দুঃস্বপ্নের ৪০ ঘন্টা
১৪ জুন ২০১১, দুপুর ১২.১৫ মিনিট
আমার পরিচিত একজন ব্যবসায়ী তার অফিস থেকে বেরুলেন। গাড়ি না নিয়ে রিকশায় রওয়ানা হলেন। সাথে তার অফিসের একজন যেতে চাইলে না করলেন। বললেন, কস্তুরি হোটেলে যাচ্ছি। একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে মিটিং আছে। এরপর থেকে সে ভদ্রলোকের সব কটি মোবাইল ফোন বন্ধ। তাকে আর ট্রেস করা গেল না। সেদিন গেল, তার পরদিন ও তার কোনো খোঁজ পেলোনা তার অফিস বা পরিবারের কেউ। হাসপাতাল, থানাসহ সব সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসেও তার কোনো তথ্য পাওয়া গেলো না। রাশেদ নামের একটা ছেলেকে সন্দেহ করলো পরিবারের লোকজন। তার নামে জিডি করা হলো থানায়।
১৫ জুন ২০১১, বিকাল ৫.১০ মিনিট
ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের তখনো কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তার আরেক ব্যবসায়ী পার্টনারের ফোনে রাশেদ ফোন করে জানালো- তার বড় বিপদ। সে দেখা করতে চায়। তার কাছে অনেক তথ্য আছে। সে আন্দাজ করছে- ব্যবসায়ী কোথায় আছে। রাশেদের কথা বিশ্বাস করলেন পার্টনার ভদ্রলোক। তিনি রাশেদকে তার অফিসে আসতে বললেন। ঠিক হলো, রাশেদ সন্ধ্যায় তার অফিসে আসবে। এর মধ্যে ভদ্রলোকের ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে একটা ম্যাসেজ এল। যাতে লেখা- আপনি রাশেদের সাথে দেখা করবেন না। সে বিপদে আছে। আপনেও বিপদে পড়বেন... আপনার শুভাকাঙ্খী। ফোন এবং ম্যাসেজের কথা ব্যবসায়ী ভদ্রলোক তার অফিসের লোকজনের সাথে শেয়ার করলো। সবাই একবাক্যে নিষেধ করলো- রাশেদ যাতে না আসে। বলা যায়না, কখন কী হয়! কিন্তু কারো কথা শুনলেন না তিনি। রাশেদকে ফোন করে আসতে বললেন অফিসে। রাশেদ এলো সাতটার সামান্য আগে। এসে ভদ্রলোকের রুমে গেল। গিয়ে ভদ্রলোকের হাত ধরে কেঁদে ফেললো। বললো, আপনি আমাকে কেনো আপনার অফিসে আসতে বললেন ? ওরা আমাকে বাধ্য করেছে। আমাকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেছে। আমিই আপনাকে অন্য নম্বর থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলাম। ১০/১২ জন বাইরে অপেক্ষা করছে...
১৫ জুন ২০১১, সন্ধ্যা ৭.১০ মিনিট
৭/৮ জন লোক দরজা ঠেলে জোর করে ঢুকে গেলো অফিসে। সোজা ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের রুমে। অস্ত্র ঠেকিয়ে সবার সামনে থেকে তাকে ধরে নিয়ে গেল। অফিসের লোকজন বাধা দিতে গেলে বললো- বাধা দিলেই গুলি করবে। তাদের পরিচয় দিল সরকারি এক গোয়েন্দা সংস্থার লোক বলে। তাকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে একটা কালো রংয়ের নিশান পেট্রোল গাড়িতে করে মূহুর্ত্যেই ওরা উধাও হয়ে গেল। অফিসের কিছু লোক ওদের পেছন পেছন গাড়ি নিয়ে ছুটলো। কিন্তু সেই কালো গাড়িটিকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। কেউ গেল নিকটবর্তী থানায়। কেউ সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে। ইতিমধ্যে অবশ্য গাড়ির নম্বর টুকে নিয়েছে লোকজন। কিন্তু কোথাও গাড়ি বা ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের সন্ধান পাওয়া গেল না।
থানায় রাশেদকে সন্দেহ করে জিডি করা হলো। সেই জিডির কপি নিয়ে যাওয়া হলো গোয়েন্দা সংস্থায়। জিডির কপিতে গাড়ির যে নম্বর দেয়া আছে, তা দেখে কর্মকর্তারা একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তারমানে নিশ্চিত হওয়া গেছে- গাড়িটি তাদের সংস্থার। অথচ তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেনা। বিভিন্ন সোর্স অ্যাপ্লাই করে জানা গেল- সত্যি সত্যিই গাড়িটি তাদের।
১৫ জুন ২০১১, রাত ১০ টা
ব্যবসায়ীর সাথে নিয়ে যাওয়া ফোন ট্র্যাক করে জানা গেল- সে ফোন সর্বশেষ অ্যাকটিভ ছিল রাত ৮.২২ মিনিট পর্যন্ত। যে স্থানের ঠিকানাও জানা গেল সেটা একটা সরকারি টর্চার সেল। ১/১১ এর সময় এখানে শয়ে শয়ে মানুষকে ধরে এনে টর্চার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এবং বিভিন্ন সোর্সের তথ্যানুযায়ী ভদ্রলোক তাদের হেফাজতে নেই। অথচ ফোন ট্র্যাকিংয়ে নিশ্চিত- তাদের তত্বাবধানে। রাত বাড়ছে আর ক্রমেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। আতঙ্ক গ্রাস করছে ধীরে ধীরে...
