ক’এর মা, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্মৃতির জাবর কাটা
তিন প্লাস বয়স হলেও কেন জানি অনেক স্মৃতি মনে আছে তার। সেকালে হয়ত ভেজাল কম খাওয়া হত বলেই মাথাটার ভেতরে গ্রে মেটার একটু বেশিই ছিল। অথবা এমন হতে পারে, কারো কারো মেধাটা একটু এক্সট্রা অর্ডিনারি ধরনের হয়। সেরকম একজন হচ্ছে আজকের সুত্রধর। ধরে নেই সুত্রধরের নাম ‘ক’।
ক’র বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। আজ এজেলায় তো, কাল ও জেলা...। এভাবেই ক’রা সবসময় গ্রামের বাড়ির বাইরে থাকত। গ্রামের সাথে ওদের যোগাযোগ বলতে বছর শেষে ফাইনাল পরীক্ষার পর ১৫/২০ দিন। এছাড়াও কারো বিয়ে বা নিকটাত্মীয় কেউ মারা টারা গেলে ক’দের গ্রামের বাড়ি আসা হত। তাও ২/৩ দিনের জন্য।
১৯৭১ সাল। ক’রা তখন চাঁদপুরে থাকতো। মটখোলা ওয়াপদা কলোনীতে ওদের বাসা। ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনীর আক্রমনের পরে পরিস্থিতি বুঝার জন্য ক’র বাবা আরো দুই দিন রয়ে গেলেন চাঁদপুরে। ২৯ মার্চ আর থাকা নিরাপদ মনে করলেন না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ক’রা ৪ ভাইবোন। আর বাবা মা। অফিসের একটা গাড়ি নিয়ে চাঁদপুর শহর পেরিয়ে ফরিদগঞ্জ, রায়পুর হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ পথে কোন ঝামেলা ছাড়াই তাদের বাড়ি লক্ষীপুরে পৌঁছে গেল ওরা। রাতটা কোনভাবে কাটিয়ে পরদিন ভোর বেলাতেই ওদের বাবা সেই গাড়িতে করে চলে গেলেন তাঁর কর্মস্থলে। সেই থেকে ক’রা গ্রামের বাড়িতে। যুদ্ধের পুরো সময় জুড়েই ওরা গ্রামের বাড়িতে কাটিয়ে দিল। সেসময়কার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার কথাই আসুন ক’এর মুখ থেকে শোনা যাক :
আমার মামা বাড়ির মামা, মানে আম্মার চাচাত ভাই। আমাদের কাশেম মামা। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই তিনি ছিলেন আর্মিতে। যুদ্ধ শুরু হবার পর পরই তিনি কুমিল্লা থেকে পালিয়ে চলে আসেন গ্রামে। এরপর অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে একদিন রাতের বেলায় আমাদের বাড়িতে আসেন মামা। রাত তখন কত জানিনা, তবে অনেক রাত হবে। আমাদের ঘরে এসে দরজায় টোকা দিয়ে আম্মাকে ডাকেন।
আম্মা ভয়ে ভয়ে জানতে চান, কে ?
আমি কাশেম। বুবু, দরজা খোলেন।
হারিকেনের আলো বাড়িয়ে আম্মা দরজা খুলে দেন। মামা দ্রুত আম্মার হাতে একটা পোটলা ধরিয়ে দিয়ে আবার ফিরে যান। যাবার সময় আম্মাকে বলে যান-
২/১ দিন পরে আসবো, বুবু। জিনিসগুলো সাবধানে রাখবেন।
তিনদিনের মাথায় কাশেম মামা ফিরে আসেন। এবার দিনের বেলায়। আম্মাকে বলেন,
বুবু, অলংকারগুলি দেখছেন ? ২/৩ সেরের কম হবে না। আপনি রেখে দেন। আমাকে ৫০০ টাকা দিলেই হবে। আম্মা জানতে চাইলেন, কোথায় পেলি এত গহনা ?
