আজাইরা দিনপঞ্জী... ১৭
আমি অনেকদিন ধরে একটা কমপ্রেসড অবস্থায় ছিলাম, ট্রানজিশান স্টেজে যেমন কোন অবস্থা বের করা যায়না, সবকিছু ক্রমাগত অস্থির থাকে আর কোন কিছুই সাম্যাবস্থায় পৌঁছোয় না সেইরকমের একটা জায়গায়। তারপরে একদিন কেন জানিনা আম্মার সাথে গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করলাম, তারপরে আবার আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাকালের মতো শুয়ে ছিলাম একটা রাত। এর দুদিনের মাথায় ভ্যাপসা গরম পড়তে শুরু হওয়া দিনের শেষে গভীর রাতে একটা এলোমেলো বৃষ্টি হলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি হঠাৎ আবিষ্কার করলাম অনেকদিন ধরে আমি নিজেকে বেশ বেচারা ভেবে নিয়ে করুণা করে আসছি, আমি ভেবে নিচ্ছিলাম আমার স্বপ্ন নাই, কিছু করার নাই, কোথাও যাওয়ার নাই। কিন্তু সেই সময়টায়, সেই রাতের বেলায় আমার মনে হচ্ছিলো আমার এক্ষুণি রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে হবে। কোন কিছু ভুলবার জন্যে বা মনে করবার জন্যে নয়... ঠিক সেই মুহূর্তটাতে বেঁচে থাকবার জন্য আমার এই বৃষ্টিমুখর পথে হাঁটতে হবে। আমি জানতাম পরে কখনো হলেও অন্তত সেই মুহূর্তে সম্ভব না সেই ইচ্ছেপূরণ। অথচ সেই ইচ্ছেপূরণের জন্য আমার কি ভীষণ তীব্রভাবে বেঁচে থাকতে মন চাইছিলো।
তারপরে ক'টা দিন গেলো নিজেকে ডিকম্প্রেসড করতে। প্রেমে পড়লে যেমন চারপাশের পৃথিবী আরো একটু সবুজ লাগতে থাকে, আমারও তেমন দিন কাটলো কটা। আমি নার্সিসাসের মতো নিজের প্রেমে পড়লাম। তারপর থেকেই একটু একটু করে নিজের পুরনো পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করছি।
এরপরেই আরেকটা বৃষ্টির রাতে বহুদিনের ব্যবধানে এক পুরনো বন্ধুর সাথে কথা হলো, আর রাজ্যের মেঘ ছিলো মনের ভেতরে কোথাও, সেই বর্ষণের রাতে সব মেঘ ঝরে গেলো, বৃষ্টির পরের আকাশটার মতো আমার পৃথিবী নতুন করে সামনে এলো। ছিলাম আর এক বন্ধুর বাসায়, ভাবছিলাম একবার উঠে গিয়ে তারে একটা ঈদের কোলাকুলি দিয়ে বলি, শোনো হে আমার অনেক মন ভালো। কিন্তু এই কাণ্ড করলে ঝাড়ি খাবার বিশাল সম্ভাবনা, তাই চুপচাপ খুশি হয়ে দাঁত বের করে বসে রইলাম। একলা একলা কি করবো ভেবে যেই উদ্ভট ঘোরের ভেতর বসে রইলাম এতোদিন, ঘোরটা ভেংগে যেতে টের পেলাম কতো মানুষ চারপাশে! কতো কি করার ইচ্ছে আছে! এখন আমি ভেবে কূল পাচ্ছিনা কিসের পরে কি করবো।
একটু আগেও আবার বৃষ্টি হলো। বৃষ্টিতে নাকি সবার মন খারাপ হয়, আর আমার সারজীবন উল্টোটা। আর তাছাড়া বৈশাখে জন্ম বলেই কিনা জানিনা, ঝোড়ো বোশেখী দিনে কিংবা রাতে আমার উদ্ভুট্টি আনন্দ হয়। আমাদের সেই পুরনো বাড়িতে আমি কতো ঝড়ের রাতে চুপচাপ উঠোনে বেরিয়ে যেতাম। ঝোড়ো হাওয়া আমাকে আপাদমস্তক কাঁপিয়ে দিয়ে যেতো আর আমি আমার ঘোলা হয়ে আসা চশমার কাঁচ মিছেই মুছবার চেষ্টা করতে করতে আপনমনে হাসতাম। ঝড়টা কমে গিয়ে বৃষ্টির তোড় নেমে এলে কখনো বেশ বাঁদরের মতো দেয়ালের দুইপাশে আর জানালায় পা দিয়ে হাঁচোড়-পাচোড় করে টিনের ছাদের এক কোণায় উঠে বসে থাকতাম।
