ডরাইসি
সকালবেলা বন্ধু স্বপন ফোন করে বললো, দুপুরের পরে ফ্যন্টাসি কিংডমে যাবে। বিকালে আড্ডানো ছাড়া তেমন কাজ ছিল না। ফ্যান্টাসিতে যেহেতু অনেক বন্ধুরা যাবে, তাই আড্ডানোর জন্য যাওয়ার মনস্থির করলাম। ৩ টার পরে আমরা তিন গাড়ীতে রওয়ানা হলাম। আমি, স্বপন, জুয়েল, তানিয়া, সিমু, কিমি, নওরোজ আর স্বর্ণা। ওখানে গিয়ে আরো অনেককে পেলাম। কাল ফ্যাস্টাসিতে ছিল বাংলালিংক প্রথম আলো মাদক বিরোধী কনসার্ট। বিনে পয়সায় পাস পেলাম। পাসের সাথে হেরিটেজ পার্ক এবং ফ্যান্টাসি কিংডমের সব রাইডে চড়ার টিকেটও পেলাম। কনসার্ট শুরু হতে আরো দেরি হবে।
সবাই মিলে হেরিটেজ পার্কে ঢুকলাম। ক্ষাণিক সময় ঘোরাঘুরি করে ফ্যান্টাসিতে ঢুকলাম। এর আগেও পরিবার নিয়ে ফ্যান্টাসিতে এসেছিলাম। কোনো রাইডেই চড়া হয়নি আমার। ছেলে চড়েছে। তো, কালকে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একটা রাইডে চড়লাম। রাইড চলতে শুরু করলো...। উপর নিচ কিছুক্ষণ ঝাঁকালো। মানে পটের ভেতরে যেভাবে কালো জাম লবন মরিচ দিয়ে ঝাঁকায়। আমি শক্ত করে সিট আঁকড়ে ধরলাম। চোখ বন্ধ করে রাখলাম। মনে মনে আল্লারে ডাকতে থাকলাম। সব মিলিয়ে রাইড চললো- ৬/৭ মিনিট। আমার মনে হলো অনন্তকাল ধরে চলছে। একসময় রাইড বন্ধ হলো। আমি নিজেকে কোনো মতে টেনে নামালাম সিট থেকে।
এরপর শুরু হলো শরীরে রি-অ্যাকশন। রাইড থেকে নেমেই পাশের দেয়ালে বসে পড়লাম। সারা শরীর ঘেমে একাকার। মাথা ঘুরছে। বমি বমি ভাব হচ্ছে- কিন্তু বমি হচ্ছে না। হলে হয়তো শরীরটা হাল্কা হতো। চোখে মুখে পানি দিলাম। বন্ধুদের বললাম, ফিরে আসতে। ওরাতো আমার এ অবস্থা দেখে হেসেই খুন। আমিযে বাইরে এসে একটা গাড়ী ভাড়া নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসবো, শরীরের সে অবস্থাও নেই। যেখানে বসে ছিলাম, সেখানেই বসে রইলাম। ঘন্টা তিনেক ঘুরে এল বন্ধুরা। এরমধ্যে কনসার্টও দেখে এসেছে। আমাকে কয়েকবার ফোন করেছে। পকেট থেকে ফোন বের করে ধরার মত অবস্থাও আমার নেই। এবার চিন্তায় পড়লো ওরা। অবশেষে আমাকে এসে উদ্ধার করলো ওরা- সেই দেয়ালের উপর থেকে। আমি গত ৩ ঘন্টা একই জায়গায় ঠাঁয় চোখ বন্ধ করে বসে আছি। অনেক চেষ্টা করেছিলাম। বমি হচ্ছে না।
ওরা ধরাধরি করে আমারে বাইরে নিয়ে আসলো। তারপর গাড়ীতে বসিয়ে এসি ফুল ছেড়ে দিল। রওয়ানা হল ঢাকার পথে।
আমাকে যখন বাসায় নামিয়ে দিল তখন রাত সাড়ে নয়টা। বাসায় ঢুকে কারো সাথে কোনো কথা না বলে শুয়ে পড়লাম। দুইটা ফ্যান ছেড়ে দেবার জন্য বললাম। বৌ জানতে চাইলো কী হয়েছে। ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করলাম। ছেলে পাশে এসে দাঁড়ালো। সারা শরীর তখনও ঘামছে। ছেলে গা থেকে টেনে গেঞ্জি খুললো। টের পাচ্ছি, খারাপ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে...। সময় ঘনিয়ে এসেছে কীনা বুঝতে পারছিনা। ছেলে আমার এ অবস্থা দেখে আর থাকতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে জানতে চাইলো- কী হয়েছে বাবা ? ডাক্তারের কাছে যাবে ? চাচাদের ডাকবো ? আমি কোনো কথা না বলে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলাম। কপাল থেকে ঘাম বা চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে টের পেলাম। ছেলে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ওর মা কাপড় ভিজিয়ে এনে মুখ হাত মুছে দিচ্ছে। একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। ছেলের মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো। ঘড়িতে রাত একটা পনের মিনিট। আগের চেয়ে ভাল লাগছে একটু। ঘরে সবাই জেগে আছে। উঠে হাত-মুখে পানি দিলাম ভাল করে। গোসল করতে পারলো ভালো লাগতো্। শরীরে শক্তি নেই। প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে। মনে পড়লো- বিকেল ৪ টার পরে পেটে আর দানা-পানি কিছুই পড়েনি। সামান্য কটা ভাত খেয়ে শুয়ে পড়লাম। এমন হলো কেনো, বুঝতে পাছিলাম না। তবে এতটাই ভয় আর আতঙ্ক এসে গ্রাস করেছিলো যে, সত্যি সত্যি মরণের কাছ থেকে ঘুরে এসেছি। এসব ভাবতে ভাবতে খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়লাম...
আমারও রাইড ভীতই আছে, সবার সাথে যাই ঠিকই কিন্তু চড়ি আন কিছুতেই, আমার টিকিট দিয়ে অন্যেরা ঘুরান্তি দেয় আবারও! এত্তো যন্ত্রনা করে মজা পাওয়াতে আমি নাই!
এমন পার্কে গেলে "ডরাইল্লা" কথাটা শুনে শুনে আমি অভ্যস্ত! তো কি হইছে! অনেকআগে একবার পিচ্চিটাইপ একটা রাইডে উঠছিলাম আর লাস্ট নন্দনে পানিসহ একটা বড়ো রাইডে ২জন করে বসে তাতে জোর করে উঠিয়াছিল ভাইয়া, আমার চিৎকারে তার কানের দফারফা হইয়া গেছে!!!
তবে আপ্নেরটার মতো ইফেক্ট এত্তোক্ষন কারো থাকে বলে শুনি নাই!
হ, আমার মতো ইফেক্ট এত্তোক্ষন কারো থাকে বলে শুনি নাই!
আরেকজন পাইলাম। তবে আপনের অবস্থা দেখি আমার চেয়েও খারাপ। একবার নন্দনে গিয়ে একটাতে উঠছিলাম। মনে হয়েছিলো এখানেই শেষ। সাথে বোন ছিলো, ওরে এমনভাবে ধরছি যে সেও অর্ধেক মরে গেলো। ফ্যন্টাসী কিংডমে গিয়ে আমি আর কোন রাইডে চরি নাই। দেখেই ভয় লাগে।
ভাবছি, জীবনে আর কোনো দিন এইসব জায়গায় আর যামু না
আমার মত অকম্মা মনে হয় এই জগতে আর নেই! দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর যাবত ঢাকায় অবস্থান করছি। অথচ আজ পর্যন্ত ফ্যান্টাসি কিংডমে যাওয়া হলো না।
দেখি, এবার পরীক্ষা শেষ হলে যাবোই যাবো। 
দোয়া রইলো
ডরাইছেন সমস্যা নাই কিন্তু আপ্নের দেখতেছি রি-একশন করছে

কুন ব্যাপার না আমরাও ডরাই
ডরতো এখনও কাটে নাই
এই বুইড়া বয়সে রাইড চড়া ঠিক হয় নাই।
হ, এই কামও কৈরেন না। শরীরে সইবো না...