মামা কিছু বলেন না। আম্মা পোটলাটা মামার হাতে দিয়ে বলেন,
আমার এসব লাগবেনা। তোর জিনিস, তুই নিয়ে যা।
মামা অনেক অনুরোধ করার পরও আম্মার মন গলাতে না পেরে পোটলাটা নিয়ে চলে যান।
আম্মার আরেক চাচাত ভাই, শহিদ মামা। যুদ্ধ শুরু হবার মাসখানেকের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যান বাড়ি ছেড়ে। সাথে করে নিয়ে যান আমার এক চাচাত ভাইকে। আমাদের বড় চাচার ছেলে (পরবর্তীতে আমার বড় আপার সাথে তার বিয়ে হয়)। ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে আসেন তারা। পুরোটা সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে শহিদ মামা সিলেটে সুরমার পাড়ে পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। বেঁচে ফিরে আসেন আমার চাচাত ভাই। তার মুখে শুনি মামার শহীদ হবার কথা।
আমাদের গ্রামে ২/৩ টি বাড়ি ছিল হিন্দুদের। এদেরই এক বাড়ির ছেলে সুদর্শন। যিনি আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। তাদের বাড়ি লুট করেন আমাদের গ্রামেরই কিছু মুক্তিযোদ্ধা (!)। সুদর্শন দাদার সেকী কান্না ! আমার আম্মাকে এস বললেন, মাসীমা আমাদের বাঁচান। আপনার কথা ওরা শুনবে। ওদের কাঁসার জিনিসপত্র, মেয়েদের গহনা, এমনকী ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায় লোকজন। শেষতক আম্মার অনুরোধে ওদের কাউকে প্রানে মারেনি বা গ্রাম ছাড়া করেনি। কিন্তু পথে বসিয়ে দেয় পরিবারগুলোকে। সব কিছু লুট করার পর যে উল্লাস করেছে লোকজন, সেটা যে কী পরিমান অমানবিক আর বিভৎস ছিল! এখনও আমার চোখে ভাসে সেসব।
শহরে থাকতাম বলেই হয়ত আমাদের একটা রেডিও ছিল। তখন সেটাকে বলা হত টেনজিস্টার। কাঠের বডি ছিল সেটার। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর গ্রামের লোকজন এসে জমায়েত হত আমাদের ঘরের সামনে। ঘরের সিঁড়িতে বসে পড়ত মুরুব্বিরা। বাকীরা উঠানে পাটি বিছিয়ে/দাঁড়িয়ে রেডিওতে খবর শুনত। বিশেষ করে, এম আর আকতার মুকুলের চরমপত্র।
৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে সারা দেশব্যাপি ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। শত্র“মুক্ত হয়েছে অনেক এলাকা। অনেকে ফিরে এসেছেন আপনজনের কাছে। বীরের বেশে দেশকে শত্র“মুক্ত করতে যেয়ে শহীদ হয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আহত হয়েছেন। অঙ্গহানী হয়েছে কত শত জনের। আমাদের বুদ্ধিজীবিদের নির্বিচারে হত্যা করেছে পাক বাহিনীর দোসর আলবদর আর আল শামসরা। অনেক রাজাকার মারা পড়েছে। অনেকে ভোল পাল্টে মিশে গেছে বিজয়ী জনতার সাথে। কত নারীরা হয়েছেন বীরাঙ্গনা। অনেক হিন্দু পরিবার অত্যাচার সইতে না পেরে পুর্ব পুরুষের ভিটা ছেড়ে চলে গেছে দেশ ছেড়ে। অনেকে পুর্ব শত্র“তার শোধ নিতে যেয়ে মানুষ খুন করেছে। অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে-এমন লোকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে আমাদের এলাকায়।
আমাদের গ্রামের এক ভদ্রলোক। তার ছোটভাই গেছেন মুক্তিযুদ্ধে। এই ভদ্রলোকের নাম চৌধুরী। তার বড় ছেলে আমার বয়সী। নাম শওকত। ভদ্রলোক একটু বয়সী ছিলেন বলে যুদ্ধে যাননি। দেশ স্বাধীন হবে হবে। এমন একদিন ভদ্রলোক তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাতের খাবার খেতে বসেছেন। মাত্র দু’এক লোকমা ভাত মুখে দিয়েছেন। ঠক ঠক করে দরজার কড়া নড়ে উঠল। তার মা ভয় পেয়ে দরজা খুলতে নিষেধ করলেন। শুনলেন না তিনি। দেশের অবস্থা বেশ ভাল। ২/৪ দিনের মধ্যেই দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে। ভয় পাবার কী আছে ? জিজ্ঞেস করলেন, কে ?
