সন্তভাবনা
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের যে কয়টা গল্প বার বার মনে হয় তার মধ্যে "সন্ত" (The Saint) অন্যতম। গল্পটি কলম্বিয়ার এক গন্ডগ্রাম টলিমা থেকে আসা এক পিতা-মারগারিতো দুয়ার্তের- দাবীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে; যে তার কন্যার শবদেহ নিয়ে ২২ বছর ঘুরে বেড়ায় ভ্যাটিকানের পথে পথে, দাবি একটাই তার কন্যাকে সন্ত মনোনীত করা হোক।
লেখকের সাথে প্রথম দেখায় মার্গারিতো তাকে জানায় যে তাঁর কন্যার মৃত্যুর ১২ বছর পরে যখন মিউনিসিপাল কর্পোরেশন পুরানো কবরস্থানের জায়গাটিকে বাঁধের জন্য মনোনয়ন করে তখন গ্রামবাসীকে নির্দেশ দেয়া হয় প্রিয়জনদের কবর অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে। তাঁর কন্যার কবর খুঁড়ে দেখা যায় যে এতদিনে ৭ বছরের শিশুটির শরীরে কোন পচন তো ধরেইনি, ফুলগুলো পর্যন্ত রয়েছে একদম তরতাজা। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো শিশুটির শরীরের কোন ওজন নাই। খালি কফিন ও লাশবাহী কফিনের মধ্যে কোন ওজনের তারতম্য পাওয়া যায়না। গ্রামবাসী এই ঘটনায় ঐশ্বী নির্দেশ দেখেন, সন্ত ছাড়া আর কার শরীর এমন প্রাকৃতিক পচনশীলতার উর্ধে হতে পারে? তারা সকলে সামান্য পরিমান টাকা দিয়ে মারগারিতো দুয়ার্তে আর তাঁর মেয়ের শবদেহকে ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ উপাসনালয় ভ্যাটিকান সিটিতে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন, উদ্দেশ্য পোপের সাথে সাক্ষাত করে মৃত কন্যার সন্ত উপাধির জন্য আবেদন করা। ঈশ্বরের মহিমা যতভাবেই প্রকাশিত হোকনা কেন, তাঁর ইহজাগতিক এজেন্ট পোপ মহোদয় মঞ্জুর করলে তবেই না সন্ত হওয়া যাবে।
পিতা তার কন্যার ওজনহীন সুগন্ধি শবদেহ নিয়ে হাজির হন ভ্যাটিকানে।
এদিকে ভ্যাটিকানের লাল-ফিতার দৌরাত্ব কি কম নাকি? আজ পোপ বিদেশে, কাল তার বিশ্বশান্তির জন্য মিটিং, তো পরশু যুদ্ধরত দেশগুলোর জন্য বিশেষ দোয়া-মাহফিল। উনি ব্যাস্ত লোক, গরীব পিতার আবেদন শোনার সময় আর হয়ে উঠেনা তার। ভ্যাটিকানের এক দালাল তাকে বলেন, "এ কি আর ছেলের হাতের মোয়া? প্রতিবছর এরকম অন্তঃত ৮০০ কেস পাই আমরা, ভায়া। সন্ত উপাধি পেতে ধৈর্য্য ধরতে হবে।" কন্যার অপচনশীল শবদেহ পুরাতন ভায়োলিনের বাক্সে করে নিয়ে দিনের পর দিন ভ্যাটিকানের দরজায় ঘুরতে থাকেন দরিদ্র পিতা মারাগারিতো দুয়ার্তে। কিছুতেই তো আর পোপের দেখা মেলেনা! ঘুরে যায় মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।
বহুবছর পরে হটাত আবার লেখকের সাথে দেখা হয়ে যায় মারগারিতোর। ইতিমধ্যে কেটে গেছে বাইশ বছর, পোপ বদল হয়েছে চারবার। মারগারিতো লেখককে জানায়, এইবার সে দারুন আশাবাদী, পোপের সাথে এইবার দেখা হবেই হবে, আর কন্যার সন্ত মনোনয়ন পেতেও আর বেশী দেরি নাই। তার কন্যাই হবে কলম্বিয়ার প্রথম সন্ত।
গল্পটি শেষ করার পর কিছু প্রশ্ন তৈরী হয়। কে আসল সন্ত? কার ধৈর্য্য, ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রমান বারবার উঠে আসে গল্পের পরতে পরতে? কন্যার সন্ত মনোনয়নের জন্য ব্যাকুল পিতাই কি তাহলে প্রকৃত সন্ত? আর ভ্যাটিকানের সেই হোমরা-চোমড়া যাজকরা, যারা মানুষের ইহজাগতিক ও পরজাগতিক জীবনের ঠ্যাকা নিয়ে বসে আছেন, তারাও বা কেমন স্বার্থান্ধ আর কূপমুন্ডক? আর, ঈশ্বর? সেও বা কেন এত উদাসীন? বন্দী হয়ে আছেন কয়েকটা লোকের হাতের মুঠোয়। গরীবের কথা শোনার সময় তাদের কি একেবারেই নাই?
