মুভিস টু সি বিফোর ইউ ডাই-২
সময় কাটানোর সব চেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে গান শোনা, বই পড়া আর সিনেমা দেখা। এখন অবশ্য বাড়তি সময় খুব বেশি পাওয়া যায় না। ফলে সামান্য যে সময়টুকু পাওয়া যায় তার সদ্ব্যবহার করাটাই প্রয়োজন। এজন্য আজকাল বেছে বেছে সিনেমা দেখি, বেছে বেছে বই পড়ি। আর বাছাবাছি করতে করতে নানা ভাষার ছবি আজকাল দেখা হচ্ছে। হলিউডের বাইরেও যে সিনেমার এক বিষ্ময়কর জগৎ আছে সেটি তো অনেকদিনই জনতাম না। ভাবছি সেই বিষ্ময়কর জগৎ নিয়ে কিছু লেখি।
আজকে যাবো দক্ষিন কোরিয়ায়। এজন্য বেছে নিলাম কোরিয়ারই একজন পরিচালক কিম কি দুককে। আমরা সিনেমা দেখি। কিন্তু সিনেমা কেবল দেখার জন্যই নয়, অনুভবও করতে হয়। সেই অনুভব করাটি শেখায় কিম কি দুকের সিনেমা। কিম কি দুক ফ্রান্সে চিত্রকলায় পড়তেন। তাঁর অনেক ছবি দেখলে পেইন্টিং-এর কথা মনে হবে। আবার অনেক ছবি বড় ধরণের ধাক্কা দেবে। দুর্বলচিত্তরা হয়তো সহ্যও করতে পারবেন না কিছু ছবি। তারপরেও কিম কি দুক না দেখা মানে আমাদের চলচ্চিত্র অভিযান অসমাপ্ত রাখা।
কিম কি দুক প্রথম সিনেমাটি বানান ১৯৯৬ সালে। এর পর ২০০৮ পর্যন্ত ১৫টি ছবি করেছেন। এরমধ্যে আমি দেখতে পেরেছি ১২টি। আমার পছন্দ বেছে নেওয়া হয়েছে এই ১২টি থেকেই। কিম কি দুকের ছবির বড় বিশেষত্ব হচ্ছে কম সংলাপ। সংলাপ কম রেখেও যে অনেক কিছু বলা যায় তা পাওয়া যায় কিম কি দুকের সিনেমা থেকে।
আমার পছন্দের কিম কি দুক-
১. স্প্রিং, সামার, ফল, উইনটার.........অ্যান্ড স্প্রিং-এটা নিয়ে আগেও লিখেছিলাম। ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। সিনেমাটা দেখে আমি অভিভূত। কেন এর আগে দেখলাম না সেটা নিয়ে চরম আফসুস হল। কিম কি-দুকের ছবিতে সবসময় সংলাপ কম থাকে। এটিও ব্যতিক্রম না। সংলাপ কম, হাতে গোনা কয়েকটি চরিত্র আর একটাই লোকেশন। এই ছবি আমার মাথা থেকে নামবে না। আমি এতোটাই মুগ্ধ যে, আমি খুঁজে খুঁজে দুটো ডিভিডি কিনেছি।
লেকের মধ্যে একটা বাসা। সেখানে থাকে একজন বয়স্ক বৌদ্ধ ভিক্ষু, আরেকটি ছোট ছেলে। সেও দীক্ষা নিচ্ছে। সরল অর্থে বলা যায়, ভিক্ষুদের জীবনের ৫ অধ্যায় দেখানো হয়েছে ছবিটি। কিন্তু আদতে এটি মানুষেরই জীবনচক্র, ৫ ঋতুর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। আবার একটা মানুষের খুশী, রাগ, দু:খ ও আনন্দের এক একটি অধ্যায় পুরো সিনেমা জুড়ে।
২. থ্রি-আয়রন-ঠিক যেন একটা পেইন্টিং। সংলাপ নেই বললেই চলে। পুরো সিনেমায় প্রধান দুই চরিত্রের মধ্যে কথা মাত্র একটি। আবার শেষ সেই কথা নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। এই সিনেমার শেষ কি হলো এই ব্যাখ্যা ভাবতে ভাবতেই বাকিটা সময় চলে যাবে।
