সমুদ্দুরের গ্রাম দেখা
অনেকদিন গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয় না। শেষ গিয়েছিলাম তাও বছর খানেক আগে। সমুদ্দুরের বয়স এখন ৫ বছর ৩ মাস। বেশ কিছুদিন ধরে জ্বালাচ্ছিলো, গ্রামে যাবার জন্য। যদিও এর পেছনে তার মায়ের ইন্দন ছিলো স্পষ্টত। তাই প্ল্যান ছিলো রোজার ঈদের পরদিন বাড়ি যাবো। সপ্তাহ খানেকের জন্য।
আকাশে বাতাসে প্রচন্ড গরম। তারপরও হঠাৎ করে গ্রামে যেতে হলো। ২৪ তারিখ বাড়ি থেকে খবর এলো, একমাত্র ফুপুর অবস্থা খারাপ। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, বাড়ি যাবো। ২৪ তারিখ বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটের বাসে চড়লাম। সায়েদাবাদ থেকে বাস। মাঝে কুমিল্লায় চা বিরতি ৪৫ মিনিট। তেল নিলো বাসে, আরো ১৫ মিনিট। ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে সময় লাগে ৬ ঘন্টার মত। যদি যানজটে না পড়ে।
হিসেব মতে আমাদের পৌঁছানোর কথা রাত ১২ টার পরে। লক্ষীপুর যখন গাড়ি থামলো, তখনও ১০ টা বাজেনি। ভয়ে ২ বার বাসে বমি করলো সমুদ্দুর। ড্রাইভারের চালানোর স্টাইল দেখে মনে হলো, ১০ টায় তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। না যেতে পারলো বিচ্ছেদ অনিবার্য। যতবার বলেছি, আস্তে চালাতে- ততবারই সে এক্সেলেটরে পায়ের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। অগত্যা বলা বন্ধ করে শক্ত ধরে পিচ্ছিকে ধরে রাখলাম। ৮০/৯০ কিলোর কমে ড্রাইভার চালাতে অভ্যস্ত নয়, বুঝলাম। রাস্তা যতই সরু বা ভাঙ্গা হোক না কেনো।
বাস থেকে নেমে সমুদ্দুরের মা বললো, জান থাকতে আর কোনোদিন 'ঢাকা এক্সপ্রেস' বাসে উঠবে না। বললাম, ঠিকাছে। আগেই কথা ছিলো, এক বন্ধুর বাড়িতে উঠবো। সে বাড়িতে ঢুকে মন ভালো হয়ে গেলো। মফস্বল শহরের সুন্দর একতলা বাড়ি। বাড়িতে ৪টা রুম। একটায় আবার এসিও আছে। বাসায় আইপিএস ও আছে। বন্ধুর তিন কন্যা। বড়টা মোহনা, মেঝো কন্যা মৌমিতা। ছোটটির নাম মৌণতা। বন্ধুর বউয়ের নাম মুক্তা। আর বন্ধু মনু। আমরাও ২ ম। সবমিলিয়ে 'ম' এর ছড়াছড়ি।
বন্ধুর বড় মেয়েটি গানবাজনা করে, নাচে। জেলা পর্যায়ে পুরস্কারও পেয়েছে কয়েকটা। সমুদ্দুরতো বাসায় তবলা দেখে মহা খুশি। তবলা পিটালো মধ্যরাত অবধি। তিনকন্যার সাথে বেশ মানিয়ে গেলো 'লাজুক সমুদ্দুর'। অতিথিদের এসি রুম দিয়ে বন্ধু ৩ কন্যা নিয়ে অন্য ২ রুমে ঘুমাতে গেলো। সকালে কন্যাদের কিচির মিচিরে সকাল ৮ টায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ওরা স্কুলে যাচ্ছে। আমরাও উঠলাম। বিভিন্ন পদের নাস্তা সেরে সবাই এক সাথে বেরুলাম। গন্তব্য ভিন্ন। বন্ধু যাবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ৩ কন্যা আর তাদের মা যাবে স্কুলে। আমরা ফুপুর বাড়ি।
শহর থেকে ফুপুর বাড়ি ২ কিলোর মত পথ। রিকশায় আরোহী আমরা ৩ জন। সে রাস্তা এক্কেবারে গ্রামের রাস্তা। চারপাশে সবুজ আর সবুজ। ধান আর পাটের ক্ষেত। রাস্তার পাশে আম, কলা আর কাঁঠালের গাছ। নারিকেল আর সুপারির বাগান। আমাদের রিকশা চলছে ধীর তালে। সমুদ্দুর মহা অ্যাক্সাইটেড। তার সাথে আমার কথা ছিলো, গ্রামে গেলে তাকে গরু, ছাগল, মুরগি, হাঁস, মাছ, পুকুর এসব দেখাবো। ইতোমধ্যে তার অনেক কিছুই দেখেছে। মহাখুশি। আমরা ফুপুর বাড়িতে পৌঁছলাম। ফুপুর শরীরের অবস্থা মহা খারাপ।
