রিক্যাপচারিং পাস্ট -৬
ঘোরতর বিতর্ক আছে ডায়েরীর অডিয়েন্স নিয়ে। আমাদের নিপাট প্রচারবিমুখ সংস্কৃতি বলে নয়, বিশ্বে গত দশক পর্যন্ত ডায়েরীর সাথে ব্যক্তিগত শব্দটির অর্থপূর্ণ সংযোগ ছিলো। একান্তও যুক্ত হতো যার সাথে গোপনীয়তার একটা প্রকাশ্য অবস্থান ছিলো। প্রচলিত এই মতকে আমার ভাওতাবাজি মনে হয়। ব্যক্তির উন্মুখ প্রচারণার পরিশীলিত কৌশল ছাড়া ডায়েরীর আর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। ডায়েরীকারকরা নিজের জন্য এত পরিশ্রমী হবেন কেনো, বরঞ্চ কোড-ডিকোডই যথোপযুক্ত হতো; ভাষায়-গঠন ও প্রকরণে অন্যের পাঠ্য-যোগিতা করার কোনো মানে হয় না। যখন ডায়েরী লিখতাম তখন মাথার মধ্যে থাকতো বিশেষ কেউ - নির্মাণ করতাম চেতন-অবচেতনে তার চোখে যেভাবে দেখতে চাই নিজেকে। প্রতিজন ডায়েরী-পরিচালক তার অনির্ণীত অথচ মূল্যবান পাঠকের চোখে নিজের বিনির্মাণ সম্পন্ন করেন। ফলে আমি একসময় ডায়েরী লেখা বাদ দিলাম। সুন্দরবন ভ্রমণের বছর দুয়েক আগে।
তবে সৌন্দর্যের সকাতর নিমন্ত্রণে একজন মানবীর খোলস ছেড়ে প্রকৃতিময় হয়ে ওঠার ফলে একান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরী যেনো রচিত হলো, শব্দহীন লেখায়। না প্রকৃতি, না মানবী, বিকশিত এক স্ব-প্রেম এর নিকাশ। সুপতিতে ষাট/সত্তর বয়সের এক যুগলের দেখা মিললো, যারা প্রকৃতি দেখছিলেন বলে আমার সন্দেহ হয়। ঢের দেখছিলেন নিজেদের নতুন সেটিংসে। বেশ কয়েকবার তাদের বাহুলগ্ন ছবি তুললাম, প্রত্যুত্তরে আমাদের দুজনের ছবি তুলে দিলো। চাইলো ইমেইল, পাঠিয়ে দেবে ইউরোপে ফিরে। তখন আমি ইমেইল-আধুনিক হয়ে উঠিনি। ফলে কাজল মহাখুশী। মশলাদার ছবিটা হাত ছাড়া হয়ে গেলো বলে তার মনে হচ্ছিলো আমি অসন্তুষ্ট। নিজেকে চোখ টিপে একটা ভাব নিয়েই থাকলাম। ফলে না তোলা কিছু ঘনিষ্ঠতর ছবি সৃষ্টি হলো প্রত্যুত্তরে। পুরুষের বক্রশৈলী যাকে বলে।
আবেগ প্রকম্পিত হলে সাবজেক্টের অবগাহনে আপাত নির্জীবতা লক্ষণীয়। বলিষ্ঠ সন্ধ্যা যখন তীরে তীরে অন্ধকার জ্বালিয়ে দিলো - আর দপ করে নিভে গেলো সূর্যের হাসি; সেই অপরূপ তৃষ্ণাকে তাতে কনভার্ট করে দিলাম। যখন ক্রুজ চলতে থাকে তখন এর বাতাস ফেড়ে যায় বাক্যের ঝুড়ি, আর নিশ্বাসে দ্রবীভূত সকল সুগন্ধী তার ঠোঁট বেয়ে নামে।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, তুমি তোমার জীবনটাকে এমনভাবে যাপন করো যেন তোমার ডায়েরী লুকোতে না হয় কথাটি পড়ে মনে হয়েছিল এইটা একটা ভাওতা কথা। কারণ আমি ডায়েরী লিখি। ডায়েরীতে অন্তর্গত বেদনার কথা লেখা হয় না, সুখের অনুভূতি অনেক লিখেছি। এটা অবশ্য আমার রাশির দোষ ডায়েরীর অডিয়েন্স থাকবে কেন! ডায়েরীতো সিন্দুকের মতো, এর একটিই দরোজা-সেটি মনের।
লেখার কথা বলা যাক। কৌশিক বর্তমানে আলফা লেভেলে অবস্থান করছে। এ ধরণের অবস্থায় যখন একজন তুমুল ক্রিয়েটিভ মানুষ অবস্থান করেন তখন অডিয়েন্সের রোজকার সকাল ভালো লেখা পাঠের অনুভূতি নিয়ে বর্ণিল থাকে।
লেখার উত্তোরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
সবকটা ইমো দিয়ে এই মন্তব্যটা নতুন করে করতে হবে।
সবকটা ইমো দিয়ে এই মন্তব্যটা নতুন করে করতে হবে।
সফল্য মনে কতদূর ?