ছেলেটি দিনের বেলা অভিনব উপায়ে খালি বাড়ি খুঁজে বের করে রাতে সেখানে থাকে। বাড়ির মালিক ফেরার আগেই চলে যায় বাড়ি থেকে। এরকমএক বাড়িতে হঠাৎ দেখা মেলে একটি মেয়ের। তারপর ঘটনা এগিয়ে যায়। অসাধারণ এক সিনেমা।
৩. দি বো: ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। ৬ বছর বয়সী একটি মেয়েকে কুড়িয়ে পেয়েছিল। এখন অপেক্ষা করছে ১৭ বছর হওয়ার জন্য। তারপর বিয়ে করবে। ওরা থাকে একটি মাছ ধরার জাহাজে। সেখানে অর্থের বিনিময়ে মাছ ধরতে আসে অনেকেই। মেয়েটি আবার অভিনব উপায়ে ভাগ্য গণনা করতে পারে।
ঘটনা পাল্টে যায় মাছ ধরতে অল্প বয়সী একটি ছেলে আসলে। ছবির শেষটা বিষ্ময়কর ভাবে অন্যরকম।
৪. ব্যাড গাই-ছেলেটি মেয়েটিকে জোড় করে চুমু খায়। মেয়েটি ছেলেটির মুখে থুথু মারে। ছেলেটি প্রতিশোধ নেয় নির্মম ভাবে। ফাঁদে ফেলে। মেয়েটি বাধ্য হয় পতিতাবৃত্তি করতে। তারপর অদ্ভুদ এক সম্পর্ক তৈরি হয় দুজনের মধ্যে।
সিনেমাটি একদমই অন্যরকম। প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে গিয়ে গল্পটা সাজানো হয়েছে। ভালবাসা, আনন্দ, বেদনা, ক্রোধ সবই আছে।
৪. টাইম: মেয়েটি দেখতে তেমন সুন্দর না। তার ভয় বন্ধুটি বেশিদিন তাকে পছন্দ করবে না, অন্য মেয়েকে চাইবে। তারপর সে ছেলে বন্ধুটিকে না জানিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করে চেহাড়া পালটিয়ে ফেলে। মেয়েটির সঙ্গে আবার সম্পর্ক হয় ছেলেটির, যদিও জানে না এ তারই সেই হারানো বান্ধবী।
কিন্তু ছেলেটি ভুলতে পারে না কম সুন্দর চেহাড়ার মেয়েটিকে। ফলে মেয়েটি আবার চেহারা পালটায়। এর মধ্যে ছেলেটিও পালটায়। ফলে কেউ কাউকে আর চেনে না। অসাধারণ এক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর বাইরেও তার প্রতিটি সিনেমাই দেখার মতো। ওয়াইল্ড এনিম্যাল তার প্রথম দিককার সিনেমা। প্যারিসের পটভূমিতে। দুই বন্ধুর কাহিনী। গ্যাংস্টার দলে ভিড়লে নানা ঘটনা ঘটতে থাকে।
বার্ডকেজ ইন আরেকটি ছবি। পরিবারটি একটি রিসোর্ট চালায়, সেখানে একজন পতিতাও থাকে অতিথিদের জন্য। বাড়ির মেয়েটি আবার তা পছন্দ করতে পারে না।
দি আইল দুর্বল চিত্তদের জন্য না। কানে ছবিটি প্রদর্শনীর সময় অনেক দর্শক হল ছেড়ে বের হয়ে গেছিলেন।
সামারিটান গার্ল দুই বান্ধবীর ছবি। যারা ইউরোপে যাওয়ার জন্য পতিতাবৃত্তি বেছে নেয়। কিন্তু এক বান্ধবী মারা গেলে নানা সংকট তৈরি হয়।
কোস্ট গার্ড একটু ভিন্ন ধারার ছবি। ব্রেথ অবশ্য কিম কি দুক ঘরানার।
দেখা হয় নাই কোনোটাই। আপনের লেখা পড়ে সবগুলা দেখতে ইচ্ছা করতেসে।
মাসুম ভাই কেমন আছেন?
