ইউজার লগইন

এক ঝলক ক্যাম্পাস

১৬ তারিখে একটা কাজে মাকে নিয়ে বেরিয়েছিলাম পুরান ঢাকার দিকে। রিকশা যখন শিশু একাডেমী অতিক্রম করছিলো তখন হঠাৎ ডান দিকে চোখ পড়তেই মনে হল আজ তো ক্যাম্পাসে মেলা হওয়ার কথা। সাথে সাথে আম্মার কাছে আবদার করে বসলাম। কাজ শেষে তোমার যত তাড়াই থাকুক আজ আমি মেলা দেখে যাব।

মোটামুটি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হওয়াতে আম্মা আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে বাধ্য হলেন। এই মেলায় আসাটা আমার খুব প্রিয়। মনে পড়ে, অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতেও আধা ঘন্টার জন্য মেলায় এসেছিলাম। ক্যাম্পাসের মেলা বলতে আমার কাছে ভেলপুরী, ঝাল মুড়ি, বাদাম-তিলের মুড়কি আর হাত ভর্তি রেশমী চুড়ি। এমনিতে শপিং এ আমার এলার্জী থাকলেও হেঁটে হেঁটে এই মেলা দেখতে আমার ভীষন ভাল লাগত। হকাররা হরেক রকম জিনিসপাতি নিয়ে বসত। কত রকমের খেলনা, গহনা,তৈজসপাতি, খাবার দাবার।

প্রায় ২ বছর পর মেলায় এসে যেন ভার্সিটির পুরোনো দিনে ফিরে গেলাম। আমি খানিকটা আনমনা হলেও আম্মা খুব মজা পেলেন। মা মেয়েতে মিলে যা যা খেতে ইচ্ছে করল খেলাম। হেঁটে হেঁটে বাংলা একাডেমী থেকে চারুকলা পর্যন্ত গেলাম। টিএসসির ভেতরে, রাস্তার পাশে বাঁধন আর কোয়ান্টামের ব্লাড কালেকশান চলছে। বেশির ভাগ মেয়েরা লাল-সবুজ কম্বিনেশানের সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ি পরে এসেছে। পিচ্চিদের অনেকেই হাতে পতাকা আর হাওয়াই মিঠাই নিয়ে ঘুরছে। তাদের কচি মুখের ক্যানভাসে চারুকলার ছেলে মেয়েদের এঁকে দেয়া বাংলাদেশের পতাকা দেখতে বেশ লাগছিলো।

কিন্তু রাস্তায় হকার নেই দেখে খুব মন খারাপ হল। পুলিশ এসে একটু পর পর হকারদের উঠিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কারো কারো জিনিস ভেঙ্গে যাচ্ছে পুলিশের লাঠির আঘাতে। অথচ এরা এই দিন গুলোর অপেক্ষায় থাকে। দেশে কত রকম কাজ হয় অথচ এই উচ্ছেদ করা হকারদের জন্য একটু জায়গা বরাদ্দ হয়না। আজ এখানে কাল ওখানে এই ভাবেই বাঁদরের মত এগাছ ওগাছ করে এদের বেঁচে থাকা।

ফিরে আসার পথ ধরতেই এক চুড়িয়ালির করুন চোখের দিকে তাকিয়ে আম্মা বললেন, চল কিছু চুড়ি কিনি। বয়সে আমার মা'র সমান ঐ চুড়িয়ালির কাছ থেকে বেশ কিছু চুড়ি কিনে নিলাম। চুড়িয়ালি আম্মার হাতে পরিয়ে দিলেন টকটকে লাল এক গোছা রেশমী চুড়ি। কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে আমার মা বাচ্চাদের মত শব্দ করে হেসে উঠলেন। মুখোমুখি বসে দুই নারী। দুজনের মুখেই হাসি। মায়ের চুড়ি পরা হাতের ছবি তুলে নিলাম মোবাইলে। কিন্তু চুড়িয়ালির হাসিমুখ আর স্থান পেলনা। হঠাৎ মনে হতেই দেখি অনেকটা পেছনে রেখে এসেছি তাকে। তাই কেনাবেচার ওই হাসিটা মনে গেঁথেই রিকশায় উঠলাম।