১৬ জুন ২০১১, ভোর ৩ টা
গোয়েন্দা সংস্থার অফিস থেকে জানা গেলো- গত ২৪ ঘন্টায় ২ জন ব্যবসায়ী এবং এক ব্যবসায়ীর ম্যানেজার কিডন্যাপ হয়েছে। তিনটা ঘটনাতেই একই গোয়েন্দা সংস্থার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ তারা কিছুই জানেনা। সবশেষের ঘটনায় তাদের গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটা ঘটনায় রাশেদের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। তারমানে রাশেদকে ধরা গেলে অনেক কিছু জানা যাবে। কিন্তু কে এ রাশেদ ? রাশেদ সম্পর্কে শুধু দুইটা ফোন নম্বর (যা থেকে সে ব্যবসায়ী ভদ্রলোককে ফোন এবং ম্যাসেজ পাঠিয়েছে) ছাড়া আর কোনো তথ্য কারো কাছে নেই। গোয়েন্দা সংস্থার চৌকষ অফিসার (যিনি আগের ২ টা কিডন্যাপ কেইসেরও আইও) ব্যাপারটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিলেন। রাশেদের ফোন ট্র্যাক করা শুরু করলেন। জানা গেল, রাশেদের ফোন এবং ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের ফোনের শেষ লোকেশন একই। এবার গোয়েন্দা অফিসার নিশ্চিত হলেন রাশেদের অবস্থান সম্পর্কে। এবং আরো নিশ্চিত হলেন অপহরণের সাথে রাশেদ জড়িত। এরপর রাশেদ সম্পর্কে আরো খোঁজ নিতে গিয়ে বিভ্রান্ত হলেন গোয়েন্দা অফিসার। বেরিয়ে আসলো অনেক হোমরা-চোমরার নাম। অফিসার জিডির পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ মামলা করার পরামর্শ দিলেন। ফোন খোলা রাখার কথা বলে ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি...
১৬ জুন ২০১১, ভোর ৩.৪০ মিনিট
গোয়েন্দা সংস্থার অফিস থেকে বেরিয়ে লোকজন আবার থানায় গেল। ওসি সাহেবকে বললো- জিডির পাশাপাশি নিয়মিত মামলা করার জন্য। গাঁইগুঁই করে ওসি রাজি হলেন মামলা নিতে। সে অনুযায়ী ডিউটি অফিসারকে বলে দিলেন। মামলা লিখার সময়ই হঠাৎ সন্ধ্যায় যে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছে, তার ফোন থেকে তার অফিসের এক লোকের ফোনে কল এলো। কথা বললেন ব্যবসায়ী নিজেই। বললেন, গাড়ি নিয়ে শাহবাগ যাবার জন্য। মামলা করা বাদ দিয়ে দুটো গাড়িতে করে সবাই ছুটলো শাহবাগের উদ্দেশ্যে। ভোর ৪ টার দিকে ভদ্রলোককে উদ্ধার করা হলো শাহবাগে। একটা ভ্যান গাড়িতে করে আসছিলেন তিনি। বর্তমানে প্রায় অচেতন। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। ভ্যানওয়ালার কাছ থেকে জানা গেলো, ভ্যানওয়ালা তাকে তুলেছে ফুলার রোড এলাকা থেকে।
১৬ জুন ২০১১, ভোর ৪.১৫ মিনিট
তাকে নিয়ে যাওয়া হলো ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলো। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে তাকে নিয়ে আসা হলো তার বাসায়। তার কাছ থেকে যা যা জানা গেল:
০ গাড়িতে তুলেই তার মাথায় কালো টুপি পরিয়ে দিয়েছে
০ মোটা বেল্ট দিয়ে হাত বেঁধে ফেলেছে
০ আনুমানিক ১৫/২০ মিনিট গাড়ি চালানোর পর এক জায়গায় নিয়ে এসেছে তাকে
০ সিঁড়ি বেয়ে আনুমানিক ৩ তলায় নিয়েছে
০ তারপর সেখানে নিয়ে শারীরিকভাবে টর্চার শুরু করেছে
০ হাঁটু এবং পায়ের তালুতে পিটিয়েছে
০ একটাই তথ্য জানতে চেয়েছে- কিডন্যাপ হওয়া ব্যবসায়ী কোথায় ?