মারগারিতো আশা ছাড়েন না। একদিন না একদিন ঈশ্বর মুখ তুলে তাকাবেনই।
আমরা যারা গল্পটি পড়ি, তারাও কেন যেন বুঝতে পারি এই পথে হয়তো মুক্তি নেই। তবুও পিতার আশাকে ছোট করে দেখি কিভাবে? এই ভালোবাসা কি আর অবজ্ঞা করার বস্তু?
তাহলে যে শুনেছিলাম, ঈশ্বরের ভালোবাসা মানুষের চেয়ে বহুগুন বেশী -- মানুষের ভালোবাসা বিভাজ্য হলেও, ঈশ্বরের ভালোবাসা অবিভাজ্য? ঈশ্বর নিশ্চয় আটকা পড়েননি ভ্যাটিকানের চারদেয়ালে। এইসব দুর্নীতি ও লালফিতাকে পাশ কাটিয়ে দরিদ্র পিতার ত্যাগের জয় কি হবে একদিন? নিরাশার দোলাচালে ঘুরতে ঘুরতে আমরাও আশাবাদী হই।
ভালোবাসার জয় হয়তো হবে।
খুব সুন্দর গ ল্পটা। অনেক ধ ন্যবাদ তোমাকে শেয়ার রার জন্য। আমরা কি পারব এইসব দুর্নীতি ও লালফিতাকে পাশ কাটিয়ে একটি সুন্দর বসবাস যোগ্য দেশ গড়তে ???
মনেহয় না; গার্সিয়া-মার্কেজ আশাবাদী লোক, আমি না।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভালোবাসার জয় হবেই।
সারাংশ দেয়ার চাইতে গল্পটা অনুবাদ করে ফেললে ক্যামন হইত? সারাংশ দেয়ার কারনে এখন বেশিরভাগ মানুষ-ই গল্পটা আর পড়বে না বলে মনে হয়। ছোট গল্প তো। উপন্যাস বা ফিল্ম যেহেতু বড় পরিসরের তাই সারাংশ পড়লেও মূলটা পড়ার বা দেখার আগ্রহটা বজায় থাকে। কিন্তু আবার এই লেখাটা তোর গল্প পড়ার পরের অনুভূতি তাই পাঠক যদি গল্পের কিছু না জানে তাহলে লেখাটা হয়তো বোঝা যায়না অতোটা। আর এই কমেন্ট লিখতে লিখতেই মনে হল, গল্প পড়ানোর উদ্দেশ্যেই রিভিউ লেখা এইটা ধরে নেয়াটাও তো ভুল। পাঠককূলকে গল্প-উপন্যাস পড়ানো, ফিল্ম দেখানোতে উৎসাহ দেয়ার মত গুরুদায়িত্ব রিভিউয়ারের কান্ধে চাপানোর মত গুরুতর দায়িত্ব অর্পনকারী আমি হইতে চাইনা। তাই যেহেতু আমার কথারে আমি নিজেই খন্ডন কইরা বইসা আছি তাই এইবেলা বাইত যাই।
এটা কি রিভিউ ছিলো? প্রেসক্রিপ্টিভ অর্থে না মনেহয়।
গল্পটা মনে পড়লো কাল রাত্রে। ঘুম আসছিলোনা নেটে গুতাগুতি করতে করতে দেখলাম গল্পটা নিয়ে Milagro en Roma নামে একটা সিনেমা হইসে। স্মৃতি থেকে লিখে ফেললাম। বেশী সামেটিভ হইসে আসলেও।