চারপাশে অনেক আত্মীয়-স্বজন। ফুপুর ৪ মেয়ে, ৪ ছেলে, নাতী-নাতনীরা মিলিয়ে এলাহি অবস্থা। লোকজনকে সরিয়ে ফুপুর বাসে বসলাম। তার হাত ধরে বসে রইলাম ক্ষাণিকটা সময়। মুখে কোনো কথা নেই কারোরই। ফুপু চিনতে পারলেন। চোখ মেলে তাকালেন। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। সেটা কষ্টের, খুশির না অভিমানের- বুঝতে পারিনি। আমি সব বুঝিনা, কিন্তু এটা বুঝলাম যে ফুপুর সময় আর বেশি নেই। ফুপুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। ভাবীরা তাদের মেয়ের জামাই, ছেলের বৌদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। গাছের টাটকা লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে দিলেন। এই গরমে কী যে মজার সে শরবত ! গাছ থেকে পেড়ে আম, জামরুল, কাঁঠাল খেতে দিলেন। সমুদ্দুর হাঁস আর মুরগীর পেছনে দৌড়াচ্ছে। পুকুরের সিঁড়িতে পা ভিজালো। হাত-মুখ ধুয়ে নিলো।
দুপুর নাগাদ নিজের বাড়িতে চলে এলাম। নিজেদের ঘরে ঢুকে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। দরজা, জানালা, কাঠ সব ক্ষয়ে পড়ছে। দেখার কেউ নেই। গাছে গাছে অনেক আম ধরে আছে। গাছ থেকে আম পাড়ালাম। সেগুলো বস্তায় ভরলাম। বড় চাচার বাসায় দুপুরের খাবার খেলাম। বিকেলে নানার বাড়ি। আমাদের বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের হাঁটার পথ। মামীরা অবাক। অসময়ে আমাদের দেখে। খুশীও। এটা সেটা কত্ত কী খেতে দিলেন। সবই নিজেদের গাছের। টাটকা। কত আর খাওয়া যায়। রাতে কার বাসায় খাবো, সেটা নিয়ে একচোট রাগারাগি। বললাম, লক্ষীপুর ফিরে যাব। তারপর আবার রিকশায় চড়ে বন্ধুর বাড়ি। ততক্ষণে সন্ধ্যা।
রাতে বন্ধুর পরিবারের সাথে আড্ডা। মধ্যরাতে ঘুমাতে গেলাম। পরদিন আবার সকালে ফুপুর বাড়ি। ফুপুর সাথে আবারো কিছু সময় কাটালাম। আজ আর চিনতে পারলেন না আমাকে। চুপচাপ শুয়ে আছেন। বড় মায়া লাগলো। কী আর করবো। দুপুরে ফুপুর বাড়িতে খেলাম। ৪ টায় আমাদের ফেরার বাস। এবার আর ঢাকা এক্সপ্রেস নয়, ইকোনো এক্সপ্রেস। সিটটাও সামনের দিকে। সমুদ্দুরতো বাসে উঠবেই না। বললো, বাসে যাবো না, বাস জোরে চালায়। আমার ভয় লাগে। বমি হয়। অনেক বুঝিয়ে রাজি করলাম। বাস ঠিক সময়েই আসলো। আল্লাহর নাম নিয়ে রওয়ানা হলাম। রাত সাড়ে নয়টায় কাঁটাবন নামলাম। দশটা নাগাদ বাসায়।
ফার্স্ট কমেন্ট
ভাল লেগেছে অনেক। এক টুকরা গ্রাম যেন উঠে এসেছে লেখাটায়।
ধন্যবাদ জনাব
দারুন লাগল কাকা
হ, আপনেরে থ্যাংকু চাচা। ছবিগুলান যদি কেউ আপ কইরা দিতো।
ভাল লাগল। নিজের গরামের বাড়ির কঠা মনে হ্যে গেল।
কাঁঠাল আর আর কাঁঠালের মুঁচির ভর্তা খেতে ইচ্ছে করে দাদাভাই
আসো। খাওয়াবো ক্যাপ্টেন।
ছবিগুলো খুবই সুন্দর। সমুদ্দুরকে তো পুরাই নায়ক লাগছে।

ঘুরেফিরে সব গ্রাম একই রকম, সবুজে চোখ ভরে যায়।
সমুদ্দুর দেখি আমার মত বাস জোরে চালালে ভয় পায়
কাল রাতে তোমার কমেন্ট দেখালাম সমুদ্দুরকে। বললো, নায়ক মানে কি ? আমি কি তাহলে 'দেব' ? কিন্তু দেবতো লম্বা, বড়। আমিতো ছোট। আমি কীভাবে নায়ক হলাম ? জটিল প্রশ্ন। উত্তর দাও বেলি...
সমুদ্দুর কেন দেব হবে? ওইটা কেন নায়ক হইলো!!! সমুদ্দুর তো 'সমুদ্দুর' নায়ক
দেবরে সে বালা পায় বেলি
রোদ্দুরকে নিলেন না?
না, রোদ্দুরের কোচিং আর পরীক্ষা ছিলো।
বেড়াইলেন তাইলে
হ, রথ দেখা আর কলা বেচা... সমান তালে
মন্তব্য করুন