আজকে আরো একটা মজার ব্যাপার হলো। টিএলসি তে একটা অনুষ্ঠান দেখছিলাম, আর আমার হঠাৎ মনে হলো জায়গাটার মধ্যে একটা চেনা চেনা গন্ধ আছে। তার কিছুক্ষণ বাদে টের পেলাম আয়ারল্যান্ড দেখাচ্ছে, আর আমার চিনবার কোন কারণ নাই। কিন্তু ইংল্যান্ডের টিপিক্যাল স্থাপত্য, রাস্তা, টিউবস্টেশানের সামনে গিটার হাতে গাইয়েরা, ময়লা ক্যানেল, রাস্তার পাশে ফল আর সব্জিসহ এশীয় দোকানদার, তীরমার্কা রোডসাইন ( আমি জীবনেও যা চোখে দেখতাম না বলে বন্ধুদের গালি খেতাম)... আর আমার খুব বেশি করে ইচ্ছে হচ্ছিলো আরেকবার সেইসব রাস্তায় ফিরে যাই। ফিরে যাই সেইসব দিনে। খামোকা মন খারাপ করে কতোবার আমি ঘরের ভেতরে নিজেকে আটকে রেখেছি। অথচ কি অদ্ভুত ছিলো আমাদের সেই রাতের তিনটেয় গ্রোসারী শপিং, বিকেলবেলা পেটে ক্ষিদে নিয়ে রান্না চাপানো, উঠলো বাই তো কটক যাই ওর মতো হুট করে সিনেমা দেখতে যাওয়া, পুরনো বইয়ের দোকানে বেভুলো হয়ে ঘুরে বেড়ানো, গভীর রাতে খামোকাই রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো, সেই চায়না টাউনের অদ্ভুত গন্ধওয়ালা দোকান, গ্রাস জেলী আর রেড বিনের আজীব ডেজার্ট, সারা রাত জেগে বসে কম্বলের সোফা বানিয়ে তাতে হেলান দিয়ে সিনেমা দেখা, একাডেমিক এসে লেখবার সময়ে দিনরাত চকোলেট আর কোকা নুডলসের উপরে বেঁচে থাকা। কুড়মুড়ে স্মৃতির ভেতরে ভালোই ডুবে যাইতেসি।
উপস্ দারুণ লেখা!
আহা, নস্টালঝিয়া হচ্ছে :'( পুরান ছবি ঘাইটা এইগুলা দেইখা মন উদাস হইল, কিন্তু ব্ল্যাক বিন উইথ গ্রাস জেলির বালতিটার ছবি পাইতেছিনা ক্যান!
ছবি গুলো এত্ত সুন্দর যে, আমার এখনই ওখানে চলে যেতে মন চাইছে
বিশেষ করে সাদা ফুল গুলো দেখে..
এই জায়গাগুলা আমাদের বাসার সামনে ছিলো... আহা! কি যে দিনগুলা! আর কি যে জায়গাগুলা!
আহা ডেইজিগুলা!
সেই ছবিটা মনে হয় তাজীন্যার ফেসবুক অ্যালবামে আছে...
লেখা পড়ে মন জুড়ায়লো আর ছবি দেখে চোখ জুড়ায় গেলো।
খাবার গুলার নাম কি? আর রেসেপি দেন।
বাচ্চা মানুষদের রেসিপি না...

তারপরেও একদিন দিমুনে।
নস্টালজিয়া--------- আহা পুরানো সেই দিনের কথা বলব কি রে হায় ও সেই চোখের দেখা প্রানের কথা -----
বৃষ্টি নিয়ে যতগুলো পোষ্ট পড়ছি কেবল মন ভরে উঠছে
একটু খোচা দিওতো
সেকি! কারে খোঁচা দিমু?
দারুণ লেখা, দারুণ ছবি।
আনিকা, দেশের জন্যে আমার মন কেমন করে কিন্তু এখন দেশে থাকবো এখানে না ভাবলে আবার এখানের জন্যেও মন কেমন করে। আমি লোপামুদ্রা হয়ে গেছি। এই মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক, এই দাবানল পোড়াক চোখ। আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক
আমি প্রায়ই সামারে একা একা হাঁটি, সাতারে যাই সবসময়, সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি যখন তখন দেশে গেলে এগুলো পারবো না ভাবলেই মনে হয় ...............
মন্তব্য করুন