গল্পটা পড়ে ভাবছিলাম অন্য কথা। আমরা সবাই একঅর্থে স্মৃতিবাহী প্রানী-- কারো না কারো কাছে স্মৃতির বৈধতা চাচ্ছি। এইসব আব-জাব। ঘুম না হইলে যা হয় আরকি। কাউকে গল্প পড়ানো টাইপের কোন মহৎ উদ্দেশ্য যে আমার নাই, তা তুই অন্তঃত জানিস।
এইসব হইলো অলস মস্তিস্কের ফসল।
না এইটা ঠিক সংজ্ঞা মানা রিভিউ না। রিভিউ বলিওনাই, শুরুর কথাগুলা বলার পরে হঠাৎ পরের কথাগুলা আসছে মাথায়। মানে যেই বইটা পড়া নাই কিংবা যেই মুভিটা দেখা নাই সেইটার রিভিউ ক্যানো পড়ি আমরা ঐটা ভাবতেছিলাম।
স্ট্রেন্জ পিলগ্রিমসের গল্পগুলা আমার অনেক প্রিয়। সবথেকে পছন্দের হইল 'লাইট ইজ লাইক ওয়াটার', এতো সুন্দর, এতো অবশ করা একটা দুঃখবোধ শেষটায়! (সরি দোস্ত, এইরকম কবিতা কবিতা লাইন ইচ্ছাকৃত না, পুরা লাইন বাংলায় লিখতে গেলে এইরকম হইয়া যায় )
লা সানতা নিয়ে মুভির কথা জানতাম না, অনেক আগের দেখি! তুই কি 'লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা' নিয়া মুভিটা দেখছিস? সবাই যেই হারে গালি দিছে আমিও মেজাজ খারাপ হবার ভয়ে আর দেখিনাই।
আমি অতীতচারনে বেশি যাইনা, নস্টালজিক হই, এইটুকি। স্মৃতির বৈধতা আমি খুঁজিনা বইলাই মনে হয়। তাই মনে হয়না এইটা একটা সার্বজনীন ব্যাপার। তুই আরেকটু এক্সপ্লেইন করবি ব্যাপারটা? ঠিকঠাক বুঝছি কিনা সেইটাও বুঝতেছিনা।
লাইট ইস লাইক ওয়াটার!! আহা!
কি দারুন একটা গল্প! ওটা নিয়ে এক-দুইটা কবিতা কবিতা লাইন তো লেখাই যায়।
লাভ ইন দ্যা টাইম অফ কলেরা দেখসি। বেশ আগে আসলে। ২০০৭-০৮ এ হবে। তেমন খারাপ লাগেনাই। আবার বই যেমন অনেক দারুন লাগসিলো তেমন ও লাগেনই... মাঝামাঝি। ৫১ বছর ব্যাপী প্রেম সেলুলয়েডে ধরা কি এত সহজ! আর, লা সানতা' নিয়ে ছবি হইসে আমিও জানতাম না। কাল রাত থেকে টরেন্ট নামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো সফল হইনাই।
অপচনশীল স্মৃতি বিষয়ক আলাপ তোর সাথে "পেরাইভেটে" করবো। অনেক দীর্ঘ আলোচনা হবে। জনতাকে বোর করতে চাইনা।
মুভিটার লিংকটা একটু দিবেন??
