ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ-১: শুরুতেই একজন পিটার কাসটারের কথা
পিটার কাসটারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই।
পিটার কাসটার মূলত ডাচ নাগরিক। পড়তেন আমেরিকায়, ছাত্র জীবনে প্রথম এসেছিলেন বাংলাদেশে, সেই ১৯৭৩ সালে। চে গুয়েভারার পথটাই সঠিক বলে মনে করতেন। চে যেমন নিজের দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের যে কোনো দেশের শোষিতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলতেন, পিটার কাসটারও সেরকমই মানতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল গণঅভ্যুত্থান ছাড়া বিপ্লব হবে না।
বাংলাদেশে এসে বিপ্লব করার কথা ভাবলেন পিটার কাসটার। মস্কো বা পিকিংপন্থীদের সঙ্গে মিললো না। কারণ মস্কোপন্থীরা তখন সরকারের সাথে মিশে গেছে আর ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পিকিংপন্থীদের ভূমিকা ভাল ছিল না। সিরাজ শিকদার বা কর্ণেল তাহেরের লাইনকে বেছে নিতে চাইলেন। এরমধ্যে একদিন দেখা হলো কর্নেল তাহেরে সঙ্গে। থেকে গেলেন তাঁর সাথে।
একটা ঘরোয়া আলাচনায় পিটার কাসটার নিজের পরিচয় এভাবেই দিলেন। বাংলায় কথা বলেন। তারপর বললেন অনেক কিছুই, সবকিছু প্রকাশ করা যায় না। বিপ্লবের ত্রে তৈরি করতে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছেন। গোপন সংগঠন বানিয়েছেন। করেছেন অনেক কিছুই। বাংলাদেশে শ্রেনীদ্বন্দ্ব কোন পথে আছে সেটা দেখতে, জানতে ও বুঝতে মানুষের সঙ্গে মিশেছেন।
তাহেরকে তিনি প্রকৃত বিপ্লবীই মনে করেন। তবে কর্মাপন্থা যে এক না সেটি বিলক্ষণ বুঝতেন তখনই। কর্ণেল তাহের মনে করতেন ঢাকা দখল করতে হবে আগে। তারপর ঢাকা থেকে ছড়িয়ে দিতে হবে বিপ্লব। আর পিটারের ধারণা যে দেশে ৯০ শতাংশ মানুষ গ্রামে থাকে এবং ৮০ ভাগ কৃষক, সেখানে বিপ্লব শুরু হতে হবে গ্রাম থেকে, সংগঠিত করতে হবে কৃষকদের।
তারপরেও তাহেরের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের তিন থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত সেই উত্তাল সময়টা থুব কাছ থেকে দেখেছেন। কর্নেল তাহেরের সেই বিপ্লবের চেষ্টা সফল হয়নি। পিটার কাসটার দেখেছেন, তাহের যেমনটা মনে করেছিলেন সেরকম অংশগ্রহণ মানুষের মধ্যে ছিল না। সৈনিকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নেমেছিল তাও দেখেননি। এই ব্যর্থ বিপ্লবের চেষ্টার কারণে জীবন দিতে হয়েছিল তাহেরকে। আর সমাপ্তি ঘটেছিল বিপ্লবের।
পিটার কাসটার সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হন ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে। সামরিক আদালতে বিচার চলে। নিজের দেশ থেকে আইনজীবী আনতে চেয়েছিলেন, অনুমোদন পাননি। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয় প্রচন্ড। পিটার কাসটারের প্রকাশ্য পরিচয় আবার সাংবাদিক। এই চাপে ১০ মাস পর মুক্তি পান জেল থেকে।