#সফল্য=সাফল্য
কৌশিক একজন ভার্সেটাইল লেখক, অথচ ব্লগার সম্প্রদায় ছাড়া আর বিডিনিউজের গন্ডির বাইরের পৃথিবীর পাঠকরা তার লেখার পাঠক হতেই পারলোনা। এইটা একটা অবিচার। প্রতিভার অপচয় করা ঠিক না, সাফল্য মানে কৌশিক অবশ্যই লেখক হিসেবে সফলতা পাবার যোগ্য একজন্য মানুষ। সেই পথে আর অবশ্যই ক্রিয়েটিভ ব্লগার হিসেবে তার সফলতা কামনা করি।
নেন পানি খান। কৌশিক ভাই কইছে সবাইরে কোক খাওয়াবে।
কোক? নো প্রোবলেম। আমি এখনই একটা প্রোপাজাল রেডি করতেছি।
আপনার মন্তব্যে ফুলচন্দন..
একসময় ডায়েরী লিখতে শুরু করলাম। তখন ক্লাশ এইটে পড়ি। কিন্তু ডায়েরী রাখার কোনো গোপন জায়গা নেই। লেখা বাদ দিলাম। আবার শুরু করলাম কিন্তু দেখি লেখার মত কিছু নাই। এখন আমার ডায়েরীর পাতা ভরা শুধু দৈনন্দিন বাজারের লিস্ট। (লজ্জার ইমো হবে কিন্তু ইমো আসে না।)
ধন্যবাদ ভাল থাকুন।
লজ্জার ইমো আছে নাকি! বাজারের লিস্টের এন্টিক ভ্যালু আছে। একসময় দেখবেন যে দামে যে জিনিস কিনেছেন বিশ্বাস হতে চাইছে না!
আগে ডায়েরী লিখতাম। লুকিয়েও রাখতাম। একদিন প্রচন্ড রাগে সব ডায়েরী পুড়িয়ে ফেলেছি, আর কোনদিন ডায়েরী লিখি নাই। কেউ যখন নতুন ডায়েরী দেয় তখন ভাবি, লিখবো, লেখা হয় না।
প্রচন্ড রাগটাকে মাইনাস। পৃথিবী হারালো।
এখন অনেকেই (বিশেষ করে লেখকরা) ডায়েরি লেখেন একথা ভেবেই যে, তাঁর মৃত্যুর পর এই ডায়েরি প্রকাশিত হবে, জনগণ এটা পড়বে ইত্যাদি। ফলে ওটাতে আর ডায়েরির সরলতা থাকে না, নিজের সাথে নিজের কথপোকথন থাকে না, তার আরো অনেক কপটতার সঙ্গে আরেকটি কপটতা যুক্ত হয় - ডায়েরি!... একবার আমার এক লেখক বন্ধুর স্ত্রী খুব গভীর এক দুঃখ নিয়ে বলেছিলেন -- জানেন কামাল ভাই, আপনার বন।ধু আমাকে এমন এক ভাষায় চিঠি লেখে, যে সেটা পড়েই বুঝতে পারি, চিঠিটা ও আমাকে লেখেনি, লিখেছে ওর পাঠকদের উদ্দেশ্যে; মৃত্যুর পর এইসব চিঠি প্রকাশিত হবে- এটা ধরে নিয়েই ও এগুলো লেখে!!!!