উপরের একটা মন্তব্যে লিঙ্ক দেয়া আছে।
একবার কোন গল্প বা উপন্যাস পড়ে ফেললে, সেটা দিয়ে তৈরি করা মুভি আর ভালো লাগেনা । আবার আগে মুভি দেখে ফেললে , গল্পটা তেমন আকর্ষন করে না ।
আমার কাছে লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা সিনেমা ভালোই লাগছে । বিশেষ করে হাভিয়ের বারদেমের অভিনয় ।
কিছুটা দ্বিমত পোষন করলাম আপনার সাথে।
সত্যজিতের বহু সিনেমা এই বক্তব্যকে খন্ডন করতে পারে।
মারিয়ো পুজোর গডফাদার বই ও সিনেমা দুটোতেই সমান আকর্ষনীয়। আমার শেক্সপীয়ারের ম্যাকবেথ ও ওথেলো নাটকের ভারতীয় চলচিত্র এডাপ্টেশন গুলোও দুর্দান্ত মনে হয়েছে। ওয়াল্ট ডিজনী'র রুপকথার চলচিত্রায়নগুলোও অসাধারন। লর্ড অফ দ্যা রিংস'ও দুই মাধ্যমেই দারুন।
তবে কিছু ক্ষেত্রে আপনার কথা সঠিক।
উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্ররূপে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হতাশ হতে হয়। তবে কিছু কিছু ব্যতিক্রম তো আপনিই উল্লেখ করলেন, এর বাইরে এ মুহূর্তে সপ্তপদীর কথা মনে পড়ছে
কাইট-রানার আছে।
ছবি ও বই দুটোই মোটামুটি।
মার্কেজের আত্মজীবনী পড়া শুরু করেছিলাম। অনুবাদটা মনে লাগেনি তাই এখনো গোড়াতেই পড়ে আছি।
Living to Tell the Tale এর কথা বলছেন? আমিও ওটা ইংরেজী অনুবাদেই পড়েছি (সবগুলো গার্সিয়া-মার্কেজই তো অনুবাদে পড়া)। খারাপ লাগেনাই, যদিও আমার দৃঢ় বিশ্বাস স্প্যানিশে কয়েক গুন বেশী ভালো লাগবে। বইটার একটা বাংলা অনুবাদও আছে যদ্দুর মনে পড়ে ... সেটা খুব জুতের লাগেনাই আমার কাছে।
বাংলা অনুবাদ যিনি করেন তিনি কি স্প্যানিশ থেকে করেন? মানবেন্দ্র ছাড়া অন্য কারো অনুবাদে ল্যাটিন আমেরিকা খোলে না।
লেখা ভালো, কিন্তু আপনার হাত থেকে অনুবাদ, বিশ্লেষণ আসলে বেশি খুশি হতাম।
আমার ঠিক জানা নাই সরাসরি স্প্যানিশ থেকে বাংলায় অনুবাদ হয় কিনা। আমি প্রায় সব ল্যাটিন আমেরিকার লেখকদের লেখাই পড়েছি ইংরেজীতে। একটা বাংলায় পেয়েছিলাম, পড়া হয়নি-- ওই বইটা আগে ইংরেজী অনুবাদে পড়েছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্প্যানিশ বিভাগের শিক্ষক রফিক-উম-মুনির গার্সিয়া-মার্কেজের কিছু লেখা স্প্যানিশ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন। সেগুলোর মান কেমন জানিনা। ভালো হওয়ার কথা।
আমার এই গল্পটার একটা নিজস্ব ব্যাখা আছে, পরে একসময় সেটা নিয়ে লেখার ইচ্ছা থাকলো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
হ আপনের লেখাটা পড়েই গল্পের কাছাকাছি অনুভূতি পাইলাম। এবং হাতের কাছে এটার অনুবাদ নাই। আছে মেটমরফোসিসের অনুবাদ। সেটা এখনই পড়ে ফেলতে ইচ্ছা করতেসে। আগ্রহ জাগায় দিসেন। ধইন্যাপাতা। পোস্ট প্রিয়তে গেল।
কাফকা! খুবই প্রিয় আমার!!
নোটস ফ্রম দ্যা আন্ডারগ্রাউন্ড পড়সেন? ঐটা একটা অভিজ্ঞতা বটে।
আরো একটা নতুন নাম
কাফকা ভাল লাগলে দস্তয়েভস্কির এই বইটা আসাধারন লাগার কথা।
নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড
আগের কমেন্টের "the" অতিরিক্ত ছিলো।
এখান থেকে ইলেক্ট্রনিক কপি ডাউনলোড করতে পারেন।
আমার কাছে এখন বইটা নাই, ভাবছিলাম অনলাইনে পাওয়া যাবে গল্পগুলা কিন্তু 'the saint' পাইনাই। তবে 'light is like water' টা পাইছি
আরে জোশ!
