ইউজার লগইন

অনিকেত... ১

আমি নিজে আজকে দুপুরে ঘুমিয়ে গেসলাম.. ঘুম থেকে উঠে বেশ একটা কিছু লিখতে মন চাইলো... তাই এইটা লিখতে শুরু করছি... কি দাঁড়াবে জানিনা।
....................................................................................................

বহুদিন আমি দুপুবেলা ঘুমোই না। কেবল ছোটবেলায় মা যখন বারান্দায় কিংবা ছাদে তোষক মেলে দিতো ছারপোকা মারবার জন্য, আমি দিব্যি ঘুমিয়ে যেতাম তার উপরে, ঘুম থেকে উঠে আবিস্কার করতাম রোদের আঁচে আমার পিঠের সমস্ত রোমকূপ জ্বলছে, আমি ঘেমে নেয়ে উঠেছি। কিন্তু তেমন আরামের ঘুম আমার শীতের লেপের ওমেও কখনো হতোনা। আজকে দুপুরে আমার বিছানায় বসে সেইরকম একটা ঘুম পেলো, মায়ের বিছানো তোষক ছিলোনা, দিনটা'র কোথাও রোদের আভাসও ছিলোনা, তবু আমি দিব্যি ঘুমিয়ে গেলাম। বহুদিনের অনভ্যাসে ঘুম থেকে উঠে আমার সময়, কাল, পাত্র সব গুলিয়ে গেলো। ততোক্ষণে ঘর খানিক অন্ধকার হয়ে উঠেছে, ঘুম থেকে উঠার পর আমি কিছুতেই সময় ঠাহর করতে পারছিলাম না। চেয়ারে মাথা রেখে উবু হয়ে বসে থাকা আমার স্বামীকে চিনতেও আমার কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো।
আমার উঠে পড়ার মৃদু খসখস শব্দ শুনে সে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ''তোমার শরীর ঠিক আছে তো শানু? এই বিকেলে ঘুমাচ্ছো যে?''।
আমি খানিক লজ্জা পেয়ে বললাম, '' ঠিক বুঝিনি, দুপুরবেলা আজ কেন জানি অনেক ঘুম পেয়ে গেলো।''
মাহফুজ (আমার স্বামী) বলে উঠলো, '' না না ঠিক আছে, তুমি ঘুমিয়ে থাকো বরং, তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো, পরে বলবো।''
আমি বললাম, ''ঘুম তো ভেংগেই গেছে, তুমি একটু বসো, আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসছি।''
বাথরুমে আসার পরে আমার মনে পড়লো বহুদিন মাহফুজ এইসময়ে বাড়ি ফেরেনা, আজকে কিছু ঘটেছে? ওর সাথে আমার তেমন কথাও হয় না বহুদিন। আমাদের দুজনের সম্পর্কে বরফের ছোঁয়া কবে থেকে লাগতে শুরু করেছে ঠিক জানিনা। কেউ আলাদা করে অমনোযোগী হয়েছি সেইরকমও না। দুজন উদ্দেশ্যবিহীন মানুষ পাশাপাশি থাকতে থাকতে বোধ হয় একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়। বিয়ের পর পর শারীরিক সম্পর্কের প্রাথমিক উত্তেজনার জের ধরে হয়তো কিছুটা মনেরও আদান প্রদান ছিলো। কোনদিন ও আমার কলেজে চলে আসতো ওর লাঞ্চ এর সময়ে, কলেজের সামনের ক্যাফেতে বসে কিছু একটা খেতে খেতে ওর অফিসের গল্প, কিংবা আজকের ক্লাসে কিছু ঘটেছে কিনা সেই নিয়ে কথা হতো। কোনকোনদিন হয়তো ও অফিস থেকে খানিক আগে ছুটি নিয়ে আমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতো। কিন্তু এমনকি তখনও আমাদের দুজনের মাঝখানে যেন তৃতীয় কারো... ঠিক মানুষ নয়, বরং একটা দেয়ালের অস্তিত্ব টের পেতাম। রাতে বাড়ি ফিরে নিয়ম করে শারীরিক টানাপোড়েন। আমার কি তখনো ক্লান্ত লাগতো না? কবে থেকে এইটুকু'ও থেমে গেছে, সে প্রায় মাস ছয়েক হবে... অথচ বিয়ের মোটে দেড়টা বছর পার হয়েছে।

ওর বিদেশী কম্পানি'তে কেবল রোববার ছুটি, আর আমার কলেজ শুক্রবারে বন্ধ। তাই রোজ নাস্তার টেবিলে আর কখনো সখনো রাতের খাবারের সময় ছাড়া আমাদের দেখা-সাক্ষাৎও হয়না তেমন। হয়তো বাজারের ফর্দ, কিংবা বড়োজোর ও সামের সপ্তাহে অফিসের কাজে কোন দেশে যাচ্ছে সে নিয়ে কথা-বার্তা হয়। ও অবশ্য প্রতিবারই আমার জন্য রংগিন কাগজে মুড়ে নানারকম উপহার নিয়ে আসে, ওর যদিও কোন ধারণা নেই আমি কি পছন্দ করি। আমার কি আছে ওর পছন্দ সম্পর্কে কোন ধারণা?

