ঘটাইলো , এর সাথে মিশলো স্থানীয় সংস্কৃতি, হিন্দু বৌদ্ধ মতবাদ। মুসলমানদের শাসন বিষয়েও প্রায় নিশ্চুপ থাকলেন জাকির সাহেব। এই প্রসঙ্গে আহমদ শরীফের কিছু আলাপ উল্লেখ করা যাইতে পারে- `আট শতকের ভারতে মুসলিমদের উপস্থিতিতে জাত-জন্ম-বর্ণ-নিরপেক্ষ ও ভ্রাতৃত্ব ভিত্তিক ইসলামে মানুষের শাস্ত্রে, সমাজে, জীবিকা ক্ষেত্রে কর্মে স্বাধিকারের এবং যোগ্যতা ও প্রয়োজনানুসারে সমানাধিকারের স্বীকৃতি নিম্নবর্ণের ও নিম্নবর্গের মানুষের মনে জাগিয়েছিল দলিত-বঞ্চিতের ক্ষোভ, আর আত্মপ্রত্যয় ও যোগ্যতা অনুসারে মুসলিম জীবনে মুক্তির ও জীবনের অশেষ সম্ভাবনার আশ্বাস। ' ফলে সেই সময়ে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। কিন্তু সেই ইসলামও আসলে আরবদের ইসলাম ছিল না। ছিল এই ভূখন্ডের ইসলাম। সেই আলাপ এখানে আর না করি। কিন্তু ধর্ম যে ইতিহাসেও রাজনীতি নিরপেক্ষ হয়ে থাকে নাই তা জাকির তালুকদার বুঝতে পারেন নি। ফলে এই বিষয়ক আলোচনাও তার গ্রন্থে নাই।
যেমন, ইউসুফ এবং তার বন্ধুরা, সবাই মুসলমান, ইসলাম বিরোধীতার কোন সুযোগই জাকির তালুকদার দিতে চান না। বোনের শ্বশুর বাড়িতে যে ঈমামের সাথে তার খাতির হয় (নামটা ভুলে গেছি) এবং যে সকল আলাপ চলে। তা সামাজিক জলের ওপর ভাসমান ময়লা আবর্জনা নিয়েই। এর গভীরে প্রবেশের আগ্রহ লেখক এই গ্রন্থে দেখাইতে পারেন নাই। তিনি বরংচ একজন হিন্দুকে হাজির করেন উদ্ভট চেহারায়, একজন নারী হিন্দুকে হাজির করেন ভিখারিণী হিসেবে। একজন যাজককে হাজির করেন ভদ্র এবং মানবহিতৈষী হিসাবে। আহমদ ছফাকে হাজির করেছেন, হাজির করেছেন যতিন সরকারকে। যতিন সরকার কম্যুনিষ্ট এইটা উল্লেখ করেন নাই। তার বউ পাকিদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে মুসলমান হয়েছিলন। এর রাজনৈতিক-সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক আলাপ শাক দিয়া ঢাকা দিছেন লেখক। আর এর দোষ দিলেন মুসলমানদের। গ্রন্থখানায় আছেন একজন মার্কিন তরুণী- লিসবেথ। এই চরিত্রের অংশগ্রহণে বুঝতে পারা যায় জাকির তালুকদার ইসলাম-মার্কিণ বানানো দ্বৈরথে আসিন হয়ে আছেন। মার্কিণ মুলুকের সাথে একটা সুসম্পর্কের আকাঙ্ক্ষায় তার ব্যাকুলতা মোটাদাগের অনুর্বর পথ রচনা করে। যেই পথও আসলে এই মুসলমানমঙ্গল গ্রন্থখানি ছাড়িয়ে বাহিরিয়া আসিবার কোন সম্ভাবনা রাখে না। বাইরের মুসলমানকে এতোভাবে পাঞ্জাবি, দাড়ি মুক্ত করিবার প্রচেষ্টা দেখিয়া ব্যথিত হইতে হয়। ভেতরের মানুষটা তবে কই যাইবে। জাকির সাহেব বলিবেন কী।
মন বিভ্রান্ত হলেই কেবল কেউ ঘরের ধন বাইরে খুঁজে বেড়ায়। জাকির সাহেব এহেন কোন সমস্যায় পতিত হয়েছেন বোধ করি। আমাদের দেশের ইসলাম আরবে খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টায় ফলাফর কি। ফলাফল নিজেই দেখিয়ে দিয়েছেন। নিজের পাড়ার এক রাজনৈতিক মোল্লার কাছে হেনস্তা হবার মধ্য দিয়েই প্রন্থাখানা শেষ করেছেন জাকির সাহেব। এই গ্রন্থকে উপন্যাস দাবি করার কারণ কি এই যে এখানে একটা কাহীনি আছে। কিন্তু সেই কাহীনির দূর্বলতা এতো বিরক্তির এবং পরিমাণে তা এতো অপ্রতুল যে পাঠকের পক্ষে ইসলামের ইতিহাস অভিধা ছাড়া অন্য কোন নামে এই গ্রন্থকে পরিচিত করানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।
(মাস তিনেক আগে পড়া বইয়ের সমালোচনা লেখাটা দুষ্কর। তাছাড়া এখন বইটাও হাতে নাই। ফলে মনে মনে যা ছিল লিখে দিলাম। পাঠকের আগ্রহ থাকিলে কোমর বেঁধে নামা যাবে।)