ফেরার পথে লাইব্রেরী থেকে মার্কেজের "কালেকটেড শর্ট স্টোরিজ" নিয়া আসলাম। এসাইনমেন্টের কাজ মাথায় উঠলো।
বলেন সুবহানল্লাহ!
এই কারনেই বিদেশে যাইয়া ইশটুডেন্ট হইয়া বইসা থাকতে ইচ্ছা করে
আমিও তো তাই চাই। চলে আয়।
রিয়েল থ্যাংক্স। যে কারণে বন্ধু-বান্ধবদের প্রচুর ভালু পাই।
একটা দয়েস্তভস্কি, দুইটা মার্কেজ আর একটা কাফকা।
মেটামরফসিস এখনো পড়েন্নাই? ঝলদি পড়েন
এক্ষনই!
ইমো দিছেন? তাইলে আমিও একটা দেই।
বাহ, মজার তো এটা!
কতোকিছু জানার বাকি আছে পৃথিবীতে। ভালো লাগলো শর্মি।
ধন্যবাদ, আপু। উৎসাহ পেলাম আবারো।
সম্ভবত মুজতবা আলীর কথাটা, অনুবাদ হল পশমী শালের উল্টো পিঠ, যতই খারাপ হোক, পশমী শাল তো বটেই। (হুবহু না)
আবার ভিন্নমত ও আছে।
যখন প্রথম lost in translation এর মানে শিখলাম, হটাত অনুবাদ পড়ার আগ্রহ কমে গিয়েছিলো।
lost in translation
মুভিটা দেখছেন? আমার ব্যাপক পছন্দের মুভি।
হ্যা, দারুন সিনেমা!
পড়তে পড়তে যা ভাবনা আর ভাবনার গড়মিল মন্তব্যের ঘরে এসে দেখি মৌসুম বলে দিছে...
Milagro en Roma টরেন্টে নামাতে গেলাম, No results for "Milagro en Roma" (0.021s) এসব আজেবাজে কথা লেখে
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ
মন্তব্যের এই অংশটা দারুণ লাগলো
আমিও নামাইতে পারিনাই। মন্টা বেজার।
তবে আপনার মন্তব্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ।
ঈশ্বরের ভালবাসা অবিভাজ্য বটে, তবে বিভাজিত আম্রা কি করে তার মহিমার পুরোটা বুঝব!
মহিমার পুরোটা না বোঝা যাক, কিছু নিদর্শনে অস্থির মন সান্ত্বনা পেতে পারে। সেটুকু তিনি দেন। এই যে মারগারিতোর সাধনা শর্মির মনে এইভাবে গেঁথে গেল, এইখানেই তো তার সন্তত্ব... যেটুকু সন্তত্বের প্রকাশ মানুষের চাই। আসলে প্রভুর খাতায় কে কোন তালিকায় থাকল, তা তো জানবার উপায় নাই। তিনি শুধু মার্কেজরে উপলক্ষ করে মারগারিতোকে জাগতিক সন্তদের তালিকায় তুলে রাখলেন, এইটা হয়তো মার্গারিটোর জন্য যতটা দরকার, তার চে অনেক বেশি দরকার আমাদের সংশয়ী মনের জন্য। মার্কেজরে উপলক্ষ করে আরও একখানা কাজ প্রভু করে নিলেন, জগতের সম্মানিত পোপবাবা আর তার চ্যালাদের একটু খানি খাটো তিনি অন্তত আমাদের কাছে করে রাখলেন, এতেও বোধকরি তার ঐশ্বরিক সুবিচারের খানিকটা ছটা আমাদের শান্তি দিল।
ভাল কথা, মানবেন্দ্র স্প্যানিশ থেকেই অনুবাদ করেন। যদিও ওনার গদ্য একটু প্রাচীনপন্থী, আর হয়তো উত্তম স্প্যানিশ জানেন বলে জটিল বাক্যবিন্যাস পছন্দ করেন, কিংবা পুরাটাই হয়তো পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙলার সমস্যা, কেমন জানি খটমটো লাগে। যদিও 'কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখা না'র অনুবাদটা দুর্দান্ত লেগেছিল কাঁচা বয়েসে, কিন্তু কুড়ো মানে যে মোরগা, সেইটা বুঝতে অভিধানও দেখতে হৈছিল। ল্যাতিনো সাহিত্যের বরং ইংরেজি অনুবাদগুলো বেশি সুপাঠ্য লাগে।