বাইরে থেকে বললো, আমরা চৌধুরী সাহেব। দরজাটা একটু খোলেন। কথা আছে।
গলাটা বেশ পরিচিত লাগল। ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলেন। মুখে গামছা বাঁধা ৩/৪ জন মানুষ এক টানে তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল। বাইরে থেকে দরজার আংটা লাগিয়ে দিল। ভেতরের রুম থেকে চৌধুরী সাহেবের মা জানতে চাইলেন, চৌধুরী, কে আসছেরে বাবা ?
মায়ের কথার জবাব দেবে কে ? চৌধুরী সাহেবকে নিয়ে ততক্ষণে বাইরের লোকগুলো স্রেফ হাওয়া...। চিৎকার দিয়ে উঠলেন মা। পরদিন সকালে চৌধুরী সাহেবকে পাওয়া গেল। হাত-পা আর চোখ বাঁধা অবস্থায়। বাড়ির পাশের ধান ক্ষেতে। তার গায়ে মাছি ভন ভন করছে...। দুষ্টুলোকেরা পরে বলাবলি করেছে, চৌধুরী সাহেবকে মারার পেছনে তার মুক্তিযোদ্ধা ছোট ভাইসহ আমাদের গ্রামের আরো দু’চারজনের হাত ছিল। কারন ছিলো ভদ্রলোকের প্রচুর জায়গা সম্পত্তি !
আমাদের গ্রামে ছিলেন একজন চিহিৃত রাজাকার (!)। তার নাম ছিলো মমতাজ মৌলবী। তার ছেলেও ছিলো রাজাকার বাহিনীর সদস্য। আমাদের বাড়িটি ছিল সরকারি পাকা রাস্তা থেকে আধা মাইল ভেতরে। গ্রামের উত্তর পাশ দিয়েই গেছে ঢাকা লক্ষীপুর পাকা রাস্তা। আর্মি এবং রাজাকাররা মিলে আশেপাশের গ্রামের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিলেও আমাদের গ্রামে কারো গায়েও ফুলের টোকা দেয়নি। এমনকী একবারের জন্যও গ্রামে আর্মিরা ঢোকেনি, শুধুমাত্র এই চিহিৃত এবং নাম সর্বস্ব রাজাকার ভদ্রলোকের কারনে। অথচ কী আশ্চর্য! আমার কাশেম মামাসহ তথাকথিত তার সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন হবার একদিন পর মমতাজ মৌলবী আর তার ছেলেকে গ্রামের শত শত মানুষের সামনে দিয়ে হাত আর চোখ বেঁধে নিয়ে যায়...। পেছন পেছন কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে থাকে মৌলবীর অন্য ছেলেমেয়েরা আর তার স্ত্রী। একদিন পর গ্রামের পাশের শুকনো খাল থেকে বাবা আর ছেলের লাশ নিয়ে আসে পরিবারের অন্য লোকজন। আমার আম্মা এসব দেখেন আর চোখের জল ফেলেন। কাউকে তোয়াক্কা না করে মমতাজ মৌলবীদের বাড়িতে যান আম্মা। ওদের সান্তনা দেন, এছাড়া আর কীইবা করতে পারতেন তিনি ?
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যেকোন লেখা আসলে শুধু লেখা হিশেবেই ধরা দেয় না, আবেগ হয়েও ছুঁয়ে যায়, হৃদয়ের গহীনে। প্রিয় মেসবাহ ভাইকে আবারো ধন্যবাদ।
অনেকদিন পরে এবিতে ঢুকেই এই পোস্ট!!
যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধগুলো পড়ে কিনা জানি না।
আমার আব্বাকে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো! তার অপরাধ খাদ্য গুদামের ইনচার্জ হিসাবে তিনি গুদামের চাবি দিতে অস্বীকার করেছিলেন। মার তিনি ভালোই খেয়েছিলেন, ঠান্ডায় ফেলে রেখেছিলো- পরে তার অ্যাজমা হয়ে যায়। আমার দু'মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একজন পাকিদের কাছে ধরা খাবার পর তাঁর এক দুর সম্পর্কের মামা (যিনি রাজাকার ছিলেন) তাকে আর্মি ক্যাম্প থেকে ছাড়িয়ে আনেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হবার পরে রাজাকার ভদ্রলোককে মেরে ফেলার জন্য ধরে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে বাঁচাবার জন্য কেউ যায়নি। তবে আমি এসব ঘটনাটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবেই দেখতে চাই। একটা বিশাল অর্জনের পেছনে অনেক ত্যাগ/অপরাধ থাকতেই পারে, আউটকামটা ভালো হলেই ভালো।
এ পোস্টটা মেসবাহ য়াযাদ ভাই ছাড়া অন্য কেউ দিলে এবং সামুতে হলে প্রতিক্রিয়াটা কি হতো ভাববার চেষ্টা করছি।
পোস্ট পড়ে মনে হলো যে, মুক্তিযোদ্ধারা সব লুটেরা/সন্ত্রাসী এবং রাজাকার সব ভালো লোক।
এটা আপনার শোনা গল্প। তাই কিছু বলার নেই। যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছে তারা সকলেই যে সুফী ছিলেন সেই ভাবনাটা ঠিক না। এমন ১/২টা বিষয় থাকতেই পারে। তবে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের সময়ে এগুলো ব্লগের পাতায় উঠিয়ে জামাতীদের সুযোগ করে দেয়া হয়। আশা করছি আপনি আপনার এই পোস্টের সমস্যাটা বুঝতে পারবেন।
আপনি হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে, ছুপা জামাতীরা সাধারণত এমন গল্প করে মানুষের কাছে। আপনি যার কাছ থেকে শুনেছেন তাকে একটু যাচাই করলে ভাল করবেন।
খুব কি অবাক হ্লাম ! জানি না ।
দেশ স্বাধীন হবার পর করাপশনে যারা জড়িত ছিলো ম্যাক্সিমাম এর গায়ে মুক্তিযোদ্ধা সিল ছিলো ।
তিন বছর বয়সের স্মৃতিতে ভর করা এবং শোনা কথার গল্পগুলো ছাগুকুলের খুব পছন্দ হবে সন্দেহ নাই।
অ।ট। আপনার ডাকনাম তাহলে ক!
আপনার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি টা পইড়া মনে হইল মুক্তিযোদ্ধারা খুনি, ডাকাত, পিশাচ । যারা সে সময় পাকি সেনা ভর্তি বাংলাদেশে গ্রামে গন্জে ত্রাস বর্বরতার রাজত্ব কায়েম করেছিল। আর রাজাকার রা ছিল ভালো মানুষ। দেশের উপকার করেছে সেই কারণে নির্মম ভাবে স্বাধীনের পর অমানুষ মুক্তযোদ্ধারা তাদের হত্যা করেছে।
হোয়াট দ্যা হেল ?
