অন্য সব অসুখী শিরোনামদের মতো এটাকেও একটা যাচ্ছেতাই বানালাম
সকাল বেলায় ক্লাসটা করেই হাঁটা দিলাম সেন্ট জোসেফ হাসপাতালের পথে। গিয়ে দেখি সেখানেও স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ। মেইনগেইট বন্ধ করে দিয়ে লিখে রেখেছে, কলিংবেল চাপুন। কলিং বেলের লাউডস্পিকার থেকে কথা ভেসে এলো, আমি বললাম, আমার পায়ে সমস্যা, ডাক্তারের কাছে যেতে চাই। আমি কেন জানি হাসপাতালে গেলেই ওরা বলে হাউস ডাক্তারের কাছে যেতে। আমি বল্লাম, আমার হাউস ডাক্তার নাই, দয়া করে কোনো একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে দিন। মহিলা বললেন, বিকাল চারটায় ইমারজেন্সি গেটে আসবেন।
আমি বাসায় ফিরে কফি আর মিউজিক সহকারে আরও একটু লেখাপড়া, দুপুর বেলায় লাঞ্চ এবং আরও একটি অনলাইন লেকচার অ্যাটেন্ড করে বৈকাল বেলায় আবার সেই পথে। আমার মুখে মাস্ক নেই দেখে ইমারজেন্সি গেটের মহিলা শুরুতেই আমাকে একটা মাস্ক বাড়িয়ে দিয়ে আমার কানের ভিতর তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রটার সুচালো আগাটা ঢুকিয়ে দিলো।
যাহোক ডাক্তার সাহেবকে কইলাম, আমার পায়ে ঝিঁঝিঁ। অন্তত সেইটা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। আরও বললাম যে জগিং করতে গিয়ে এইটা হইসে গত সপ্তায়। উনি জিগ্যেস করলেন কত জগিং করছি। কইলাম, তিন দিন রোজ একঘণ্টা, তার পরের তিনদিন রোজ আধা ঘণ্টা, তারপর এই সমস্যা শুরু হবার পর থেকে আর জগিং করি নাই। উনি অতঃপর জিগালেন, কোন ধরণের জুতো পরে জগিং করি। বুক ফুলিয়ে ৬৫ ইউরোর নাইকি জুতোর দিকে আঙুল তাক করে বললাম, এই জুতোই। ডাক্তার সাহেব বলেন, এইগুলো দেখতে ভালো হলেও এসব আসলে স্পোর্টস শু না। বেশ ভালো কথা, সব দোষ তাহলে জুতোর।
এখন ডাক্তার বলেন, অরথোপেডিকের কাছে যাইতে। আর আপাতত জগিং না করতে। আমি বিদায় নিলাম। আর ছোট এই শহরটার পথে হাঁটা দিলাম আবার। অরথোপেডিক চেম্বারে গিয়ে দেখি ওরা আজকের মত দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। যা হোক, একটু কেনা কাটা করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কোনো দোকানেই কাচা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে না আজকাল। সেদিনের মত আজও এশিয়ান দোকানের মহিলা কইলো, নো ফ্লাইট, নো কাঁচা মরিচ। কিন্তু তার পরের দোকানটায় কিছু প্রায় শুকিয়ে যাওয়া কাঁচা মরিচ পাওয়া গেলো। সেখান থেকে বেঁছে বুছে কিছু মরিচ পলিথিনগত করলাম। এইসব দোকানের সমস্যা হল এদের জিনিস পত্রের গায় দাম ঠিক ঠাক মত লেখা থাকে না।
আমি জিগ্যেস করলাম, ডিমের দাম কত। দুই দোকানদার একটু আলাপ করে সিদ্ধান্তে পোউছালো, একটা ডিমের দাম ৩০ সেন্ট। আমি কইলাম, একটু বেশিই দাম। শুনে কম বয়সী মেয়েটা বলে, একটা ডিমের ভিতর দুইটা ডিম। আমি শুরুতে বুঝলাম না ওর কথার মানে, তারপর ও গুগল করে দেখালো, একটা ডিমে কি করে দুইটা কুসুম থাকতে পারে। আমি একটু অবাক, তখন ও জিগায় আমি কোন দেশি লোক। আমি কইলাম বাংলাদেশে এইসব ডাবল ডিমের কাহিনী নাই। ও বলে যে তোমার মা কে জিগাও। আমি তাও বললাম, না না এইসব নাই দেশে। কি অদ্ভুত, মা কি আর আমার চেয়ে বেশি জানে নাকি!
আমি ঝুঁকি নিয়ে কিনলাম কিছু ডাবল ডিম। ওই দোকানে একটু চক্কর দিতে গিয়ে দেখলাম সরিষার তৈল, দেখে আমি খুবই অবাক, একই সাথে যারপরনাই পুলকিত। এই পোড়া শহরে এই বস্তু নাই বলেই জানতাম। ওরা আমাকে জিগ্যেস করলো এই তেল দিয়ে কি করি। আমি বললাম, খাই। তখন সে বলল, কোন এক পাকিস্তানির কথা শুনে সে মাথায় সরিষার তেল দিছে আর এতে নাকি তার অনেক চুলে পড়ে গেছে। জিগাইলো, ইন্ডিয়ানদের সুন্দর চুলের রহস্য কি। আমি বললাম, খালি নারকেলের তেল লাগাবা।
যাই হোক, কিনলাম এক মুঠ কাঁচা মরিচ, দুই ক্যান মরোক্কান সার্ডিন, ২৫০ মিলিলিটার সরিষার তেল, এক কেজি আঙ্গুর আর ছয়টা ডিম। তাতেই সাড়ে আট ইউরো! আমি কইলাম, কেমনে কি! তখন মেয়ে দেখায় দিলো কিসের কত দাম। আমি তাও স্লিপটার দিয়ে তাকিয়ে হিসেব করতে লাগলাম, কিন্তু এইসব দোকানের এই এক জ্বালা, কোনটা কত গ্রাম কিচ্ছু লেখা থাকে না আর যে সবজিই কিনি না কেন, প্রিন্ট আউটে লেখা থাকে শুধু সবজি। নাম ধাম কিচ্ছু নেই। আমারে দেখে ওরা কইলো, একটা চেয়ার এনে দেই, রিলাক্সে বসে হিসাব মিলাও? কাবুলিওয়ালার দেশের মেয়েটার রসিক মনোভাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে আমি আবার পা বাড়ালাম পৃথিবীর পথে।
মন্তব্য করুন