আচ্ছা, আজকে ও কি নিয়ে কথা বলতে চায়? আধো অন্ধকারে ওর চেহারা ভালো দেখতে পাইনি, ওর কি মন খারাপ ছিলো? ভাবতে ভাবতে আপনমনে একটু হেসে উঠি, কতোদিন পরে আমি মাহফুজ'কে নিয়ে খানিকটা ভাবছি। আজকের দিনটা সত্যি আজব। সকালে এক সহকর্মী'র মৃত্যু সংবাদে কলেজ অর্ধেক দিনেই ছুটি হয়ে গেলো। ছাত্রী'রা সবাই যখন সোল্লাসে কলেজের দরজা দিয়ে বেরেচ্ছিলো, আমার তখন হঠাৎ করে মনে হচ্ছিলো এইসবের কি দরকার, এইসব শোক দিবস, এক মিনিটের নীরবতা, এইসব ছুটি হওয়া! একজন মানুষের মৃত্যু'র শোক কয়জনকে ছোঁয় আসলে, এই প্রাতিষ্ষ্ঠানিক শোক পালনকে আমার তাই সবসময়েই অমানবিক মনে হয়। মৃত্যু তো খুব ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষকে ছাড়া আর কারো জন্য কোন অর্থ বহন করে না। আর ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যু'ও বা আমরা কতোদিন বয়ে নিয়ে বেড়াই নিজের ভেতরে।

বাথরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে'র ভেতর মুখ ডুবিয়ে মাহফুজ'কে এমনি হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলাম, ''কিছু খেতে চাও?''
'' করতে পারো কিছু একটা''।

আমি একটু অবাক হয়ে ভাবছিলাম, বাহ আমরা বেশ সংসারী লোকদের মতো কথা বলছি আজকে। এটা সত্যি যে আমাদের সংসারই বটে, কিন্তু গত মিনিট দশেক ধরে আমরা যেন অন্য কারো ভূমিকায় অভিনয় করে যাচ্ছি। আমি বেশ অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম আমি ভাবতে শুরু করেছি অল্প সময়ে কি বানানো যায়। গত দেড় বছর ধরে আমি কেবল রুটিনমাফিক রান্না করে গেছি, যা খায় মানুষজন আর কি। দুপুরে কেউ থাকিনা, তাই রাতে ডাল, ভাত, তরকারী আর সকালের নাস্তায় ডিম, ভাজি আর রুটি। অথচ আমি রাঁধতে ভালোবাসতাম ভীষণ। আমি নিজের ভেতরে ভেতরে এরকম মরে গিয়েছিলাম কবে?

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


শুরুটা সুন্দর হয়েছে। জানিয়ে গেলাম।

আশফাকুর র's picture


ভাল লেগেছে।

শাওন৩৫০৪'s picture


আরে, হুমম, ভালো লাগছে----ছাদের উপর রোদে দেয়া তোশকে ঘুমাইতে বা রোদ দিয়ে আনা কড়কড়ে গরম তোশকে শুইতে বেশ মজা শীত কালে----- Big smile

অতিথি's picture


একি! প্রথম পাতায় আপনার ৩ টা পোস্ট! মনে হয় নীতিমালা পড়েন নাই। আল্লাহ আপনাকে রহম করুক! আর কিছু কমু না।

রাজসোহান's picture


অনিকেত প্রান্তর !

নুশেরা's picture


দারুণস্য দারুণ! আনিকার লেখার হাত রান্নার চেয়েও পাকা Smile

মেসবাহ য়াযাদ's picture


আমি নিজের ভেতরে ভেতরে এরকম মরে গিয়েছিলাম কবে ?
শেষ লাইনটা বেশ এনজয় করলাম... এটাই জীবনের মোদ্দা কথা। লেখা যথারীতি সু-স্বাদু...

তানবীরা's picture


পরের পর্বটা কোথায় ? Sad

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আনিকা's picture

নিজের সম্পর্কে

কি লিখবো জানিনা...