জল পাতা ঝিকিমিকি
জল ও জ্যোৎস্নার সাথে অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি। ।
হাতের তালুতে অন্ধকারের গাছপালা ভালো করে জেগে ওঠার আগেই প্রতিবার কেমন অস্বস্তিকর সকালের আলো ফোটে।।। আজ ঠিক করেছি এই অরণ্যের মধ্যে আমি পথিকের মতন হাঁটবো। কোনো অস্বস্তির মধ্যে যাবোনা। অনেক হয়েছে। এখন নিজের চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্ন-প্রাপ্তির কাছে জবাবদিহিটা জরুরী।
ইদানীং প্রায়ই এমন প্রতিবিম্বের একেকীত্ব ভালো লাগে। জলের মধ্যে যে্মন রাত্রির ছায়া গাঢ হয়, নিজের সাথে নিজের কথা বলাটাও তেমনি গভীর ভাবে সাম্প্রতিক সময়ের জীবনযাপনের ধরণটার অসাড়তা সামনে এনে ফেলে রাখে। একদম অবাঞ্ছিতের মতন সেই অনুভূতি পায়ের কাছে এসে বসে থাকে। আমি তাকে এড়াতে পারিনা এখন। ইদানিং নিজের কথা ভাবতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে একা, অন্ধকারে এই সময়গুলি পেতে। আঁধার আমার ভালোলাগে।
অথচ আমি মানুষটা আলোর মানুষ। আলোতে জন্ম হয়েছে, চারপাশের আলোকময় রমনীদের হাসির চ্ছটায় আমি বড় হয়েছি। বৃষ্টিশেষের তরল রঙধনু আমার জানালার পাশে বসে অবিরত খেলেছে আমার সাথে। যাবতীয় দিনযাপনের ক্ষেত্রে আমি আলোকময়তাকেই বারংবার প্রাধান্য দিয়েছি। সুমন আমাকে 'লুলা ক্যাঙ্গারু' বলে ডাকত। এই ডাকে আমার সড়া দিতে অসুবিধে হতো না। যদিও আমার দুটি পায়ে কোনো খুঁত ছিল না এবং আমি স্কিপিং জিনিসটা এড়িয়ে চলতাম। লাফিয়ে আকাশে উঠতে চাইলে মাটির মমতার কিছু কিছু দৃশ্য হারাতে হয়। আকাশ আমার যাবার যায়গা ছিল না। মাটির দৃশ্যাবলী আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু সুমন তবুও ওই নাম রেখেছিল আমার।। আমি খুব স্বাভাবিকভাবে নিতে পেরেছিলাম; ও আমাকে নাম দিতেই পারে। যেদিন পছন্দ হবে না-ওটা মুছে একতা নতুন নাম নিয়ে নেব। নিজের একটা নাম তো রাখাই যায়-সে অধিকার সবার আছে!
সেই নাম একটা গল্প হতে পারে। কিন্তু আমি আজ সুমনের গল্প বলব না। আমাদের দুজনের বাল্যবেলায় রচিত সংলাপগুলি বড় বয়সে এসে অর্থহীন হয়েছে। আমরা দুজনেই সেই সমস্ত পৃষ্ঠা মুছে ফেলার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছি।মুছে ফেলা যায়নি বলে তার ওপর ঘন কালো রঙ দিয়ে দিয়েছি। যদিও কালো রঙ যত কালোই হোক, কলমের তীক্ষ্ণ রেখাগুলি যত্ন নিয়ে পড়তে চাইলে এখনো হয়তো পড়া যাবে। আমরা দুজনেই সেই চেষ্টা করিনা। প্রথম চুমু খাওয়া, প্রথম পুরুষ কিংবা নারীর স্পর্শ, এবং প্রথম কাশবনের দিকে ছুটে আসা বৈশাখের আগুন বাতাস তাই পথ ভেঙে সামনে আসে না। আমরা তার পথের আগে নোটিশ টানিয়ে রাখি-- এখানেই রাস্তা শেষ; এর পরে নদী!
সুমন তার নদীতে আর আমি আমার নদীতে প্রবেশের পরে আমাদের সেই রাস্তা সত্যিকার অর্থেই থমকে যায়!
সুমন দ্বিতীয় চুম্বনের জন্যে নারী খুঁজে পায়; এবং আমি তার উপস্থিতিকে ফলতঃ অস্বীকার করার প্রানান্ত চেষ্টা করতে থাকি।। আলোর রাজ্য থেকে একটা ধূসর সন্ধ্যার দিকে যাত্রা শুরু হয়। এই যাত্রার নামই বোধহয় জীবনযাপন।। পরিকল্পনার সাথে ঠিক মেলেনা। নাহলে আমার অনেক ডানা-পাখনা ছড়ানো পরিকল্পনা ছিল।
পরিকল্পনা যা-ই হোক, আমি েস বিষয় নিয়েও গল্প করতে চাই না। মানুষ পরিব্রাজকের জীবন কাটানোর স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে পারে, মেঘের মধ্যে ভেসে থাকার ইচ্ছে নিয়ে কৈশর পার করতে পারে, মায়ের আঁচলের গন্ধ ছেড়ে কোথাও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে কোনো এক দুর্বল মুহূর্তে। কিন্তু পরিব্রাজক জীবন, মেঘ আর মা সবাই এক একটা ঘোরের মতন। জীবনযাপন বলতে যা বোঝায় তাতে এসব ঘোরের খুব একটা আদর নেই। এটা বুঝতে আমার অনেকটা সময় লেগে গেল। এত দেরী করে সব বুঝলে চলে! আরো কিছু আগে কেন জানা হয়না কি চাই, কেন চাই!
(চলবে)
চমৎকার...
চলুক...
চমৎকার একটি লেখা
নিয়মিত চলুক
চমৎকার। দ্রুত পরের পর্ব আসুক
বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্প বলার টোনটা।
কেমন একটা ঘোরের মাঝে লেখা যেন, এই জানাচ্ছেন মনের রুঢ় বাস্তাবতায় মোড়ানো কষ্টটার কথা, বিষন্নতায় ঘেরা সময়ের কথা, আবার যেন সামনেই আলোকজ্বল স্বপ্নপূরনের হাতছানি আছে!
আসলেই হুট করেই একদিন মন থেকে আধাঁর সরে যায়, সেই এক "অস্বস্তির" কারনে নিজেকে পালটে ফেলার জন্যে আফসোস আসে!
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
অনেক দিন পর আসলেন, আশা করি নিয়মিত লিখবেন।
ভাল থাকুন। অনেক ভাল। সব সময়।
খুব চমৎকার লেখা। অনেকগুলো কাব্যময় বাক্য লেখাটাকে দারুণ উপভোগ্য করে তুলেছে। খুব ভাল লেগেছে।
এইটা একটা চমৎকার লেখা। পড়েছি আগেই, জানাতে দেরি হলো। পরের পর্বের জন্য অধীর অপেক্ষায়...
আরে মণি যে, এসেছো যখন বসো। চা খাই, সুখ - দু:খের কিছু কথা হোক
পুরো লেখাটাই চমৎকার কিনতু এই লাইনগুলো অসাম
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
দারুণ লেখা। পরের পর্ব জলদি আসুক।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ!
মন্তব্য করুন