এই গল্পরে একজন তিন প্লাস বয়সীর স্মৃতি হিসাবেই দেখলাম।
মুক্তিযোদ্ধারা ফেরেশতা ছিলো বিষয়টা এমন না আবার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান যারা হইছিলো তারা সবাই ইবলিশ ছিলো বিষয়টা এমনও না। অনেক চোর-বাটপার সুবিধাবাদীরাও মুক্তিযুদ্ধে অয়শ নিছে...অনেক সাধারন মানবতাবাদী মানুষ রাজাকারের ছদ্মবেশে তার গ্রামের কিছু লোকরে বাঁচাইছে। পাক-হানাদারগো তারা অনেক সময় অনেক অন্যায় থেইকা ফিরাইতে পারছে। কিন্তু নয়মাসই তারা ঠেকাইয়া রাখতে পারছিলো বিষয়টা কখনোই এমন না। এতে তাদের সুবিধাবাদী চরিত্রেরও কিছু প্রকাশ ঘটে।
মুক্তিযোদ্ধারা লুটপাট করছে-তারা দায়িত্বপালনরত মানুষরে তুইলা নিয়া গেছে এই তথ্যগুলি নতুন লাগে নাই। কিন্তু হিন্দুবাড়িতেই তাগো লুটপাটে বেশি আগ্রহ ছিলো এইটা এই প্রথম শুনলাম। তিন প্লাস একজনের কাছে মায়ের এরচাইতে ভালো স্মৃতি থাকনের কথা...তার মা'রে মহৎ বানাইতে এইরম গল্প পত্তনের কোনো প্রয়োজন হয় না। যদি এইটা গল্প হইয়া থাকে তাইলে অসৎ গল্প আর যদি সত্যি হইয়া থাকে তাইলে অসৎ স্মৃতি রোমন্থন; কারণ তিন প্লাস বয়সী একজনের মাথায় স্মৃতি থাকনটা অস্বাভাবিক না লাগলেও এমন ডিটেইলে কোনো কিছু মনে রাখা কঠিন। আর এইটা একজন মায়ের থেইকা শোনা গল্প হইলে সেই মায়ের বেকুবীপনা ছিলো, ক্ষেত্র বিশেষে অসততা ছিলো।
মেসবাহ ভাই এই গল্প কি বুইঝা লিখলেন সেইটা বুঝলাম না। খারাপ লাগলো মুক্তিযুদ্ধের এমন ত্রিভুজীয় ইন্টারপ্রিটেশনে।
মুক্তিযোদ্ধারা ফেরেশতা ছিলো বিষয়টা এমন না আবার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান যারা হইছিলো তারা সবাই ইবলিশ ছিলো বিষয়টা এমনও না। অনেক চোর-বাটপার সুবিধাবাদীরাও মুক্তিযুদ্ধে অয়শ নিছে...অনেক সাধারন মানবতাবাদী মানুষ রাজাকারের ছদ্মবেশে তার গ্রামের কিছু লোকরে বাঁচাইছে....
আপনের কাহিনীর মতন আমারটাও বিচ্ছিন্ন কাহিনী... কোনো এক অজো পাড়াগাঁয়ের। আপনের কি-বোর্ড থেইকা এই লেখা বাইরনের পরেও আমার লেখা ঘটনাগুলা মানতে পারবেন্না... এই নিয়া আমারে শক্ত কতা শুনাইবেন, এরেই কয় হিপোক্রেসি ?
এমন একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া হবে জেনেও পোস্টটা দিয়েছি। কোনোভাবেই আমি বুঝাতে চাইনি যে, মুক্তিযোদ্ধারা খারাপ ছিল। রাজাকাররা ভালো ছিলো। শুধু এলাকার পরিচিত কিছু হিন্দু, রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সবগুলো ঘটনাই আমার গ্রামের। এসবের স্বাক্ষী হচ্ছেন আমার মা। এই নিয়ে যতই বিতর্ক বা অসন্তোষ হোক না কেনো, আমি আমার বক্তব্যে অনঢ় রইলাম।
সবাইকে যার যার মতামতের জন্য শ্রদ্ধা। আলাদা করে হয়ত কারো মন্তব্যের উত্তর দেব না...