০ যতই বলেছে সে জানেনা ততই টর্চার করেছে
একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ফোনে জানতে পেরেছে- কিডন্যাপ হওয়া সেই ব্যবসায়ী নাম গোপন করে ঢাকার একটি অভিজাত হাসপাতালে আগেরদিন বিকালবেলায় ভর্তি হয়েছে। একথা তার পরিবারের দু একজন ছাড়া কেউ জানেনা। এরপর ঘন্টাখানেক টর্চার বন্ধ রেখেছে। ধারণা করা যাচ্ছে, সেই সময়ের মধ্যে লোক পাঠিয়ে হাসপাতালে ব্যবসায়ীর অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে। তারপর তাকে গাড়িতে তুলে ফুলার রোড এলাকায় এনে চোখ থেকে কালো কাপড় খুলে নামিয়ে দিয়েছে...
বাংলাদেশ, আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
(যার হয় সে বুঝে!)
বাংলাদেশ, আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
(যার হয় সে বুঝে!)
কি বলবো! বাকহারা।
আমারও অবস্থা তোমার মত

বাস্তব না সিনেমা

এক্কেবারে বাস্তব এবং সত্য ঘটনা
তা বুঝতে পারছি। এভাবে আতঙ্ক নিয়ে কিভাবে থাকে মানুষ!
কারো কারো জন্য এটাই জীবনের একটা অংশ মায়াবতী
ডরাইছি।
তবে আপনে কেন ডরান না সেইটা বুঝতাছি না
ডরাই নাই বললে ভুল বলা হবে। তয় ডরের চেয়ে বেশি কাজ করেছে আতঙ্ক
বাপরে একদমে পড়লাম।
আমার কোটিটাকার দরকার নাই।
হ, আমারও কোটি টাকার দরকার নাই। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা কেবল সমস্যারই সৃষ্টি করে...
কত কিছুই না ঘটছে
আসলেই মাসুম ভাই, কত কিছুই ঘটছে...
কোনোটা চোখের সামনে আর কোনোটা আড়ালে
ঘটনার সাথে গোয়েন্দা সংস্থার একটা গ্রুপ জড়িত সেইটা বুঝতে পারলাম, কিন্তু বাকী কাহিনী কিছুই বুঝলাম না...
অফিসিয়ালি আসলে গোয়েন্দা সংস্থাটিও জড়িত নয়...
আপনার না বুঝাটা লেখকের অক্ষমতা
পৃথিবীটাই এরকম মনে হয়।
পৃথিবীটা না, বরং বলা যায় বাংলাদেশটা এরকমই
কি ভয়ঙ্কর !! প্রথম হারানো ব্যাবসায়িকে খুঁজতে গিয়ে দ্বিতীয় জনকে কেন অপহরণ করে টর্চার করা হল? তাছাড়া প্রথমজন কি সত্যিই অপহৃত হয়েছিলেন? ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না ।
যাই হোক, ভয় পাওয়া কাহিনী ।
খুব মনোযোগী পাঠক মনে হলো আপনাকে।
প্রথম জনকে পাওয়া যাচ্ছিলো না বলেই দ্বিতীয়জনকে কিডন্যাপ করা হলো। প্রথম জন সম্পর্কে তথ্য নেবার জন্য।
প্রথম জন স্বেচ্ছায় গা ঢাকা দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে...
ডিজিএফআই এর হারামজাদারা
আপনার পরিচিত সেই ব্যবসায়ীও সুবিধার লোক না
এই কথা গায়ে জালা ধরিয়ে দিল।
এতো হলিউডি সিনেমাকেও হার মানাইছে . . .
!
হ
প্রথম কিডন্যাপ হওয়া ব্যাবসায়ী এই নাটকটি রচনা করেছে তার স্বার্থের জন্য পার্টনারকে হেয় করতে। বড় বড় ব্যাবসায়ীরা এমন করেই । ওরা বেশ জটিল ওদের কাছে টাকাই সব।
আমি ব্যাবসায়ী না। এই ধরনের নাটক করার মত টাকাও নেই তবে টর্চার ও অযথা হয়রানি কে খুব ভয় পাই ভয় পাই থানা পুলিশ। মধ্যবিত্ত তো তাই মান সম্মানের ভয় বেশী।
আমারও
ফেসবুক মারফত খবর পাইলাম আপনে নাকি নিরুদ্দেশ হইতে যাচ্ছেন.. যাই করেন না কেন নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে ডিজিএফআইরে অন্তট জানায়া যায়েন.. নাইলে হেরা আমগো কাউরে বাইন্ধা নিয়া পিটাইবো... আমার মতে রায়হান ভাইরে ধরার চান্সই বেশি
েক টানে পড়লাম ।ভাল লাগল, ভয় ো লাগলো
আপনেরেও
এতো কথা আপনে জানলেন কেমনে?
না কৈলে কি মারবেন, ক্যাপ্টেন আফা ?
নিরীহ লুকদের ট্রাবল দিয়েন না ভাইজান।
কেডা নিরীহ লোক ? কারে ট্রাবল দিলাম ? কোন সাংকেতিক ভাষায় কতা কৈলেন, ক্যাপ্টেন !
জটিল অবস্থা...........
এত কিছু হয়ে গেছে! জানতাম না ত!
মন্তব্য করুন