আপনের বয়সতো আবার আমার চেয়ে ১ মাস ১৫ দিন বেশি
এই বুড়া বয়সে বাইরে চড়াচড়ি বাদ দেন। আর কতো!
ভাবতেছি, চড়াচড়ি যাই করুম ঘরে- বাইরে না।
পুরাই ঝুঁকি
মাসুম ভাইয়ের এই কমেন্ট ব্লগের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে
হাসান রায়হান বলেছেন : এই বুইড়া বয়সে রাইড চড়া ঠিক হয় নাই।
খালি আমি বুড়া কই নাই মাসুম ভাইো কইছে।
মেসবাহ য়াযাদ বলেছেন : হ, এই কামও কৈরেন না। শরীরে সইবো না...
আপনের বয়সতো আবার আমার চেয়ে ১ মাস ১৫ দিন বেশি
আমি খালি আপনারে সমর্থন দিছি।
আমিও খালী সমর্থন করছি
এই বুড়া বয়সে বাইরে চড়াচড়ি বাদ দেন। আর কতো! Stare
ভাবতেছি, চড়াচড়ি যাই করুম ঘরে- বাইরে না।
পুরাই ঝুঁকি
নৌকার মত রাইডটা? আমি ও অইটাতে উঠে বমি করে দিয়েছিলাম
ইস রে!
এখন কেমন আছেন ভাইয়া??
আজ অনেকটা ভাল
মনে হয় রোলার কোষ্টারে চড়েছিলেন। হাহাহাহাহা
তবে আপনার ঐ অবস্থায় ভাত খাওয়া ঠিক হয় নাই মেসবাহ ভাই। স্যুপ বা ডাবের পানি এধরনের
কিছু খেলে ঠিক ছিল। ভাত এসব অবস্থায় আরো বিপদজনক। তবে রিস্ক নেয়া ঠিক না। মনু ভাবিরে বলতেন
ডাক্তার ডাকার কথা। কাজটা আদতে ঠিক করেন নাই। বড় বিপদ হতে পারৎ। আমার বাবাও এরকম।
আয় মা,বুকে আয়....
সুস্থ হইছেন মেসবাহ ভাই? আপনার ১ মাস ১৫ দিন বয়সে বড় ভাই আজ অফিসে আসে নাই মনয়, কাল পিক আপে চইড়া বাসায় কি যাইতে পারছে নাকি খুঁজ নিয়েন।
ক্যান, তোমার কাছে কি বড় ভাইয়ের ফোন নং নাই ?

নাকী তোমার ফোনে ব্যালেন্স নাই...
একটা মানুষ রোলার কোস্টার এ চড়তে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়সে কোথায় তারে আরো ভাল ভাল কথা বলবে তা না সবাই তার বয়সের পিছনে লাগসে। মাসুম ভাইএর কমেন্টতো একটা হিস্ট্রি। হাহাহাহাহাহাহাহাহা। খুবই মজা পাইলাম। যাক মেসবাহ ভাই আপ্নে আর কুনদিন ওইসব রাইডে চইড়েন না তাইলেই চলব।
আরে ওটার নাম রোলার কোস্টার না, সম্ভবত আক্টোপাস জাতীয় কিছু...

শুধু ঘুটা দেয়...
ও তাইলে মনে হয় ওইটা ম্যাজিক কার্পেট
।
এই জিনিষে চড়ে আমিও ব্যাপক ভয় পেয়েছিলাম। এসবে চড়ে মানুষ যে কী মজা পায় খোদা মালুম!
যাক আপনি যে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন এতেই আমি খুশি। এবারে একটু নিজের দিকে মন দেন। হাঁটা হাঁটি কেরেন নিয়ম করে।
সান্তা মারিয়ায় চড়ে আমার মনে হয়েছিল এটাতে কেন চড়লাম?? এখন তো আমার কিছুই করার নেই। এ যদি আমাকে আছড়ে ফেলেও দেয় সয়ং আল্লাহ এসেও বাঁচাতে পারবে না । এক মাত্র গাধা ছাড়া সাধ করে কেউ এমন বিপদে পড়ে। তবে কেন জানিনা রাইডগুলি বাচ্চাদের চাইতেও বেশী আমাকে টানে।
মন্তব্য করুন