মেসবাহ ভাই আমি এইটারে স্মৃতিকথা ভাবি নাই আপনার উপস্থাপণ ভঙ্গীর কারনে। প্রথমেই এর জন্য ক্ষমতাপ্রার্থী, গল্প ভাইবা আপনার মাকে নিয়া কিছু মন্তব্য কইরা ফেলছি। আমার মনে হয় না আপনার মা কেবল এই ধরনের নেতিবাচক ঘটনাগুলিই আপনাদের বলছেন, তিনি নিশ্চয়ই অনেক সংগ্রামের ঘটনাও আপনাদের বলছেন কিন্তু আপনি বাইছা বাইছা সেইসব ঘটনাগুলিরই উল্লেখ করছেন কেবল, যাতে মনে হয় আপনার মা এখন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করতেছেন, যাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদেরও যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিচার করার বিষয়টা প্রচারণামূলক উপাদান। হঠকারীতা কইরা নিজের মা'রে আপনি ছোট করলেন এইটা বুঝার মতোন জ্ঞান আপনার আছে বইলাই জানতাম।
আমি নিজে মুক্তিযোদ্ধাগো কোনো অপরাধ নাই বইলা দাবী করি না। কিন্তু একই পাত্রে মুক্তিযোদ্ধারা কেবল দস্যুবৃত্তি চালাইছে আর তার বিপরীতে একজন রাজাকার তার দেশের মানুষ বাঁচাইছে এইরম তরকারী রান্ধুম না কখনো, তাতে মূল ইতিহাসরে বিকৃত করা হয়...আপনি অনঢ় থাকেন বা না থাকেন ইতিহাস নিয়া ছেলেখেলা করলে তার দায় আপনারেই নিতে হইবো, মায়ের উপরে চাপানোটা শোভন মনে হইলো না।
যে চিত্রটা এই লেখায় এসেছে, সেটা খন্ডিত কোন রূপ হতে পারে। কিন্তু এই লেখা পড়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে দারুণ বিভ্রান্তিকর ধারণা তৈরী হতে পারে। একটা ভুল মেসেজ দেবে মানুষকে।
সব মুক্তিযোদ্ধা ধোয়া তুলসীপাতা নয়। কিন্তু আমি ভেবে কুল পেলাম না একটা এলাকার প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা দুষ্কৃতিকারী হলো আর রাজাকারগুলো সাধু হলো কেন?
এরকম একটা লেখা যদি কোন জামাতীর হাত দিয়ে আসতো, তাহলে এতটা হতাশ হতাম না। কিন্তু মেজবাহ ভাইয়ের মতো মানুষ এই সময়ে এরকম একটা লেখা দিলেন কেন? আপনার লেখাটা পড়ে রাজাকারেরা কতোখানি গর্ববোধ করবে তাই ভাবছি.....
মেসবাহ ভাইয়ের সাথে চানপুরের চানমিয়ার সাথে পরিচয় আছে নাকি? ত্রিভূজ যার সাথে আলোচনা কইরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতেছিলো...
আপনার এই লেখাটা পইরা অরিয়ানা ফালাসির সেই সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়লো। কাদের সিদ্দিকী কয়েকজন রাজাকারকে বেয়নেট দিয়া প্রকাশ্যে হত্যা করছিল। ফালাসির লেখা পইড়া মনে হবে এই হত্যাকান্ডটাই পুরা ১৯৭১ সালের সবচেয়ে বড় রোমহর্ষক ঘটনা, এবং বাংলাদেশের মানুষ বর্বর, আনন্দ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছোড়ে আর এইসব বর্বরদের নেতা শেখ মুজিব।
আপনি যা লিখছেন তা যদি ঘটতো তাহলে দেশ স্বাধীন হতো না, হিন্দু সম্প্রদায় মানুষের সম্পত্তি থাকতো মুক্তিযোদ্ধাদের কবলে, আর রাজাকাররা আসল মুক্তিযোদ্ধা।
চরম হতাশ হলাম লেখাটা পড়ে।
ব্যক্তিগতভাবে কারো মন্তব্যের জবাব দেবনা বলেও আপনার লেখার জবাব দিচ্ছি শুধু শেষ লাইনটার জন্য। আপনি লিখেছেন- চরম হতাশ হলাম লেখাটা পড়ে।
একটা বিষয় বুঝিনা মাসুম ভাই, আমি শুধু আমাদের ছোট একটি গ্রামের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা তুলে ধরেছি। যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আমার মা। কিন্তু আপনাদের সবার মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে-
১.আমি বুঝিয়েছি, এটাই সারা দেশের চিত্র
২.মুক্তিযোদ্ধারা সবাই খারাপ, লুটেরা
৩.বাংলাদেশের কোথাও কোনো হিন্দু পরিবার তাদের সর্বস্ব খোয়ায়নি
৪.সারাদেশের রাজাকাররা একজরও ভালো কাজ করেনি বা কারো জান বাঁচায়নি
নাহ, আমিও চরম হতাশ হলাম। পোস্টটা প্রাইভেট করে ফেলবো কিনা, ভাবছি...
আজ মাইনাস বাটনটা খুঁজলাম প্রথম বারের মতো।
মন্তব্য করুন