আছি ভালই, ইউ?
যাক, সিনেমা সম্পর্কে জানা হলো।। ধন্যবাদ মাসুম
খালি রিভিউ পড়ে যাই.... মুভি দেখার সুযোগই পাই না... বাসায় গেলেই ঋহানের সাথে টাইমপাস... আঠার মত লেগে থাকে... তবে শুরু করলে আপনার লিষ্ট ফলো করবো অবশ্যই..
আপাতত ছেলেরে দেখেন
রিভিউ পড়লে মুভি দেখার শখ জাগে , ব্লগ বন্ধ করে দিলে ভুলে যাই ।
প্রথমটা ছাড়া আর কোনোটাই দেখা হয়নি। দেখতে হবে সময় করে।।। আরেকটু বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো মনে হয়।
অস্কার সেরা ছবির পুরস্কার কিম কি দুকের আপনার তালিকার প্রথম তিনটিরই পাবার কথা। প্রথম তিনের কোনটি যে সেরা সেটা বলতে পারছি না। কত অসাধারণ একজন পরিচালক এই কিম কি দুক যার মুভি দেখলে মনে হয়, কথা বলার কি দরকার! চুপ করে ইঙ্গিতেইতো সবকিছু সারা যায়।
The Bow দেখে মুভিটা নিয়ে লিখতে খুব ইচ্ছে করছিলো। কিন্তু লিখতে পারব বলে মনে হয়নি। অসাধারণ লেগেছে মুভিটা।মেয়েটি খন ছেলেটির সাথে চলে াচ্ছিলো আর বৃদ্ধ লোকটি গলায় ফাঁসি দিলো কি যে মায়অ লাগছিলো লোকটির জন্য!
আর 3-Iron দেখতে ভয় লাগছিলো। একটু পর পর বন্ধ করে দিয়েও আবার দেখলাম।মুগ্ধ।
আপনাকে এক বালতি ধনেপাতা মুভি পোস্টের জন্য। বেশি করে কাঁচামরিচ, পেয়াজ, রসুন দিয়ে শরিসার তেলে টেলে বেটে ভর্তা বানিয়ে খাইয়েন।
ব্রাদারহুড খুব প্রিয় একটা সিনেমা।
সবগুলা দেখছি। শুধু কোস্ট গার্ড টা দেখা হয় নাই এখনো ... নামানো আছে
সর্বশেষ দুইটা দক্ষিন কোরিয়ার সিনেমা আপনার সাথে শেয়ার করি -
১। Memories of Murder : এক মফস্বল শহরে পরপর কয়েকজন সুন্দরী নারী খুন হয়, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সেই সিরিয়াল কিলারকে ধরতে মাঠে নামে। সিনেমাটা একই সাথে কমেডি এবং সিরিয়াস এবং রহস্যময়।
২। J.S.A.: Joint Security Area : দুই কোরিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়ে গল্প। দক্ষিন কোরিয়ার এক সীমান্তরক্ষীর হাতে খুন হয় দুইজন উত্তর কোরিয় সীমান্তরক্ষী। ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ দুই সামরিক তদন্ত কর্মকর্তা আনা হয় সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ড থেকে। সিনেমাটা আমাকে প্রচন্ড নাড়া দিয়েছে। এই সিনেমাটা না দেখে থাকলে অবশ্যই দেইখেন।
৪ নাম্বারটা ছাড়া বাকিগুলো দেখেছি।
আপনার বনর্না শুনে প্রত্যেকটি সিনেমা দেখে ফেলতে ইচ্ছে করছে
যদিও আমি মনে প্রাণে জানে বিশ্বাস করি সময় কাটানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হলো ঘুমানো। পাশ ফিরে ফিরে ঘুমানো
মন্তব্য করুন