রিভিউ পড়লাম। আসল বই না পইড়া কেমনে কমেন্ট করি।
তাও ঠিক, আসল বই না পড়লে সমালোচনাও বোঝা যাবে না।
ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
হুম। আধখানা ধারণা করলাম, বাকীখানা বইটি পড়লে বুঝতে পারতাম, সেটি সংঘঠিত হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে তাই লেখকের বই আর শুভ্রের ক্রিটিককে নিয়ে কোন মন্তব্য করা গেলনা
আফচুস খাইতে টক। কি আর করা। দেখা দিলেন তাতেই আমি ধন্য।
বালা আছেন্নি।
আফচুস খাইতাম ক্যান? তুমি গিফটো কইরা দিলে টক মিষ্টি হৈয়া যাইবে
বালা তো আছি, তুমি যে আকাশের চান হৈয়া গেছ সেইটার কী হৈবে?
নতুন সাইট নিয়া মনে হয় বিজি আছে

টাইপোর জন্য পঠনে খানিকটা বিঘ্ন সৃষ্টি হল ,বোধহয় খানিকটা তাড়ার ওপর ছিলেন ।
কয়দিন আগেই সচলে এ বইয়ের ওপরই একটা আলোচনা পড়েছিলাম ,সেখানে বোধহয় আপনার মন্তব্য ছিল ।বইটা অতি শীঘ্রই পড়ে ফেলার আশা রাখি।
টাইপো তো কিছু ঠিক করলাম-আরো কিছু আছে মনে হয়। দৌড়ের উপরে না লেখলে আর লেখাই হয় না। এই লেখাটা আরো আগে লিখতে পারলে কতোকিছু লেখা যাইতো।
সচলের আলোচনাটা একঘেয়ে লাগছে। আসলে ওইটা একটা প্রতিক্রিয়া। আমি জীবনে প্রথম এই উপন্যাস উপলেক্ষ্য ওই ব্লগে কমেন্ট করলাম। কিন্তু অতিথি হইতে কেমন অস্বস্তি লাগে বলে সেখানে আর আলোচনায় অংশ নেই নাই।
ভালো থাকুন।
আগ্রহ প্রকাশ করে গেলাম
থ্যাঙ্কু।
আমার কমেন্ট গেলো কই আমি তো প্রথমেই কমেন্ট করছিলাম
আমি কোন কমেন্ট মুছি নাই। ঈমানে কইলাম।
আপনে কি মডু ?
ওহ এই ব্লগে ব্লগাররা কমেন্ট মুছতে পারে না।
আমি জানতাম না। তাইলে কমেন্ট কই গেল।
আমিও জানতে চাই।
মডুরা জবাব চাই.....
যাক....
বিরক্ত নিয়াই বইটা পড়ার ইচ্ছা আছে.....
এমন একটা বই নিয়ে রিভিউ দিলেন পড়ার সম্ভাবনা খুব কম। তারউপর রিভিউ'র ফলে বইয়ে যা দশা মনে হল, তাতে পড়ার আগ্রহও কমে গেল।

তবে, মুসলমার ইতিহাস বিষয়ে কখনো পড়ার হইলে, তখন বইটা নিশ্চিত জোগাড় করে পড়ে ফেলব
তোমারে নিয়তো বিপদ.... যে বইয়ের রিভিউ লিখি তাই তুমি পড়ো নাই। বুঝলাম না।
আমিও মুক্তদার সাথে একমত। কিন্তু রিভিউ পড়ে যা বুঝলাম তাতে মুসলমানদের সত্যি ইতিহাসও এ বইয়ে পাওয়া যাবে না, বায়াসড ইতিহাস পাওয়া যাবে
বইটা পড়বার কোনই সম্ভাবনা নাই বলেই মনে হচ্ছে
:Tongue:
কাহীনি = কাহিনী ....শুভেচ্ছা জানবেন।
হা হা ........
শুভেচ্ছা নিলাম।
অন্য এক রিভিউতে আপনার কমেন্ট পড়ছিলাম ।
পড়ার সুযোগ পেলে পড়ে ফেলব
ধন্যবাদ।
রিভিউ পড়লাম।
কোমর বেঁধে নামেন। আমরা আছি।
রিভিউ পৈড়া তো বৈডা আর পড়তে মন্চাইতাছে না---
বইটার উল্লেখযোগ্য অংশগুলা দিতে পারেন......
''এই বিষয়ে আমার দুইটা ঘটনা মনে পড়িল- প্রথমত, পাকিরা আমাদের পুরুষদের মুসলমানিত্ব প্রমাণ করিবার একটা উপায় খুঁজিয়া বাহির করছিল। যা নিশ্চয় উল্লেখ করার প্রয়োজন নাই। আর দ্বিতীয়ত লালনের গানটা মনে পড়ল- সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারীর তবে কি হয় বিধান। ''
সুন্নত দিলে হয় মুসলমান এমন কথা কোথায় পেলেন?
মুসলমান হওয়ার জন্য আবশ্যক হল ,
এক আল্লাহকে বিশ্বাস এবং হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হিসেবে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা, এবং তদানুযায়ী আমল করা।
বি.দ্রঃ খৎনা করা সুন্নত। ( খৎনা করা পাকিদের আবিষ্কার নয়। এ ধরণের মন্তব্য করা চরম ধৃষ্টতা। খৎনার উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা আজ বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে প্রমাণিত।)
মন্তব্য করুন