তবে ব্যক্তিগত ডায়েরি লেখার চল এখনও আছে, এখন বহু মানুষ নিজেকে মেলে ধরেন ডায়েরির পাতায়। সেই অর্থে এর গুরুত্বও কমেনি।
-----------
কৌশিকের লেখা সম্বন্ধে আগেও অনেকবার বলেছি! ও গুরুত্ব দেয়নি। আমি ধরেই নিয়েছি, আমার কথাবার্তাকে কৌশিক নিতান্তই বালখিল্য আবেগ বলে উড়িয়ে দেয়। নইলে এই ধরনের অসাধারণ / চমৎকার লেখার হাত নিয়ে একজন লোক নিজেকে এতখানি অপচয় করতে পারতো না!
আবারও অনুরাধ করছি কৌশিক, লেখা বাছাই করা শুরু করেন, বাদবাকিটা পরে দেখা যাবে!
বস, আপনার কথা শিরোধার্য!
একবার ডায়েরিতে অতি গোপন লেখা লেইখা ধরা খাইছিলাম। তারপর আর লিখি না। বছরের শুরুতে ২৫/৩০টা ডায়েরি পাই, মানুষকে দেই। এতেই আনন্দ।
কার কাছে ?
লেখার আমার একটা স্টাইল আছে, সেইটা প্রশিক্ষন লব্ধ। এমন ভাবে লেখতে হপে যেনো পাঠক ভাবে সে অনেক কিছুই জেনে যাচ্ছে মাগার লেখন তার আসল কথাই বলবে না। উদাহরন হিসাবে বইলতে পারি, যাবো ধানমন্ডি বাসে কইরা কিন্তু লিখলাম যামু কদমতলী সিন্জিতে
ডায়রীতে গুপন কথা লিখি না
গোপন কথাটা এখন এইখানে লেখেন!
তবে সৌন্দর্যের সকাতর নিমন্ত্রণে একজন মানবীর খোলস ছেড়ে প্রকৃতিময় হয়ে ওঠার ফলে একান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরী যেনো রচিত হলো, শব্দহীন লেখায়। না প্রকৃতি, না মানবী, বিকশিত এক স্ব-প্রেম এর নিকাশ। ------- ভাষার অলংকরণ খুব চমৎকার !!! অসাধারণ কৌশিক অসাধারণ !!!
থ্যাংকু দোস্তো।
খুব চমৎকার !!! অসাধারণ কৌশিক অসাধারণ !!!
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ডায়রীর কথা আর কি বলব! সব লিখি, কোন লিখার আইডিয়া, কোন মানুষটাকে রাস্তায় দেখে ভালো লাগলো, অমুকের হাত ধরে কেমন শিহরণ জাগলো, ডায়রী লিখার ফাঁকেই কবিতারা আসছে এতবছর কিন্তু ভাইরে বিয়ের পর থেকে কি যে যন্ত্রণা! কোন গল্পের নায়কের নাম ডায়রীতে নোট করে রেখেছি,ব্যস এই ব্যক্তি কে তা জানার আগ্রহের শেষ নাই! আমার বাসায় কেউ কোনদিন দুঃসাহসে ভর করেও আমার কোন জিনিস ধরেনি ডায়রী তো অনেক দূরের ব্যাপার! তাই কোনদিন লুকাইনি। আমার একমাত্র কবুলের সঙ্গী অতি ভালোবাসায় আর্দ্র হয়ে (অথবা আাকে বুঝতে না পেরে) ডায়রী, মোবাইল এমন কোন জিনিস নাই যেটা দেখে না। এই যে মন্তব্য করছি এটা নিয়াও আমার দু কথা শুনতে হতে পারে। ফেইসবুকের স্ট্যাটাস দেয়ার সময়ও সাবধানে থাকতে হয়, কি বুঝতে কি বুঝবে আল্লাহ জানেন!
আমি হাল ছাড়ি নাই
এখনো ডায়রী লিখি অমর হবার আশায় না, নিজের সাথে নিজে কথা বলার খায়েশে
মন্তব্য করুন