এটুকুই আমার এ বছরের বিজয় মেলা দেখা।

পোস্টটি ১০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সাঈদ's picture


মায়ের মুখের হাসির সাথে আর কিছুর কি তুলনা হয় ? বিজয়ের ডাবল আনন্দ।

সুমনা's picture


ঠিক বলেছেন ভাইয়া। অনেক দিন পর খুব মজা পেয়েছি। যদিও বাসায় ফিরেই হুমকির শিকার হয়েছি। ছোট বোনকে বাসায় রেখে বেরিয়েছিলাম কাজে। কিন্তু তাকে রেখে মেলা দেখে ফেলেছি। অল্পের জন্য মাইরের হাত থেকে বেঁচে গেছি।

মাসরুর's picture


অল্পের জন্য মাইরের হাত থেকে বেঁচে গেছি। আপনার কপাল বেশ ভালই দেখি! :)

অতিথি পাখি's picture


ফেইচবুকে ছবিগুলো রাখিস সুমনাপু .........

আমারো সপিং ভালো লাগে যদি কেউ কিন্না দেয় তাইলে ।।

সুমনা's picture


ওকে। আজ বাসায় গিয়ে আপলোড করে দেবোনে।

সোহেল কাজী's picture


আহা মাকে নিয়ে বিজয় মেলা ভ্রমন!
মনে পড়ে গেল, আমাকে নিয়ে মা দশমীতে যেতেন। মাটির হাড়িপাতিল খেলনা কিনে দিয়ে সারা মেলা ঘুরেছিলাম মায়ের কোমর পেঁচিয়ে ধরে। মেলা দেখা শেষ হলে সংসারের জন্য মা কিনতেন মাটির তৈজস।
সবুজ রঙের চুড়ি পড়তে ভালোবাসতেন মা। দৈনন্দিন কাজে ভেঙ্গে যাওয়া কাঁচের চুড়িগুলো জমিয়ে আমায় দিতেন। কুপির আগুনে পুরিয়ে সেগুলো দিয়ে শেঁকল বানাতাম।
আহারে কত কিছু মনে পড়ে যায়!!!!!!

সুমনা's picture


কমন পড়ল ভাইডি। আমরা রথের মেলা দেখতে গেলে দাদাভাই ৫০ টাকা দিয়ে বলতেন, "ধর, এটা দিয়ে মেলা করিস।" চোখ চকচক করে উঠত ৫০ টাকা দেখে।কারন ৫০ মানে তখন অনেক টাকা।আর কত কিছু যে কিনতাম। মাটির হাড়ি পাতিল, কদমা, বিন্নি, চিনির তৈরী হাতি ঘোড়া আরো কতকি।

সোহেল কাজী's picture


পহেলা বৈশাখের বৈশাখি মেলা নিয়া একটা পোষ্ট দিছিলাম সেই পরথম দিকে।

অনেক রকম খাবারের উল্লেখ আছে আর আছে কিছু বান্দরামী।

লিঙ্ক দিমুনা ইচ্ছা থাকিলে খুঁজিয়া লৈতে হৈবেক Tongue outCool

সুমনা's picture


হা হা হা। পড়ছিলাম তখনই। আবার যামুনে।

১০

হাসান রায়হান's picture


মেলা মানেই আনন্দ।

১১

মেসবাহ য়াযাদ's picture


এইডা কী কৈলেন ব্রাদার !

মেলা  মানে হইতাছে...

অনেক, প্রচুর, যথেষ্ট, ভীষন, পরযাপ্ত, ব্যাপক, কাড়ি-কাড়ি, রাশি-রাশি, গাদা-গাদা....... ইত্যাদি

১২

সুমনা's picture


হ ভাই।

১৩

সুমনা's picture


ঠিকই কইছুইন।@হাসান ভাই

১৪

বিহঙ্গ's picture


মায়ের সাথে কখনোই কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি আমার এখনো। কারণ মা মেলা বা কোলাহলপূর্ণ কোথাও যেতে আগ্রহবোধ করেন না_তাই আমরা ছয়ভাইবোন_কখনোই শতচেষ্টা করেও মাকে সামান্য গ্রাম্য মেলায়ও নিতে পারিনি। যাক ভালো লাগলৌ আপু..................