ভালোতর কথা, গল্পটার শর্মিয় ব্যাখ্যার জন্য চাতকপ্রায় অহর্নিশি বসে থাকলাম।
ঐশ্বরিক সুবিচার? সেরম জিনিষ আবার আছে নাকি? আপনি তো দেখি অন্তঃত আশাবাদী মানুষ! আমি অনেক বেশী সংশয়ী, আসলে।
মার্গারিতো'র সাধনা মনে গেঁথেছে বটে, তবে এর থেকে বেশী বিচলিত করেছে তাঁর না পাবার ইতিহাস। গল্পটি আসলে কোন আশাবাদ ব্যাক্ত করেনা, ওপেন এন্ডেড থাকে বলে পাঠক হিসাবে আমরা নিজেরাই "পোয়েটিক জাস্টিস" খুঁজে নিতে চাই।
আর আমার ব্যাখ্যাটা একান্ত নিজস্ব। লেখার ইচ্ছা থাকলো। তবে চাতক প্রায় অহর্নিশি বসে থাকাটা মনেহয় ঠিক হবেনা। মার্গারিতোকে দেখে শিক্ষা ন্যান-- ২২ বছর কাটে, চার পোপ বদল হয়, অপেক্ষা শেষ হয়না।
এতদিন টিকতে পারবেন?
সাধনা আর অপ্রপ্তি তো একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। প্রাপ্তি ঘটলে আর সাধনা থাকে মা?
ঐশ্বরিক সুবিচার আসলে এত ধীরগতির একটা চক্র, মানুষের মন অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু দ্রুত করার উপায় নাই তার। ওতে তার গৌরব সামান্যই বাড়ে, কিন্তু সাধুর গৌরব একেবারেই ছাড়ে।
গল্পে আশাবাদ আছে তা একদমই ভাবি নাই। খালি ভাবলাম যে পোপের খাতায় নাম না উঠলেও ঈশ্বেরের খাতা, মানে আমাদের মনের খাতায় মার্গারিতোর নাম কিন্তু উঠে গেছে। পাঠকই তো ঈশ্বর, না?
আচ্ছা এখন থেকে সেন্ট মার্গারিতো আমরাই বলা শুরু করি, উনি সাধনার সন্ত। পোপের গুস্টি কিলাই।
একমত-- প্রাপ্তি ঘটলে সাধনা থাকেনা, বিধায় মার্গারিতোকে "সাধনার সন্ত" বলে নিজের যুক্তি নিজেই খন্ডন করেছেন আপনি।
টেক্সটে যেহেতু মার্গারিতোর সন্তপ্রাপ্তি হয়নাই, আমরা যা ইচ্ছা ধরে নিতে পারি---তবে সন্ত বলা শুরু করার অনুমতি নাই। পাঠক ঈশ্বর শুধুমাত্র যতটুকু গল্পে পাওয়া যায় তার মধ্যেই। যেমন ধরুন, "সিন্ডারেলা তাঁর রাজকুমার স্বামীর সাথে সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল" পড়ার পরে আমাদের মত অবিশ্বাসীরা নাকমুখ কুঁচকে বড়জোর বলতে পারে, "এহ, এইডা আবার হয় নাকি? ২ মাস পরেই ঝগড়া লাগবে", কিন্তু টেক্সট নিজে সে স্বাধীনতা দেয়না। ল্যাটিন আমেরিকার আবলাদোর কথকভঙ্গিতে (Hablador Tradition) মুক্তসমাপ্তি থাকে বটে, এই গল্পেও তা আছে। আমরা ধরে নিতে পারি অনেক কিছু, তবে কল্পনাকে বেশী প্রশ্রয় দিলে গল্পের প্রাপ্য এফেক্ট কমতে থাকে বলে আমি মনে করি।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এই গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ আর এরিক মারিয়া রেমার্ক ব্যটা ফার্স্ট ইয়ার আর সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে আমার মাথাডা খেয়ে ফেলছিল। .
এই লোকগুলার শাস্তি হয়া উচিত। পোলাপাইনের মাথাডা খায় খালি!
মন্তব্য করুন