পিটার কাসটার চলে যাওয়ার পর শুনলাম পিটার কাসটারের একটা গোপন ডায়েরি ছিল। সেখানে লেখা ছিল তার সকল কাজ ও বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের নাম। ডায়েরিটা জিয়ার হাতে পড়েছিল। সেই ডায়েরি ধরে ধরে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন জিয়া। নির্মম নাকি সে সব ব্যবস্থা। আবার দেখা হলে এ নিয়ে অবশ্যই জানতে হবে।
সেই যুবক পিটার কাসটারের বয়স হয়েছে। বহুদিন বাংলাদেশ আসতে পারেননি। এখন আবার আসলেন। ইউরোপে পিটার কাসটারের পরিচয় বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে জড়িত সেই প্রথম থেকে। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, জামায়াতের রাজনীতি করার কোনো অধিকার বাংলাদেশে নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো জোড়ালো অবস্থান না নেয়ায় থানিকটা হতাস। বিশেষ করে মৃত্যুদন্ড নিয়াই সমস্যাটা থেকে গেছে বলে তিনি মনে করেন।
পিটার কাসটারের কথা শুনতে শুনতে ভাবছিলাম ৩ থেকে ৭ নভেম্বরের কথা। এই সময়কার ঘটনার অনেকগুলো পক্ষ আছে। ফারুক-রশিদ একপক্ষ। খালেদ মোশারফ-সাফায়াত জামিল একপক্ষ। তাহের এক পক্ষ। মুশতাক আরেক পক্ষ। জিয়া-মীর শওকত এক পক্ষ। সবার বক্তব্য এক জায়গায় করলে কেমন হয়। এর মধ্যে জিয়া এ নিয়ে কিছু লেখেননি। মীর শওকতও সম্ভবত না। আর সব পরে কিছু না কিছু লেখা আছে।
কর্ণেল তাহেরের দেশপ্রেম বা সাহস কিংবা জীবন দেয়া নিয়ে আমার গভীর ভক্তি আছে। কিন্তু তিনি বিপ্লবের জন্য সেই সময়টা বেছে না নিলে কি ইতিহাস অন্যরকম হতো?
এটা বুঝতে চেষ্টা করছি।





দারুন এক সিরিজ শুরু করেছেন।
মনে হচ্ছে নতুন এক শিশু জন্ম নিলো। একে বড় করে মানুষের মতো মানুষ করার দায়িত্ব কিন্তু যথাযথভাবে পালন করতে হবে। পোস্ট প্রিয়তে, এ লেখা হারানো সম্ভব না।
শুরুতেই প্রিয়তে নিলাম।
মনে হচ্ছে সিরিজটার লোভে পড়ে গেলাম।
শিরোনাম দেখে সুনীলের বইয়ের কথা মনে পড়েছিলো।
এক কথায় জটিল।
আপনি কিছু মনে কইরেন না ,প্রিয়তে নিলাম।
মুশতাক উপরে উল্লিখিত পক্ষগুলোরই কোন কোনটির পক্ষ নিয়েছিল, একেকবার একেকটি, তার পৃথক বা একক কোন পক্ষ ছিলনা বোধহয়।
বাংলাদেশের সেই সময়ের ইতিহাস নিয়ে গভীর বিচার-বিশ্লেষনের প্রয়োজন রয়েছে, রয়েছে সব পক্ষের বক্তব্য শোনার। কর্নেল শাফায়াত জামিলের (অব.) লেখা ’একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ এবং শাহাদুজ্জামানের 'ক্রাচের কর্নেল' ছাড়া আর যা পড়া হয়েছে সবই পক্ষপাতদুষ্ট।
আমি একটি পক্ষকে চিনি। সেই পক্ষের একজন আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ৭ নভেম্বর সেটি নিয়ে লিখবো।
মাসুম ভাই পিটার কাসটারদা'র সাথে আমার পরিচয় আছে
। ওনি আমাদের এনজিও বাসুগের একজন সদস্য, অনেক সময় আমাদের মীটিং এ সভাপতিত্ব করেন। চোখ বন্ধ করে বাংলা শুনলে মনে হয় ওনি বিদেশী? খুব ভালো লেখেনও কিন্তু। অনেকে জার্নালেই পাব্লিশ হয়।
সিরিজটা চলুক।দারুণ একটা সিরিজ শুরু করলেন।গ্রেট।
চলুক...
~
অপেক্ষায় রইলাম।
বস এই ভদ্রলোকরে নিয়া কিন্তু আমার একটা পোস্ট আছে। পইড়া দেখেন, অনেক প্রশ্নের উত্তর পাইবেন
খাইছে। এসব কিছুই জানতাম না। এ লুক তো তাইলে বিরাট কামেল মানুষ। ভয় পাইছি।
মন্তব্য করুন