১৫

সুমনা's picture


থ্যাঙ্কু ভাইয়া। আছো কেমন?

১৬

নীড় সন্ধানী's picture


আহারে.........সচল একটা ক্যাম্পাসের চেহারা দেখি না বহু বছর!!

১৭

সুমনা's picture


নীড় দা, একটা ইভেন্ট সামনে রেখে ঢাকায় চলে আসেন। ক্যাম্পাসে জমিয়ে আড্ডা হবে।

১৮

মলিকিউল's picture


মা আর ক্যাম্পাস- দুইই মিছ করি...।। :(

১৯

সুমনা's picture


ডিগ্রী শেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসেন। এই কষ্টগুলো আর থাকবেনা।

২০

হাসান রায়হান's picture


ধন্যবাদ সুমনা মেলা নিয়ে এক পশলা পোস্ট দেয়ার জন্য। এই বিজয় দিবসে আমার তোলা চুড়ির ছবি দিলাম আপনাকে, জাঝা হিসাবে। Laughing

২১

তানবীরা's picture


২০০৫ সালে আমি ঠিক এরকম একটা দিন কাটিয়েছিলাম ক্যাম্পাসে। একটা কিছু লিখেছিলামও বোধহয় তখন, "তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে" টাইপ।

আজকে সুবর্ণার লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে, নিজেকে হারিয়ে যেনো পাই ফিরে ফিরে।

আপনার লেখাগুলোয় একটা অন্যরকম টান আছে।

২২

সুমনা's picture


থ্যাংকস আপু। একটা পোস্ট দেননা আপু।

২৩

সুমনা's picture


হাসান ভাই, ব্যাপক খুশি হইলাম। ছবিটা কিন্তু দারুন হইছে। চুড়ির ছবি আমিও তুলেছি কিন্তু মোবাইলে। তাই ভাল হয়নাই। আপনার এই ছবিটা খুব এনজয় করলাম।

২৪

সুবর্ণা's picture


ইশ এতো সুন্দর চুড়ি, চুড়ি দেখলেই কিনতে ইচ্ছা করে। দারুন ছবি।

২৫

সুমনা's picture


আমি কিন্তু কিনেছি আপু। লাগলে বইলেন।

২৬

নীড় সন্ধানী's picture


ছবি মারাত্মক হইছে, আমি এরকম একটা ছবি তুলতে চাইছিলাম ১৬ ডিসেম্বর। খাড়ান আমারটাও দিতেছি।

২৭

নুশেরা's picture


বড় বেশী স্মৃতিকাতর করে দিলেন...

২৮

সুমনা's picture


আপু, স্মৃতিকাতর হয়ে একটা পোস্ট দিয়ে ফেলেন।

২৯

নজরুল ইসলাম's picture


ছবি শুধু ফেইসবুকে না দিয়ে এখানেও তো দিতে পারেন...

লেখা ভালো লাগলো

৩০

সুমনা's picture


দেব ভাইয়া। আগে ছবি দেয়ার সিস্টেমটা জানতামনা। আজ পদ্মর টিউটোরিয়াল থেকে শিখেছি।

৩১

সুবর্ণা's picture


"মা" আমাকে নিয়ে অনেক যায়গায় গ্যাছেন, আমি মা কে নিয়ে হসাপিটাল আর ডাক্তারের কাছেই বেশী গেছি। ২০০৭ এর শুরুর দিকে মাকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। খুব মনে পড়ে সেই সময়ের কথা। এমন একটা মেলায় মায়ের সাথে ঘোরাটা কল্পনা করতেই ভালো লাগছে।

ভালো  থাকবেন ।

৩২

সুমনা's picture


আপু আপনার কমেন্টে একটা প্রচ্ছন্ন কষ্টের ছায়া দেখলাম। তবে ঐ দিন সত্যিই খুব মজা পেয়েছিলাম। এই মজাটাই হয়ত একদিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আপনিও ভাল থাকবেন আপু।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.