কিছুই দিতে পারিনি
অনেকেই বলে সময় নষ্ট না করে কিছু একটা কর। একদিন যখন নিজের দুরবস্থার কথা বলে অন্যদের বিরক্ত করছিলাম তখন একজন বলল, কালকে সন্ধ্যা হবার আগে একপাতা হতাশা লিখে ফেলো।
সন্ধ্যার মধ্যে লেখা শেষ হয় নাই। এখন মাঝরাতে এসে লিখতে বসে মনে হচ্ছে লিখে দুঃখ বা হতাশা প্রকাশ করাটা বেশ কঠিন, তাছাড়া দিনে রাতে কত হতাশা জাগে মনে, সেগুলো সব এক পৃষ্ঠায় ধরার কথা নয়। তবুও হতাশা বলে কোনও একটা কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে বেড়িয়েছি সন্ধ্যার পর থেকে।
সবচেয়ে বড় হতাশা হল যা ভাবছি তার কিছুই করা হচ্ছে না। কি করা দরকার বুঝতে পারছি কিন্তু কাজে হাত দেয়া হচ্ছে না। অথবা আমি করে উঠতে পারছি না। যা ভাবি তা আসলেই করতে পারবো কিনা তা নিয়েও মনের ভিতর প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
বহুদিন ধরে ভাবছি- আলসেমিকে আর প্রশ্রয় দেব না। কিন্তু ভাবাই হচ্ছে শুধু। নাহ, নিজেকে বদলানোর প্রক্রিয়াটা শুরু করতেই হবে। এছাড়া আমার আরও নিয়ম মেনে জীবন যাপন করা উচিত। বিশেষ করে ঘুম, খাওয়া, লেখাপড়া এসবে নিয়মিত হওয়া দরকার।
বেলা বয়ে যাচ্ছে, আমার পড়াও হচ্ছে না লেখাও হচ্ছে না। প্রতিরাতেই তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করার কথা ভাবি। যাতে সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা যায়। যদি প্রতিদিন ভোঁরে উঠতে পারি তবে দিন ভালো কাটবে, অনেক কাজ করে ফেলা যাবে- সকালে উঠে প্রথমে লেখা পড়া, তারপর স্নানাহার, তারপর কাজ আর কাজ শেষে ফিরে আড্ডা আর রঙ মাখা সব হবে। কিন্ত ওই যে- ভাবাই হচ্ছে শুধু!
অনেজ কাজও জমে আছে। কম্পিউটারের রোগটা সারাতে হবে। যন্ত্রটির দশাও আমার মত শ্লথ। অনেকের সাথে দেখা হওয়া দরকার। পুরনো বন্ধু, নতুন বন্ধু।
আমার বয়সী মানুষজন সব কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। সবার হাতে বড় পর্দার মোবাইল। কানে হেডফোন। সারাক্ষণ সবাই ফোনের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশের দিকে তাকানোর বা বিকেলের পাখিদের ডাক শোনার সময় এদের নেই। এছাড়া মানুষ এখনো মানুষে মানুষে বিভেদ করে। এক ধরনের মানুষ এখনো বলে পহেলা বৈশাখ হিন্দুদের অনুষ্ঠান। সেদিন একজন আমাকে বলছিলেন, এসব অপ্রয়োজনীয় সংস্কৃতির দরকার নাই। দিন দিন মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি সভ্যতা বাড়ার কথা, কিন্তু মনে হচ্ছে উল্টোটা হচ্ছে।
এই শহরের পায়ে চলার পথঘাটও ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় গাড়িগুলো অকারণে হর্ন দেয়। ফুটপাতে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মানুষজন নিজেদের পথ করে নেয়। মানুষের সমুদ্রে হাঁটার সময় চোখগুলোর দিকে চোখ পড়ে যায়। রিকশার ভিতরে কানে হেডফোন গুজে থাকা মেয়েটার উচ্ছ্বল চোখ, পতাকা লাগানো গাড়ীর ভিতরে বসে থাকা আমলার তাচ্ছিল্যভরা চোখ, ময়লা জামা পরা ভিখারীর করুন চোখ আমাকে দেখে কি ভাবে কে জানে। আমি কত জনার ধার ঘেঁষার চেষ্টা করি, কিন্তু আমার ধার কেউ ঘেঁষে না।
মাঝে মাঝে ভাবি নিঃসঙ্গতা বা একাকীত্বের কারনে মানুষ হতাশ হয় কিনা। সেদিন এক বড় ভাই বলছিলেন, তোরাতো বই পড়িস না, প্রেমও করিস না, কবিতা লিখিস না, গানও গাস না। তোরা আজকাল করিস টা কি? আমি জানি, আলসেমি করে আর ভাবনা চিন্তার জালে জড়িয়ে থেকেই বেশির ভাগ সময় নষ্ট হচ্ছে। যা করা হয়েছে বা যা করছি ইদানিং তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা যায় না।
অথচ কত কি করার কথা ছিল আমার, কত কি জানার ছিলো, কত মাটিতে বীজ বোনার কথা ছিলো। অগোছালো কথাগুলোকে গোছানোর কথা ছিলো। এতো বছরেরও কিছুই করা হয় নাই। সময়গুলো তো দেখতে দেখতে আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটা গান গাই - যত দূরে যাবে বন্ধু, একই যন্ত্রণা পাবে। একই ব্যাথা ডেকে যাবে। নিভু নিভু আলো যতবার জ্বালো, ঝড়ো হাওয়া লেগে তার শিখা নিভে যাবে। প্রিয় শিল্পীর মত আমারও হতাশাগ্রস্ত হয়ে যেতে ইচ্ছা করে প্রায়ই।
এরকম লেখা ভালো লাগে!
আমি অবশ্য পোস্ট করার সময় সংকোচ করেছিলাম, কেননা এক জনের হতাশা তো আরেকজনের ভালো নাও লাগেতে পারে। আপনার ভাল্লাগসে জেনে স্বস্তি লাগতেসে!
কারো চিন্তা ভাবনার দুনিয়ায় উঁকি দিতে পারলে ভালো লাগে বেশ। তবে লেখাটা হুট করেই শেষ না হয়ে গেলে আরো ভালো লাগতো।
পড়তে থাকুন, লিখতে থাকুন। ভালো থাকুন।
নিজের ভাবনা একেবারে নগ্ন ভাবে উপস্থাপন করা কঠিন কাজ। আমিও পারি নাই। তারপরও আপনার মন্তব্য পড়ে লেখাটা আরেকটু লম্বা করলাম। ধন্যবাদ।
হতাশা সকলের জীবনেই আছে। তবে আমার মনে হয় পৃথিবীর সকল রোগের চেয়ে বড় রোগ হতাশা। এই ব্যাধি মানুষ্কে প্রচ্ছন্ন ভাবে কুড়ে কুড়ে খায় এবং একেবারেই কর্মহীন করে নিঃশেষ করে দেয়। তাই ঝেড়ে ফেলুন হতাশা, তাকান আপনার চেয়ে যারা দুঃখে কষ্টে আছে,আপন কাজটুকু করে যান, উষার আলো ফুটে আপনাকে দেবে একটি সুন্দর সকাল। আগামী কাল নব বর্ষ। সকলকে আগাম শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ। নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্যও।
লেখার উপাদান হিসাবে হতাশা ভালো, জীবনের জন্য মোটেও নয়।
এ ব্যাপারে আমিও একমত।
সাবলীল আর সততার সাথে লেখা ---- ভাল লেগেছে
মন্তব্য করুন